ঢাকা ০১:৪০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩০ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৬ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

রাজনীতিতে খালেদা জিয়ার ৪১ বছর

অনলাইন ডেস্ক
  • আপডেট সময় : ১১:৪০:৫০ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩০ ডিসেম্বর ২০২৫
  • / 7

বিএনপি চেয়ারপারসন ও তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া আর নেই। মঙ্গলবার সকাল ৬টায় তিনি শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন।

গৃহবধূ থেকে রাজনীতিতে এসে ৪১ বছর পার করেছেন খালেদা জিয়া। ১৯৮৪ সালের ১০ মে কাউন্সিলের মাধ্যমে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিএনপির চেয়ারপাসন নির্বাচিত হন তিনি। এরপর থেকে মৃত্যুর দিন পর্যন্ত দলের চেয়ারপারসনের দায়িত্ব পালন করেছেন এ নেত্রী।

বিএনপি চেয়ারপারসনের দায়িত্বে থাকার পাশাপাশি তিনবার প্রধানমন্ত্রী হিসেবেও নির্বাচিত হয়েছেন খালেদা জিয়া। এরশাদবিরোধী আন্দোলনের পর খালেদা জিয়াকে দেওয়া হয় আপসহীন নেত্রীর উপাধি। তিনি বাংলাদেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হয়ে ইতিহাস গড়েন।

খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক জীবনের শুরু ছিল স্বামী জিয়াউর রহমানকে হারানোর বেদনা নিয়ে। ১৯৮১ সালের ৩০ মে জিয়াউর রহমানকে হত্যার পর সংকটে পড়ে বিএনপি। ঠিক সেই সময় গৃহবধূ থেকে খালেদা জিয়া দলটিতে যোগ দেন। ১৯৮২ সালে ৩ জানুয়ারি বিএনপিতে যোগ দেন তিনি। ১৯৮৩ সালের মার্চ মাসে তিনি বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান হন। ১৯৮৩ সালের ১ এপ্রিল দলের বর্ধিত সভায় তিনি প্রথম বক্তৃতা করেন। বিচারপতি সাত্তার অসুস্থ হয়ে পড়লে তিনি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮৪ সালের ১০ মে পার্টির চেয়ারপারসন নির্বাচিত হন খালেদা জিয়া।

চেয়ারপারসনের প্রচার বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল ১৯৮৩ সালে সাত-দলীয় জোট গঠন করে জেনারেল এরশাদের স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে আপসহীন সংগ্রাম শুরু করে। এরশাদের স্বৈরশাসন অবসানের লক্ষ্যে পরিচালিত দীর্ঘ সংগ্রামে খালেদা জিয়া অবৈধ এরশাদ সরকারের সঙ্গে কোনো প্রকার আপস করেননি। বিভিন্ন সময়ে নিষেধাজ্ঞামূলক আইনের দ্বারা তার স্বাধীন গতিবিধিকে বাধাগ্রস্ত করা হয়েছিল। জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পর আট বছরে সাত বার অন্তরীণ করা সত্ত্বেও জেনারেল এরশাদকে ক্ষমতাচ্যুত কারার আন্দোলনে সক্রিয় নেতৃত্ব দেন খালেদা জিয়া।

৪১ বছরের রাজনৈতিক জীবনে বহুবার সংকটের মুখে পড়েছেন খালেদা জিয়া। নব্বইয়ের গণআন্দোলনের পর বিশেষ করে ২০০৮ সালের পর থেকে আদালতের আদেশে যেমন তার স্বামীর সময়ে পাওয়া বাড়ি হারাতে হয়েছে, তেমনি ছোট সন্তান আরাফাত রহমান কোকোর লাশও তাকে দেখতে হয়েছে। ২০১৫ সালে ৩ মাসের অবরোধ চলাকালে তার বিরুদ্ধে আগুন সন্ত্রাসের অভিযোগ ওঠে। যদিও বিএনপির নেতারা বরাবরই বলে এসেছেন, ‘আগুন সন্ত্রাস ক্ষমতাসীনদের কৌশল।’

জাতীয়তাবাদী ঘরানার বুদ্ধিজীবী অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদ মনে করেন, ‘বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক আন্দোলনের ইতিহাসে খালেদা জিয়ার অংশগ্রহণ উল্লেখযোগ্য। দেশের জনপ্রিয়তম নেত্রী তিনিই। নির্বাচন করে কখনোই নিজের আসনে হারতে হয়নি বিএনপির চেয়ারপারসনকে।’

বিএনপি চেয়ারপারসনের প্রচার বিভাগ থেকে জানা গেছে, বেগম খালেদা জিয়া ১৯৪৬ সালের ১৫ আগস্ট দিনাজপুর জেলার জলপাইগুড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা ইস্কান্দার মজুমদার ব্যবসা উপলক্ষে জলপাইগুঁড়িতে বসবাস করতেন। তার আদি নিবাস ছিল ফেনী জেলার ফুলগাজী থানায়। ১৯৪৭ সালে ভারত ভাগের পর জলপাইগুঁড়িতে চা ব্যবসা ছেড়ে তিনি দিনাজপুর শহরে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন।

৫ ভাই-বোনের মধ্যে খালেদা জিয়া তৃতীয়। দুই সন্তান তারেক রহমান পিনো ও প্রয়াত আরাফাত রহমান কোকোর জননী খালেদা জিয়া।

দিনাজপুর মিশনারি স্কুলে খালেদা জিয়া প্রাথমিক শিক্ষা লাভ করেন এবং পরে ১৯৬০ সালে দিনাজপুর বালিকা হাইস্কুল থেকে এসএসসি পাস করেন। ওই বছরই তৎকালীন ক্যাপ্টেন (পরবর্তী সময়ে রাষ্ট্রপতি) জিয়াউর রহমান সঙ্গে তার বিয়ে হয়।

এরশাদের শাসনামল ছাড়াও খালেদা জিয়া জেলে গিয়েছিলেন ২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে। ২০০৭ সালের ৩ সেপ্টেম্বর ভোরে খালেদা জিয়াকে ক্যান্টনমেন্টের মইনুল রোডের বাসভবন থেকে গ্রেপ্তারের পর সোজা নিয়ে যাওয়া হয় সিএমএম আদালতে। আদালতে জামিন নামঞ্জুর হলে তাকে জাতীয় সংসদ ভবন এলাকায় স্থাপিত সাব জেলে নিয়ে যাওয়া হয়। ওই কারাগারে ৩৭২ দিন কাটানোর পর ২০০৮ সালের ১১ সেপ্টেম্বর তিনি মুক্তি পান। কারাবন্দি থাকাকালেই তার মায়ের মৃত্যু হয়।

সাব জেলে থাকার সময় ২০০৮ সালের ১৮ জানুয়ারি খালেদা জিয়ার মা বেগম তৈয়বা মজুমদার দিনাজপুরে নিজ বাসভবনে মারা যান। তার লাশ হেলিকপ্টারে করে ঢাকায় নিয়ে আসা হয়। পরদিন (১৯ জানুয়ারি) খালেদা জিয়া প্যারোলে মুক্তি পেয়ে মইনুল রোডের বাসায় গিয়ে মায়ের লাশ দেখে কান্নায় ভেঙে পড়েন।

২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি দুদকের মামলায় খালেদা জিয়া কারাগারে যেতে হয়। প্রায় দুই বছর কারাবন্দি থাকার পর ২০২০ সালের ২৫ মার্চ বিশ্বে করোনাভাইরাসের সংক্রমণের সময় পারিবারিক আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ছয় মাসের জন্য শর্ত সাপেক্ষে মুক্তি পান খালেদা জিয়া। শর্ত ছিল—তিনি গুলশানের বাসায় থাকবেন এবং দেশ ত্যাগ করবেন না। পরে ছয় মাস করে একাধিকবার সরকার তার মুক্তির মেয়াদ বাড়ায়। ২০২৫ সালের ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের মুখে শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর ৬ আগস্ট রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন সংবিধানের ৪৯ অনুচ্ছেদে প্রদত্ত ক্ষমতাবলে তাকে দণ্ডমুক্ত ঘোষণা করলে বিএনপি চেয়ারপারসন সম্পূর্ণ মুক্তি পান।

গত প্রায় চার দশক ধরে বাংলাদেশের নির্বাচনে খালেদা জিয়া অন্যতম জনপ্রিয় ও গুরুত্বপূর্ণ একজন রাজনীতিবিদ হিসেবে পরিচিতি পেয়েছেন; যিনি তার রাজনৈতিক জীবনে কখনও নির্বাচনে পরাজিত হননি। ১৯৯১ সাল থেকে শুরু করে ২০০১ সাল পর্যন্ত তিনটি সংসদ নির্বাচনে খালেদা জিয়া প্রতিবারই ৫টি আসনে প্রার্থী ছিলেন। সবগুলো আসনে তিনি জয়লাভ করেছেন। সর্বশেষ ২০০৮ সালের নির্বাচনে খালেদা জিয়া তিনটি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে সবগুলোতে জয়ী হন।

এরপর ২০১৪ সালের নির্বাচন বয়কট করে বিএনপি। আর দুর্নীতির মামলায় দুই বছরের বেশি সাজাপ্রাপ্ত হওয়ায় সুপ্রিম কোর্টের আদেশের কারণে ২০১৮ সালের নির্বাচনে অংশ নিতে পারেননি খালেদা জিয়া। সবশেষ ২০২৪ সালের নির্বাচনও বয়কট করে বিএনপি। অর্থাৎ ২০১৪ সাল থেকে নির্বাচনের বাইরে ছিলেন খালেদা জিয়া। ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনে তার ৩টি আসন থেকে অংশ নেওয়ার কথা ছিল।

খালেদা জিয়া ১৯৯১, ১৯৯৬ ও ২০০১ সালে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন। এরমধ্যে দ্বিতীয় দফার দায়িত্বকাল ছিল একমাস।

বিএনপির চেয়ারপারসনের মিডিয়া উইং সদস্য শায়রুল কবির খান জানান, ১৯৯১ সালের সাধারণ নির্বাচনে জয়ী হয়ে খালেদা জিয়া ও তার দল বিএনপি বিজয়ী হয়। ওই বছরই বেগম জিয়া পঞ্চম সংসদে প্রধানমন্ত্রী হন। তার নেতৃত্বেই সংবিধানে দ্বাদশ সংশোধনীর মধ্য দিয়ে রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার পদ্ধতি থেকে সংসদীয় গণতান্ত্রিক সরকার পদ্ধতি প্রবর্তন হয়।

১৯৯৬ সালে ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনের পর এক মাসের জন্য ষষ্ঠ সংসদের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা প্রণয়নের পর ওই বছর সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে হেরে যায় খালেদা জিয়ার দল বিএনপি, তিনি হন প্রধান বিরোধী দলীয় নেতা।

১৯৯৯ সালে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টি, গোলাম আজমের (একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে দণ্ডপ্রাপ্ত) নেতৃত্বাধীন জামায়াতে ইসলামী ও শায়খুল হাদিস আল্লামা আজিজুল হকের নেতৃত্বাধীন ইসলামী ঐক্যজোটের সমন্বয়ে গঠিত চারদলীয় ঐক্যজোটের ব্যানারে নির্বাচনে অংশ নিয়ে ২০০১ সালে তৃতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নির্বাচিত হন খালেদা জিয়া।

২০০৮ সালের নির্বাচনের পর বিরোধী দলীয় নেতা হন খালেদা জিয়া।

নতুন প্রজন্মের অনলাইন টিভি

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

রাজনীতিতে খালেদা জিয়ার ৪১ বছর

আপডেট সময় : ১১:৪০:৫০ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩০ ডিসেম্বর ২০২৫

বিএনপি চেয়ারপারসন ও তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া আর নেই। মঙ্গলবার সকাল ৬টায় তিনি শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন।

গৃহবধূ থেকে রাজনীতিতে এসে ৪১ বছর পার করেছেন খালেদা জিয়া। ১৯৮৪ সালের ১০ মে কাউন্সিলের মাধ্যমে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিএনপির চেয়ারপাসন নির্বাচিত হন তিনি। এরপর থেকে মৃত্যুর দিন পর্যন্ত দলের চেয়ারপারসনের দায়িত্ব পালন করেছেন এ নেত্রী।

বিএনপি চেয়ারপারসনের দায়িত্বে থাকার পাশাপাশি তিনবার প্রধানমন্ত্রী হিসেবেও নির্বাচিত হয়েছেন খালেদা জিয়া। এরশাদবিরোধী আন্দোলনের পর খালেদা জিয়াকে দেওয়া হয় আপসহীন নেত্রীর উপাধি। তিনি বাংলাদেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হয়ে ইতিহাস গড়েন।

খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক জীবনের শুরু ছিল স্বামী জিয়াউর রহমানকে হারানোর বেদনা নিয়ে। ১৯৮১ সালের ৩০ মে জিয়াউর রহমানকে হত্যার পর সংকটে পড়ে বিএনপি। ঠিক সেই সময় গৃহবধূ থেকে খালেদা জিয়া দলটিতে যোগ দেন। ১৯৮২ সালে ৩ জানুয়ারি বিএনপিতে যোগ দেন তিনি। ১৯৮৩ সালের মার্চ মাসে তিনি বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান হন। ১৯৮৩ সালের ১ এপ্রিল দলের বর্ধিত সভায় তিনি প্রথম বক্তৃতা করেন। বিচারপতি সাত্তার অসুস্থ হয়ে পড়লে তিনি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮৪ সালের ১০ মে পার্টির চেয়ারপারসন নির্বাচিত হন খালেদা জিয়া।

চেয়ারপারসনের প্রচার বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল ১৯৮৩ সালে সাত-দলীয় জোট গঠন করে জেনারেল এরশাদের স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে আপসহীন সংগ্রাম শুরু করে। এরশাদের স্বৈরশাসন অবসানের লক্ষ্যে পরিচালিত দীর্ঘ সংগ্রামে খালেদা জিয়া অবৈধ এরশাদ সরকারের সঙ্গে কোনো প্রকার আপস করেননি। বিভিন্ন সময়ে নিষেধাজ্ঞামূলক আইনের দ্বারা তার স্বাধীন গতিবিধিকে বাধাগ্রস্ত করা হয়েছিল। জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পর আট বছরে সাত বার অন্তরীণ করা সত্ত্বেও জেনারেল এরশাদকে ক্ষমতাচ্যুত কারার আন্দোলনে সক্রিয় নেতৃত্ব দেন খালেদা জিয়া।

৪১ বছরের রাজনৈতিক জীবনে বহুবার সংকটের মুখে পড়েছেন খালেদা জিয়া। নব্বইয়ের গণআন্দোলনের পর বিশেষ করে ২০০৮ সালের পর থেকে আদালতের আদেশে যেমন তার স্বামীর সময়ে পাওয়া বাড়ি হারাতে হয়েছে, তেমনি ছোট সন্তান আরাফাত রহমান কোকোর লাশও তাকে দেখতে হয়েছে। ২০১৫ সালে ৩ মাসের অবরোধ চলাকালে তার বিরুদ্ধে আগুন সন্ত্রাসের অভিযোগ ওঠে। যদিও বিএনপির নেতারা বরাবরই বলে এসেছেন, ‘আগুন সন্ত্রাস ক্ষমতাসীনদের কৌশল।’

জাতীয়তাবাদী ঘরানার বুদ্ধিজীবী অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদ মনে করেন, ‘বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক আন্দোলনের ইতিহাসে খালেদা জিয়ার অংশগ্রহণ উল্লেখযোগ্য। দেশের জনপ্রিয়তম নেত্রী তিনিই। নির্বাচন করে কখনোই নিজের আসনে হারতে হয়নি বিএনপির চেয়ারপারসনকে।’

বিএনপি চেয়ারপারসনের প্রচার বিভাগ থেকে জানা গেছে, বেগম খালেদা জিয়া ১৯৪৬ সালের ১৫ আগস্ট দিনাজপুর জেলার জলপাইগুড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা ইস্কান্দার মজুমদার ব্যবসা উপলক্ষে জলপাইগুঁড়িতে বসবাস করতেন। তার আদি নিবাস ছিল ফেনী জেলার ফুলগাজী থানায়। ১৯৪৭ সালে ভারত ভাগের পর জলপাইগুঁড়িতে চা ব্যবসা ছেড়ে তিনি দিনাজপুর শহরে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন।

৫ ভাই-বোনের মধ্যে খালেদা জিয়া তৃতীয়। দুই সন্তান তারেক রহমান পিনো ও প্রয়াত আরাফাত রহমান কোকোর জননী খালেদা জিয়া।

দিনাজপুর মিশনারি স্কুলে খালেদা জিয়া প্রাথমিক শিক্ষা লাভ করেন এবং পরে ১৯৬০ সালে দিনাজপুর বালিকা হাইস্কুল থেকে এসএসসি পাস করেন। ওই বছরই তৎকালীন ক্যাপ্টেন (পরবর্তী সময়ে রাষ্ট্রপতি) জিয়াউর রহমান সঙ্গে তার বিয়ে হয়।

এরশাদের শাসনামল ছাড়াও খালেদা জিয়া জেলে গিয়েছিলেন ২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে। ২০০৭ সালের ৩ সেপ্টেম্বর ভোরে খালেদা জিয়াকে ক্যান্টনমেন্টের মইনুল রোডের বাসভবন থেকে গ্রেপ্তারের পর সোজা নিয়ে যাওয়া হয় সিএমএম আদালতে। আদালতে জামিন নামঞ্জুর হলে তাকে জাতীয় সংসদ ভবন এলাকায় স্থাপিত সাব জেলে নিয়ে যাওয়া হয়। ওই কারাগারে ৩৭২ দিন কাটানোর পর ২০০৮ সালের ১১ সেপ্টেম্বর তিনি মুক্তি পান। কারাবন্দি থাকাকালেই তার মায়ের মৃত্যু হয়।

সাব জেলে থাকার সময় ২০০৮ সালের ১৮ জানুয়ারি খালেদা জিয়ার মা বেগম তৈয়বা মজুমদার দিনাজপুরে নিজ বাসভবনে মারা যান। তার লাশ হেলিকপ্টারে করে ঢাকায় নিয়ে আসা হয়। পরদিন (১৯ জানুয়ারি) খালেদা জিয়া প্যারোলে মুক্তি পেয়ে মইনুল রোডের বাসায় গিয়ে মায়ের লাশ দেখে কান্নায় ভেঙে পড়েন।

২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি দুদকের মামলায় খালেদা জিয়া কারাগারে যেতে হয়। প্রায় দুই বছর কারাবন্দি থাকার পর ২০২০ সালের ২৫ মার্চ বিশ্বে করোনাভাইরাসের সংক্রমণের সময় পারিবারিক আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ছয় মাসের জন্য শর্ত সাপেক্ষে মুক্তি পান খালেদা জিয়া। শর্ত ছিল—তিনি গুলশানের বাসায় থাকবেন এবং দেশ ত্যাগ করবেন না। পরে ছয় মাস করে একাধিকবার সরকার তার মুক্তির মেয়াদ বাড়ায়। ২০২৫ সালের ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের মুখে শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর ৬ আগস্ট রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন সংবিধানের ৪৯ অনুচ্ছেদে প্রদত্ত ক্ষমতাবলে তাকে দণ্ডমুক্ত ঘোষণা করলে বিএনপি চেয়ারপারসন সম্পূর্ণ মুক্তি পান।

গত প্রায় চার দশক ধরে বাংলাদেশের নির্বাচনে খালেদা জিয়া অন্যতম জনপ্রিয় ও গুরুত্বপূর্ণ একজন রাজনীতিবিদ হিসেবে পরিচিতি পেয়েছেন; যিনি তার রাজনৈতিক জীবনে কখনও নির্বাচনে পরাজিত হননি। ১৯৯১ সাল থেকে শুরু করে ২০০১ সাল পর্যন্ত তিনটি সংসদ নির্বাচনে খালেদা জিয়া প্রতিবারই ৫টি আসনে প্রার্থী ছিলেন। সবগুলো আসনে তিনি জয়লাভ করেছেন। সর্বশেষ ২০০৮ সালের নির্বাচনে খালেদা জিয়া তিনটি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে সবগুলোতে জয়ী হন।

এরপর ২০১৪ সালের নির্বাচন বয়কট করে বিএনপি। আর দুর্নীতির মামলায় দুই বছরের বেশি সাজাপ্রাপ্ত হওয়ায় সুপ্রিম কোর্টের আদেশের কারণে ২০১৮ সালের নির্বাচনে অংশ নিতে পারেননি খালেদা জিয়া। সবশেষ ২০২৪ সালের নির্বাচনও বয়কট করে বিএনপি। অর্থাৎ ২০১৪ সাল থেকে নির্বাচনের বাইরে ছিলেন খালেদা জিয়া। ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনে তার ৩টি আসন থেকে অংশ নেওয়ার কথা ছিল।

খালেদা জিয়া ১৯৯১, ১৯৯৬ ও ২০০১ সালে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন। এরমধ্যে দ্বিতীয় দফার দায়িত্বকাল ছিল একমাস।

বিএনপির চেয়ারপারসনের মিডিয়া উইং সদস্য শায়রুল কবির খান জানান, ১৯৯১ সালের সাধারণ নির্বাচনে জয়ী হয়ে খালেদা জিয়া ও তার দল বিএনপি বিজয়ী হয়। ওই বছরই বেগম জিয়া পঞ্চম সংসদে প্রধানমন্ত্রী হন। তার নেতৃত্বেই সংবিধানে দ্বাদশ সংশোধনীর মধ্য দিয়ে রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার পদ্ধতি থেকে সংসদীয় গণতান্ত্রিক সরকার পদ্ধতি প্রবর্তন হয়।

১৯৯৬ সালে ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনের পর এক মাসের জন্য ষষ্ঠ সংসদের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা প্রণয়নের পর ওই বছর সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে হেরে যায় খালেদা জিয়ার দল বিএনপি, তিনি হন প্রধান বিরোধী দলীয় নেতা।

১৯৯৯ সালে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টি, গোলাম আজমের (একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে দণ্ডপ্রাপ্ত) নেতৃত্বাধীন জামায়াতে ইসলামী ও শায়খুল হাদিস আল্লামা আজিজুল হকের নেতৃত্বাধীন ইসলামী ঐক্যজোটের সমন্বয়ে গঠিত চারদলীয় ঐক্যজোটের ব্যানারে নির্বাচনে অংশ নিয়ে ২০০১ সালে তৃতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নির্বাচিত হন খালেদা জিয়া।

২০০৮ সালের নির্বাচনের পর বিরোধী দলীয় নেতা হন খালেদা জিয়া।