ঢাকা ০৩:৩৩ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১১ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

স্বাধীন ভারতের প্রথম ‘ভোট চোর’ গান্ধী পরিবার

অনলাইন ডেস্ক
  • আপডেট সময় : ১০:৩৮:০৭ অপরাহ্ন, বুধবার, ১০ ডিসেম্বর ২০২৫
  • / 7

ভারতের সংসদের নিম্নকক্ষ লোকসভায় নির্বাচনী সংস্কার নিয়ে আলোচনার সময় দেশটির কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ও বিরোধী দলীয় নেতা রাহুল গান্ধীর মাঝে তীব্র বাগবিতণ্ডা হয়েছে। বুধবার লোকসভায় দেওয়া বক্তৃতায় ভোটার তালিকায় অনিয়ম নিয়ে সংবাদ সম্মেলন ঘিরে অমিত শাহকে সরাসরি বিতর্কে বসার আহ্বান জানান রাহুল। জবাবে বিজেপি নেতা পাল্টা বলেন, সংসদে তিনি কীভাবে বক্তব্য দেবেন, তা অন্য কেউ ঠিক করে দিতে পারে না।

দেশটির বিরোধীদল কংগ্রেসের সমালোচনা করে অমিত শাহ বলেন, তারা একদিকে বর্তমান ভোটার তালিকার অনিয়মের অভিযোগ তোলে, অন্যদিকে বিশেষ নিবিড় সংশোধনী (এসআইআর) প্রক্রিয়া নিয়েও আপত্তি জানায়। অথচ এই প্রক্রিয়ার লক্ষ্যই হলো ভোটার তালিকা হালনাগাদ এবং যোগ্য ভোটারদের নাম তালিকায় নিশ্চিত করা।

তিনি বলেন, ‌‌আপনারা জয়ী হলে ভোটার তালিকা ঠিক থাকে; নতুন পোশাক পরে শপথ নেন। কিন্তু যখন হেরে যান, তখনই বলেন ভোটার তালিকায় সমস্যা আছে… এই দ্বিমুখী মানসিকতা চলবে না।

রাহুল গান্ধীর ভোটার তালিকা নিয়ে সংবাদ সম্মেলনের প্রসঙ্গ টেনে হাস্যরস করেন অমিত শাহ। তিনি বলেন, রাহুল গান্ধীর সংবাদ সম্মেলন ‘হাইড্রোজেন বোমা’ নামেও পরিচিত হয়েছিল। অমিত শাহ বলেন, বিরোধীদলীয় নেতা ‘ভোট চুরির’ কথা বলেন অথচ কিছু পরিবার—নেহরু-গান্ধী পরিবার—হলো ‘বংশপরম্পরায় ভোটচোর। ’

এ সময় প্রতিবাদ জানিয়ে রাহুল গান্ধী জানতে চান, কেন নির্বাচন কমিশনারদের দপ্তরে নেওয়া সিদ্ধান্তের জন্য দায়মুক্তি দেওয়া হলো। এ বিষয়ে অমিত শাহ প্রথমে জবাব দিচ্ছেন না কেন? সংবাদ সম্মেলনের কিছু অংশকে বেছে নেওয়ার অভিযোগ তুলে রাহুল সরাসরি চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেন, আমার তিনটি সংবাদ সম্মেলন নিয়ে চলুন সরাসরি বিতর্ক করি। অমিত শাহ, আমি আপনাকে এ বিষয়ে বিতর্কের চ্যালেঞ্জ দিচ্ছি।

রাহুল গান্ধীর এমন আহ্বানে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়ে দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘‘একটি বিষয় পরিষ্কার করে দিই। আমি ৩০ বছর ধরে বিধানসভা ও সংসদের সদস্য। অভিজ্ঞতা রয়েছে। বিরোধীদলীয় নেতা বলতে পারেন না, কোন প্রশ্নের উত্তর আমি আগে দেব। সংসদ তার ইচ্ছায় চলবে না। কোন ক্রমে আমি কথা বলব, তা আমি ঠিক করব। ধৈর্য্য ধরুন; সব প্রশ্নের জবাবই দেব, তবে ক্রম তিনি ঠিক করবেন না।’’

অমিত শাহর এমন মন্তব্যের জবাবে রাহুল গান্ধী বলেন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর জবাব ‘‘রক্ষণাত্মক ও ভীতিকর।’’ অমিত শাহ বলেন, তিনি উসকানিতে পা দেবেন না। প্রকৃত ‘ভোট চুরি’ তখনই ঘটে, যখন জনগণের রায় অমান্য করা হয়।

• গান্ধী পরিবারকে আক্রমণ

গান্ধী-নেহরু পরিবারকে নিশানা করে অমিত শাহ বলেন, স্বাধীন ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনই ছিল প্রথম ‘ভোট চুরির’ উদাহরণ। তার দাবি, প্রদেশগুলোর কংগ্রেস কমিটির প্রধানদের প্রত্যেকের একটি করে ভোট দেওয়ার কথা ছিল। তখন ২৮ ভোট পড়েছিল সর্দার বল্লভভাই প্যাটেলের পক্ষে, আর মাত্র দুটি ভোট জওহরলাল নেহরুর পক্ষে। তবু প্রধানমন্ত্রী হন নেহরুজি। অমিত শাহর এই মন্তব্যে লোকসভায় বিরোধীদলীয় সংসদ সদস্যরা হৈচৈ শুরু করেন।

আরেকটি ‘ভোট চুরি’র উদাহরণ হিসেবে ভারতের এই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ইন্দিরা গান্ধীর রায়বেরেলির জয় এলাহাবাদ হাইকোর্টে চ্যালেঞ্জ জানানো হয়েছিল; কিন্তু আদালত তা বাতিল করে দেন। এটাই বড় ভোট চুরি। আর এরপর কী ঘটল? এই ভোট চুরি আড়াল করতে তিনি আইন করলেন; যাতে প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে কোনও মামলা করা যাবে না। বিরোধীদলীয় নেতা এখন নির্বাচন কমিশনারদের দায়মুক্তির প্রসঙ্গ তুলছেন; আমি জবাব দেব। কিন্তু এ ব্যাপারে তার কী বলার আছে? তখন তিনি নিজেকেই দায়মুক্তি দিয়েছিলেন।

শাহ বলেন, এরপর তিনি বিচারপতিদের জ্যেষ্ঠতা উপেক্ষা করে চতুর্থ স্থানের একজনকে প্রধান বিচারপতি করেন এবং পরে সুপ্রিম কোর্টে মামলাটি জিতে যান। এটাই ইতিহাস; মনে হয় কেউ তাদের এসব শেখায় না।

রাহুল গান্ধীর মা, সাবেক কংগ্রেস নেত্রী সোনিয়া গান্ধীর প্রসঙ্গ টেনে বিজেপির এই নেতা দাবি করেন, তার বিরুদ্ধে আদালতে একটি মামলা রয়েছে। যেখানে বলা হয়েছে, তিনি নাগরিক হওয়ার আগেই ভোট দিয়েছিলেন। অমিত শাহর এই দাবির প্রতিবাদ জানিয়ে কংগ্রেস সাংসদরা বলেন, অভিযোগের কোনও ভিত্তি নেই।

• ওয়াকআউট

লোকসভায় তীব্র বাগবিতণ্ডার মাঝে অমিত শাহ বলেন, অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের ভোটার তালিকায় রাখা নিশ্চিত করতেই কংগ্রেস ও বিরোধী দল ইভিএম ব্যবহার এবং এসআইআর নিয়ে আপত্তি তুলছে। তার এই মন্তব্যের পর বিরোধী দল ওয়াকআউট করে।

সংসদ কক্ষের বাইরে সাংবাদিকরা ওয়াকআউটের কারণ জানতে চাইলে রাহুল গান্ধী বলেন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্য রক্ষণাত্মক ছিল। তিনি আমাদের উত্থাপিত কোনও প্রশ্নের উত্তর দেননি। স্বচ্ছ ভোটার তালিকা, ইভিএমের স্বচ্ছতা, আর আমি সংবাদ সম্মেলনে যে প্রমাণ দিয়েছি; এগুলোর কোনোটি নিয়ে তিনি কিছু বলেননি।

নতুন প্রজন্মের অনলাইন টিভি

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

স্বাধীন ভারতের প্রথম ‘ভোট চোর’ গান্ধী পরিবার

আপডেট সময় : ১০:৩৮:০৭ অপরাহ্ন, বুধবার, ১০ ডিসেম্বর ২০২৫

ভারতের সংসদের নিম্নকক্ষ লোকসভায় নির্বাচনী সংস্কার নিয়ে আলোচনার সময় দেশটির কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ও বিরোধী দলীয় নেতা রাহুল গান্ধীর মাঝে তীব্র বাগবিতণ্ডা হয়েছে। বুধবার লোকসভায় দেওয়া বক্তৃতায় ভোটার তালিকায় অনিয়ম নিয়ে সংবাদ সম্মেলন ঘিরে অমিত শাহকে সরাসরি বিতর্কে বসার আহ্বান জানান রাহুল। জবাবে বিজেপি নেতা পাল্টা বলেন, সংসদে তিনি কীভাবে বক্তব্য দেবেন, তা অন্য কেউ ঠিক করে দিতে পারে না।

দেশটির বিরোধীদল কংগ্রেসের সমালোচনা করে অমিত শাহ বলেন, তারা একদিকে বর্তমান ভোটার তালিকার অনিয়মের অভিযোগ তোলে, অন্যদিকে বিশেষ নিবিড় সংশোধনী (এসআইআর) প্রক্রিয়া নিয়েও আপত্তি জানায়। অথচ এই প্রক্রিয়ার লক্ষ্যই হলো ভোটার তালিকা হালনাগাদ এবং যোগ্য ভোটারদের নাম তালিকায় নিশ্চিত করা।

তিনি বলেন, ‌‌আপনারা জয়ী হলে ভোটার তালিকা ঠিক থাকে; নতুন পোশাক পরে শপথ নেন। কিন্তু যখন হেরে যান, তখনই বলেন ভোটার তালিকায় সমস্যা আছে… এই দ্বিমুখী মানসিকতা চলবে না।

রাহুল গান্ধীর ভোটার তালিকা নিয়ে সংবাদ সম্মেলনের প্রসঙ্গ টেনে হাস্যরস করেন অমিত শাহ। তিনি বলেন, রাহুল গান্ধীর সংবাদ সম্মেলন ‘হাইড্রোজেন বোমা’ নামেও পরিচিত হয়েছিল। অমিত শাহ বলেন, বিরোধীদলীয় নেতা ‘ভোট চুরির’ কথা বলেন অথচ কিছু পরিবার—নেহরু-গান্ধী পরিবার—হলো ‘বংশপরম্পরায় ভোটচোর। ’

এ সময় প্রতিবাদ জানিয়ে রাহুল গান্ধী জানতে চান, কেন নির্বাচন কমিশনারদের দপ্তরে নেওয়া সিদ্ধান্তের জন্য দায়মুক্তি দেওয়া হলো। এ বিষয়ে অমিত শাহ প্রথমে জবাব দিচ্ছেন না কেন? সংবাদ সম্মেলনের কিছু অংশকে বেছে নেওয়ার অভিযোগ তুলে রাহুল সরাসরি চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেন, আমার তিনটি সংবাদ সম্মেলন নিয়ে চলুন সরাসরি বিতর্ক করি। অমিত শাহ, আমি আপনাকে এ বিষয়ে বিতর্কের চ্যালেঞ্জ দিচ্ছি।

রাহুল গান্ধীর এমন আহ্বানে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়ে দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘‘একটি বিষয় পরিষ্কার করে দিই। আমি ৩০ বছর ধরে বিধানসভা ও সংসদের সদস্য। অভিজ্ঞতা রয়েছে। বিরোধীদলীয় নেতা বলতে পারেন না, কোন প্রশ্নের উত্তর আমি আগে দেব। সংসদ তার ইচ্ছায় চলবে না। কোন ক্রমে আমি কথা বলব, তা আমি ঠিক করব। ধৈর্য্য ধরুন; সব প্রশ্নের জবাবই দেব, তবে ক্রম তিনি ঠিক করবেন না।’’

অমিত শাহর এমন মন্তব্যের জবাবে রাহুল গান্ধী বলেন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর জবাব ‘‘রক্ষণাত্মক ও ভীতিকর।’’ অমিত শাহ বলেন, তিনি উসকানিতে পা দেবেন না। প্রকৃত ‘ভোট চুরি’ তখনই ঘটে, যখন জনগণের রায় অমান্য করা হয়।

• গান্ধী পরিবারকে আক্রমণ

গান্ধী-নেহরু পরিবারকে নিশানা করে অমিত শাহ বলেন, স্বাধীন ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনই ছিল প্রথম ‘ভোট চুরির’ উদাহরণ। তার দাবি, প্রদেশগুলোর কংগ্রেস কমিটির প্রধানদের প্রত্যেকের একটি করে ভোট দেওয়ার কথা ছিল। তখন ২৮ ভোট পড়েছিল সর্দার বল্লভভাই প্যাটেলের পক্ষে, আর মাত্র দুটি ভোট জওহরলাল নেহরুর পক্ষে। তবু প্রধানমন্ত্রী হন নেহরুজি। অমিত শাহর এই মন্তব্যে লোকসভায় বিরোধীদলীয় সংসদ সদস্যরা হৈচৈ শুরু করেন।

আরেকটি ‘ভোট চুরি’র উদাহরণ হিসেবে ভারতের এই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ইন্দিরা গান্ধীর রায়বেরেলির জয় এলাহাবাদ হাইকোর্টে চ্যালেঞ্জ জানানো হয়েছিল; কিন্তু আদালত তা বাতিল করে দেন। এটাই বড় ভোট চুরি। আর এরপর কী ঘটল? এই ভোট চুরি আড়াল করতে তিনি আইন করলেন; যাতে প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে কোনও মামলা করা যাবে না। বিরোধীদলীয় নেতা এখন নির্বাচন কমিশনারদের দায়মুক্তির প্রসঙ্গ তুলছেন; আমি জবাব দেব। কিন্তু এ ব্যাপারে তার কী বলার আছে? তখন তিনি নিজেকেই দায়মুক্তি দিয়েছিলেন।

শাহ বলেন, এরপর তিনি বিচারপতিদের জ্যেষ্ঠতা উপেক্ষা করে চতুর্থ স্থানের একজনকে প্রধান বিচারপতি করেন এবং পরে সুপ্রিম কোর্টে মামলাটি জিতে যান। এটাই ইতিহাস; মনে হয় কেউ তাদের এসব শেখায় না।

রাহুল গান্ধীর মা, সাবেক কংগ্রেস নেত্রী সোনিয়া গান্ধীর প্রসঙ্গ টেনে বিজেপির এই নেতা দাবি করেন, তার বিরুদ্ধে আদালতে একটি মামলা রয়েছে। যেখানে বলা হয়েছে, তিনি নাগরিক হওয়ার আগেই ভোট দিয়েছিলেন। অমিত শাহর এই দাবির প্রতিবাদ জানিয়ে কংগ্রেস সাংসদরা বলেন, অভিযোগের কোনও ভিত্তি নেই।

• ওয়াকআউট

লোকসভায় তীব্র বাগবিতণ্ডার মাঝে অমিত শাহ বলেন, অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের ভোটার তালিকায় রাখা নিশ্চিত করতেই কংগ্রেস ও বিরোধী দল ইভিএম ব্যবহার এবং এসআইআর নিয়ে আপত্তি তুলছে। তার এই মন্তব্যের পর বিরোধী দল ওয়াকআউট করে।

সংসদ কক্ষের বাইরে সাংবাদিকরা ওয়াকআউটের কারণ জানতে চাইলে রাহুল গান্ধী বলেন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্য রক্ষণাত্মক ছিল। তিনি আমাদের উত্থাপিত কোনও প্রশ্নের উত্তর দেননি। স্বচ্ছ ভোটার তালিকা, ইভিএমের স্বচ্ছতা, আর আমি সংবাদ সম্মেলনে যে প্রমাণ দিয়েছি; এগুলোর কোনোটি নিয়ে তিনি কিছু বলেননি।