বয়স বৈষম্যে চাকরি বঞ্চনা, এনটিআরসিএর বিরুদ্ধে রোববার প্রতিবাদ
বয়স বৈষম্যে চাকরি বঞ্চনা, এনটিআরসিএর বিরুদ্ধে রোববার প্রতিবাদ25

- আপডেট সময় : ০৭:৪৫:২৫ অপরাহ্ন, শনিবার, ২১ জুন ২০২৫ ৬ বার পড়া হয়েছে
নিজস্ব প্রতিবেদকঃ জাতীয় শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ) পরিচালিত অষ্টাদশ শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হাজারো প্রার্থী এবার নিয়োগ থেকে বঞ্চিত হওয়ার শঙ্কায় রাস্তায় নামছেন। এনটিআরসিএর বয়সসীমা নির্ধারণে বৈষম্যমূলক নীতির প্রতিবাদে তারা আগামী ২২ জুন, রোববার সকাল ৯টায় এনটিআরসিএ কার্যালয়ের সামনে অবস্থান কর্মসূচি ও প্রতিবাদ সমাবেশ ডেকেছেন।
প্রার্থীরা বলছেন, ২০২৩ সালের ২ নভেম্বর অষ্টাদশ শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষার বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। তখন আবেদনকারীদের বয়স ছিল ৩৫ বছরের নিচে। কিন্তু বিভিন্ন ধরণের প্রশাসনিক দীর্ঘসূত্রিতায় ফলাফল প্রকাশ পেতে পেতে সময় গড়ায় ২০২৫ সালের ৪ জুন পর্যন্ত। এত বিলম্বে ফল প্রকাশ হওয়ায় অনেকে ইতোমধ্যে ৩৫ বছরের সীমা অতিক্রম করে ফেলেছেন।
সর্বশেষ প্রকাশিত ৬ষ্ঠ গণবিজ্ঞপ্তিতে (২০২৫) বয়স গণনার জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে ২০২৫ সালের ৪ জুন তারিখকে। যার ফলে নিবন্ধনে উত্তীর্ণ হলেও অনেকেই আর চাকরির জন্য আবেদন করতে পারছেন না। এই সিদ্ধান্তকে অনেকেই ‘অন্যায় ও বৈষম্যমূলক’ বলেই মনে করছেন।
ভুক্তভোগী প্রার্থীরা বলছেন, দেশে অন্যান্য সরকারি নিয়োগে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের তারিখ অনুযায়ী বয়স গণনা করা হয়। এনটিআরসিএ সেখানে ব্যতিক্রমী নীতি প্রণয়ন করে প্রার্থীদের সঙ্গে ‘প্রশাসনিক বৈষম্য’ করেছে। একইসঙ্গে, নিবন্ধন পরীক্ষার বিজ্ঞপ্তি ও নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির মধ্যে এই বয়স নির্ধারণের বৈপরীত্যকে ‘আইন ও মানবাধিকারের পরিপন্থী’ বলে অভিযোগ উঠেছে।
আন্দোলনকারীরা বলছেন, সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী প্রতি বছর একটি নিবন্ধন পরীক্ষা এবং একটি গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশের কথা থাকলেও বাস্তবে এনটিআরসিএ দীর্ঘ সময় পরীক্ষা ও নিয়োগ প্রক্রিয়ায় ব্যর্থ হয়েছে। ১৭তম নিবন্ধন পরীক্ষার পর প্রায় চার বছর কোনো পরীক্ষা নেওয়া হয়নি। ১৮তম পরীক্ষা নিয়েও বিলম্বের দায় আজ প্রার্থীদের ঘাড়ে চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে।
এক প্রার্থী বলেন, “আমরা ২০২৩ সালে পরীক্ষার জন্য আবেদন করেছি, তখন আমরা বয়সসীমার ভেতরেই ছিলাম। এখন কর্তৃপক্ষের দীর্ঘসূত্রিতার কারণে ২০২৫ সালে এসে বলা হচ্ছে আপনি বয়সোত্তীর্ণ! এটা চরম বৈষম্য, আমরা কি দায়ী এই বিলম্বের জন্য?”
অনেকেই বলেন, বয়স একটি সংবেদনশীল ইস্যু। চাকরি প্রত্যাশীদের জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি পর্যায়ে এমন বাধা তৈরি হওয়া মানে ভবিষ্যৎ কেড়ে নেওয়া। এভাবে হাজারো প্রার্থী তাদের শেষ সুযোগ হারাচ্ছেন। এমনকি কেউ কেউ জানান, এটি তাদের জীবনের একমাত্র সরকারি চাকরির সুযোগ ছিল।
প্রার্থীরা দাবি করছেন, যারা নিবন্ধনের বিজ্ঞপ্তির সময় বয়সসীমার মধ্যে ছিলেন, তাদের জন্য বিশেষ ছাড়ের মাধ্যমে আবেদন করার সুযোগ রাখতে হবে। কারণ দীর্ঘসূত্রিতার দায় নিয়োগ প্রত্যাশী প্রার্থীদের নয়, বরং এনটিআরসিএর প্রশাসনিক ব্যর্থতার ফল।
এ বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে পরবর্তী সময়ে বৃহত্তর আন্দোলনের হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন অংশগ্রহণকারীরা। তারা সরকারের হস্তক্ষেপ দাবি করে বলেছেন, “আমরা নিয়মানুযায়ী পরীক্ষা দিয়ে উত্তীর্ণ হয়েছি। নিয়োগ প্রক্রিয়ার বিলম্বে যদি আমরা চাকরি হারাই, সেটি হবে রাষ্ট্রীয় অবিচার।”
একইসঙ্গে তারা শিক্ষা মন্ত্রণালয়, প্রধানমন্ত্রী এবং মানবাধিকার সংস্থাগুলোর প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন, যেন এ বিষয়ে মানবিক ও বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ নেওয়া হয়। তারা বিশ্বাস করেন, নিয়োগের ক্ষেত্রে ‘যোগ্যতাই প্রধান বিবেচ্য হওয়া উচিত, বয়স নয়’, বিশেষ করে যখন বয়সসীমা পেরোনোর কারণ প্রশাসনিক বিলম্ব।
এনটিআরসিএর বিরুদ্ধে অবস্থান কর্মসূচিতে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আগত ভুক্তভোগী প্রার্থীদের অংশ নেওয়ার কথা রয়েছে। প্রতিবাদ কর্মসূচিতে শত শত চাকরি প্রত্যাশী একত্রিত হয়ে তাদের ন্যায্য অধিকার আদায়ের জন্য সোচ্চার হবেন বলে জানা গেছে।