ঢাকা ০৬:৩৯ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ০১ জুন ২০২৫, ১৮ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

পাকিস্তানে নিরাপত্তা বাহিনীর অভিযানে ‘ভারতের মদদপুষ্ট’ ১২ সন্ত্রাসী নিহত

অনলাইন ডেস্ক
  • আপডেট সময় : ০৯:৪১:৫৭ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২০ মে ২০২৫ ২০ বার পড়া হয়েছে

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনখোয়া ও বেলুচিস্তানে চালানো পৃথক নিরাপত্তা অভিযানে ‘ভারতের মদদপুষ্ট’ সন্ত্রাসী সংগঠনের ১২ সদস্য নিহত হয়েছেন। অভিযানে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর দুই সদস্য শহিদ হয়েছেন। সোমবার এক বিবৃতিতে এসব তথ্য জানিয়েছে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর)।

সোমবার (১৯ মে) এক প্রতিবেদনে এ খবর দিয়েছে দ্য ডন।
আইএসপিআর জানায়, শনিবার ও রোববার গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে খাইবার পাখতুনখোয়ায় নিষিদ্ধঘোষিত তেহরিক-ই-তালিবান পাকিস্তান (টিটিপি) এবং বেলুচিস্তানে নিষিদ্ধ বেলুচিস্তান লিবারেশন ফ্রন্টের (বিএলএফ) বিরুদ্ধে অভিযান চালানো হয়।

খাইবার পাখতুনখোয়া: চার জেলায় অভিযান, ৯ সন্ত্রাসী নিহত
লাক্কি মারওয়াত জেলায় অভিযানে পাঁচ ভারতীয় মদদপুষ্ট সন্ত্রাসীকে হত্যা করা হয়। বন্নু জেলায় আরও দুই সন্ত্রাসীকে নির্মূল করা হয়।

এছাড়া, উত্তর ওয়াজিরিস্তানের মির আলি এলাকায় সেনা কনভয়ের ওপর অতর্কিত হামলার জবাবে আরও দুই সন্ত্রাসী নিহত হয়। ওই সংঘর্ষে সেনাবাহিনীর দুই সদস্য, কর্পোরাল ফারহাদ আলী তুরি (২৯) ও ল্যান্স নায়েক সাবির আফ্রিদি (৩২) শহিদ হন।

আইএসপিআর জানিয়েছে, এসব এলাকায় সন্ত্রাসীদের উপস্থিতি নিশ্চিহ্নে এখনও চিরুনি অভিযান চলছে।

বেলুচিস্তানে অভিযানে নিহত সন্ত্রাসী নেতা সহ ৩ জন
বেলুচিস্তানের আওয়ারান জেলার গিশকুর এলাকায় এক অভিযানে সন্ত্রাসী ইউনুস নিহত হয় এবং আরও দুইজন আহত হয়। তুরবাত শহরে চালানো আরেক অভিযানে নিরাপত্তা বাহিনী সন্ত্রাসী রিং লিডার সাবর উল্লাহ এবং তার সহযোগী আমজাদ ওরফে বিচ্চুকে হত্যা করে।

আইএসপিআর বলছে, অভিযানে নিহতরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর হামলা ও বেসামরিক নাগরিকদের টার্গেট কিলিংয়ে জড়িত ছিল। তাদের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র, গোলাবারুদ ও বিস্ফোরক উদ্ধার করা হয়েছে।

প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রীর প্রশংসা, ভারতের বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি
প্রেসিডেন্ট আসিফ আলী জারদারি সফল অভিযানের জন্য নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, সন্ত্রাসবিরোধী লড়াই সম্পূর্ণ সফল না হওয়া পর্যন্ত অভিযান চলবে।

প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফও সেনাবাহিনীর তৎপরতা ও পেশাদারিত্বের প্রশংসা করে বলেন, বেলুচিস্তানে নিরীহ নাগরিকদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাস চালিয়ে ভারতের ষড়যন্ত্র উন্মোচিত হয়েছে। আমরা দেশের শান্তি বিনষ্টে ভারতের অপচেষ্টা ব্যর্থ করে দেব।

পূর্ববর্তী হামলা ও আইএসপিআরের অভিযোগ
এর আগে চলতি মাসে বেলুচিস্তানের কাচ্চি জেলায় ভারতের মদদপুষ্ট বেলুচিস্তান লিবারেশন আর্মি (বিএলএ)-র পুঁতে রাখা বোমার বিস্ফোরণে সাত সেনা শহিদ হন।

গত মাসে আইএসপিআর মহাপরিচালক লেফটেন্যান্ট জেনারেল আহমেদ শরীফ চৌধুরী অভিযোগ করেন, ভারত তার অ্যাসেট বা মদদপুষ্ট সন্ত্রাসীদের সক্রিয় করেছে এবং পাকিস্তানে হামলা জোরদার করছে। তার দাবি, এই হামলা পরিচালনায় ভারতীয় সামরিক কর্মকর্তা ও গোয়েন্দা সংস্থা সরাসরি জড়িত।

সন্ত্রাসবাদের চিত্র: আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষণ
তেহরিক-ই-তালিবান পাকিস্তান ২০২২ সালের নভেম্বরে যুদ্ধবিরতি শেষ করার পর থেকে দেশজুড়ে সন্ত্রাসী হামলার হার বেড়েছে।

পাকিস্তান ইনস্টিটিউট ফর কনফ্লিক্ট অ্যান্ড সিকিউরিটি স্টাডিজের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালের মার্চে দেশজুড়ে ১০০টির বেশি সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটে—২০১৪ সালের পর যা সর্বোচ্চ।

গ্লোবাল টেরোরিজম ইনডেক্স ২০২৫ অনুযায়ী, সন্ত্রাসবাদের ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলোর মধ্যে পাকিস্তান দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে। গত এক বছরে সন্ত্রাসী হামলায় মৃত্যুর সংখ্যা ৪৫ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১,০৮১ জনে।

নতুন প্রজন্মের অনলাইন টিভি

নিউজটি শেয়ার করুন

পাকিস্তানে নিরাপত্তা বাহিনীর অভিযানে ‘ভারতের মদদপুষ্ট’ ১২ সন্ত্রাসী নিহত

আপডেট সময় : ০৯:৪১:৫৭ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২০ মে ২০২৫

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনখোয়া ও বেলুচিস্তানে চালানো পৃথক নিরাপত্তা অভিযানে ‘ভারতের মদদপুষ্ট’ সন্ত্রাসী সংগঠনের ১২ সদস্য নিহত হয়েছেন। অভিযানে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর দুই সদস্য শহিদ হয়েছেন। সোমবার এক বিবৃতিতে এসব তথ্য জানিয়েছে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর)।

সোমবার (১৯ মে) এক প্রতিবেদনে এ খবর দিয়েছে দ্য ডন।
আইএসপিআর জানায়, শনিবার ও রোববার গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে খাইবার পাখতুনখোয়ায় নিষিদ্ধঘোষিত তেহরিক-ই-তালিবান পাকিস্তান (টিটিপি) এবং বেলুচিস্তানে নিষিদ্ধ বেলুচিস্তান লিবারেশন ফ্রন্টের (বিএলএফ) বিরুদ্ধে অভিযান চালানো হয়।

খাইবার পাখতুনখোয়া: চার জেলায় অভিযান, ৯ সন্ত্রাসী নিহত
লাক্কি মারওয়াত জেলায় অভিযানে পাঁচ ভারতীয় মদদপুষ্ট সন্ত্রাসীকে হত্যা করা হয়। বন্নু জেলায় আরও দুই সন্ত্রাসীকে নির্মূল করা হয়।

এছাড়া, উত্তর ওয়াজিরিস্তানের মির আলি এলাকায় সেনা কনভয়ের ওপর অতর্কিত হামলার জবাবে আরও দুই সন্ত্রাসী নিহত হয়। ওই সংঘর্ষে সেনাবাহিনীর দুই সদস্য, কর্পোরাল ফারহাদ আলী তুরি (২৯) ও ল্যান্স নায়েক সাবির আফ্রিদি (৩২) শহিদ হন।

আইএসপিআর জানিয়েছে, এসব এলাকায় সন্ত্রাসীদের উপস্থিতি নিশ্চিহ্নে এখনও চিরুনি অভিযান চলছে।

বেলুচিস্তানে অভিযানে নিহত সন্ত্রাসী নেতা সহ ৩ জন
বেলুচিস্তানের আওয়ারান জেলার গিশকুর এলাকায় এক অভিযানে সন্ত্রাসী ইউনুস নিহত হয় এবং আরও দুইজন আহত হয়। তুরবাত শহরে চালানো আরেক অভিযানে নিরাপত্তা বাহিনী সন্ত্রাসী রিং লিডার সাবর উল্লাহ এবং তার সহযোগী আমজাদ ওরফে বিচ্চুকে হত্যা করে।

আইএসপিআর বলছে, অভিযানে নিহতরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর হামলা ও বেসামরিক নাগরিকদের টার্গেট কিলিংয়ে জড়িত ছিল। তাদের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র, গোলাবারুদ ও বিস্ফোরক উদ্ধার করা হয়েছে।

প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রীর প্রশংসা, ভারতের বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি
প্রেসিডেন্ট আসিফ আলী জারদারি সফল অভিযানের জন্য নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, সন্ত্রাসবিরোধী লড়াই সম্পূর্ণ সফল না হওয়া পর্যন্ত অভিযান চলবে।

প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফও সেনাবাহিনীর তৎপরতা ও পেশাদারিত্বের প্রশংসা করে বলেন, বেলুচিস্তানে নিরীহ নাগরিকদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাস চালিয়ে ভারতের ষড়যন্ত্র উন্মোচিত হয়েছে। আমরা দেশের শান্তি বিনষ্টে ভারতের অপচেষ্টা ব্যর্থ করে দেব।

পূর্ববর্তী হামলা ও আইএসপিআরের অভিযোগ
এর আগে চলতি মাসে বেলুচিস্তানের কাচ্চি জেলায় ভারতের মদদপুষ্ট বেলুচিস্তান লিবারেশন আর্মি (বিএলএ)-র পুঁতে রাখা বোমার বিস্ফোরণে সাত সেনা শহিদ হন।

গত মাসে আইএসপিআর মহাপরিচালক লেফটেন্যান্ট জেনারেল আহমেদ শরীফ চৌধুরী অভিযোগ করেন, ভারত তার অ্যাসেট বা মদদপুষ্ট সন্ত্রাসীদের সক্রিয় করেছে এবং পাকিস্তানে হামলা জোরদার করছে। তার দাবি, এই হামলা পরিচালনায় ভারতীয় সামরিক কর্মকর্তা ও গোয়েন্দা সংস্থা সরাসরি জড়িত।

সন্ত্রাসবাদের চিত্র: আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষণ
তেহরিক-ই-তালিবান পাকিস্তান ২০২২ সালের নভেম্বরে যুদ্ধবিরতি শেষ করার পর থেকে দেশজুড়ে সন্ত্রাসী হামলার হার বেড়েছে।

পাকিস্তান ইনস্টিটিউট ফর কনফ্লিক্ট অ্যান্ড সিকিউরিটি স্টাডিজের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালের মার্চে দেশজুড়ে ১০০টির বেশি সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটে—২০১৪ সালের পর যা সর্বোচ্চ।

গ্লোবাল টেরোরিজম ইনডেক্স ২০২৫ অনুযায়ী, সন্ত্রাসবাদের ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলোর মধ্যে পাকিস্তান দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে। গত এক বছরে সন্ত্রাসী হামলায় মৃত্যুর সংখ্যা ৪৫ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১,০৮১ জনে।