কুড়িগ্রামের চরাঞ্চলের উন্নয়নে দৃশ্যমান কাজ করে মানুষের হৃদয়ে জায়গা করে নিয়েছেন জেলা প্রশাসক নুসরাত সুলতানা; ব্রিজ, রাস্তা, সোলার, হস্তশিল্প প্রশিক্ষণসহ নানা প্রকল্প বাস্তবায়ন
চরের দুয়ারে আশীর্বাদ হয়ে এসেছেন, ডিসি নুসরাত সুলতানা

- আপডেট সময় : ১০:৪৬:২৩ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১০ আগস্ট ২০২৫ ৬ বার পড়া হয়েছে
জেলা প্রতিনিধি: চরের দুয়ারে আশীর্বাদ হয়ে এসেছেন, ডিসি নুসরাত সুলতানা, কুড়িগ্রামের দুর্গম চরাঞ্চলের মানুষের জীবনে আশার আলো হিসেবে দেখা দিয়েছেন জেলা প্রশাসক নুসরাত সুলতানা, দায়িত্ব নেয়ার মাত্র ১১ মাসেই প্রশাসনের গণ্ডি পেরিয়ে মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে দৃশ্যমান উন্নয়নের মাধ্যমে তিনি প্রমাণ করেছেন—সৎ ইচ্ছা থাকলে পরিবর্তন সম্ভব।
গত সপ্তাহে (৪ আগস্ট) নাগেশ্বরী উপজেলার বেরুবাড়ি ইউনিয়নের বিভিন্ন ওয়ার্ডে দিনব্যাপী সফর করেন জেলা প্রশাসক। এই সফরে তিনি চর সবুজ পাড়ায় প্রায় ৪০ হাজার মানুষের চলাচলের জন্য কাঠের একটি ব্রিজ ও রাস্তার উদ্বোধন করেন, যা দীর্ঘদিনের দাবি ছিল স্থানীয়দের।
শুধু অবকাঠামো উন্নয়নেই থেমে থাকেননি ডিসি নুসরাত। চর সবুজ পাড়ায় স্থাপন করেছেন ১০টি সোলার প্যানেল, একটি শিশু পার্ক, এবং একটি হাই স্কুল প্রতিষ্ঠার জন্য জায়গা নির্ধারণ করেছেন। এই উদ্যোগগুলো চরাঞ্চলে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিতে সহায়ক হবে বলে মনে করছেন স্থানীয় শিক্ষকরা।
এছাড়া এলাকার কবরস্থান উঁচুকরণ করে ভবিষ্যতে প্রাকৃতিক দুর্যোগে তা ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সেদিকে নজর দিয়েছেন। পাশাপাশি পরিবেশ সুরক্ষায় তিনি দিয়েছেন ৫ হাজার গাছের চারা বরাদ্দ, যা চরের প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষায় ভূমিকা রাখবে।
চরের ৫০ জন বেকার যুব মহিলাকে হস্তশিল্পে প্রশিক্ষণ দিয়ে আত্মনির্ভরশীল করে তুলেছেন জেলা প্রশাসক। তাদের তৈরি নকশি কাঁথা পরিদর্শন করে বিক্রয় ও লোন সুবিধার ব্যবস্থা করেন তিনি। এতে অনেক নারী উদ্যোক্তা হওয়ার সাহস পাচ্ছেন বলে জানান প্রশিক্ষণপ্রাপ্তরা।
চিকিৎসা ও স্বাস্থ্যসেবায় নজর
ঝুনকার চরের গর্ভবতী নারীদের জন্য ফ্রি ওষুধ ও চিকিৎসাসেবার উদ্যোগ গ্রহণ করে তিনি জনমানুষের স্বাস্থ্যসেবার দিকেও তাঁর গুরুত্বারোপের প্রমাণ রেখেছেন। চরবাসী জানান, এতদিন কোনো সরকারি কর্মকর্তা চরের বাস্তবতা দেখেননি, কিন্তু এই ডিসি নিজ পায়ে হেঁটে মানুষের ঘরে ঘরে গিয়ে খোঁজ নিয়েছেন।
চরের সবচেয়ে বড় সমস্যা নদীভাঙন। সেই সমস্যা সমাধানে পানি উন্নয়ন বোর্ডের মাধ্যমে ভাঙন কবলিত স্থানে জিও ব্যাগ ফেলার ব্যবস্থা গ্রহণ করেন তিনি। এতে অনেক পরিবার তাদের বাড়িঘর রক্ষা করতে সক্ষম হবে বলে আশাবাদী স্থানীয়রা।
চরবাসীর মুখে মুখে এখন একটাই নাম—নুসরাত সুলতানা। একজন ডিসির এতটা কাছাকাছি যাওয়া, মানুষের ঘরে গিয়ে খোঁজ নেওয়া, প্রতিশ্রুতি দিয়ে তা বাস্তবায়ন করা সাধারণত দেখা যায় না। এক চরবাসী আবেগভরা কণ্ঠে বলেন,
“স্বাধীনতার পর ডিসি নাম শুনছি, কিন্তু দেখা পাইনি। আজ সেই ডিসি আমাদের দরজায় এসেছেন। ওনার জন্য আমরা দোয়া করি।”
ডিসি নুসরাত সুলতানার এই ভূমিকা শুধু কুড়িগ্রাম নয়, দেশের অন্য জেলা প্রশাসকদের জন্য হতে পারে একটি রোল মডেল। মাঠপর্যায়ে সরাসরি কাজ করে যে প্রকৃত পরিবর্তন আনা যায়, তা তিনি প্রমাণ করেছেন।
এই সফরে জেলা প্রশাসকের সঙ্গে ছিলেন—নাগেশ্বরী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সিব্বির আহমেদ, নাগেশ্বরী থানার ওসি রেজাউল করিম রেজা, উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা মো. ময়দান আলী, সাংবাদিক সাইয়েদ আহমেদ বাবু, ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যান, ৬ ও ৯ নং ওয়ার্ডের সদস্যসহ স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ।
ডিসি নুসরাত সুলতানার এই উন্নয়ন কার্যক্রম যেন কুড়িগ্রামের চরাঞ্চলের জন্য এক নবজাগরণের বার্তা। দায়িত্বশীল নেতৃত্ব ও আন্তরিকতার মাধ্যমে কীভাবে একটি জেলার পশ্চাদপদ জনগোষ্ঠীর ভাগ্য পরিবর্তন সম্ভব—তার জীবন্ত উদাহরণ তিনি।