ঢাকা ০১:৫৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ০৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

আপিলে ঝুলে আছে বিচার, বাবার আক্ষেপ

অনলাইন ডেস্ক
  • আপডেট সময় : ১২:৫২:৩৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৯ ডিসেম্বর ২০২৫
  • / 5

‘ ছোট ভাইকে হত্যার বিচার চেয়ে কত জায়গায় গেলাম, কিন্তু বিচার পাইলাম কই! শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ভেবেছিলাম, আমরা বিচার পাব। এই সরকারও আমার ভাই হত্যার বিষয় আমলে নেয়নি। একটা প্রকাশ্য হত্যার বিচার ১৩ বছর ধরে ঝুলে আছে।’ এভাবেই বিশ্বজিৎ দাস হত্যার বিচার না পাওয়ার আক্ষেপ প্রকাশ করেন তাঁর বড় ভাই উত্তম দাস।

২০১২ সালের ৯ ডিসেম্বর পুরান ঢাকার ভিক্টোরিয়া পার্কের পাশে নৃশংসভাবে কুপিয়ে দর্জি দোকানি বিশ্বজিৎ দাসকে হত্যা করে তৎকালীন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের (বর্তমানে নিষিদ্ধ) নেতাকর্মীরা। উত্তম দাস সমকালকে বলেন, ‘জজকোর্টে রায় হওয়ার পর উচ্চ আদালতে বিচার থেমে আছে। এগুলো ছিল আওয়ামী সরকারের কারসাজি। অনেক আগে থেকেই আসামিরা খালাস পেয়ে প্রকাশ্যে ঘুরছে। তবে অন্য দলের কেউ হত্যা করলে ঠিকই বিচার হতো। শুধু বিচারটাই চাওয়া ছিল, আর তো কিছু চাইনি। শেখ হাসিনার পতনের পরপরই বিচার পাব বলে আশায় বুক বেঁধেছিলাম। ছোট ভাইটাকে হাত ধরে ঢাকায় আনলাম, তারপর হত্যার শিকার হলো। এর চেয়ে কষ্টের আর কিছু নেই।’

বিচারের আশায় বুক বেঁধে আছেন বিশ্বজিতের বাবা ৭৪ বছর বয়সী অনন্ত দাসও। তিনি বলেন, ‘এটা তো সরকার বাদী মামলা। আপিল হচ্ছে, রায়ে কী হচ্ছে এটা আর বলার মতো না। হাসিনার আমলে আপিলে অনেককে ছেড়ে দিয়েছে। বিচার আর হই কই? এখন তো আর হাসিনা নেই, এখন বিচার করতে সমস্যা কোথায়? ছেলে হত্যার বিচার দেখার অপেক্ষাতেই বেঁচে আছি।’

বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দলের অবরোধ চলার সময় ২০১২ সালের ৯ ডিসেম্বর বাহাদুর শাহ পার্কের সামনে বিশ্বজিৎকে নৃশংসভাবে কুপিয়ে ও পিটিয়ে হত্যা করে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। শাঁখারীবাজারে দর্জির দোকান ছিল বিশ্বজিতের। তাঁর গ্রামের বাড়ি শরীয়তপুর। রাজধানীর লক্ষ্মীবাজারে বড় ভাইয়ের সঙ্গে থাকতেন তিনি। হত্যার ঘটনায় অজ্ঞাতপরিচয় ২৫ জনকে আসামি করে রাজধানীর সূত্রাপুর থানায় মামলা করে পুলিশ। ২০১৩ সালের ৫ মার্চ ২১ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে গোয়েন্দা পুলিশ। ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালত ২০১৩ সালের ১৮ ডিসেম্বর রায়ে আটজনকে মৃত্যুদণ্ড এবং ১৩ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন। ২০১৭ সালের ৬ আগস্ট হাইকোর্ট নিম্ন আদালতে মৃত্যুদণ্ড পাওয়া আট আসামির মধ্যে দুজনের মৃত্যুদণ্ড বহাল, চারজনের মৃত্যুদণ্ড পরিবর্তন করে যাবজ্জীবন এবং অন্য দুজনকে খালাস দিয়ে রায় দেন। এ ছাড়া যাবজ্জীবন কারাদণ্ড পাওয়া ১৩ আসামির মধ্যে আপিল করে খালাস পেয়েছিলেন দুজন।  বর্তমানে মামলাটি আপিল বিভাগে বিচারাধীন।

ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর ওমর ফারুক ফারুকী বলেন, ফ্যাসিস্ট আমলে তাদের নিজস্ব কিছু আইনজীবীর মাধ্যমে অনেক আসামি জামিন নিয়েছে। আলোচিত এই মামলা দ্রুত শেষ করার পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।

এ বিষয়ে অতিরিক্ত অ্যার্টনি জেনারেল মুহাম্মদ আব্দুল জব্বার ভুঞা সমকালকে বলেন, ‘আইন ও বিচার বিভাগে আগে যারা ছিল তারা এ ধরনের মামলাগুলো নামমাত্র একটা ফাইল করে রেখেছিল। আমরা এই মামলাসহ এ রকম যেসব ঘটনা আছে সেগুলো আবার বিচারের আওতায় আনব।’

নতুন প্রজন্মের অনলাইন টিভি

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

আপিলে ঝুলে আছে বিচার, বাবার আক্ষেপ

আপডেট সময় : ১২:৫২:৩৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৯ ডিসেম্বর ২০২৫

‘ ছোট ভাইকে হত্যার বিচার চেয়ে কত জায়গায় গেলাম, কিন্তু বিচার পাইলাম কই! শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ভেবেছিলাম, আমরা বিচার পাব। এই সরকারও আমার ভাই হত্যার বিষয় আমলে নেয়নি। একটা প্রকাশ্য হত্যার বিচার ১৩ বছর ধরে ঝুলে আছে।’ এভাবেই বিশ্বজিৎ দাস হত্যার বিচার না পাওয়ার আক্ষেপ প্রকাশ করেন তাঁর বড় ভাই উত্তম দাস।

২০১২ সালের ৯ ডিসেম্বর পুরান ঢাকার ভিক্টোরিয়া পার্কের পাশে নৃশংসভাবে কুপিয়ে দর্জি দোকানি বিশ্বজিৎ দাসকে হত্যা করে তৎকালীন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের (বর্তমানে নিষিদ্ধ) নেতাকর্মীরা। উত্তম দাস সমকালকে বলেন, ‘জজকোর্টে রায় হওয়ার পর উচ্চ আদালতে বিচার থেমে আছে। এগুলো ছিল আওয়ামী সরকারের কারসাজি। অনেক আগে থেকেই আসামিরা খালাস পেয়ে প্রকাশ্যে ঘুরছে। তবে অন্য দলের কেউ হত্যা করলে ঠিকই বিচার হতো। শুধু বিচারটাই চাওয়া ছিল, আর তো কিছু চাইনি। শেখ হাসিনার পতনের পরপরই বিচার পাব বলে আশায় বুক বেঁধেছিলাম। ছোট ভাইটাকে হাত ধরে ঢাকায় আনলাম, তারপর হত্যার শিকার হলো। এর চেয়ে কষ্টের আর কিছু নেই।’

বিচারের আশায় বুক বেঁধে আছেন বিশ্বজিতের বাবা ৭৪ বছর বয়সী অনন্ত দাসও। তিনি বলেন, ‘এটা তো সরকার বাদী মামলা। আপিল হচ্ছে, রায়ে কী হচ্ছে এটা আর বলার মতো না। হাসিনার আমলে আপিলে অনেককে ছেড়ে দিয়েছে। বিচার আর হই কই? এখন তো আর হাসিনা নেই, এখন বিচার করতে সমস্যা কোথায়? ছেলে হত্যার বিচার দেখার অপেক্ষাতেই বেঁচে আছি।’

বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দলের অবরোধ চলার সময় ২০১২ সালের ৯ ডিসেম্বর বাহাদুর শাহ পার্কের সামনে বিশ্বজিৎকে নৃশংসভাবে কুপিয়ে ও পিটিয়ে হত্যা করে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। শাঁখারীবাজারে দর্জির দোকান ছিল বিশ্বজিতের। তাঁর গ্রামের বাড়ি শরীয়তপুর। রাজধানীর লক্ষ্মীবাজারে বড় ভাইয়ের সঙ্গে থাকতেন তিনি। হত্যার ঘটনায় অজ্ঞাতপরিচয় ২৫ জনকে আসামি করে রাজধানীর সূত্রাপুর থানায় মামলা করে পুলিশ। ২০১৩ সালের ৫ মার্চ ২১ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে গোয়েন্দা পুলিশ। ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালত ২০১৩ সালের ১৮ ডিসেম্বর রায়ে আটজনকে মৃত্যুদণ্ড এবং ১৩ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন। ২০১৭ সালের ৬ আগস্ট হাইকোর্ট নিম্ন আদালতে মৃত্যুদণ্ড পাওয়া আট আসামির মধ্যে দুজনের মৃত্যুদণ্ড বহাল, চারজনের মৃত্যুদণ্ড পরিবর্তন করে যাবজ্জীবন এবং অন্য দুজনকে খালাস দিয়ে রায় দেন। এ ছাড়া যাবজ্জীবন কারাদণ্ড পাওয়া ১৩ আসামির মধ্যে আপিল করে খালাস পেয়েছিলেন দুজন।  বর্তমানে মামলাটি আপিল বিভাগে বিচারাধীন।

ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর ওমর ফারুক ফারুকী বলেন, ফ্যাসিস্ট আমলে তাদের নিজস্ব কিছু আইনজীবীর মাধ্যমে অনেক আসামি জামিন নিয়েছে। আলোচিত এই মামলা দ্রুত শেষ করার পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।

এ বিষয়ে অতিরিক্ত অ্যার্টনি জেনারেল মুহাম্মদ আব্দুল জব্বার ভুঞা সমকালকে বলেন, ‘আইন ও বিচার বিভাগে আগে যারা ছিল তারা এ ধরনের মামলাগুলো নামমাত্র একটা ফাইল করে রেখেছিল। আমরা এই মামলাসহ এ রকম যেসব ঘটনা আছে সেগুলো আবার বিচারের আওতায় আনব।’