আধুনিক তুরস্কের নকশায় ১০ তলা পাগলা মসজিদ কমপ্লেক্স নির্মাণের ঘোষণা - ধর্ম উপদেষ্টা ড. খালিদ হাসান
আধুনিক তুরস্কের নকশায় ১০ তলা পাগলা মসজিদ কমপ্লেক্স নির্মাণের ঘোষণা – ধর্ম উপদেষ্টা ড. খালিদ হাসান

- আপডেট সময় : ০৬:৩৩:১২ অপরাহ্ন, রবিবার, ১০ আগস্ট ২০২৫ ৭ বার পড়া হয়েছে
জেলা প্রতিনিধি: আধুনিক তুরস্কের নকশায় ১০ তলা পাগলা মসজিদ কমপ্লেক্স নির্মাণের ঘোষণা – ধর্ম উপদেষ্টা ড. খালিদ হাসান, দেশের অন্যতম ঐতিহাসিক ও ধর্মীয়ভাবে গুরুত্বপূর্ণ কিশোরগঞ্জের পাগলা মসজিদে নির্মিত হতে যাচ্ছে, আধুনিক তুরস্কের নকশায় ১০ তলা বিশিষ্ট বহুমুখী ইসলামিক কমপ্লেক্স, এ ঘোষণা দিয়েছেন ধর্মবিষয়ক উপদেষ্টা ড. আ.ফ.ম খালিদ হাসান।
রবিবার (১০ আগস্ট) দুপুরে পাগলা মসজিদ পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “মসজিদের বর্তমান আয়তন ৫ দশমিক ৫ একর। আরও কিছু জমি ক্রয় করে এখানে দৃষ্টিনন্দন একটি দশতলা ইসলামিক কমপ্লেক্স গড়ে তোলা হবে, যেখানে থাকবে এতিম শিশুদের জন্য আবাসিক শিক্ষাব্যবস্থা, সমৃদ্ধ লাইব্রেরি, আধুনিক আইটি সেকশন ও একটি ক্যাফেটেরিয়া।”
তিনি জানান, ইতোমধ্যে জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বে গঠিত ১২ সদস্যবিশিষ্ট একটি কমিটি এই প্রকল্প বাস্তবায়নে কাজ করছে। দেশে-বিদেশে খ্যাত ১২টি প্রতিষ্ঠান ডিজাইন জমা দিয়েছে। রাজশাহী প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (রুয়েট) একটি এক্সপার্ট প্যানেল এসব ডিজাইন পরীক্ষা করে একটি প্রতিষ্ঠানকে মনোনয়ন দিয়েছে।
ড. খালিদ হাসান আশা প্রকাশ করেন, “অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই কমপ্লেক্সের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হবে।”
ধর্ম উপদেষ্টা বলেন, “পাগলা মসজিদের অনুদান থেকে জমাকৃত ৯০ কোটি ৬৪ লাখ টাকা দেশের ১৩টি ব্যাংকে এফডিআর আকারে রাখা আছে। এর লভ্যাংশ গরিব, অসহায়, অসুস্থ ও অনাথদের সেবায় ব্যবহার করা হয়।”
তিনি আরও জানান, ইতোমধ্যে প্রায় ৮০ লাখ টাকা বিতরণ করা হয়েছে এই তহবিল থেকে। নতুনভাবে তিনি প্রস্তাব দিয়েছেন, স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের দরিদ্র শিক্ষার্থীদেরও এই তহবিল থেকে সহায়তা দেওয়া হোক। তাঁর মতে, “এই উদ্যোগ বাস্তবায়িত হলে দেশের শিক্ষাক্ষেত্রে আর্থিকভাবে পিছিয়ে থাকা শিক্ষার্থীদের জন্য এক বড় সুযোগ তৈরি হবে।”
সম্প্রতি দেশের কিছু স্থানে মাজার ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে হামলার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে ড. খালিদ হাসান বলেন,
“মসজিদ, মাজার, মাদ্রাসা বা এতিমখানায় হামলা চালালে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। আমি আন্তঃমন্ত্রণালয় আইনশৃঙ্খলা কমিটির সদস্য হিসেবে বলতে পারি, এসব বিষয়ে প্রতিমাসে আমাদের বৈঠকে আলোচনা হয়।”
তিনি সব ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের প্রশাসনকে সিসি ক্যামেরা স্থাপনের পরামর্শ দিয়ে বলেন,
“প্রত্যেকটা মাজারে পুলিশ মোতায়েন সম্ভব নয়। তাই সবাইকে সচেতন হতে হবে এবং ধর্মীয় স্থাপনার নিরাপত্তায় অংশ নিতে হবে।”
তিনি জানান, ইতোমধ্যে হামলার ঘটনায় বিভিন্ন স্থানে মামলা হয়েছে এবং অভিযুক্তদের গ্রেফতার করা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এসব মামলার ভিত্তিতে কাজ করছে।
পাগলা মসজিদ ঘুরে দেখার পর ধর্ম উপদেষ্টা মসজিদ কমিটির সদস্যদের সঙ্গে একটি মতবিনিময় সভায় অংশগ্রহণ করেন। সভায় ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা, স্থাপনা উন্নয়ন, সামাজিক কার্যক্রম এবং নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয়ের ওপর আলোচনা হয়।
এর আগে সকালেই তিনি কিশোরগঞ্জ সদরের মারিয়া ইউনিয়নের মোল্লাপাড়া এলাকায় নির্মাণাধীন জেলা মডেল মসজিদ ও ইসলামিক কমপ্লেক্স পরিদর্শন করেন।
পরে দুপুরে আল জামিয়াতুল এমদাদিয়ায় “ইসলামী অর্থনীতির গুরুত্ব” শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে যোগ দেন। সেখান থেকে তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন।
এই সফরে তার সঙ্গে ছিলেন— জেলা প্রশাসক ফৌজিয়া খান, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মিজাবে রহমত, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) ইমরানুল ইসলাম, আল জামিয়াতুল ইমদাদিয়ার প্রিন্সিপাল মাওলানা শিব্বির আহমদ।
মসজিদ কমিটির সদস্যবৃন্দ ও স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ।
পাগলা মসজিদ শুধু একটি ধর্মীয় স্থাপনাই নয়, এটি দেশের ইতিহাস, সংস্কৃতি এবং জনসেবার এক অনন্য দৃষ্টান্ত। আধুনিক ইসলামিক কমপ্লেক্স নির্মাণ ও তহবিলের স্বচ্ছ ব্যবহারের মাধ্যমে এটি হয়ে উঠছে একটি আদর্শ সামাজিক প্ল্যাটফর্ম। ধর্ম উপদেষ্টার এই সফর এবং ঘোষণাগুলো কেবল একটি মসজিদকে নয়, পুরো অঞ্চলের ধর্মীয় ও সামাজিক অগ্রগতিকে ত্বরান্বিত করবে—এমনটাই প্রত্যাশা স্থানীয়দের।