জেলা প্রতিবেদন : ঝিনাইদহ সীমান্তে বাংলাদেশি হত্যা ও নির্যাতন বেড়েই চলেছে। সইে সঙ্গে বেড়েছে বিএসএফের নৃশংসতার ধরণও। বিশেষ করে গত দুই মাসে জেলার মহেশপুর সীমান্তে কয়েকটি ঘটনায় বাংলাদেশিদের প্রতি ভয়ংকর নৃশংস আচরণ করেছে বিএসএফ।
বিজিবির পক্ষ থেকে এসব ঘটনার প্রতিবাদ জানানো হলেও কোনো কাজ হচ্ছে না।
এ নিয়ে সীমান্ত এলাকায় বসবাসকারী মানুষের মধ্যে চরম আতঙ্ক ও শঙ্কা বিরাজ করছে।
জানা গেছে, ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার পেপুলবাড়িয়া গ্রামের শফিকুল ইসলামের ছেলে রিয়াজ হোসেন গত ২ মে রাতে ৭ থেকে ৮ জন মিলে সীমান্তের জিরো পয়েন্টে যান। তখন বিএসএফ অর্তকিত তাদের ওপর গুলিবর্ষণ করে। এ সময় রিয়াজ হোসেন গুলিবিদ্ধ হন।
স্থানীয়দের সহায়তায় প্রথমে চুয়াডাঙ্গার জীবননগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও পরে যশোর জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় তাকে। সেখানে অবস্থার অবনতি ঘটলে তাকে ঢাকায় পাঠানো হয়। তিনি বর্তমানে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। তার অবস্থা এখনো সংকটাপন্ন।
গত ২৭ এপ্রিল ভোররাতে মহেশপুর সীমান্তের ওপারে ভারতীয় অংশে বিএসএফের গুলিতে নিহত হন গোপালপুর গ্রামে হানিফ আলীর ছেলে মো ওবায়দুল হক (৩০)। ওবায়দুলের মরদেহ ওইদিন সকালে বস্তায় ভরে নিয়ে যায় ভারতের চব্বিশ পরগণার বাগদা থানা পুলিশ। এখনো পর্যন্ত তার মরদেহ দেশে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। ওবায়দুলের মরদেহের অপেক্ষায় দিন পার করছে তার পরিবার।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল মহেশপুর উপজেলার পলিয়ানপুর সীমান্তে ওয়াসিম নামের এক বাংলাদেশি যুবককে নির্যাতনের পর হত্যা করে ইছামতি নদীতে ফেলে দেয় বিএসএফ।
ওই ঘটনার প্রায় একমাস পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত তার মরদেহ ফেরত দেয়নি বিএসএফ।
গত ১৬ মার্চ মহেশপুর সীমান্তের কুমিল্লাপাড়া এলাকায় ফারুক হোসেন নামের এক বাংলাদেশি যুবককে নির্যাতনের পর মৃত ভেবে ফেলে রেখে যায় বিএসএফ। এর আগে ২৭ ফেব্রুয়ারি মহেশপুরের বাঘাডাঙ্গা সীমান্তে বিল্লাল সানা নামের আরেক যুবককে একই কায়দায় নির্যাতন করে ফেলে রাখে বিএসএফ।
সুজনের জেলা কমিটির সভাপতি ও মানবাধিকার কর্মী আমিনুর রহমান টুকু বলেন, ‘ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বাংলাদেশিদের ওপর যে নিষ্ঠুর আচরণ করছে তা আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন। বাংলাদেশিদের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট আইন প্রয়োগের সুযোগ থাকলেও তাদের নির্বিচারে হত্যা ও নির্যাতন করা হচ্ছে। বিজিবিকে এখনই আরো কঠোর হতে হবে, না হলে এ ধরণের ঘটনা আরো বাড়বে।’
জেলা সচেতন নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি বীর মুক্তিযোদ্ধা লিয়াকত হোসেন বলেন, ‘একটা বন্ধুপ্রতিম দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী গত কয়েকমাস ধরে যা করছে তা কিছুতেই কাম্য নয়। আমাদের দেশের সরকার সংশ্লিষ্টদের উচিত হবে দ্রুত এ বিষয়ে নজর দেওয়া। না হলে সীমান্ত হত্যাসহ অন্যান্য অপরাধ আরো বেড়ে যাবে।’
এসব বিষয়ে জানতে মহেশপুর ৫৮ বিজিবির অধিনায়ক লে. কর্নেল রফিকুল আলমের ব্যবহৃত মোবাইলে একাধিকবার কল করলেও তিনি রিসিভ করেননি। এমনকি তার ব্যবহৃত হোয়াটসঅ্যাপে মেসেজ পাঠালেও তিনি সাড়া দেননি।
এ ব্যাপারে ঝিনাইদহের জেলা প্রশাসক আব্দুল আওয়াল বলেন, ‘আমাদের সীমান্ত এলাকার বাসিন্দাদের সুরক্ষার জন্য ইতিমধ্যে বিভিন্নভাবে অবগত করা হয়েছে। এছাড়াও যে ঘটনাগুলো সম্প্রতি ঘটেছে সেগুলো নিয়ে বিজিবি ও বিএসএফের মধ্যে বৈঠক হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আশা করছি খুব শিগগিরই এ সমস্যগুলো আমাদের দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিজিবি) সমাধান করতে পারবে। এছাড়াও সংশ্লিষ্টরা এ সকল বিষয় নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে।