অনেকদিন ধরে বাড়ির ভিতরে লুকিয়ে রাখা অর্থ এখন ব্যাংকে জমা দেওয়ার কারণে কোটিপতি ব্যাংক হিসাবধারীর সংখ্যা বাড়ছে বলে মন্তব্য করেছেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ।
আজ (মঙ্গলবার) সচিবালয়ে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠকে শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি এমন মন্তব্য করেন।
রোববার (৭ ডিসেম্বর) কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশের ব্যাংক খাতে কোটিপতি গ্রাহকের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। চলতি বছরের মার্চ প্রান্তিকের তুলনায় জুন প্রান্তিকে এই হিসাব সংখ্যা বেড়েছিল ৫ হাজার ৯৭৪টি। জুন থেকে সেপ্টেম্বর- এই তিন মাসে আরও ৭৩৪টি কোটিপতি অ্যাকাউন্ট সংখ্যা বেড়েছে।
এর প্রেক্ষিতে সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে অর্থ উপদেষ্টাকে প্রশ্ন করা হয়— বর্তমান পরিস্থিতিতে ব্যাংকে কোটিপতি অ্যাকাউন্ট সংখ্যা বাড়ার কারণ কী? উত্তরে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, এটা হতে পারে অনেকদিন ধরে লুকিয়ে-টুকিয়ে রাখছিল বাড়ির ভেতরে, এখন ব্যাংকে জমা দিচ্ছে। টাকা-পয়সা যে নেই লোকজনের কাছে অনেক ক্ষেত্রে এটা সত্য।
এদিকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, জুন শেষে ব্যাংক খাতে মোট হিসাব (অ্যাকাউন্ট) ছিল ১৬ কোটি ৯০ লাখ ২ হাজার ৬৭১টি। সেপ্টেম্বর শেষে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৭ কোটি ৪৫ লাখ ৯৬ হাজার ৭০০টিতে। অর্থাৎ তিন মাসে নতুন হিসাব খোলা হয়েছে ৫৫ লাখ ৯৪ হাজার ২৯টি।
একই সময়ে ব্যাংকে আমানতও কিছুটা বেড়েছে। জুন শেষে আমানতের পরিমাণ ছিল ১৯ লাখ ৯৬ হাজার ৫৮৩ কোটি টাকা। সেপ্টেম্বর শেষে তা দাঁড়ায় ২০ লাখ ৩১ হাজার ১১৯ কোটি টাকা। ফলে তিন মাসে আমানত বেড়েছে ৩৪ হাজার ৫৩৬ কোটি টাকা।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, জুন প্রান্তিক শেষে কোটি টাকার বেশি আমানত রয়েছে এমন হিসাব সংখ্যা ছিল এক লাখ ২৭ হাজার ৩৩৬টি। সেপ্টেম্বর প্রান্তিক শেষে তা বেড়ে হয়েছে এক লাখ ২৮ হাজার ৭০টি। অর্থাৎ তিন মাসে কোটিপতি হিসাব সংখ্যা বেড়েছে ৭৩৪টি। এর আগে মার্চ শেষে সংখ্যাটি ছিল এক লাখ ২১ হাজার ৩৬২টি।
এদিকে জুন শেষে কোটি টাকার অ্যাকাউন্টগুলোতে জমা ছিল ৮ লাখ ৮০ হাজার ৭৭২ কোটি টাকা। কিন্তু সেপ্টেম্বর শেষে সেই পরিমাণ কমে দাঁড়িয়েছে ৮ লাখ ২১ হাজার ৫৬২ কোটি টাকায়। অর্থাৎ তিন মাসে কমেছে ৫৯ হাজার ২০৯ কোটি টাকা।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য বলছে, ১৯৭২ সালে কোটিপতি আমানতকারী ছিল মাত্র ৫ জন। এরপর ১৯৭৫ সালে ৪৭ জন, ১৯৮০ সালে ৯৮টি হিসাব, ১৯৯০ সালে ৯৪৩টি, ১৯৯৬ সালে ২ হাজার ৫৯৪টি কোটিপতি হিসাব বা অ্যাকাউন্ট ছিল। এরপর ২০০১ সালে ৫ হাজার ১৬২টি, ২০০৬ সালে ৮ হাজার ৮৮৭টি ও ২০০৮ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ১৯ হাজার ১৬৩টি।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে কোটিপতি আমানতকারী আরও বেড়েছে। ২০২০ সালে এ ধরনের হিসাব সংখ্যা ছিল ৯৩ হাজার ৮৯০টি, ২০২১ সালে এক লাখ ৯ হাজার ৭৬টি, ২০২২ সালে এক লাখ ৯ হাজার ৯৪৬টি, ২০২৩ সালে এক লাখ ১৬ হাজার ৯০৮টি এবং ২০২৪ সালে বেড়ে দাঁড়ায় এক লাখ ২১ হাজার ৩৬২টি।






















