৫ আগস্ট সাদা দলের বিজয় র্যালি: ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনের বর্ষপূর্তি

- আপডেট সময় : ০৪:০০:১৫ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৫ আগস্ট ২০২৫ ৭ বার পড়া হয়েছে
ফ্যাসিবাদী আওয়ামী শাসনের অবসান এবং স্বৈরাচার শেখ হাসিনার পলায়নের বর্ষপূর্তি উপলক্ষ্যে বিজয় র্যালি করেছে জাতীয়তাবাদী শিক্ষকদের সংগঠন ‘সাদা দল’।
রোববার (৫ আগস্ট) দুপুর ১২টায় ৪৫ মিনিটে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলার পাদদেশ থেকে র্যালিটি শুরু করে সাদা দলের নেতাকর্মীরা। পরে র্যালিটি রাজু ভাস্কর্য ঘুরে ভিসি চত্বরে গিয়ে শেষ হয়।
এর আগে বেলা ১২টায় কর্মসূচির শুরুতে জুলাই অভ্যুত্থান ও মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ দুর্ঘটনায় শহীদদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। পরে সংগঠনটির যুগ্ম আহ্বায়ক অধ্যাপক আব্দুস সালামের সভাপতিত্বে একটি সংক্ষিপ্ত সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
সমাবেশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক সিদ্দিকুর রহমান খান বলেন, গত বছরের এই দিনে ফ্যাসিস্ট সরকারের পেটোয়া বাহিনী ও পুলিশের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে আমরা কারফিউ ভেঙে দাঁড়িয়েছিলাম। সেদিন আমরা ইতিহাসের সাক্ষী হয়েছিলাম। আজকের বর্ষপূর্তিতে আমরা সেই আত্মত্যাগকে স্মরণ করছি। শহীদদের স্বপ্ন পূরণের অংশ হিসেবেই আমাদের এই লড়াই অব্যাহত থাকবে।
তিনি বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা অতীতের মতো ভবিষ্যতেও অপশক্তির বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ থাকবেন। আমরা আশা করছি, অচিরেই একটি সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মাধ্যমে একটি গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠিত হবে, যারা ভবিষ্যতে আর কখনো ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার পুনরাবৃত্তি ঘটতে দেবে না।
বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক এ বি এম ওবাইদুল ইসলাম বলেন, গত বছর ৫ আগস্ট বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ দিন হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। দীর্ঘ ১৭ বছরের দুঃশাসনের পর শেখ হাসিনার ফ্যাসিস্ট সরকার জনগণের আন্দোলনের মুখে পলায়ন করতে বাধ্য হয়েছিল। সেদিন আমরা দেখেছি কারফিউ উপেক্ষা করে ছাত্র-জনতা কীভাবে রাজপথে নেমে এসেছে এবং দেশে এক নতুন ইতিহাস রচনা করেছে। এই দিনটির পেছনে রয়েছে গত ১৬ বছরের জুলাই আন্দোলন, শহীদদের রক্ত, নিপীড়ন, গুম ও খুনের দীর্ঘ ইতিহাস। আমরা যেমন এই দিনটিকে বিজয়ের দিন হিসেবে উদযাপন করছি, তেমনি স্মরণ করছি সেই সব শহীদদের, যারা এই আন্দোলনের পথে জীবন দিয়েছেন। আমাদের আনন্দের মধ্যেও রয়েছে তাদের ত্যাগের ইতিহাস।
তিনি আরও বলেন, ৫ আগস্টের বিজয় ছিল দেশের অভ্যন্তরীণ এক ফ্যাসিবাদী শক্তির বিরুদ্ধে। যেখানে সরকার নিজ দেশের জনগণের ওপর দমন চালিয়েছে। এটি যেমন নিন্দনীয়, তেমনি এই দমননীতির দ্রুত বিচার আমরা দাবি করছি। বিচার বিলম্ব মানেই অন্যায়কে উৎসাহ দেওয়া, সমাজে অন্যায়কে স্থায়ী করে তোলা। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে আহ্বান জানাই ফ্যাসিবাদের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করুন এবং দায়ীদের দ্রুত বিচারের আওতায় আনুন।
এ বি এম ওবাইদুল ইসলাম বলেন, আমাদের আন্দোলন ছিল একটি বৈষম্যহীন, সুশাসনভিত্তিক, টেকসই ও গণতান্ত্রিক সমাজ গঠনের লক্ষ্যে যেখানে ব্যক্তি নয়, রাষ্ট্র ও জনগণের স্বার্থ অগ্রাধিকার পাবে।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভিসি অধ্যাপক ড. লুৎফর রহমান বলেন, গত বছর ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের মুখে তৎকালীন ফ্যাসিস্ট সরকার ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগ ছিল বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ মোড়। এই দিনটিকে আমরা শুধু বিজয়ের দিন হিসেবেই নয়, গণতন্ত্র ও জনগণের শক্তির প্রতীক হিসেবেও স্মরণ করি। ছাত্র-জনতার দীর্ঘ আন্দোলন, বিশেষ করে জুলাই আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতেই এই পরিবর্তন সম্ভব হয়েছে।
তিনি বলেন, আমি অভিনন্দন জানাই জাতীয়তাবাদী আদর্শে উদ্বুদ্ধ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক এবং আন্দোলনে যুক্ত সব সহযোদ্ধাকে। যখনই বাংলাদেশের গণতন্ত্র ও স্বাধীনতা হুমকির মুখে পড়বে, তখনই আমরা সাধারণ ছাত্র-জনতার পাশে থাকব। গত বছরের আন্দোলন ছিল একটি বৈষম্যহীন, গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ নির্মাণের প্রত্যাশার প্রতিফলন। সেই লক্ষ্যে আমরা ঐক্যবদ্ধ ছিলাম, আছি এবং থাকব।
সাদা দলের যুগ্ম আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. আবুল কালাম সরকার বলেন, আমরা আজ যে প্রত্যাশা নিয়ে এখানে একত্রিত হয়েছি তা হলো আগামী দিনে বাংলাদেশে একটি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় নির্বাচিত সরকার প্রতিষ্ঠিত হবে। সেই সরকারের নেতৃত্বে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ পুরো দেশ ফ্যাসিবাদমুক্ত হবে। ফ্যাসিবাদ নির্মূলে দেশের সব শ্রেণি-পেশার মানুষ ঐক্যবদ্ধ ভূমিকা রাখবে– এটাই আমাদের প্রত্যাশা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, এক বছর আগে এই সময়ে আমরা কল্পনাও করতে পারিনি যে শেখ হাসিনার সরকার বিদায় নেবে। আজও আমার কাছে এটি যেন স্বপ্নের মতো, আমরা হাসিনা-মুক্ত বাংলাদেশ আছি। জুলাইয়ের আন্দোলনে এক হাজার ৪০০ শহীদ ও ৩০ হাজার আহতের আত্মত্যাগের বিনিময়ে এই নতুন বাংলাদেশ অর্জিত হয়েছে। আমরা শহীদদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি এবং আহতদের দ্রুত সুস্থতা কামনা করছি।
তিনি আরও বলেন, আমরা রাস্তায় নেমেছিলাম একটি বৈষম্যহীন, ইনক্লুসিভ বাংলাদেশের স্বপ্ন নিয়ে। আমরা আশা করছি এখন আমরা একটা ইনক্লুসিভ বাংলাদেশ পাবো। আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধের মালিকানা চলে গিয়েছিল অল্প কয়েকজন মানুষের হাতে। ফলে মুক্তিযুদ্ধের মূল উদ্দেশ্য বাস্তবায়িত হয়নি। আমরা চাই, ২০২৪ সালের আন্দোলনেও একই ঘটনা পুনরাবৃত্তি না হয়।
যুগ্ম আহ্বায়ক অধ্যাপক আব্দুস সালাম বলেন, আজ আমরা এমন এক সময়ে দাঁড়িয়ে আছি, যখন স্বৈরাচার দেশ থেকে পালানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে। খুব অল্প সময়ের মধ্যেই সে পালিয়ে যাবে। শেখ হাসিনা হঠাৎ করে পালিয়ে যাচ্ছে না– সে গত ১৬-১৭ বছর ধরে দেশকে জিম্মি করে রেখেছিল। এই সময়ের মধ্যে অসংখ্য জীবন ধ্বংস করেছে, বিশেষ করে গত বছরের জুলাই-আগস্টে দেশের শত শত মানুষকে হত্যা করা হয়েছে। হেলিকপ্টার থেকে শিশুদের ওপর গুলি চালানো হয়েছে। এই দমন-পীড়নের বিরুদ্ধে মানুষ জীবন বাজি রেখে রাস্তায় নেমেছিল শুধু একটি উদ্দেশ্যে, একটি বৈষম্যহীন সমাজব্যবস্থা গড়ার জন্য।
তিনি বলেন, আজ আমরা অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশ্যে বলতে চাই, আমরা কি সেই বৈষম্যহীন সমাজব্যবস্থা পেয়েছি? যারা আজ এবং আগামীতে পুরোনো ফ্যাসিবাদী কাঠামোর পথে হাঁটবেন, তাদের পরিণতিও হবে শেখ হাসিনার মতোই। আমরা আহ্বান জানাই– যারা রাষ্ট্রক্ষমতায় আসবেন, তারা যেন একটি ন্যায্য ও বৈষম্যহীন সমাজ প্রতিষ্ঠা করেন।