যুক্তরাষ্ট্র ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালিয়েছে: ট্রাম্প
যুক্তরাষ্ট্র ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালিয়েছে: ট্রাম্প25

- আপডেট সময় : ১০:০০:৫৮ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২২ জুন ২০২৫ ১০ বার পড়া হয়েছে
আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা করেছেন, যুক্তরাষ্ট্র ইরানের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ পারমাণবিক স্থাপনায় ‘সফলভাবে’ বিমান হামলা চালিয়েছে। তিনি এই হামলাকে যুক্তরাষ্ট্র, ইসরায়েল এবং বিশ্বের জন্য একটি ‘ঐতিহাসিক মুহূর্ত’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
শনিবার গভীর রাতে ট্রাম্প তাঁর নিজস্ব সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যাল-এ এক পোস্টে জানান, ইরানের ফোরদো, নাতাঞ্জ ও ইস্পাহান পারমাণবিক স্থাপনায় এই হামলা চালানো হয়েছে। হামলা শেষে মার্কিন সব যুদ্ধবিমান ইরানের আকাশসীমা ত্যাগ করেছে বলেও তিনি নিশ্চিত করেন।
“আমরা ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় খুবই সফলভাবে হামলা চালিয়েছি। সব বিমান এখন নিরাপদে ইরানের আকাশসীমার বাইরে,” — ট্রাম্পের পোস্ট।
তিনি আরও দাবি করেন, “ফোরদো এখন আর নেই”—শক্তিশালী বাঙ্কার-বোমা ব্যবহার করে ফোরদো স্থাপনাটি সম্পূর্ণ ধ্বংস করা হয়েছে। এই দাবির পক্ষে তিনি একটি ওপেন সোর্স ইন্টেলিজেন্স অ্যাকাউন্টের পোস্টও শেয়ার করেন, যেখানে স্যাটেলাইট চিত্রে ব্যাপক ধ্বংসচিহ্ন দেখা গেছে।
হামলার বিস্তারিত
হামলায় মার্কিন B-2 স্টিলথ বোম্বার, সাবমেরিন থেকে নিক্ষিপ্ত টমাহক ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র এবং বিশেষ “বাঙ্কার বাস্টার” বোমা ব্যবহার করা হয়। এগুলো মূলত ভূগর্ভস্থ এবং সুরক্ষিত পরমাণু স্থাপনার বিরুদ্ধে ব্যবহারের জন্য ডিজাইন করা।
হামলার লক্ষ্যস্থল তিনটি হলো:
ফোরদো: পাহাড়ের নিচে অবস্থিত ইরানের সর্বাধিক সুরক্ষিত পারমাণবিক কেন্দ্র।
নাতাঞ্জ: ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের জন্য পরিচিত কেন্দ্র, যেটি আগেও সাইবার হামলার শিকার হয়েছিল।
ইস্পাহান: গবেষণা ও পরিশোধন সংক্রান্ত স্থাপনা।
হামলার সময় যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ইসরায়েলের গোপন সহযোগিতা ছিল কিনা, তা নিয়ে জল্পনা তৈরি হয়েছে। তবে ইসরায়েল সরকার এ বিষয়ে এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো মন্তব্য করেনি।
ইরানের প্রতিক্রিয়া
হামলার খবর ছড়িয়ে পড়ার পরপরই ইরান একে “মারাত্মক উসকানি” এবং “আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন” বলে আখ্যা দিয়েছে। ইরানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, এই হামলার জবাব দেওয়া হবে এবং ইরানের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় তারা সর্বোচ্চ প্রস্তুত।
ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে জানানো হয়েছে, তেহরান ও অন্যান্য প্রধান শহরে বিমান প্রতিরক্ষা ইউনিটগুলো সর্বোচ্চ সতর্কতায় রয়েছে। জনগণকে শান্ত থাকার আহ্বান জানানো হয়েছে।
বৈশ্বিক প্রতিক্রিয়া ও অর্থনৈতিক প্রভাব
বিশ্বজুড়ে এই হামলার ঘটনায় রাজনৈতিক অস্থিরতা তৈরি হয়েছে।
জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস “চরম উদ্বেগ” প্রকাশ করে উভয়পক্ষকে সংযত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, “মধ্যপ্রাচ্যে আরেকটি যুদ্ধ এড়ানো এখন বিশ্বের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।”
বিশ্ববাজারেও এই ঘটনার তাৎক্ষণিক প্রভাব পড়েছে:
আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম বেড়েছে প্রায় ৬ শতাংশ।
স্বর্ণের দাম বেড়েছে ৪০ ডলার প্রতি আউন্স।
স্টক মার্কেটে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে, বিশেষ করে এশীয় ও ইউরোপীয় বাজারে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, হরমুজ প্রণালীতে উত্তেজনা তৈরি হলে বিশ্বজুড়ে জ্বালানি সরবরাহ ব্যাহত হতে পারে।
রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট ও ট্রাম্পের ভাষণ
ট্রাম্প এই হামলার ঘোষণা দিয়েছেন এমন সময়, যখন তিনি আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে নিজেকে পুনরায় প্রার্থী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে চাইছেন। অনেক বিশ্লেষক মনে করছেন, এই ধরনের দৃঢ় সামরিক পদক্ষেপের মাধ্যমে তিনি ‘শক্তিশালী নেতা’ হিসেবে নিজের ভাবমূর্তি তুলে ধরতে চাচ্ছেন।
তিনি ঘোষণা দিয়েছেন, শনিবার রাত ১০টায় (স্থানীয় সময়) ওয়াশিংটন ডিসি থেকে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেবেন। সেখানেই তিনি হামলার পটভূমি ও যুক্তরাষ্ট্রের ভবিষ্যৎ কৌশল নিয়ে বিস্তারিত বলবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
বাংলাদেশের সম্ভাব্য প্রভাব
বিশ্বজুড়ে তেলের দাম বাড়লে এর সরাসরি প্রভাব বাংলাদেশের অর্থনীতিতে পড়বে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ ধরনের ভূরাজনৈতিক উত্তেজনা দীর্ঘস্থায়ী হলে পেট্রোল-ডিজেলের দাম বাড়বে, যা পরিবহন, কৃষি ও শিল্প খাতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
বাংলাদেশ এখনো এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া দেয়নি, তবে কূটনৈতিক মহলে এ নিয়ে আলোচনার গতি বাড়ছে।
উপসংহার
যুক্তরাষ্ট্র-ইরান সম্পর্ক বহু বছর ধরেই জটিল, তবে এই হামলার মাধ্যমে পরিস্থিতি নতুন মোড় নিয়েছে। সামরিক পদক্ষেপের পাশাপাশি কূটনৈতিক প্রক্রিয়াও এখন চরম পরীক্ষা মুখে পড়েছে। বিশ্বের দৃষ্টি এখন ইরানের জবাব ও ট্রাম্পের ঘোষিত ভাষণের দিকেই।
সামনে মধ্যপ্রাচ্য পরিস্থিতি আরও ঘোলাটে হয়ে উঠতে পারে, এবং তার প্রভাব আন্তর্জাতিক রাজনীতি ও অর্থনীতিতে পড়া প্রায় অনিবার্য।
আপডেট থাকুন – পরবর্তী খবরে বিস্তারিত আসছে…