ঢাকা ০৯:১৩ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৮ নভেম্বর ২০২৫, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

পাট ও ওষুধ খাতে বিনিয়োগে আগ্রহী চীন

অনলাইন ডেস্ক
  • আপডেট সময় : ০৮:১৪:৪০ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৮ নভেম্বর ২০২৫
  • / 2

চীনা বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশের সবুজ প্রযুক্তি, পাট, টেক্সটাইল ও ওষুধ খাতে বিনিয়োগে আগ্রহী বলে জানিয়েছেন চায়না এক্সপোর্ট-ইমপোর্ট ব্যাংকের (এক্সিম ব্যাংক) ভাইস প্রেসিডেন্ট ইয়াং ডংনিং।

বৃহস্পতিবার (২৭ নভেম্বর) রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে এ আগ্রহের কথা জানান সফররত ভাইস প্রেসিডেন্ট। তার সঙ্গে ছিলেন রাষ্ট্রীয় ইনস্টিটিউট অব ফাইন্যান্স অ্যান্ড সাসটেইনেবিলিটির প্রেসিডেন্ট ড. মা জুন।

শুক্রবার (২৮ নভেম্বর) প্রধান উপদেষ্টার উপ-প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার বৈঠকের কথা তুলে ধরে এসব তথ্য জানান।

তিনি আরও জানান, বাংলাদেশের সোনালি আঁশকে কেন্দ্র করে পাটভিত্তিক শিল্পে সরাসরি বিনিয়োগের ক্ষেত্রেও আগ্রহী চীনা কোম্পানি ও এক্সিম ব্যাংক, যেখানে অতীতে বাংলাদেশের বড় অবকাঠামো প্রকল্পে অর্থায়ন করেছে।

বৈঠকে ড. মা জুন বলেন, বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী পাটশিল্প চীনা বিনিয়োগকারীদের অন্যতম প্রধান আগ্রহের ক্ষেত্র। তারা বাংলাদেশি অংশীদারদের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগ গড়ে তুলতে আগ্রহী। চীনা কোম্পানিগুলো সবুজ জ্বালানি, সার ও প্লাস্টিকের বিকল্প পণ্য উৎপাদনে এক মিলিয়ন টন পর্যন্ত কাঁচা পাট ব্যবহারের প্রস্তুতি নিয়েছে বলেও জানান তিনি।

তিনি বলেন, চীনের অর্থায়নে পাটখাতে যৌথ বিনিয়োগের যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে।

প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ই্উনূস চীনের এই আগ্রহকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশটির বিনিয়োগ বাংলাদেশকে একটি শক্তিশালী উৎপাদন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলতে সহায়ক হবে, যা উন্নত দেশসহ চীনে রপ্তানিযোগ্য পণ্য উৎপাদন করতে পারবে।

ড. ইউনূস বলেন, আমরা এই খাতগুলোতে পূর্ণ গতিতে এগোতে পারি। তিনি ওষুধ ও স্বাস্থ্যসেবা খাতকেও চীনা বিনিয়োগের জন্য সম্ভাবনাময় ক্ষেত্র হিসেবে উল্লেখ করেন।

তিনি আরও জানান, সৌর জ্বালানির বিশ্বের বৃহত্তম উৎপাদক দেশ হিসেবে চীন বাংলাদেশের সবুজ জ্বালানিতে রূপান্তরকে উল্লেখযোগ্যভাবে ত্বরান্বিত করতে পারে। বিশেষ করে সৌর প্যানেল এবং রুফটপ সোলার সিস্টেম স্থাপনে বিনিয়োগ বাংলাদেশের এই রূপান্তরে বড় ভূমিকা রাখতে পারে।

প্রধান উপদেষ্টা চীনকে বাংলাদেশে উৎপাদন কারখানা স্থানান্তরের আহ্বান জানিয়ে বলেন, দেশের বিপুল যুবশক্তিকে কাজে লাগিয়ে বন্ধ হয়ে যাওয়া রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলগুলো যৌথ বিনিয়োগের মাধ্যমে পুনরায় চালু করা যেতে পারে।

তিনি বলেন, এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ দিক। আমরা এটি স্বাগত জানাই। আমরা চাই এই আগ্রহ বাস্তব বিনিয়োগে রূপ নিক।

ইয়াং ডংনিং জানান, চীনা কোম্পানিগুলো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ও ই-কমার্স খাতেও বিনিয়োগের সম্ভাবনা খতিয়ে দেখছে, যে খাতগুলোতে চীন বৈশ্বিক নেতৃত্ব দিচ্ছে।

প্রতিউত্তরে প্রধান উপদেষ্টা চীনা কোম্পানিগুলোকে বাংলাদেশে কারখানা স্থানান্তরের জন্য দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চল বেছে নেওয়ার আহ্বান জানান। এ অঞ্চলে দেশের বৃহত্তম সমুদ্রবন্দর রয়েছে এবং মিয়ানমার, থাইল্যান্ডসহ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বাজারের নিকটবর্তী হওয়ায় এটি কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

তিনি বলেন, দেশের এই অংশের সমুদ্রপথের প্রবেশাধিকার অসাধারণ। চীনা কারখানাগুলো এখানে স্থানান্তরিত হলে তারা উন্নত দেশসহ চীনে রপ্তানি করতে পারবে।

অধ্যাপক ইউনূস চীনা অবকাঠামো কোম্পানিগুলোকে দক্ষিণ চীনের সঙ্গে রেল যোগাযোগ স্থাপনের প্রস্তাব দেন, যাতে স্থানান্তরিত উৎপাদন কারখানায় তৈরি পণ্যের রপ্তানি এবং আঞ্চলিক সংযোগ আরও সহজ হয়।

বৈঠকের শুরুতে প্রধান উপদেষ্টা হংকংয়ের একটি অ্যাপার্টমেন্ট ভবনে অগ্নিকাণ্ডে বহু মানুষের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেন।

সভায় টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) সমন্বয়কারী ও সিনিয়র সচিব লামিয়া মোরশেদ এবং বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন উপস্থিত ছিলেন।

নতুন প্রজন্মের অনলাইন টিভি

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

পাট ও ওষুধ খাতে বিনিয়োগে আগ্রহী চীন

আপডেট সময় : ০৮:১৪:৪০ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৮ নভেম্বর ২০২৫

চীনা বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশের সবুজ প্রযুক্তি, পাট, টেক্সটাইল ও ওষুধ খাতে বিনিয়োগে আগ্রহী বলে জানিয়েছেন চায়না এক্সপোর্ট-ইমপোর্ট ব্যাংকের (এক্সিম ব্যাংক) ভাইস প্রেসিডেন্ট ইয়াং ডংনিং।

বৃহস্পতিবার (২৭ নভেম্বর) রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে এ আগ্রহের কথা জানান সফররত ভাইস প্রেসিডেন্ট। তার সঙ্গে ছিলেন রাষ্ট্রীয় ইনস্টিটিউট অব ফাইন্যান্স অ্যান্ড সাসটেইনেবিলিটির প্রেসিডেন্ট ড. মা জুন।

শুক্রবার (২৮ নভেম্বর) প্রধান উপদেষ্টার উপ-প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার বৈঠকের কথা তুলে ধরে এসব তথ্য জানান।

তিনি আরও জানান, বাংলাদেশের সোনালি আঁশকে কেন্দ্র করে পাটভিত্তিক শিল্পে সরাসরি বিনিয়োগের ক্ষেত্রেও আগ্রহী চীনা কোম্পানি ও এক্সিম ব্যাংক, যেখানে অতীতে বাংলাদেশের বড় অবকাঠামো প্রকল্পে অর্থায়ন করেছে।

বৈঠকে ড. মা জুন বলেন, বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী পাটশিল্প চীনা বিনিয়োগকারীদের অন্যতম প্রধান আগ্রহের ক্ষেত্র। তারা বাংলাদেশি অংশীদারদের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগ গড়ে তুলতে আগ্রহী। চীনা কোম্পানিগুলো সবুজ জ্বালানি, সার ও প্লাস্টিকের বিকল্প পণ্য উৎপাদনে এক মিলিয়ন টন পর্যন্ত কাঁচা পাট ব্যবহারের প্রস্তুতি নিয়েছে বলেও জানান তিনি।

তিনি বলেন, চীনের অর্থায়নে পাটখাতে যৌথ বিনিয়োগের যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে।

প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ই্উনূস চীনের এই আগ্রহকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশটির বিনিয়োগ বাংলাদেশকে একটি শক্তিশালী উৎপাদন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলতে সহায়ক হবে, যা উন্নত দেশসহ চীনে রপ্তানিযোগ্য পণ্য উৎপাদন করতে পারবে।

ড. ইউনূস বলেন, আমরা এই খাতগুলোতে পূর্ণ গতিতে এগোতে পারি। তিনি ওষুধ ও স্বাস্থ্যসেবা খাতকেও চীনা বিনিয়োগের জন্য সম্ভাবনাময় ক্ষেত্র হিসেবে উল্লেখ করেন।

তিনি আরও জানান, সৌর জ্বালানির বিশ্বের বৃহত্তম উৎপাদক দেশ হিসেবে চীন বাংলাদেশের সবুজ জ্বালানিতে রূপান্তরকে উল্লেখযোগ্যভাবে ত্বরান্বিত করতে পারে। বিশেষ করে সৌর প্যানেল এবং রুফটপ সোলার সিস্টেম স্থাপনে বিনিয়োগ বাংলাদেশের এই রূপান্তরে বড় ভূমিকা রাখতে পারে।

প্রধান উপদেষ্টা চীনকে বাংলাদেশে উৎপাদন কারখানা স্থানান্তরের আহ্বান জানিয়ে বলেন, দেশের বিপুল যুবশক্তিকে কাজে লাগিয়ে বন্ধ হয়ে যাওয়া রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলগুলো যৌথ বিনিয়োগের মাধ্যমে পুনরায় চালু করা যেতে পারে।

তিনি বলেন, এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ দিক। আমরা এটি স্বাগত জানাই। আমরা চাই এই আগ্রহ বাস্তব বিনিয়োগে রূপ নিক।

ইয়াং ডংনিং জানান, চীনা কোম্পানিগুলো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ও ই-কমার্স খাতেও বিনিয়োগের সম্ভাবনা খতিয়ে দেখছে, যে খাতগুলোতে চীন বৈশ্বিক নেতৃত্ব দিচ্ছে।

প্রতিউত্তরে প্রধান উপদেষ্টা চীনা কোম্পানিগুলোকে বাংলাদেশে কারখানা স্থানান্তরের জন্য দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চল বেছে নেওয়ার আহ্বান জানান। এ অঞ্চলে দেশের বৃহত্তম সমুদ্রবন্দর রয়েছে এবং মিয়ানমার, থাইল্যান্ডসহ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বাজারের নিকটবর্তী হওয়ায় এটি কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

তিনি বলেন, দেশের এই অংশের সমুদ্রপথের প্রবেশাধিকার অসাধারণ। চীনা কারখানাগুলো এখানে স্থানান্তরিত হলে তারা উন্নত দেশসহ চীনে রপ্তানি করতে পারবে।

অধ্যাপক ইউনূস চীনা অবকাঠামো কোম্পানিগুলোকে দক্ষিণ চীনের সঙ্গে রেল যোগাযোগ স্থাপনের প্রস্তাব দেন, যাতে স্থানান্তরিত উৎপাদন কারখানায় তৈরি পণ্যের রপ্তানি এবং আঞ্চলিক সংযোগ আরও সহজ হয়।

বৈঠকের শুরুতে প্রধান উপদেষ্টা হংকংয়ের একটি অ্যাপার্টমেন্ট ভবনে অগ্নিকাণ্ডে বহু মানুষের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেন।

সভায় টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) সমন্বয়কারী ও সিনিয়র সচিব লামিয়া মোরশেদ এবং বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন উপস্থিত ছিলেন।