ঢাকা ০১:২৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ২১ জুন ২০২৫, ৭ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ইসরাইলের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর দায়িত্ব সবার

ইসরাইলের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর দায়িত্ব সবার25

অনলাইন ডেস্ক
  • আপডেট সময় : ০৮:৫৭:০৭ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২১ জুন ২০২৫ ৭ বার পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদনঃ ফিলিস্তিনের গাজায় চলমান নৃশংসতার মাঝেই ইরানের সঙ্গে সংঘাতে জড়িয়েছে ইসরাইল। যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যকার পারমাণবিক আলোচনার মধ্যে ১৩ জুন ভোরে গুরুত্বপূর্ণ পারমাণবিক স্থাপনাসহ বিভিন্ন স্থানে বিমান ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় দেশটি। আত্মরক্ষার অধিকার রয়েছে জানিয়ে ইসরাইলের ওপরও পালটা হামলা করে ইরান। এ নিয়ে দুদেশের পালটাপালটি হামলা গড়িয়েছে অষ্টম দিনে। রক্তক্ষয়ী নতুন এ সংঘাতে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে মধ্যপ্রাচ্য পরিস্থিতি।

ইসরাইলের হামলার প্রথম দিনে ইরানের ২০ শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তা নিহত হলেও মনোবল হারায়নি দেশটি। ইসরাইলি আগ্রাসের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলে তেহরান।

২০ মাস ধরে গাজায় নৃশংস হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরাইল। কিন্তু ইরানের সঙ্গে সংঘাতে মাত্র কয়েকদিনেই ক্ষতির মুখে পড়ল তেল আবিব।

পালটাপালটি হামলার মধ্যে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির ওপর হামলার হুমকি দেয় ইসরাইল ও যুক্তরাষ্ট্র। এরপরও মনোবলে চিড় ধরানো যায়নি ইরানের। এই আবেগ, এই দৃঢ়তা ইরানি জনগণের মধ্যে কীভাবে সৃষ্টি হলো, এই মানসিকতা কীভাবে গড়ে উঠল-জানতে কথা হয় ঢাকায় ইরানের রাষ্ট্রদূত মানসুর চাভুমির সঙ্গে।

শুক্রবার ঢাকায় কয়েকজন সাংবাদিকের সঙ্গে আলাপকালে ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরান দূতাবাসের রাষ্ট্রদূত মানসুর চাভুশি বলেন, ‘নিপীড়িতদের পক্ষে দাঁড়ানো এবং যারা (ইসরাইল) নির্মম হত্যাকাণ্ড চালাচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো সব দেশেরই দায়িত্ব। এটা নিছক একটা আগ্রাসন নয়। এটি নিপীড়িতদের প্রতি এবং গোটা অঞ্চলের ওপর চালানো এক ভয়াবহ আগ্রাসন। এই আগ্রাসন অবশ্যই থামানো উচিত।’

ইরানের রাষ্ট্রদূত বলেন, তেহরানের পারমাণবিক কর্মসূচি সম্পূর্ণরূপে শান্তিপূর্ণ উদ্দেশ্যে ব্যবহারের জন্য। এখন পর্যন্ত এর কোনো প্রমাণ মেলেনি যে ইরান পারমাণবিক শক্তিকে অস্ত্র বা অন্য কোনো ধ্বংসাত্মক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করতে চাইছে। ইরান এমন কোনো লক্ষ্যই অনুসরণ করছে না।

তেহরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ইরানের একটি আলোচনার প্রক্রিয়া চলছিল। কিন্তু এ হামলার কারণে সেই আলোচনা ব্যাহত হয়েছে।

ইরান কি এখনো যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সরাসরি আলোচনায় আগ্রহী-এমন প্রশ্নের জবাবে ইরানি দূত বলেন, এ হামলাগুলো এমন একসময় ঘটেছে, যখন ইরান ও যুক্তরাষ্ট্র আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছিল এবং সেই আলোচনা একটি ফলাফলের দিকে এগিয়ে যাওয়ার কথা ছিল। এ বিষয়ে বেশকিছু প্রস্তাবও ছিল। এমনকি বিষয়টি আলোচনার এজেন্ডায় অন্তর্ভুক্ত ছিল। কিন্তু হঠাৎই ইসরাইলের এ হামলার উদ্দেশ্য কূটনৈতিক পথ ধ্বংস করা এবং আমাদের উদ্দেশ্যকে বিভ্রান্ত করা। এর ফলে আলোচনার ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে।

সংঘাতের পরিসর বাড়তে থাকলে তেলের দাম ঝুঁকিপূর্ণ হবে মনে করছেন ইরানি দূত। তিনি বলেন, যদি আগ্রাসন অব্যাহত থাকে এবং তা অন্য খাতে, বিশেষ করে অর্থনৈতিক খাতে ছড়িয়ে পড়ে, তাহলে তেলের দাম পরিবর্তিত হতে পারে। আমি সুনির্দিষ্টভাবে বলতে পারি না দাম কতটা বাড়বে। তবে এটা নিশ্চিত যে, এর প্রভাব আরও গভীর ও বিস্তৃত হবে।

ইরানে ইসরাইলি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে ঢাকা। কঠিন সময়ে বাংলাদেশসহ যেসব দেশ ইরানি জনগণের পাশে দাঁড়িয়েছে, তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান ইরানি দূত।

তিনি বলেন, আমরা কৃতজ্ঞ সেই দেশগুলোর প্রতি। বাংলাদেশসহ আরও অনেক দেশ, যারা ইরানের বিরুদ্ধে চালানো এ সশস্ত্র হামলার নিন্দা জানিয়েছে। আমরা আশা করি, অন্য দেশগুলোরও উচিত হবে এই বর্বর ও সশস্ত্র হামলার নিন্দা জানানো।

ইসরাইলের সঙ্গে চলমান সংঘাতে ওআইসি ও জাতিসংঘের ভূমিকা নিয়ে মানসুর চাভুশি বলেন, এ আগ্রাসন ও সশস্ত্র হামলার পর যদি কেউ নীরব থাকে, তাহলে তা আন্তর্জাতিক আইনের ভিত্তিমূল দুর্বল করে দেয়। এটি জাতিসংঘের সনদ, সাধারণ পরিষদের সনদ, এমনকি নিরাপত্তা পরিষদের সনদের প্রতিও অবহেলার শামিল।

মধ্যপ্রাচ্যের অন্য দেশগুলোর কী অবস্থান, ইরান কি একাই ইসরাইলের বিপক্ষে লড়ছে-এ প্রশ্নের জবাবে ইরানি দূত বলেন, আমরা প্রত্যাশা করি এবং প্রয়োজন মনে করি সব দেশই ইরানের ওপর চালানো এ সশস্ত্র হামলার নিন্দা জানাবে। সৌভাগ্যক্রমে, ইতোমধ্যে অনেক দেশ এ হামলার নিন্দা জানিয়েছে এবং আমরা আশা করি, অন্যরাও তা করবে।

এই যুদ্ধ বা সংঘাতের পর ইরানের অর্থনীতি আবারও ঘুরে দাঁড়াবে এবং সব বাধা অতিক্রম করে একটি স্থিতিশীল পরিবেশ প্রতিষ্ঠিত হবে বলে ইরানি রাষ্ট্রদূতের প্রত্যাশা।

নতুন প্রজন্মের অনলাইন টিভি

নিউজটি শেয়ার করুন

ইসরাইলের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর দায়িত্ব সবার

ইসরাইলের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর দায়িত্ব সবার25

আপডেট সময় : ০৮:৫৭:০৭ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২১ জুন ২০২৫

নিজস্ব প্রতিবেদনঃ ফিলিস্তিনের গাজায় চলমান নৃশংসতার মাঝেই ইরানের সঙ্গে সংঘাতে জড়িয়েছে ইসরাইল। যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যকার পারমাণবিক আলোচনার মধ্যে ১৩ জুন ভোরে গুরুত্বপূর্ণ পারমাণবিক স্থাপনাসহ বিভিন্ন স্থানে বিমান ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় দেশটি। আত্মরক্ষার অধিকার রয়েছে জানিয়ে ইসরাইলের ওপরও পালটা হামলা করে ইরান। এ নিয়ে দুদেশের পালটাপালটি হামলা গড়িয়েছে অষ্টম দিনে। রক্তক্ষয়ী নতুন এ সংঘাতে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে মধ্যপ্রাচ্য পরিস্থিতি।

ইসরাইলের হামলার প্রথম দিনে ইরানের ২০ শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তা নিহত হলেও মনোবল হারায়নি দেশটি। ইসরাইলি আগ্রাসের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলে তেহরান।

২০ মাস ধরে গাজায় নৃশংস হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরাইল। কিন্তু ইরানের সঙ্গে সংঘাতে মাত্র কয়েকদিনেই ক্ষতির মুখে পড়ল তেল আবিব।

পালটাপালটি হামলার মধ্যে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির ওপর হামলার হুমকি দেয় ইসরাইল ও যুক্তরাষ্ট্র। এরপরও মনোবলে চিড় ধরানো যায়নি ইরানের। এই আবেগ, এই দৃঢ়তা ইরানি জনগণের মধ্যে কীভাবে সৃষ্টি হলো, এই মানসিকতা কীভাবে গড়ে উঠল-জানতে কথা হয় ঢাকায় ইরানের রাষ্ট্রদূত মানসুর চাভুমির সঙ্গে।

শুক্রবার ঢাকায় কয়েকজন সাংবাদিকের সঙ্গে আলাপকালে ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরান দূতাবাসের রাষ্ট্রদূত মানসুর চাভুশি বলেন, ‘নিপীড়িতদের পক্ষে দাঁড়ানো এবং যারা (ইসরাইল) নির্মম হত্যাকাণ্ড চালাচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো সব দেশেরই দায়িত্ব। এটা নিছক একটা আগ্রাসন নয়। এটি নিপীড়িতদের প্রতি এবং গোটা অঞ্চলের ওপর চালানো এক ভয়াবহ আগ্রাসন। এই আগ্রাসন অবশ্যই থামানো উচিত।’

ইরানের রাষ্ট্রদূত বলেন, তেহরানের পারমাণবিক কর্মসূচি সম্পূর্ণরূপে শান্তিপূর্ণ উদ্দেশ্যে ব্যবহারের জন্য। এখন পর্যন্ত এর কোনো প্রমাণ মেলেনি যে ইরান পারমাণবিক শক্তিকে অস্ত্র বা অন্য কোনো ধ্বংসাত্মক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করতে চাইছে। ইরান এমন কোনো লক্ষ্যই অনুসরণ করছে না।

তেহরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ইরানের একটি আলোচনার প্রক্রিয়া চলছিল। কিন্তু এ হামলার কারণে সেই আলোচনা ব্যাহত হয়েছে।

ইরান কি এখনো যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সরাসরি আলোচনায় আগ্রহী-এমন প্রশ্নের জবাবে ইরানি দূত বলেন, এ হামলাগুলো এমন একসময় ঘটেছে, যখন ইরান ও যুক্তরাষ্ট্র আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছিল এবং সেই আলোচনা একটি ফলাফলের দিকে এগিয়ে যাওয়ার কথা ছিল। এ বিষয়ে বেশকিছু প্রস্তাবও ছিল। এমনকি বিষয়টি আলোচনার এজেন্ডায় অন্তর্ভুক্ত ছিল। কিন্তু হঠাৎই ইসরাইলের এ হামলার উদ্দেশ্য কূটনৈতিক পথ ধ্বংস করা এবং আমাদের উদ্দেশ্যকে বিভ্রান্ত করা। এর ফলে আলোচনার ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে।

সংঘাতের পরিসর বাড়তে থাকলে তেলের দাম ঝুঁকিপূর্ণ হবে মনে করছেন ইরানি দূত। তিনি বলেন, যদি আগ্রাসন অব্যাহত থাকে এবং তা অন্য খাতে, বিশেষ করে অর্থনৈতিক খাতে ছড়িয়ে পড়ে, তাহলে তেলের দাম পরিবর্তিত হতে পারে। আমি সুনির্দিষ্টভাবে বলতে পারি না দাম কতটা বাড়বে। তবে এটা নিশ্চিত যে, এর প্রভাব আরও গভীর ও বিস্তৃত হবে।

ইরানে ইসরাইলি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে ঢাকা। কঠিন সময়ে বাংলাদেশসহ যেসব দেশ ইরানি জনগণের পাশে দাঁড়িয়েছে, তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান ইরানি দূত।

তিনি বলেন, আমরা কৃতজ্ঞ সেই দেশগুলোর প্রতি। বাংলাদেশসহ আরও অনেক দেশ, যারা ইরানের বিরুদ্ধে চালানো এ সশস্ত্র হামলার নিন্দা জানিয়েছে। আমরা আশা করি, অন্য দেশগুলোরও উচিত হবে এই বর্বর ও সশস্ত্র হামলার নিন্দা জানানো।

ইসরাইলের সঙ্গে চলমান সংঘাতে ওআইসি ও জাতিসংঘের ভূমিকা নিয়ে মানসুর চাভুশি বলেন, এ আগ্রাসন ও সশস্ত্র হামলার পর যদি কেউ নীরব থাকে, তাহলে তা আন্তর্জাতিক আইনের ভিত্তিমূল দুর্বল করে দেয়। এটি জাতিসংঘের সনদ, সাধারণ পরিষদের সনদ, এমনকি নিরাপত্তা পরিষদের সনদের প্রতিও অবহেলার শামিল।

মধ্যপ্রাচ্যের অন্য দেশগুলোর কী অবস্থান, ইরান কি একাই ইসরাইলের বিপক্ষে লড়ছে-এ প্রশ্নের জবাবে ইরানি দূত বলেন, আমরা প্রত্যাশা করি এবং প্রয়োজন মনে করি সব দেশই ইরানের ওপর চালানো এ সশস্ত্র হামলার নিন্দা জানাবে। সৌভাগ্যক্রমে, ইতোমধ্যে অনেক দেশ এ হামলার নিন্দা জানিয়েছে এবং আমরা আশা করি, অন্যরাও তা করবে।

এই যুদ্ধ বা সংঘাতের পর ইরানের অর্থনীতি আবারও ঘুরে দাঁড়াবে এবং সব বাধা অতিক্রম করে একটি স্থিতিশীল পরিবেশ প্রতিষ্ঠিত হবে বলে ইরানি রাষ্ট্রদূতের প্রত্যাশা।