ঢাকা ০১:০৭ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৬ জুন ২০২৫, ১১ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
বোরকা পরে পরকীয়া প্রেমিকার সঙ্গে দেখা করতে গিয়ে ধরা খেলেন মসজিদের ইমাম কুমারখালীতে কর ফাঁকি দেওয়ায় চার প্রতিষ্ঠানকে ৫৫ হাজার টাকা জরিমানা চাকরি ও চেম্বার একসাথে, নিউ পপুলার ডায়াগনস্টিকে তানভীরের আলোচিত রমরমা বাণিজ্য!25 আক্কেলপুর থানার (ওসি) ঘুষ ও দুর্নীতির দায়ে ওসি মাসুদ রানার পদাবনতি, এখন এসআই25 প্রধানমন্ত্রী পদে ১০ বছরের বেশি নয়—সিদ্ধান্তে একমত বিএনপি25 গ্লোবাল লিভেবিলিটি ইনডেক্স ২০২৫ বিশ্বের বসবাসযোগ্য শীর্ষ ১০ শহর25 ‘উত্তরণ’ নাটকের ৩৩তম মঞ্চায়ন বৃহস্পতিবার, বিবেকানন্দ থিয়েটারের বিশেষ আয়োজন দুই পরিবর্তন নিয়ে ব্যাটিংয়ে বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কার এক অভিষেক এনবিআরের সাড়ে ১৬ হাজার অভিযান, রাজস্ব ফাঁকি ৬২৪৬ কোটি টাকা চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির ৩১ ওয়ার্ডে পূর্ণাঙ্গ আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা

আক্কেলপুর থানার (ওসি) ঘুষ ও দুর্নীতির দায়ে ওসি মাসুদ রানার পদাবনতি, এখন এসআই25

আক্কেলপুর থানার (ওসি) ঘুষ ও দুর্নীতির দায়ে ওসি মাসুদ রানার পদাবনতি, এখন এসআই25

অনলাইন ডেস্ক
  • আপডেট সময় : ০৭:৫১:৩৪ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৫ জুন ২০২৫ ৭ বার পড়া হয়েছে

জেলা প্রতিনিধিঃ ঘুষ ও দুর্নীতির অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় জয়পুরহাট জেলার আক্কেলপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাসুদ রানাকে পদাবনতি দিয়ে উপ-পরিদর্শক (এসআই) পদে নিযুক্ত করা হয়েছে। পুলিশ সদর দপ্তরের নির্দেশনায় এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হয়।

পুলিশ বিভাগের একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে, মাসুদ রানা ২০১৮ সালে রংপুর জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) শাখায় ইন্সপেক্টর পদে কর্মরত ছিলেন। সে সময় রংপুরের পীরগঞ্জ থানায় একটি চাঞ্চল্যকর হত্যা মামলার তদন্তের দায়িত্ব পান তিনি। সেই তদন্তে ঘুষ গ্রহণ ও ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে।

ঘটনার পরপরই অভিযোগের সত্যতা যাচাইয়ে একটি বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। দীর্ঘদিনের তদন্ত শেষে প্রাপ্ত সাক্ষ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগগুলো প্রমাণিত হয়।

পুলিশ সদর দপ্তর সূত্র জানায়, বিভাগীয় শৃঙ্খলাবিধি অনুযায়ী এমন গুরুতর অপরাধের জন্য উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া বাধ্যতামূলক। ফলে মাসুদ রানাকে তিন বছরের জন্য পদাবনতি দিয়ে এসআই করা হয়। তিনি এখন আর ওসি নন, বরং উপ-পরিদর্শক (এসআই) পদে দায়িত্ব পালন করছেন। যদিও বর্তমান কর্মস্থল সম্পর্কে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানানো হয়নি, তবে তার পদাবনতির বিষয়টি জয়পুরহাট জেলা পুলিশের উচ্চপর্যায়ের একাধিক কর্মকর্তা নিশ্চিত করেছেন।

দুর্নীতি মামলার পটভূমি

২০১৮ সালে পীরগঞ্জ থানায় সংঘটিত এক হত্যা মামলায় নিরপেক্ষ তদন্ত না করে পক্ষপাতদুষ্ট আচরণ এবং মোটা অঙ্কের ঘুষ গ্রহণের অভিযোগ ওঠে ইন্সপেক্টর মাসুদ রানার বিরুদ্ধে। অভিযোগ ছিল, তিনি মামলার মূল আসামিকে আড়াল করতে চেয়েছিলেন এবং নির্দোষ ব্যক্তিকে হয়রানি করছিলেন। এ নিয়ে ভুক্তভোগীর পরিবার ও স্থানীয়দের মধ্যে চরম অসন্তোষ সৃষ্টি হয়।

পুলিশ হেডকোয়ার্টার বিষয়টি গুরুত্বসহকারে নিয়ে তদন্তের নির্দেশ দেয়। অভিযোগ যাচাইয়ে গঠিত বিভাগীয় কমিটি দীর্ঘ সময় ধরে তদন্ত করে এবং একাধিক সাক্ষীর জবানবন্দি, কাগজপত্র ও ঘটনাপ্রবাহ বিশ্লেষণ করে অভিযোগের সত্যতা পান।

পুলিশের অবস্থান ও বার্তা

জেলা পুলিশের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “পুলিশ বাহিনীতে শৃঙ্খলা ও পেশাদারিত্ব বজায় রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কেউ যদি সে নীতিমালা ভঙ্গ করে, তাহলে তাকে ছাড় দেওয়া হয় না। মাসুদ রানার বিরুদ্ধে নেওয়া ব্যবস্থা এর বড় উদাহরণ।”

জনমনে প্রতিক্রিয়া

স্থানীয়ভাবে মাসুদ রানা একজন প্রভাবশালী পুলিশ কর্মকর্তা হিসেবে পরিচিত ছিলেন। তবে তার বিরুদ্ধে আগেও একাধিক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে বলে জানিয়েছেন আক্কেলপুর এলাকার কয়েকজন বাসিন্দা। তারা মনে করছেন, এমন একটি দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ভবিষ্যতে অন্য কর্মকর্তাদেরও সতর্ক রাখবে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন প্রবীণ অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, “ঘুষ ও ক্ষমতার অপব্যবহার পুলিশ সদস্যদের জন্য লজ্জাজনক। এতে পুরো বাহিনীর সুনাম ক্ষুণ্ন হয়। সময় এসেছে আত্মবিশ্লেষণের।”

আইনি বিশ্লেষণ

আইন বিশ্লেষকরা বলছেন, শুধু বিভাগীয় ব্যবস্থা যথেষ্ট নয়। যদি ঘুষ গ্রহণের ঘটনা ফৌজদারি অপরাধের আওতায় পড়ে, তাহলে তার বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলার পথও খোলা থাকা উচিত। অনেক সময় দেখা যায়, বিভাগীয় ব্যবস্থার বাইরে অপরাধী আইনের আওতায় আসে না, ফলে দৃষ্টান্ত তৈরি হয় না।

উপসংহার

ওসি থেকে এসআই—মাসুদ রানার এই অবনমন কেবল একটি ব্যক্তির পতন নয়, এটি একটি প্রতিষ্ঠানের আত্মশুদ্ধির প্রতিচ্ছবি। পুলিশ বিভাগের সুনাম ও গণভবনির্ভরতা বজায় রাখতে হলে এমন কঠোর ব্যবস্থা অব্যাহত রাখতে হবে, এমনটাই মত সচেতন মহলের।

নতুন প্রজন্মের অনলাইন টিভি

নিউজটি শেয়ার করুন

আক্কেলপুর থানার (ওসি) ঘুষ ও দুর্নীতির দায়ে ওসি মাসুদ রানার পদাবনতি, এখন এসআই25

আক্কেলপুর থানার (ওসি) ঘুষ ও দুর্নীতির দায়ে ওসি মাসুদ রানার পদাবনতি, এখন এসআই25

আপডেট সময় : ০৭:৫১:৩৪ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৫ জুন ২০২৫

জেলা প্রতিনিধিঃ ঘুষ ও দুর্নীতির অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় জয়পুরহাট জেলার আক্কেলপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাসুদ রানাকে পদাবনতি দিয়ে উপ-পরিদর্শক (এসআই) পদে নিযুক্ত করা হয়েছে। পুলিশ সদর দপ্তরের নির্দেশনায় এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হয়।

পুলিশ বিভাগের একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে, মাসুদ রানা ২০১৮ সালে রংপুর জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) শাখায় ইন্সপেক্টর পদে কর্মরত ছিলেন। সে সময় রংপুরের পীরগঞ্জ থানায় একটি চাঞ্চল্যকর হত্যা মামলার তদন্তের দায়িত্ব পান তিনি। সেই তদন্তে ঘুষ গ্রহণ ও ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে।

ঘটনার পরপরই অভিযোগের সত্যতা যাচাইয়ে একটি বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। দীর্ঘদিনের তদন্ত শেষে প্রাপ্ত সাক্ষ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগগুলো প্রমাণিত হয়।

পুলিশ সদর দপ্তর সূত্র জানায়, বিভাগীয় শৃঙ্খলাবিধি অনুযায়ী এমন গুরুতর অপরাধের জন্য উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া বাধ্যতামূলক। ফলে মাসুদ রানাকে তিন বছরের জন্য পদাবনতি দিয়ে এসআই করা হয়। তিনি এখন আর ওসি নন, বরং উপ-পরিদর্শক (এসআই) পদে দায়িত্ব পালন করছেন। যদিও বর্তমান কর্মস্থল সম্পর্কে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানানো হয়নি, তবে তার পদাবনতির বিষয়টি জয়পুরহাট জেলা পুলিশের উচ্চপর্যায়ের একাধিক কর্মকর্তা নিশ্চিত করেছেন।

দুর্নীতি মামলার পটভূমি

২০১৮ সালে পীরগঞ্জ থানায় সংঘটিত এক হত্যা মামলায় নিরপেক্ষ তদন্ত না করে পক্ষপাতদুষ্ট আচরণ এবং মোটা অঙ্কের ঘুষ গ্রহণের অভিযোগ ওঠে ইন্সপেক্টর মাসুদ রানার বিরুদ্ধে। অভিযোগ ছিল, তিনি মামলার মূল আসামিকে আড়াল করতে চেয়েছিলেন এবং নির্দোষ ব্যক্তিকে হয়রানি করছিলেন। এ নিয়ে ভুক্তভোগীর পরিবার ও স্থানীয়দের মধ্যে চরম অসন্তোষ সৃষ্টি হয়।

পুলিশ হেডকোয়ার্টার বিষয়টি গুরুত্বসহকারে নিয়ে তদন্তের নির্দেশ দেয়। অভিযোগ যাচাইয়ে গঠিত বিভাগীয় কমিটি দীর্ঘ সময় ধরে তদন্ত করে এবং একাধিক সাক্ষীর জবানবন্দি, কাগজপত্র ও ঘটনাপ্রবাহ বিশ্লেষণ করে অভিযোগের সত্যতা পান।

পুলিশের অবস্থান ও বার্তা

জেলা পুলিশের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “পুলিশ বাহিনীতে শৃঙ্খলা ও পেশাদারিত্ব বজায় রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কেউ যদি সে নীতিমালা ভঙ্গ করে, তাহলে তাকে ছাড় দেওয়া হয় না। মাসুদ রানার বিরুদ্ধে নেওয়া ব্যবস্থা এর বড় উদাহরণ।”

জনমনে প্রতিক্রিয়া

স্থানীয়ভাবে মাসুদ রানা একজন প্রভাবশালী পুলিশ কর্মকর্তা হিসেবে পরিচিত ছিলেন। তবে তার বিরুদ্ধে আগেও একাধিক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে বলে জানিয়েছেন আক্কেলপুর এলাকার কয়েকজন বাসিন্দা। তারা মনে করছেন, এমন একটি দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ভবিষ্যতে অন্য কর্মকর্তাদেরও সতর্ক রাখবে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন প্রবীণ অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, “ঘুষ ও ক্ষমতার অপব্যবহার পুলিশ সদস্যদের জন্য লজ্জাজনক। এতে পুরো বাহিনীর সুনাম ক্ষুণ্ন হয়। সময় এসেছে আত্মবিশ্লেষণের।”

আইনি বিশ্লেষণ

আইন বিশ্লেষকরা বলছেন, শুধু বিভাগীয় ব্যবস্থা যথেষ্ট নয়। যদি ঘুষ গ্রহণের ঘটনা ফৌজদারি অপরাধের আওতায় পড়ে, তাহলে তার বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলার পথও খোলা থাকা উচিত। অনেক সময় দেখা যায়, বিভাগীয় ব্যবস্থার বাইরে অপরাধী আইনের আওতায় আসে না, ফলে দৃষ্টান্ত তৈরি হয় না।

উপসংহার

ওসি থেকে এসআই—মাসুদ রানার এই অবনমন কেবল একটি ব্যক্তির পতন নয়, এটি একটি প্রতিষ্ঠানের আত্মশুদ্ধির প্রতিচ্ছবি। পুলিশ বিভাগের সুনাম ও গণভবনির্ভরতা বজায় রাখতে হলে এমন কঠোর ব্যবস্থা অব্যাহত রাখতে হবে, এমনটাই মত সচেতন মহলের।