ঢাকা ০১:০৩ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১২ জুন ২০২৫, ২৯ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
দৌলতপুর বিএনপির ঈদ পুনর্মিলনীতে আখতারুজ্জামান সজলের নেতৃত্বে নেতাকর্মীদের মিলনমেলা বরিশাল বিভাগে চলতি বছর ডেঙ্গু রোগী শনাক্তে সর্বোচ্চ সংখ্যা পাসপোর্ট দিবো না: মানবতাবিরোধী ও পলাতকদের পাসপোর্ট ইস্যু বন্ধ উজবেকিস্তান বিশ্বকাপ ২০২৬: খেলোয়াড়দের প্রেসিডেন্টের উপহার গাড়ি বিএসএফের পুশ-ইন: সিলেট ও সুনামগঞ্জ সীমান্ত দিয়ে ৭০ জন অনুপ্রবেশ কুষ্টিয়ায় চুরির অভিযোগে নারী নির্যাতন, মামলা ও গ্রেপ্তার – থানায় গ্রামবাসীর ঘেরাও ড. ইউনূসের সঙ্গে বিরোধে নয়, সমঝোতার পরামর্শ খালেদা জিয়ার ট্রাম্পের অভিবাসন নীতির বিরুদ্ধে বিক্ষোভে লস অ্যাঞ্জেলেসে কারফিউ জারি: কেন এটি গুরুত্বপূর্ণ? সীমিত পরিসরে করোনা পরীক্ষা শুরু, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নতুন নির্দেশনা কুমারখালীতে প্রতিবন্ধীদের নিয়ে ঈদ আনন্দ ভাগাভাগি ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত

চুরির অভিযোগে নারীকে গাছে বেঁধে নির্যাতনের পর চুল কর্তন, ভাঙচুর – লুটপাট

অনলাইন ডেস্ক
  • আপডেট সময় : ০৯:৫২:৫৯ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১০ জুন ২০২৫ ৮ বার পড়া হয়েছে

কুমারখালী ( কুষ্টিয়া) প্রতিনিধিঃ কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে মাংস চুরির অভিযোগে রিনা খাতুন ( ৪০) নামে এক নারীকে গাছে বেঁধে মারধরের পর মাথার চুল কেটে দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এছাড়াও তাঁর বাড়িতে ভাঙচুর এবং গরু, ছাগল ও স্বর্ণালংকার লুটপাটের অভিযোগ উঠেছে। 

সোমবার (৯ জুন) রাত ৮ টার দিকে উপজেলার শিলাইদহ ইউনিয়নের মির্জাপুরের ঘটে এ ঘটনা। ঘটনার শিকার রিনা খাতুন (৩০) ওই গ্রামের জাহাঙ্গীর আলমের স্ত্রী। পরে রাত ১০ টার দিকে এসব ঘটনার কয়েকটি ভিডিও ক্লিপ ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে ব্যাপক ভাইরাল হয়। রিনা বর্তমানে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

পুলিশ ও এলাকাবাসী সুত্রে জানা গেছে, গত সোমবার বিকেলে রিনা খাতুন প্রতিবেশী রিপন আলীর ঘরে ঢুকে ফ্রিজ থেকে মাংস চুরি করে নিয়ে যাচ্ছিলেন। সে সময় রিপনের স্ত্রী মুক্তি খাতুন রিনাকে হাতেনাতে ধরে ফেলেন এবং বাড়ির উঠানে পেঁয়ারা গাছের সঙ্গে দড়ি দিয়ে বেঁধে মারধর করে মাংস কেড়ে নেন। এরপর রিনার স্বামী জাহাঙ্গীর তাকে উদ্ধার করে নিয়ে যায়।

এরপর স্থানীয় নজরুল, কাশেম, রিপনসহ কয়েক শত নারী পুরুষ রাত ৮ টার দিকে রিনার বাড়িতে ভাঙচুর করে তাকে তুলে নিয়ে ফের রিপনের বাড়িতে নিয়ে আসে এবং ব্যাপক মারপিট করে মাথার চুল কেটে দেন। পরে সেখানে রিনার স্বজন ও এলাকাবাসী নিয়ে সালিশ বসায় শিলাইদহ ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মো. শাহ আলম। সালিশে রিনার দুইটা গরু, একটা ছাগল ও স্বর্ণালংকারের বিনিময়ে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়।

মঙ্গলবার (১০ জুন) দুপুরে সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মহিলা ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন রয়েছেন রিনা খাতুন। তাঁর শরীরের একাধিক স্থানে আঘাতের চিহৃ। মাথার চুল কাটা রয়েছে।

এ সময় আহত রিনা খাতুন বলেন, রিপন ইলেকট্রিক মিস্ত্রি। বিকেলে তাকে ডাকতে গেলে তাঁর স্ত্রী মুক্তি খাতুন মাংস চুরির অপবাদ দিয়ে বেঁধে রাখে। তারপর কিছুক্ষণ পরে ছেড়ে দেয়। এরপর রাতে গ্রামের লোকজন নিয়ে আমাকে বাড়ি থেকে তুলে এনে গাছে বেঁধে মারধর করে। মুক্তি ও পারভিন চুলকেটে দিয়েছে। বাড়িতে ভাঙচুর ও গরু, ছাগল, স্বর্ণালংকারসহ মালামাল লুটপাট করে নিয়ে গেছে। ভয়ে আমার স্বামী পালিয়েছে। আমি এর সঠিক বিচার চাই।

এ দিকে রিনাকে ধরে নিয়ে যাওয়ার কয়েকটি ভিডিও এসেছে প্রতিবেদকের হাতে। তাতে দেখা যায়, কয়েক শত জনগণ তাকে ধরে নিয়ে যাচ্ছে। কেউ আবার তার মাথার কাপড় সরিয়ে দিচ্ছেন। তাকে নিয়ে আনন্দ উল্লাস করছেন তারা। কেউ কেউ আবার এ সব দৃশ্য মোবাইলে ভিডিও ধারণ করছেন।

বিকেলে মির্জাপুর গ্রামে সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, রিপনের বাড়িতে পড়ে আছে দড়ি ও কাটা চুলের অংশ। আর রিনার ঘরের দরজায় তালা লাগানো। ঘরের ভিতরে আসবাবপত্রে ভাঙচুরের ক্ষত। গোয়ালঘরে নেই গরু ছাগল।

এ সময় ইলেকট্রিক মিস্ত্রি রিপন বলেন, রিনা ঘর থেকে ৪১ হাজার টাকা ও মাংস চুরি করে হাতেনাতে ধরা পড়েছিল। তার ভাষ্য, রিনা এলাকার বিভিন্ন বাড়িতে চুরি করেছে। সেই রাগে লোকজন ধরে মারধর করে চুল কেটেছে। আমরা এর সঙ্গে জড়িত নয়।

রিপনের স্ত্রী মুক্তি খাতুন বলেন, আমি দড়ি দিয়ে বেঁধে একটা চর মারিছি। কিন্তু কারা চুল কাটেছে তা জানিনা।

অভিযুক্ত কাশেম বলেন, রিনা বিভিন্ন বাড়িতে চুরি করেছে। ক্ষতিপূরণ হিসেবে রাতে সালিশে তার গরু, ছাগল নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ সব বিষয়ে মেম্বরের সঙ্গে কথা বলুন।

গরু ও ছাগলের কথা অস্বীকার করেছেন শিলাইদহ ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মো. শাহ আলম। তিনি বলেন, আমি শুধু ওই নারীকে তার স্বজনদের হাতে তুলে দিয়েছি। আর কি ঘটেছে তা জানিনা। তাঁর ভাষ্য, আইন হাতে তুলে নেওয়া ঠিক হয়নি।

It is not appropriate to take the law into one’s own hands in any situation, as stated by Officer-in-Charge Mr. Suleiman Sheikh of Kumarkhali Police Station. He mentioned that an incident of theft involved cutting a woman’s hair and a violent attack. Upon receiving the report, the police visited the scene even at night but did not find the victim and her family. Currently, they are receiving medical treatment at the Upazila Health Complex. As of now, no formal complaint has been filed regarding this incident. If a complaint is lodged, appropriate action will be taken.
যেকোনো ঘটনায় আইন হাতে তুলে নেওয়া ঠিক নয় বলে জানালেন কুমারখালী থানার ওসি মো. সোলাইমান শেখ। তিনি বলেন, চুরির অভিযোগে এক নারীর চুল কেটে দেওয়া ও মারধরের ঘটনা ঘটেছে। খবর পেয়ে রাতেও ঘটনাস্থলে গিয়ে ভিকটিম ও তার স্বজনদের পাইনি পুলিশ। তবে বর্তমানে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত লিখিত অভিযোগ দেয়নি কেউ। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

নতুন প্রজন্মের অনলাইন টিভি

নিউজটি শেয়ার করুন

আপলোডকারীর তথ্য
ট্যাগস :

চুরির অভিযোগে নারীকে গাছে বেঁধে নির্যাতনের পর চুল কর্তন, ভাঙচুর – লুটপাট

আপডেট সময় : ০৯:৫২:৫৯ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১০ জুন ২০২৫

কুমারখালী ( কুষ্টিয়া) প্রতিনিধিঃ কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে মাংস চুরির অভিযোগে রিনা খাতুন ( ৪০) নামে এক নারীকে গাছে বেঁধে মারধরের পর মাথার চুল কেটে দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এছাড়াও তাঁর বাড়িতে ভাঙচুর এবং গরু, ছাগল ও স্বর্ণালংকার লুটপাটের অভিযোগ উঠেছে। 

সোমবার (৯ জুন) রাত ৮ টার দিকে উপজেলার শিলাইদহ ইউনিয়নের মির্জাপুরের ঘটে এ ঘটনা। ঘটনার শিকার রিনা খাতুন (৩০) ওই গ্রামের জাহাঙ্গীর আলমের স্ত্রী। পরে রাত ১০ টার দিকে এসব ঘটনার কয়েকটি ভিডিও ক্লিপ ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে ব্যাপক ভাইরাল হয়। রিনা বর্তমানে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

পুলিশ ও এলাকাবাসী সুত্রে জানা গেছে, গত সোমবার বিকেলে রিনা খাতুন প্রতিবেশী রিপন আলীর ঘরে ঢুকে ফ্রিজ থেকে মাংস চুরি করে নিয়ে যাচ্ছিলেন। সে সময় রিপনের স্ত্রী মুক্তি খাতুন রিনাকে হাতেনাতে ধরে ফেলেন এবং বাড়ির উঠানে পেঁয়ারা গাছের সঙ্গে দড়ি দিয়ে বেঁধে মারধর করে মাংস কেড়ে নেন। এরপর রিনার স্বামী জাহাঙ্গীর তাকে উদ্ধার করে নিয়ে যায়।

এরপর স্থানীয় নজরুল, কাশেম, রিপনসহ কয়েক শত নারী পুরুষ রাত ৮ টার দিকে রিনার বাড়িতে ভাঙচুর করে তাকে তুলে নিয়ে ফের রিপনের বাড়িতে নিয়ে আসে এবং ব্যাপক মারপিট করে মাথার চুল কেটে দেন। পরে সেখানে রিনার স্বজন ও এলাকাবাসী নিয়ে সালিশ বসায় শিলাইদহ ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মো. শাহ আলম। সালিশে রিনার দুইটা গরু, একটা ছাগল ও স্বর্ণালংকারের বিনিময়ে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়।

মঙ্গলবার (১০ জুন) দুপুরে সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মহিলা ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন রয়েছেন রিনা খাতুন। তাঁর শরীরের একাধিক স্থানে আঘাতের চিহৃ। মাথার চুল কাটা রয়েছে।

এ সময় আহত রিনা খাতুন বলেন, রিপন ইলেকট্রিক মিস্ত্রি। বিকেলে তাকে ডাকতে গেলে তাঁর স্ত্রী মুক্তি খাতুন মাংস চুরির অপবাদ দিয়ে বেঁধে রাখে। তারপর কিছুক্ষণ পরে ছেড়ে দেয়। এরপর রাতে গ্রামের লোকজন নিয়ে আমাকে বাড়ি থেকে তুলে এনে গাছে বেঁধে মারধর করে। মুক্তি ও পারভিন চুলকেটে দিয়েছে। বাড়িতে ভাঙচুর ও গরু, ছাগল, স্বর্ণালংকারসহ মালামাল লুটপাট করে নিয়ে গেছে। ভয়ে আমার স্বামী পালিয়েছে। আমি এর সঠিক বিচার চাই।

এ দিকে রিনাকে ধরে নিয়ে যাওয়ার কয়েকটি ভিডিও এসেছে প্রতিবেদকের হাতে। তাতে দেখা যায়, কয়েক শত জনগণ তাকে ধরে নিয়ে যাচ্ছে। কেউ আবার তার মাথার কাপড় সরিয়ে দিচ্ছেন। তাকে নিয়ে আনন্দ উল্লাস করছেন তারা। কেউ কেউ আবার এ সব দৃশ্য মোবাইলে ভিডিও ধারণ করছেন।

বিকেলে মির্জাপুর গ্রামে সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, রিপনের বাড়িতে পড়ে আছে দড়ি ও কাটা চুলের অংশ। আর রিনার ঘরের দরজায় তালা লাগানো। ঘরের ভিতরে আসবাবপত্রে ভাঙচুরের ক্ষত। গোয়ালঘরে নেই গরু ছাগল।

এ সময় ইলেকট্রিক মিস্ত্রি রিপন বলেন, রিনা ঘর থেকে ৪১ হাজার টাকা ও মাংস চুরি করে হাতেনাতে ধরা পড়েছিল। তার ভাষ্য, রিনা এলাকার বিভিন্ন বাড়িতে চুরি করেছে। সেই রাগে লোকজন ধরে মারধর করে চুল কেটেছে। আমরা এর সঙ্গে জড়িত নয়।

রিপনের স্ত্রী মুক্তি খাতুন বলেন, আমি দড়ি দিয়ে বেঁধে একটা চর মারিছি। কিন্তু কারা চুল কাটেছে তা জানিনা।

অভিযুক্ত কাশেম বলেন, রিনা বিভিন্ন বাড়িতে চুরি করেছে। ক্ষতিপূরণ হিসেবে রাতে সালিশে তার গরু, ছাগল নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ সব বিষয়ে মেম্বরের সঙ্গে কথা বলুন।

গরু ও ছাগলের কথা অস্বীকার করেছেন শিলাইদহ ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মো. শাহ আলম। তিনি বলেন, আমি শুধু ওই নারীকে তার স্বজনদের হাতে তুলে দিয়েছি। আর কি ঘটেছে তা জানিনা। তাঁর ভাষ্য, আইন হাতে তুলে নেওয়া ঠিক হয়নি।

It is not appropriate to take the law into one’s own hands in any situation, as stated by Officer-in-Charge Mr. Suleiman Sheikh of Kumarkhali Police Station. He mentioned that an incident of theft involved cutting a woman’s hair and a violent attack. Upon receiving the report, the police visited the scene even at night but did not find the victim and her family. Currently, they are receiving medical treatment at the Upazila Health Complex. As of now, no formal complaint has been filed regarding this incident. If a complaint is lodged, appropriate action will be taken.
যেকোনো ঘটনায় আইন হাতে তুলে নেওয়া ঠিক নয় বলে জানালেন কুমারখালী থানার ওসি মো. সোলাইমান শেখ। তিনি বলেন, চুরির অভিযোগে এক নারীর চুল কেটে দেওয়া ও মারধরের ঘটনা ঘটেছে। খবর পেয়ে রাতেও ঘটনাস্থলে গিয়ে ভিকটিম ও তার স্বজনদের পাইনি পুলিশ। তবে বর্তমানে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত লিখিত অভিযোগ দেয়নি কেউ। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।