ঢাকা ১২:৩৬ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ০৭ অগাস্ট ২০২৫, ২৩ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
নির্বাচন আয়োজনে ইসিকে প্রধান উপদেষ্টার চিঠি বার এসোসিয়েশনে আইন, বই বিতরণ করল কবির হোসেন স্মৃতি সংঘ রোদের মেয়ে, নিয়ে ফিরছেন তমালিকা, নতুন গানে মুগ্ধ হবে নতুন প্রজন্ম কক্সবাজারে গোপন বৈঠকের পর পিটার হাসের ঢাকা ত্যাগ, নতুন রাজনৈতিক সমীকরণের ইঙ্গিত? এক বছর ধরে মর্গে পড়ে আছেন ৬ জন, পরিচয় মেলেনি, অজ্ঞাত হিসেবে আজ হবে দাফন কুড়িগ্রামে বিএনপির বিজয় র‍্যালি ও পথসভা, স্বৈরাচারের পতনের ডাক শিক্ষার্থী রাসেল হত্যার বিচার দাবিতে কুড়িগ্রামে মানববন্ধন নাগেশ্বরীতে বিএনপি নেতার বিরুদ্ধে জনতার বিক্ষোভ কুষ্টিয়া মিরপুর মাদকবিরোধী অভিযানে ফেন্সিডিল, ইয়াবা ও পলিথিন উদ্ধার রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রয়াণ দিবস: বিশ্বকবির প্রতি বাঙালির শ্রদ্ধাঞ্জলি

শিক্ষার্থী রাসেল হত্যার বিচার দাবিতে কুড়িগ্রামে মানববন্ধন

শিক্ষার্থী রাসেল হত্যার বিচার দাবিতে কুড়িগ্রামে মানববন্ধন

অনলাইন ডেস্ক
  • আপডেট সময় : ০৬:৩৫:৫৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ৬ আগস্ট ২০২৫ ৫ বার পড়া হয়েছে

জেলা প্রতিনিধি: শিক্ষার্থী রাসেল হত্যার বিচার দাবিতে কুড়িগ্রামে মানববন্ধন, ঢাকার সাভারে নির্মমভাবে খুন হওয়া কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজের ছাত্র সারুফ রানা রাসেল হত্যার, প্রতিবাদে কুড়িগ্রামে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে, সহপাঠী, স্বজন ও সাধারণ মানুষ এ মানববন্ধনে অংশগ্রহণ করে আসামীদের দ্রুত গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।

বুধবার (৬ আগস্ট) সকাল ১১টায় কুড়িগ্রাম প্রেসক্লাবের সামনে এ মানববন্ধনের আয়োজন করে কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজের শিক্ষার্থীরা। নিহত সারুফ রানা রাসেল অর্থনীতি বিভাগের অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র ছিলেন। মানববন্ধনে রাসেলের সহপাঠী, পরিবারের সদস্য, শিক্ষক, শিক্ষার্থীসহ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ একত্রিত হন।

মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন নিহতের চাচাতো ভাই সোহেল রানা, রাসেলের সহপাঠী সাগর আহমেদ, আবু জোবায়ের, মেফতাহুল ইসলাম, হেলাল প্রমুখ। তারা সবাই এক কণ্ঠে হত্যাকারীদের দ্রুত গ্রেফতার করে বিচারের আওতায় আনার দাবি জানান।

সোহেল রানা বলেন,
“আমরা হারিয়েছি একজন মেধাবী, স্বপ্নবান তরুণকে। পরিবার এখনও শোক কাটিয়ে উঠতে পারেনি। অথচ এতদিন পার হয়ে গেলেও এখনো কাউকে গ্রেফতার করা হয়নি। প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি—আর দেরি না করে যেন খুনিদের আইনের আওতায় আনা হয়।”

সহপাঠী সাগর আহমেদ বলেন,
“রাসেল শুধু আমাদের বন্ধু ছিল না, সে ছিল একজন সংগ্রামী ছাত্র, পড়াশোনার পাশাপাশি কাজ করত। এমন একজন তরুণকে নির্মমভাবে খুন করা হয়েছে। আমরা এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।”

মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, সারুফ রানা রাসেল একজন মেধাবী শিক্ষার্থী ছিলেন, যার ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল ছিল। পড়াশোনার পাশাপাশি সে ঢাকায় “স্টেট ফাস্ট কুরিয়ার সার্ভিস”-এ চাকরি করত। নিজের খরচ চালাতে এবং পরিবারের সহায়তা করতেই সে কাজ করত। কিন্তু দুর্বৃত্তরা ২৯ জুলাই রাতে সাভারের ব্যাংক টাউন ও উলাইল সংলগ্ন একটি ব্রিজের নিচে তাকে নির্মমভাবে হত্যা করে পালিয়ে যায়।

ঘটনার পরদিন পরিবারের পক্ষ থেকে সাভার মডেল থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়, যার নম্বর ২৮৩৪। তবে এতোদিন পার হলেও এখনো কাউকে গ্রেফতার করা হয়নি। এতে পরিবার ও বন্ধুমহলে ব্যাপক ক্ষোভ ও হতাশা বিরাজ করছে।

মেফতাহুল ইসলাম বলেন,
“আমরা এই ঘটনায় প্রশাসনের নীরবতা ও গাফিলতিতে হতাশ। আজ যদি আমাদের বন্ধুর হত্যাকারীরা ধরা না পড়ে, তাহলে আগামীকাল আরও অনেক রাসেল হয়তো ঝরে যাবে। আমরা এর শেষ দেখতে চাই।”

মানববন্ধনে শিক্ষার্থীরা প্ল্যাকার্ড ও ব্যানার হাতে নিয়ে “রাসেলের খুনিদের বিচার চাই”, “আর কোনো ছাত্রের রক্ত নয়”, “দ্রুত গ্রেফতার করো হত্যাকারীদের”—এই ধরনের স্লোগান দেয়। তারা বলেন, কোনোভাবেই এই হত্যা মেনে নেওয়া যাবে না। রাজনীতি বা প্রভাব দেখে নয়, মানুষ হত্যার বিচার দ্রুত নিশ্চিত করতে হবে।

মানববন্ধন শেষে শিক্ষার্থীদের একটি প্রতিনিধি দল কুড়িগ্রামের পুলিশ সুপারের মাধ্যমে পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বরাবর একটি স্মারকলিপি প্রদান করে। স্মারকলিপিতে দ্রুত তদন্ত সম্পন্ন করে জড়িতদের শনাক্ত ও গ্রেফতারের দাবি জানানো হয়।

এই সময় উপস্থিত ছিলেন কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজের কয়েকজন শিক্ষকও। একজন শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন,

“এই ঘটনা শুধু রাসেলের পরিবারের না, পুরো সমাজের জন্য একটি ভয়াবহ বার্তা। আমরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে নিরাপদ জায়গা মনে করি। কিন্তু এখন শিক্ষার্থীদের হত্যার মতো ঘটনা ঘটছে, যা গভীর উদ্বেগজনক।”

এদিকে, রাসেলের পরিবারও প্রশাসনের কাছে দ্রুত বিচার ও নিরাপত্তা চেয়ে বারবার অনুরোধ জানাচ্ছেন। তাদের মতে, হত্যাকাণ্ড পরিকল্পিত এবং এর পেছনে প্রভাবশালী কেউ থাকতে পারে। তাই নিরপেক্ষ তদন্তই সত্য উদ্ঘাটনের একমাত্র পথ।

সারুফ রানা রাসেলের মৃত্যুতে কুড়িগ্রাম জেলাজুড়ে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। তার শিক্ষক ও সহপাঠীরা জানান, রাসেল শান্তশিষ্ট, ভদ্র এবং অধ্যবসায়ী ছাত্র হিসেবে পরিচিত ছিলেন। এমন একজন তরুণের অকালে ঝরে যাওয়া পুরো সমাজের জন্যই একটি অপূরণীয় ক্ষতি।

নতুন প্রজন্মের অনলাইন টিভি

নিউজটি শেয়ার করুন

শিক্ষার্থী রাসেল হত্যার বিচার দাবিতে কুড়িগ্রামে মানববন্ধন

শিক্ষার্থী রাসেল হত্যার বিচার দাবিতে কুড়িগ্রামে মানববন্ধন

আপডেট সময় : ০৬:৩৫:৫৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ৬ আগস্ট ২০২৫

জেলা প্রতিনিধি: শিক্ষার্থী রাসেল হত্যার বিচার দাবিতে কুড়িগ্রামে মানববন্ধন, ঢাকার সাভারে নির্মমভাবে খুন হওয়া কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজের ছাত্র সারুফ রানা রাসেল হত্যার, প্রতিবাদে কুড়িগ্রামে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে, সহপাঠী, স্বজন ও সাধারণ মানুষ এ মানববন্ধনে অংশগ্রহণ করে আসামীদের দ্রুত গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।

বুধবার (৬ আগস্ট) সকাল ১১টায় কুড়িগ্রাম প্রেসক্লাবের সামনে এ মানববন্ধনের আয়োজন করে কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজের শিক্ষার্থীরা। নিহত সারুফ রানা রাসেল অর্থনীতি বিভাগের অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র ছিলেন। মানববন্ধনে রাসেলের সহপাঠী, পরিবারের সদস্য, শিক্ষক, শিক্ষার্থীসহ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ একত্রিত হন।

মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন নিহতের চাচাতো ভাই সোহেল রানা, রাসেলের সহপাঠী সাগর আহমেদ, আবু জোবায়ের, মেফতাহুল ইসলাম, হেলাল প্রমুখ। তারা সবাই এক কণ্ঠে হত্যাকারীদের দ্রুত গ্রেফতার করে বিচারের আওতায় আনার দাবি জানান।

সোহেল রানা বলেন,
“আমরা হারিয়েছি একজন মেধাবী, স্বপ্নবান তরুণকে। পরিবার এখনও শোক কাটিয়ে উঠতে পারেনি। অথচ এতদিন পার হয়ে গেলেও এখনো কাউকে গ্রেফতার করা হয়নি। প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি—আর দেরি না করে যেন খুনিদের আইনের আওতায় আনা হয়।”

সহপাঠী সাগর আহমেদ বলেন,
“রাসেল শুধু আমাদের বন্ধু ছিল না, সে ছিল একজন সংগ্রামী ছাত্র, পড়াশোনার পাশাপাশি কাজ করত। এমন একজন তরুণকে নির্মমভাবে খুন করা হয়েছে। আমরা এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।”

মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, সারুফ রানা রাসেল একজন মেধাবী শিক্ষার্থী ছিলেন, যার ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল ছিল। পড়াশোনার পাশাপাশি সে ঢাকায় “স্টেট ফাস্ট কুরিয়ার সার্ভিস”-এ চাকরি করত। নিজের খরচ চালাতে এবং পরিবারের সহায়তা করতেই সে কাজ করত। কিন্তু দুর্বৃত্তরা ২৯ জুলাই রাতে সাভারের ব্যাংক টাউন ও উলাইল সংলগ্ন একটি ব্রিজের নিচে তাকে নির্মমভাবে হত্যা করে পালিয়ে যায়।

ঘটনার পরদিন পরিবারের পক্ষ থেকে সাভার মডেল থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়, যার নম্বর ২৮৩৪। তবে এতোদিন পার হলেও এখনো কাউকে গ্রেফতার করা হয়নি। এতে পরিবার ও বন্ধুমহলে ব্যাপক ক্ষোভ ও হতাশা বিরাজ করছে।

মেফতাহুল ইসলাম বলেন,
“আমরা এই ঘটনায় প্রশাসনের নীরবতা ও গাফিলতিতে হতাশ। আজ যদি আমাদের বন্ধুর হত্যাকারীরা ধরা না পড়ে, তাহলে আগামীকাল আরও অনেক রাসেল হয়তো ঝরে যাবে। আমরা এর শেষ দেখতে চাই।”

মানববন্ধনে শিক্ষার্থীরা প্ল্যাকার্ড ও ব্যানার হাতে নিয়ে “রাসেলের খুনিদের বিচার চাই”, “আর কোনো ছাত্রের রক্ত নয়”, “দ্রুত গ্রেফতার করো হত্যাকারীদের”—এই ধরনের স্লোগান দেয়। তারা বলেন, কোনোভাবেই এই হত্যা মেনে নেওয়া যাবে না। রাজনীতি বা প্রভাব দেখে নয়, মানুষ হত্যার বিচার দ্রুত নিশ্চিত করতে হবে।

মানববন্ধন শেষে শিক্ষার্থীদের একটি প্রতিনিধি দল কুড়িগ্রামের পুলিশ সুপারের মাধ্যমে পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বরাবর একটি স্মারকলিপি প্রদান করে। স্মারকলিপিতে দ্রুত তদন্ত সম্পন্ন করে জড়িতদের শনাক্ত ও গ্রেফতারের দাবি জানানো হয়।

এই সময় উপস্থিত ছিলেন কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজের কয়েকজন শিক্ষকও। একজন শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন,

“এই ঘটনা শুধু রাসেলের পরিবারের না, পুরো সমাজের জন্য একটি ভয়াবহ বার্তা। আমরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে নিরাপদ জায়গা মনে করি। কিন্তু এখন শিক্ষার্থীদের হত্যার মতো ঘটনা ঘটছে, যা গভীর উদ্বেগজনক।”

এদিকে, রাসেলের পরিবারও প্রশাসনের কাছে দ্রুত বিচার ও নিরাপত্তা চেয়ে বারবার অনুরোধ জানাচ্ছেন। তাদের মতে, হত্যাকাণ্ড পরিকল্পিত এবং এর পেছনে প্রভাবশালী কেউ থাকতে পারে। তাই নিরপেক্ষ তদন্তই সত্য উদ্ঘাটনের একমাত্র পথ।

সারুফ রানা রাসেলের মৃত্যুতে কুড়িগ্রাম জেলাজুড়ে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। তার শিক্ষক ও সহপাঠীরা জানান, রাসেল শান্তশিষ্ট, ভদ্র এবং অধ্যবসায়ী ছাত্র হিসেবে পরিচিত ছিলেন। এমন একজন তরুণের অকালে ঝরে যাওয়া পুরো সমাজের জন্যই একটি অপূরণীয় ক্ষতি।