বিএনপির প্রার্থী তালিকায় কয়েকজন ঋণখেলাপি
- আপডেট সময় : ০৯:৪৬:৫৪ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৬ নভেম্বর ২০২৫
- / 5
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য দলীয় সম্ভাব্য প্রার্থী ঘোষণা করেছে বিএনপি। তাদের মধ্যে কেউ কেউ ঋণখেলাপি, কারও কারও বিরুদ্ধে অর্থঋণ আদালতে মামলা চলছে। ঋণ নিয়মিত করতে এরই মধ্যে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন তারা। নির্বাচনী বিধি অনুযায়ী, মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার অন্তত সাত দিন আগে ঋণ নিয়মিত না হলে তারা নির্বাচনে অযোগ্য হবেন।
গত সোমবার বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে ২৩৭ আসনে প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এ তালিকার অন্তত চারজনের ঋণখেলাপির তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে। অবশ্য গত কয়েকটি নির্বাচনের আগে অনেকেই তথ্য গোপন কিংবা উচ্চ আদালতের স্থগিতাদেশ নিয়ে ঋণ নিয়মিত দেখান। তবে গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর সম্প্রতি জানিয়েছেন, এবার কেউ আদালতের স্থগিতাদেশ নিলেও ঋণ তথ্য ব্যুরোতে (সিআইবি) তাঁকে খেলাপি দেখানো হবে। গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ ১৯৭২-এর ১২ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, সিআইবিতে ঋণখেলাপি হিসেবে চিহ্নিত ব্যক্তি জাতীয় সংসদের সদস্য হওয়ার যোগ্য হন না।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক আরিফ হোসেন খান সমকালকে বলেন, বিধি অনুযায়ী ঋণখেলাপি, কর বা বিলখেলাপি ব্যক্তি নির্বাচনে অংশ নেওয়ার অযোগ্য বিবেচিত হবেন। ফলে নির্বাচনে আগ্রহী কারও খেলাপি ঋণ থাকলে অবশ্যই তা নিয়মিত করতে হবে। তিনি বলেন, সাধারণভাবে নির্বাচনের আগে আগ্রহী প্রার্থীরা ঋণ নিয়মিত করার চেষ্টা করেন। এবারও তেমন হবে বলে আশা করা যায়।
নির্বাচন কমিশনের এক কর্মকর্তা সমকালকে বলেন, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ অনুযায়ী, প্রার্থী হওয়ার সাত দিন আগে কারও ঋণ নিয়মিত থাকলে চলবে। এ ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ব্যাংক যদি কাউকে খেলাপি বলে, তাঁর প্রার্থিতা বাতিল হবে। তিনি জানান, গতকাল সংশোধিত যে আদেশ জারি হয়েছে তাতে বলা আছে, নির্বাচিত হওয়ার পরও যদি কারও ঋণখেলাপি বা অন্য কোনো মিথ্যা তথ্য দেওয়ার প্রমাণ মেলে, তার সংসদ সদস্যপদ বাতিল হবে।
ঋণখেলাপির তালিকায় যাদের নাম
কয়েকটি ব্যাংকে খোঁজ নিয়ে বিএনপির মনোনয়ন পাওয়া কয়েকজনের ঋণখেলাপির তথ্য মিলেছে। যশোর-৪ (বাঘারপাড়া-অভয়নগর) আসনে বিএনপির মনোনয়ন পেয়েছেন ইঞ্জিনিয়ার তালহা শাহরিয়ার আইয়ুব (টি এস আইয়ুব)। তিনি কৃষক দলের সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক ও বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য। বিএনপির সম্ভাব্য এই প্রার্থী সরকারি-বেসরকারি খাতের অন্তত চার ব্যাংকে ১৩৮ কোটি টাকার ঋণখেলাপি।
জানা গেছে, ঢাকা ব্যাংকের ধানমন্ডি মডেল শাখা থেকে সাইমেক্স লেদার প্রোডাক্টের নামে ২০১৭ সালে ১৪টি ভুয়া এলসির বিপরীতে ২১ কোটি ২৫ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেন। ২০১৯ সালে এ বিষয়ে মামলা করে ব্যাংক। সুদসহ বর্তমানে তাঁর কাছে ব্যাংকটির পাওনা দাঁড়িয়েছে ৪৫ কোটি টাকা। সর্বশেষ গত বছরের এপ্রিলে টি এস আইয়ুব ও তাঁর স্ত্রী তানিয়া রহমানকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন ঢাকা মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালত। সরকার পতনের পর তিনি কারামুক্ত হন। এরই মধ্যে তাঁকে ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপি হিসেবে চিহ্নিত করে বাংলাদেশ ব্যাংকে রিপোর্ট করেছে ঢাকা ব্যাংক।
টি এস আইয়ুবের সাইমেক্স লেদার প্রোডাক্টের স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকের ধানমন্ডি শাখায় ৭০ কোটি টাকার খেলাপি। ঋণটি পুনঃতপশিল করতে তাঁকে এক কোটি ৪০ লাখ টাকা ডাউন পেমেন্ট জমার শর্ত দিয়েছে ব্যাংক। তিনি মাত্র ৬৫ লাখ টাকা জমা দেওয়ায় তা নিয়মিত হয়নি। এ ছাড়া রাষ্ট্রীয় মালিকানার জনতা ব্যাংকে ১১ কোটি টাকার ঋণখেলাপি তিনি। এর বাইরে তাঁর স্বার্থসংশ্লিষ্ট আরেক প্রতিষ্ঠান অগ্রণী ব্যাংকে ১২ কোটি টাকার খেলাপি ঋণ আছে।
এ ব্যাপারে বক্তব্যের জন্য ইঞ্জিনিয়ার টি এস আইয়ুবকে ফোন করা হলে তাঁর নম্বর বন্ধ পাওয়া যায়। ঢাকা ব্যাংকের এক কর্মকর্তা সমকালকে বলেন, ইচ্ছাকৃত খেলাপি চিহ্নিত করার শেষ ধাপ হিসেবে গতকাল বাংলাদেশ ব্যাংকে ত্রিপক্ষীয় শুনানি হয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক এখনও এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত জানায়নি।
গাজীপুর-৪ আসনের জন্য বিএনপি মনোনীত প্রার্থী শাহ রিয়াজুল হান্নান। তিনি বিএনপির প্রয়াত নেতা আ স ম হান্নান শাহর ছেলে; বর্তমানে গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক। বিদেশি মালিকানার ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তানে তাঁর তিন কোটি ২৪ লাখ টাকার খেলাপি। এই ঋণের বিপরীতে ঢাকার অর্থঋণ আদালতে মামলা করেছে ব্যাংকটি। গত সোমবার এই মামলার শুনানি হয়। ব্যাংকের সঙ্গে সমঝোতার ভিত্তিতে ঋণ পরিশোধের জন্য আদালত ১৫ দিন সময় দিয়েছেন বলে জানা গেছে।
ঘোষিত প্রার্থীর মধ্যে ঋণখেলাপির তালিকায় আছেন ঢাকা-১ (দোহার-নবাবগঞ্জ) আসনের খন্দকার আবু আশফাক। স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকে তাঁর মালিকানাধীন খন্দকার কনস্ট্রাকশন ১৬ কোটি টাকার ঋণখেলাপি। আবু আশফাক ঢাকা জেলা বিএনপির আহ্বায়ক। অন্য কোনো ব্যাংকে তাঁর খেলাপি ঋণ আছে কিনা, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। জানা গেছে, স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকের এ ঋণ নিয়মিত করার জন্য তিনি এরই মধ্যে ব্যাংকের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন।
চট্টগ্রাম-২ (ফটিকছড়ি) আসনে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী তালিকায় আছেন চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক সরওয়ার আলমগীর। তাঁর মালিকানাধীন এনএফজেড টেরি টেক্সটাইল স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকের আগ্রাবাদ শাখায় ২০১ কোটি টাকার ঋণখেলাপি। অন্য ব্যাংকের খেলাপি আছেন কিনা, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি সূত্র জানিয়েছে, খেলাপি ঋণের বিপরীতে তিনি উচ্চ আদালতের স্থগিতাদেশ নিয়েছেন।
জানতে চাইলে সরওয়ার আলমগীর বলেন, ‘আমি খেলাপি না বলেই নির্বাচন করার চ্যালেঞ্জ নিয়েছি। খেলাপি হলে তো ব্যবসা করতে পারার কথা নয়।’ আদালতের স্থগিতাদেশ নিয়ে ঋণ নিয়মিত দেখাচ্ছেন কিনা– জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আপনি আরেক প্যাঁচালে ফেলছেন। আমি খেলাপি না। আমার মতো করে ব্যবসা-বাণিজ্য করছি।’



















