চাকরি ও চেম্বার একসাথে, নিউ পপুলার ডায়াগনস্টিকে তানভীরের আলোচিত রমরমা বাণিজ্য!25
চাকরি ও চেম্বার একসাথে, নিউ পপুলার ডায়াগনস্টিকে তানভীরের আলোচিত রমরমা বাণিজ্য!25

- আপডেট সময় : ০৮:২৯:৪১ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৫ জুন ২০২৫ ৪ বার পড়া হয়েছে
জেলা প্রতিনিধিঃ একদিকে সরকারি চাকরি, অন্যদিকে বেসরকারি চেম্বার পরিচালনা—এই দ্বৈত ভূমিকার মাধ্যমে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে উঠে এসেছেন হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ল্যাব টেকনিশিয়ান তানভীর ইসলাম।
তার মালিকানাধীন নিউ পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টার, বীরগঞ্জের খান সুপার মার্কেটের ভাড়া ঘরে পরিচালিত হচ্ছে। অভিযোগ উঠেছে, এই প্রতিষ্ঠান থেকে পরিচালিত হচ্ছে অনিয়মিত সিজার ও চিকিৎসা কার্যক্রম, যেখানে প্রধান চরিত্র অদক্ষ ও বিতর্কিত ডাক্তার ইয়াসমিন ইসলাম।
তানভীর ইসলামের বিরুদ্ধে প্রধান অভিযোগ হলো—সরকারি চাকরিতে বহাল থেকে একইসঙ্গে বেসরকারি ব্যবসা পরিচালনা, যা রাষ্ট্রীয় নীতিমালার সরাসরি লঙ্ঘন। তার অবস্থান শুধু একটি ডায়াগনস্টিক সেন্টারের স্বত্বাধিকারী হিসেবে নয়, বরং ক্ষমতার ছত্রছায়ায় থেকে বহু অনিয়মকে ‘সাধারণ’ করে তোলার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন তিনি।
‘খুনি ডাক্তার’ হিসেবে পরিচিত ইয়াসমিন
স্থানীয়ভাবে বহুল আলোচিত একতা ক্লিনিকের নাম জড়িয়ে রয়েছে একাধিক প্রসূতি মৃত্যুর ঘটনায়। অভিযোগ রয়েছে, সেখানে ডাক্তার ইয়াসমিন ইসলাম নিয়মিত রোগী দেখেন ও সিজার করেন। তাকে ঘিরে আছে বিতর্ক, কারণ তিনি প্রাতিষ্ঠানিক দক্ষতা না থাকা সত্ত্বেও গুরুত্বপূর্ণ অপারেশন করে থাকেন, এনেসথেসিস্ট ছাড়াই থিয়েটারে ঢোকেন এবং ছাত্রদের দিয়ে জটিল অস্ত্রোপচার করান।
বীরগঞ্জের সা’দ ক্লিনিকসহ অন্যান্য ক্লিনিক মালিকরা জানান, ডাক্তার ইয়াসমিন রোগীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন, চিকিৎসায় গাফিলতি করেন এবং চিকিৎসা নীতিমালা ভঙ্গ করে যাচ্ছেন দিনের পর দিন। ফলে তারা তাকে নিজেদের ক্লিনিকে কাজ করতে দেন না।
সিজারের পর ডাক্তার, দায়ভারহীন!
একাধিক ক্লিনিক মালিকের অভিযোগ, সিজারের পর রোগীর দায়-দায়িত্ব নেওয়ার কোনো মনোভাব থাকেন না ইয়াসমিন ইসলামের। তিনি অপারেশন শেষে চলে যান, এবং কোনো জটিলতা দেখা দিলে পুরো ঝুঁকি বহন করতে হয় ক্লিনিক কর্তৃপক্ষকে। প্রশ্ন উঠেছে—ডাক্তারের কি কোনো দায় নেই?
তানভীরের রাজনৈতিক পরিচয় ও ছদ্মবেশ
তানভীর ইসলামের বিরুদ্ধে আরও যেটি গুরুতর অভিযোগ, তা হলো তার রাজনৈতিক পরিচয়ের সুবিধা নেওয়া। জানা যায়, তিনি একসময় ছাত্রলীগের সক্রিয় নেতা ছিলেন। সেই সময় তিনি ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের সাবেক প্রতিমন্ত্রী আবুল বাসারের পিএসের বন্ধুর পরিচয়ে দুর্নীতিকে ‘সহজ’ করেছিলেন। বর্তমানে রাজনৈতিক খোলস পাল্টে নিজেকে বিএনপি ঘরানার পরিচয়ে তুলে ধরে ক্ষমতাসীন প্রভাবশালী ব্যবসায়ীদের নাম ব্যবহার করে নিজের বাণিজ্যিক ও প্রশাসনিক সুবিধা আদায় করছেন।
সততা দাবি করলেও বাস্তবতা ভিন্ন
যদিও তানভীর ইসলাম নিজে বলেন, “আমি সততার সঙ্গে চাকরি ও ব্যবসা করি, কে কি বলল তাতে আমার কিছু আসে যায় না”, কিন্তু বাস্তবতার চিত্র ভিন্ন। আইন অনুযায়ী, সরকারি চাকুরিজীবীর ব্যবসা পরিচালনা সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ। তার এই দ্বৈত ভূমিকাই আইন ভঙ্গের স্পষ্ট উদাহরণ।
প্রশাসনের অবস্থান
বিষয়টি নিয়ে কথা হলে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আফরোজ সুলতানা লুনা জানান, “বীরগঞ্জের প্রতিটি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে পর্যায়ক্রমে অভিযান চলছে। একতা ক্লিনিকের মতো অনিয়মিত ও ঝুঁকিপূর্ণ প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
তিনি আরও বলেন, “ডায়াগনস্টিক সেন্টার চালানোর জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্ধারিত মানদণ্ড পূরণ করতে হবে। ভাড়া ঘরে, অদক্ষ চিকিৎসক দিয়ে পরিচালিত ক্লিনিক মানবিক ও আইনি দুই দিক থেকেই অগ্রহণযোগ্য।”
উপসংহার
তানভীর ইসলামের নিউ পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও ইয়াসমিন ইসলামের মতো বিতর্কিত ডাক্তারদের মাধ্যমে রোগীর জীবন নিয়ে খেলা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। জনস্বাস্থ্য রক্ষার স্বার্থে এবং চিকিৎসা নৈতিকতা বজায় রাখতে দ্রুত ও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণই এখন সময়ের দাবি।