লিবিয়ায় সহিংসতা বৃদ্ধি, জাতিসংঘের ‘গভীর উদ্বেগ’
লিবিয়ায় সহিংসতা বৃদ্ধি, জাতিসংঘের ‘গভীর উদ্বেগ’
অনলাইন প্রতিবেদন: ১৪ মে লিবিয়ার রাজধানী ত্রিপোলিতে নতুন করে সংঘর্ষের পর একটি পুড়ে যাওয়া গাড়ির পাশ দিয়ে লোকজন যাচ্ছে।
লিবিয়ার রাজধানী ত্রিপোলিতে বৃহস্পতিবার সহিংসতা বেড়ে যাওয়ায় জাতিসংঘ গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। তারা সতর্ক করে বলেছে, এই সংঘর্ষ ব্যাপক বাস্তুচ্যুতি ঘটাতে পারে এবং বেসামরিক নাগরিকদের গুরুতর ঝুঁকিতে ফেলতে পারে।
এর আগে সোমবার রাতে এ সংঘর্ষ শুরু হয়। ভারী গুলিবর্ষণ ও বিস্ফোরণে শহরের বেশ কয়েকটি এলাকা কেঁপে ওঠে এবং কমপক্ষে ছয় জন নিহত হয় বলে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।
তারা কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই সংঘর্ষের অবসানের ঘোষণা দিলেও বুধবার ত্রিপোলির একমাত্র বন্দরসহ গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলোতে পুনরায় সংঘর্ষ শুরু হয়, যা একজন নিরাপত্তা কর্মকর্তার ভাষায় ‘নগরযুদ্ধের’ রূপ নেয়। এরপর বৃহস্পতিবার বন্দুকের শব্দ থেমে গেলেও নতুন করে সহিংসতার আশঙ্কা এখনো রয়েছে।
আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম) আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষার জন্য অবিলম্বে সংঘর্ষ বন্ধের আহ্বান জানিয়েছে। জাতিসংঘের এই সংস্থা বলেছে, তারা সহিংসতা বৃদ্ধিতে ‘গভীরভাবে উদ্বিগ্ন’।
কারণ এতে ‘বিস্তৃত বাস্তুচ্যুতি ও বেসামরিক নাগরিকদের জন্য বিপদের ঝুঁকি’ রয়েছে।
ত্রিপোলিভিত্তিক সরকারের সমর্থক তুরস্ক বলেছে, তারা উত্তর আফ্রিকার দেশটি থেকে তাদের নাগরিকদের সরিয়ে নিচ্ছে।
বিভক্ত লিবিয়ায় সংঘর্ষের পটভূমি
২০১১ সালে ন্যাটো সমর্থিত বিদ্রোহের মাধ্যমে দীর্ঘকালীন নেতা মুয়াম্মার গাদ্দাফির পতন ও হত্যার পর থেকে লিবিয়া গভীরভাবে বিভক্ত রয়েছে। দেশটি বর্তমানে জাতিসংঘ স্বীকৃত ত্রিপোলিভিত্তিক প্রধানমন্ত্রী আবদুলহামিদ দেবাইবার নেতৃত্বাধীন সরকার ও পূর্বাঞ্চলে হাফতার পরিবারের নিয়ন্ত্রণাধীন প্রতিদ্বন্দ্বী প্রশাসনের মধ্যে বিভক্ত।
ত্রিপোলি বৃহস্পতিবার শান্ত ছিল, যেখানে ত্রিপোলিভিত্তিক সরকারের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত একটি শক্তিশালী সশস্ত্র গোষ্ঠী ও প্রতিদ্বন্দ্বী গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। স্কুল, ত্রিপোলি বিশ্ববিদ্যালয় ও শহরের একমাত্র বিমানবন্দর বন্ধ ছিল বলে এএফপির সাংবাদিকরা জানিয়েছেন। এ ছাড়া বেশির ভাগ দোকানও বন্ধ ছিল। তবে শহরের বাইরের কিছু এলাকায় দোকান খোলা থাকলেও সেখানে মালামাল সংকট দেখা দেয়।
সংঘর্ষের কারণ
সহিংসতা শুরু হয় সাপোর্ট অ্যান্ড স্ট্যাবিলিটি অ্যাপারেটাস (এসএসএ) প্রধান আবদেলঘানি আল-কিকলি নিহত হওয়ার পর।
তাকে দেবাইবার সমর্থক ৪৪৪ ব্রিগেড হত্যা করে বলে অভিযোগ। দ্বিতীয় দফা সংঘর্ষে ৪৪৪ ব্রিগেডের সঙ্গে রাদা বাহিনীর সংঘর্ষ হয়, যারা ত্রিপোলির পূর্বাংশ ও কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সরকারি প্রতিষ্ঠান নিয়ন্ত্রণ করে। অন্যদিকে কিকলির গোষ্ঠী দক্ষিণাঞ্চলীয় আবু সালিম জেলা নিয়ন্ত্রণ করত।
কোনো আনুষ্ঠানিক হতাহতের সংখ্যা প্রকাশ করা হয়নি, তবে লিবিয়ান রেড ক্রিসেন্ট জানিয়েছে, তারা ত্রিপোলির একটি প্রধান সড়ক থেকে একটি মরদেহ উদ্ধার করেছে।
সংঘর্ষের প্রভাব ও আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া
এসএসএ সমর্থকরা কিকলির মৃত্যু ‘অপরাধীদের প্রতিপদে তাড়া করার সংকল্প’ বাড়িয়ে তুলেছে বলে জানিয়েছে। দেবাইবা মঙ্গলবার বলেছেন, তিনি ত্রিপোলি থেকে ‘অনিয়মিত গোষ্ঠীগুলোকে সরিয়ে’ শুধু রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের উপস্থিতি নিশ্চিত করবেন।
লিবিয়া বিশেষজ্ঞ জালেল হারচাউই বলেছেন, এই সংঘর্ষ ‘ভূমির পুনর্বণ্টনের’ মতো, তবে জনপ্রিয় রাদা বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই করা কঠিন হবে। রাদা বাহিনীর শক্ত ঘাঁটি সুক এল-জোমা এলাকায় বুধবার রাতে পাঁচ শতাধিক মানুষ দেবাইবা সরকারের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করে।
সংঘর্ষের ফলে জার্মানি, ফ্রান্স, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ইতালির দূতাবাসগুলো তাদের গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে এবং বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষায় ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।