খুলনার আড়ংঘাটা প্রেসক্লাবে সন্ত্রাসী হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ25
খুলনার আড়ংঘাটা প্রেসক্লাবে সন্ত্রাসী হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ25

- আপডেট সময় : ০২:২৬:০৭ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৬ জুন ২০২৫ ৫ বার পড়া হয়েছে
জেলা প্রতিনিধিঃ খুলনা মহানগরীর আড়ংঘাটা থানাধীন শলুয়া সু্চিগেটের পাশেই অবস্থিত আড়ংঘাটা প্রেসক্লাবে গত মঙ্গলবার (২৪ জুন) ভোররাতে সন্ত্রাসী হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের একটি তীব্র ঘটনা ঘটেছে, যা স্থানীয় সাংবাদিক সমাজে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে। এ ঘটনায় প্রেসক্লাবের অফিসের গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র, যেগুলো প্রায় ৯ বছর ধরে সংরক্ষিত ছিল, সম্পূর্ণ পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে। পাশাপাশি অফিসের আসবাবপত্র, কম্পিউটার ও জানালা-দরজা পর্যন্ত ভাঙচুর করা হয়েছে।
আড়ংঘাটা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক এমদাদুল ইসলাম জানান, শলুয়া এলাকার কুখ্যাত সন্ত্রাসী সুজন সরকার ও তার সহযোগীরা এ হামলা চালিয়েছে। তিনি জানান, সন্ত্রাসীরা সন্দেহ করে, তিনি প্রশাসনকে খবর দিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করতে সহায়তা করেন এবং তাদের বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশ করেন। সেই শত্রুতার কারণে তারা এধরণের ভয়াবহ হামলা চালিয়েছে।
সুজন সরকারকে শুধু সাংবাদিকদেরই নয়, সমগ্র এলাকাজুড়ে এক আতঙ্কের নাম হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। তিনি শলুয়ার একজন কুখ্যাত সন্ত্রাসী ও আরিফ হত্যার প্রধান আসামি। এছাড়া, তার বিরুদ্ধে ডাকাতি মামলাসহ মাদক ব্যবসা, চাঁদাবাজি, ভূমি দখল এবং সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে অর্থ আদায়ের অভিযোগ রয়েছে। পুলিশ তার কাছ থেকে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত অস্ত্রও উদ্ধার করেছে। সুজন সরকার পূর্ব বাংলা কমিউনিস্ট পার্টির আঞ্চলিক কমান্ডার হিসেবেও পরিচিত।
এই হামলার ঘটনায় স্থানীয় প্রশাসনও দ্রুত পদক্ষেপ নিচ্ছে। আড়ংঘাটা থানার অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ তুহিনুজ্জামান ঘটনাটির সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, “এটি একটি অত্যন্ত দুঃখজনক ঘটনা। আমরা বিষয়টিকে গুরুত্বের সঙ্গে দেখছি এবং যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”
স্থানীয় সাংবাদিক সমাজ এবং ঢাকা সহ বিভিন্ন প্রেসক্লাবের নেতৃবৃন্দ এই হামলার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন। তারা এ ধরনের জঘন্য হামলার সাথে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন।
ঢাকা প্রেসক্লাবের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব মোঃ তৈয়বুর রহমান, বিচারপতি ছিদ্দিকুর রহমান, দৈনিক দেশ বাংলার প্রকাশক মোঃ সাইদুর রহমান রিমন, চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির সভাপতি কাজী হায়াৎ, সিনিয়র অভিনেতা মনোয়ার হোসেন (ডিপজল), ফেডারেশন অব বাংলাদেশ জার্নালিস্ট অর্গানাইজেশনের চেয়ারম্যান এস এম মোরশেদসহ বহু নেতৃবৃন্দ এই হামলার নিন্দা জানিয়ে দ্রুত সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছেন।
এ সময় নেতৃবৃন্দরা বলেন, প্রেসক্লাব কারো ব্যক্তিগত সম্পত্তি বা কোনো রাজনৈতিক দলের মালিকানাধীন সম্পত্তি নয়। তাহলে কেন এমন হামলা চালিয়ে লুটপাট এবং অগ্নিসংযোগ করা হলো, তা জনগণের কাছে স্পষ্ট হওয়া জরুরি। প্রেসক্লাব একটি পেশাদার সাংবাদিক সংগঠন হিসেবে সমাজের তথ্য আদান-প্রদানের জন্য প্রতিষ্ঠিত, যেখানে সাংবাদিকরা নির্ভয়ে কাজ করতে পারেন – এই নিরাপত্তাকে কেউ ভঙ্গ করতে পারবে না।
সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ আরও দাবি করেন, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও সাংবাদিক সমাজের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে আরও শক্তভাবে ভূমিকা নিতে হবে। কারণ, সাংবাদিকদের উপর এই ধরনের হামলা দেশের গণমাধ্যমের স্বাধীনতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে এবং সমাজে জঙ্গি ও সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর দাপট বাড়ায়।
এদিকে, আড়ংঘাটা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক এমদাদুল ইসলাম থানায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তিনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানান। তিনি বলেন, “সন্ত্রাসীরা যেন আর কারো উপরে আঘাত হানতে না পারে এবং সাংবাদিকরা নির্বিঘ্নে কাজ করতে পারেন সেই নিশ্চয়তা দিতে হবে।”
শলুয়া এলাকার সাধারণ জনগণও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে মুখ খুলেছেন এবং শান্তিপূর্ণ সমাজ বজায় রাখতে প্রশাসনের দ্রুত হস্তক্ষেপের দাবি জানাচ্ছেন। তারা বলেন, এলাকার নিরাপত্তা ও শান্তি ফেরাতে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা না হলে পরিস্থিতি আরও অবনতি হতে পারে।
সর্বোপরি, খুলনা আড়ংঘাটা প্রেসক্লাবে সংঘটিত এই সন্ত্রাসী হামলা শুধু একটিবার্ষিক হামলা নয়, এটি পুরো সাংবাদিক সমাজের ওপর একটি হুমকি, যা অবিলম্বে নির্মূল করতে হবে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যেন সন্ত্রাসীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয় এবং দেশের গণমাধ্যমকে নিরাপদ রাখে — তা প্রত্যাশা করছে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সাংবাদিক মহল।