ঢাকা ১০:১০ অপরাহ্ন, রবিবার, ০৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ব্যাংকে বিত্তশালীদের হিসাব এক লাখ ২৮ হাজার

অনলাইন ডেস্ক
  • আপডেট সময় : ০৯:০৪:১৮ অপরাহ্ন, রবিবার, ৭ ডিসেম্বর ২০২৫
  • / 3

দেশের ব্যাংকগুলোতে কোটি টাকার অঙ্কে জমা থাকা হিসাবের সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। আর্থিক সংকট, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি ও চলমান মূল্যস্ফীতির চাপের মধ্যেও বড় অঙ্কের জমা বাড়তে থাকায় বিষয়টি আলোচনায় এসেছে। সর্বশেষ তথ্য বলছে, ব্যাংকে কোটি টাকা বা তার বেশি জমা রয়েছে– এমন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের হিসাব এক লাখ ২৮ হাজারেরও বেশি হয়ে গেছে।

খাত সংশ্লিষ্টদের মতে, নিত্যপণ্যের দাম বাড়ায় নিম্ন ও মধ্যবিত্ত পরিবারগুলো চাপে পড়েছে। সংসারের ব্যয় সামাল দিতে অনেকেই আগের সঞ্চয় ভাঙতে বাধ্য হচ্ছেন। ফলে ব্যাংকিং খাতে ছোট অঙ্কের আমানত কমার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। বিপরীতে সমাজের একটি শ্রেণির আয় উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। বিত্তশালী ব্যক্তি ও বড় ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের কাছেই নতুন জমা হিসাবের বড় অংশ কেন্দ্রীভূত হচ্ছে। তাদের ভাষায়, অর্থনৈতিক চাপ যতই বাড়ুক, সম্পদশালী জনগোষ্ঠীর আয়-সম্পদ বৃদ্ধির ধারায় তেমন বাধা তৈরি হয়নি। ব্যাংকে বড় অঙ্কের সঞ্চয় হিসাব বাড়াই এর প্রমাণ।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সবশেষ ২০২৫ সালের সেপ্টেম্বর ভিত্তিক হালনাগাদ প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলেছেন, কোটি টাকার হিসাব মানেই কোটিপতি ব্যক্তির হিসাব নয়। কারণ ব্যাংকে এক কোটি টাকার বেশি অর্থ রাখার তালিকায় ব্যক্তি ছাড়া অনেক প্রতিষ্ঠানও রয়েছে। আবার ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান কতটি ব্যাংক হিসাব খুলতে পারবে, তার কোনো নির্দিষ্ট সীমা নেই। ফলে এক প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তির একাধিক হিসাবও রয়েছে। এর মধ্যে সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সংস্থার কোটি টাকার হিসাবও রয়েছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, ২০২৫ সালের সেপ্টেম্বর শেষে ব্যাংক খাতে মোট আমানতকারীর সংখ্যা দাঁড়ায় ১৭ কোটি ৪৫ লাখ ৯৬ হাজার ৭০০টি। চলতি বছরের জুন শেষে হিসাব সংখ্যা ছিল ১৬ কোটি ৯০ লাখ ২ হাজার ৬৭১টি। সেই হিসাবে তিন মাসে ব্যাংক খাতের মোট হিসাব সংখ্যা বেড়েছে ৫৫ লাখ ৯৪ হাজার ২৯টি।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, চলতি বছরের জুন প্রান্তিকে কোটি টাকার বেশি আমানত থাকা হিসাবধারীর সংখ্যা ছিল ১ লাখ ২৭ হাজার ৩৩৬টি। আর সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে এই সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ২৮ হাজার ৭০টি। সেই হিসাবে তিন মাসের ব্যবধানে কোটি টাকার বেশি জমা থাকা হিসাব সংখ্যা বেড়েছে ৭৩৪টি।

এদিকে কোটি টাকার হিসাবধারীর সংখ্যা বাড়লেও কমেছে জমা টাকার পরিমাণ।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যানুসারে, চলতি বছরের জুন শেষে কোটি টাকার হিসাবে জমা টাকার পরিমাণ ছিল ৮ লাখ ৮০ হাজার ৭৭২ কোটি টাকা। আর সেপ্টেম্বর শেষে এসব হিসাবে জমা করা টাকার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৮ লাখ ২১ হাজার ৫৬২ কোটি টাকা। সেই হিসাবে তিন মাসের ব্যবধানে এসব হিসাবে জমা কমেছে ৫৯ হাজার ২০৯ কোটি টাকা।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য অনুযায়ী, স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে দেশে কোটিপতি আমানতকারী ছিল ৫ জন, ১৯৭৫ সালে তা ৪৭ জনে উন্নীত হয়। ১৯৮০ সালে কোটিপতিদের হিসাবধারীর সংখ্যা ছিল ৯৮টি। এরপর ১৯৯০ সালে ৯৪৩টি, ১৯৯৬ সালে ২ হাজার ৫৯৪ জন, ২০০১ সালে ৫ হাজার ১৬২টি, ২০০৬ সালে ৮ হাজার ৮৮৭টি এবং ২০০৮ সালে ছিল ১৯ হাজার ১৬৩টি।

২০২০ সালের ডিসেম্বর শেষে এ আমানতকারীর সংখ্যা দাঁড়ায় ৯৩ হাজার ৮৯০টি। ২০২১ সালের ডিসেম্বর বেড়ে তা দাঁড়ায় ১ লাখ ১৯৭৬ টিতে। ২০২২ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত সেই হিসাবের সংখ্যা ছিল ১ লাখ ৯ হাজার ৯৪৬ টি। ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে দাঁড়ায় ১ লাখ ১৬ হাজার ৯০৮টিতে এবং সবশেষ ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে ১ লাখ ২২ হাজার ৮১টি এবং সর্বশেষ ২০২৫ সালের সেপ্টেম্বরে হিসাব সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ২৮ হাজারে।

নতুন প্রজন্মের অনলাইন টিভি

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

ব্যাংকে বিত্তশালীদের হিসাব এক লাখ ২৮ হাজার

আপডেট সময় : ০৯:০৪:১৮ অপরাহ্ন, রবিবার, ৭ ডিসেম্বর ২০২৫

দেশের ব্যাংকগুলোতে কোটি টাকার অঙ্কে জমা থাকা হিসাবের সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। আর্থিক সংকট, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি ও চলমান মূল্যস্ফীতির চাপের মধ্যেও বড় অঙ্কের জমা বাড়তে থাকায় বিষয়টি আলোচনায় এসেছে। সর্বশেষ তথ্য বলছে, ব্যাংকে কোটি টাকা বা তার বেশি জমা রয়েছে– এমন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের হিসাব এক লাখ ২৮ হাজারেরও বেশি হয়ে গেছে।

খাত সংশ্লিষ্টদের মতে, নিত্যপণ্যের দাম বাড়ায় নিম্ন ও মধ্যবিত্ত পরিবারগুলো চাপে পড়েছে। সংসারের ব্যয় সামাল দিতে অনেকেই আগের সঞ্চয় ভাঙতে বাধ্য হচ্ছেন। ফলে ব্যাংকিং খাতে ছোট অঙ্কের আমানত কমার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। বিপরীতে সমাজের একটি শ্রেণির আয় উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। বিত্তশালী ব্যক্তি ও বড় ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের কাছেই নতুন জমা হিসাবের বড় অংশ কেন্দ্রীভূত হচ্ছে। তাদের ভাষায়, অর্থনৈতিক চাপ যতই বাড়ুক, সম্পদশালী জনগোষ্ঠীর আয়-সম্পদ বৃদ্ধির ধারায় তেমন বাধা তৈরি হয়নি। ব্যাংকে বড় অঙ্কের সঞ্চয় হিসাব বাড়াই এর প্রমাণ।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সবশেষ ২০২৫ সালের সেপ্টেম্বর ভিত্তিক হালনাগাদ প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলেছেন, কোটি টাকার হিসাব মানেই কোটিপতি ব্যক্তির হিসাব নয়। কারণ ব্যাংকে এক কোটি টাকার বেশি অর্থ রাখার তালিকায় ব্যক্তি ছাড়া অনেক প্রতিষ্ঠানও রয়েছে। আবার ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান কতটি ব্যাংক হিসাব খুলতে পারবে, তার কোনো নির্দিষ্ট সীমা নেই। ফলে এক প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তির একাধিক হিসাবও রয়েছে। এর মধ্যে সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সংস্থার কোটি টাকার হিসাবও রয়েছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, ২০২৫ সালের সেপ্টেম্বর শেষে ব্যাংক খাতে মোট আমানতকারীর সংখ্যা দাঁড়ায় ১৭ কোটি ৪৫ লাখ ৯৬ হাজার ৭০০টি। চলতি বছরের জুন শেষে হিসাব সংখ্যা ছিল ১৬ কোটি ৯০ লাখ ২ হাজার ৬৭১টি। সেই হিসাবে তিন মাসে ব্যাংক খাতের মোট হিসাব সংখ্যা বেড়েছে ৫৫ লাখ ৯৪ হাজার ২৯টি।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, চলতি বছরের জুন প্রান্তিকে কোটি টাকার বেশি আমানত থাকা হিসাবধারীর সংখ্যা ছিল ১ লাখ ২৭ হাজার ৩৩৬টি। আর সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে এই সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ২৮ হাজার ৭০টি। সেই হিসাবে তিন মাসের ব্যবধানে কোটি টাকার বেশি জমা থাকা হিসাব সংখ্যা বেড়েছে ৭৩৪টি।

এদিকে কোটি টাকার হিসাবধারীর সংখ্যা বাড়লেও কমেছে জমা টাকার পরিমাণ।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যানুসারে, চলতি বছরের জুন শেষে কোটি টাকার হিসাবে জমা টাকার পরিমাণ ছিল ৮ লাখ ৮০ হাজার ৭৭২ কোটি টাকা। আর সেপ্টেম্বর শেষে এসব হিসাবে জমা করা টাকার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৮ লাখ ২১ হাজার ৫৬২ কোটি টাকা। সেই হিসাবে তিন মাসের ব্যবধানে এসব হিসাবে জমা কমেছে ৫৯ হাজার ২০৯ কোটি টাকা।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য অনুযায়ী, স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে দেশে কোটিপতি আমানতকারী ছিল ৫ জন, ১৯৭৫ সালে তা ৪৭ জনে উন্নীত হয়। ১৯৮০ সালে কোটিপতিদের হিসাবধারীর সংখ্যা ছিল ৯৮টি। এরপর ১৯৯০ সালে ৯৪৩টি, ১৯৯৬ সালে ২ হাজার ৫৯৪ জন, ২০০১ সালে ৫ হাজার ১৬২টি, ২০০৬ সালে ৮ হাজার ৮৮৭টি এবং ২০০৮ সালে ছিল ১৯ হাজার ১৬৩টি।

২০২০ সালের ডিসেম্বর শেষে এ আমানতকারীর সংখ্যা দাঁড়ায় ৯৩ হাজার ৮৯০টি। ২০২১ সালের ডিসেম্বর বেড়ে তা দাঁড়ায় ১ লাখ ১৯৭৬ টিতে। ২০২২ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত সেই হিসাবের সংখ্যা ছিল ১ লাখ ৯ হাজার ৯৪৬ টি। ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে দাঁড়ায় ১ লাখ ১৬ হাজার ৯০৮টিতে এবং সবশেষ ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে ১ লাখ ২২ হাজার ৮১টি এবং সর্বশেষ ২০২৫ সালের সেপ্টেম্বরে হিসাব সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ২৮ হাজারে।