“পানি নিষ্কাশনের অভাবে জলাবদ্ধতায় নাকাল শতাধিক পরিবার”
পানি নিষ্কাশনের অভাবে জলাবদ্ধতায় নাকাল শতাধিক পরিবার

- আপডেট সময় : ০৬:১১:৩২ অপরাহ্ন, বুধবার, ৩০ জুলাই ২০২৫ ৭ বার পড়া হয়েছে
জেলা প্রতিনিধিঃ বর্ষা এলেই দুর্ভোগ যেন নিত্যসঙ্গী হয়ে দাঁড়ায় ফরিদপুরের সদরপুর উপজেলার কৃষ্ণপুর ইউনিয়নের মালো পাড়ার শতাধিক পরিবারের জন্য, বছরের একটি বড় অংশ জলাবদ্ধতায় কাটাতে হয় তাদের। সামান্য বৃষ্টি হলেই জমে থাকা পানি ঘরে-বাইরে ঢুকে পড়ে, স্থবির হয়ে পড়ে তাদের জীবনযাত্রা।
বছরের পর বছর ধরে এই দুর্দশা চললেও স্থানীয় প্রশাসনের কার্যকর কোনো উদ্যোগ না থাকায় পরিস্থিতির কোনো উন্নতি হয়নি। পানির নিষ্কাশনের কোনো সুব্যবস্থা না থাকায় এলাকায় জমে থাকা পানি দীর্ঘ সময় ধরে পচে গিয়ে সৃষ্টি করছে দুর্গন্ধ ও স্বাস্থ্যঝুঁকি।
স্থানীয়দের অভিযোগ, এলাকা নিচু হওয়ায় বৃষ্টির পানি স্বাভাবিকভাবে নিষ্কাশিত হতে পারে না। ফলে দিনের পর দিন পানি জমে থাকায় এটি এখন প্রায় স্থায়ী জলাবদ্ধতায় রূপ নিয়েছে। এ অবস্থায় স্কুলগামী শিশু, বয়স্ক মানুষ, রোগীরা সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়ছেন।
বাসিন্দাদের বক্তব্য
স্থানীয় বাসিন্দা নিতিশ মালো জানান, “বর্ষা এলেই আতঙ্কে থাকি। সামান্য বৃষ্টিতেই ঘরের ভেতরে পানি উঠে যায়। রান্নাবান্না, চলাফেরা সবই বন্ধ হয়ে পড়ে। বারবার অভিযোগ জানিয়েও কোনো প্রতিকার পাইনি।”
তিনি আরও বলেন, “বাচ্চারা স্কুলে যেতে পারে না, আমরা নিজেদের প্রয়োজনেও বাইরে যেতে পারি না। চারদিকে পচা পানির গন্ধ, মশা-মাছির উপদ্রব—সব মিলে আমরা অসহনীয় অবস্থায় আছি।”
অন্য একজন বাসিন্দা সন্তোষ মণ্ডল বলেন,
“বছরের অর্ধেক সময় পানিবন্দি থাকি। পানি নিষ্কাশনের জন্য যদি ড্রেনেজ ব্যবস্থা থাকত, তাহলে অন্তত এই কষ্ট হতো না।”
স্বাস্থ্যঝুঁকি ও পরিবেশগত প্রভাব
এই দীর্ঘস্থায়ী জলাবদ্ধতার ফলে এলাকাবাসীর মধ্যে ডায়রিয়া, চর্মরোগ, পেটের পীড়াসহ নানা পানিবাহিত রোগের প্রকোপ বেড়েছে। বিশেষ করে শিশু ও বৃদ্ধরা সবচেয়ে বেশি স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছেন।
এছাড়া, জমে থাকা পানি থেকে মশা ও অন্যান্য পোকামাকড়ের প্রজনন বেড়ে ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়ার আশঙ্কাও বাড়ছে। স্থানীয় ক্লিনিক ও ফার্মেসিগুলোতে প্রতিদিনই রোগীদের ভিড় লেগে থাকে।
জনপ্রতিনিধিদের বক্তব্য
কৃষ্ণপুর ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান পারভীন বেগম বলেন, “এটা বহুদিনের সমস্যা। আমরা বিষয়টি সম্পর্কে অবগত এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। স্থায়ী সমাধানের জন্য চেষ্টা চলছে, আশা করছি শীঘ্রই কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া হবে।”
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জাকিয়া সুলতানা বলেন,
“আমরা বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখছি। শুধু তাৎক্ষণিক সমাধান নয়, দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা নিয়ে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা গড়ে তোলা হবে।”
সমাধান ও দাবিসমূহ
স্থানীয় বাসিন্দারা দ্রুত ড্রেনেজ ব্যবস্থা স্থাপন, খাল খনন ও পানি চলাচলের রাস্তাগুলো উন্মুক্ত করার দাবি জানিয়েছেন। তারা মনে করেন,
“যদি আর কিছু না হয়, অন্তত ছোট একটি ড্রেন করে দেওয়া হোক, যাতে পানি ঘর থেকে বেরিয়ে যেতে পারে।”
পরিস্থিতির ভয়াবহতা ও ভবিষ্যৎ শঙ্কা
পরিস্থিতি এমন জায়গায় পৌঁছেছে যে এলাকাটি এখন অনেকটাই ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যের ওপর এটি যে কতটা নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে, তা দিনের পর দিন আরও প্রকট হয়ে উঠছে।
দ্রুত ব্যবস্থা না নেওয়া হলে জলাবদ্ধতার এই সংকট আগামীতে ভয়াবহ রূপ নিতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন এলাকাবাসী ও বিশেষজ্ঞরা।