ঢাকা ০২:৪৫ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৩ নভেম্বর ২০২৫, ২৮ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

আ.লীগের কর্মসূচি ঘিরে দুই ধরনের অবস্থান দলগুলোর

অনলাইন ডেস্ক
  • আপডেট সময় : ০১:০৩:২১ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৩ নভেম্বর ২০২৫
  • / 2

নিজস্ব প্রতিবেদক: বৃহস্পতিবার (১৩ নভেম্বর) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে শেখ হাসিনার মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলার রায়কে ঘিরে আবারও রাজনীতির ময়দান উত্তপ্ত হচ্ছে। ক্রমেই বাড়ছে কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের মিছিলের পরিধি। বিভিন্ন স্থানে ককটেল বিস্ফোরণসহ বাসে আগুন দিচ্ছে দুর্বৃত্তরা। এরই মধ্যে বৃহস্পতিবার রাজধানীতে ‘লকডাউন’ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে দলটি।

তবে এ নিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি জুলাই আন্দোলনের পক্ষে থাকা দলগুলোও রয়েছে সতর্ক অবস্থানে। এসব দলের কোনও কোনও নেতা মনে করেন, বাংলাদেশের রাজনীতিতে প্রাসঙ্গিকতা হারিয়েছে আওয়ামী লীগ। তাই তাদের প্রতিহত করার বিকল্প নেই। তারা বলেন, নিজেদের মধ্যে ভিন্নমত থাকলেও ভারতীয় আধিপত্যবাদ ও ফ্যাসিস্টদের বিরুদ্ধে তারা প্রয়োজনে আবারও ঐক্যবদ্ধভাবে মাঠে নামবেন।

এরই মধ্যে সেদিন (১৩ নভেম্বর) রাজপথে আওয়ামী লীগের যেকোনও তৎপরতা রুখে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। আর বিএনপি ও জামায়াতসহ অন্য দলগুলোও বিষয়টি পর্যবেক্ষণে রেখেছে। তবে তারা রাজপথের কোনও কর্মসূচি ঘোষণা করেনি।

এ ব্যাপারে গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘‘পতিত ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ দেশের বাইরে পালিয়ে থেকে কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। পুলিশ কোনও পদক্ষেপ না নিলে এটি জনগণ ঠিকই প্রতিহত করবে।’’

তিনি বলেন, ‘‘আমরা মনে করি শেখ হাসিনার কোনোভাবেই ফিরে আসার সুযোগ নেই। আওয়ামী লীগের ডামি এমপিরা মাঠে নামলে পিঠে ছালা বেঁধে নামতে হবে। কারণ, জনগণ মাঠে নেমে তাদের গণধোলাই দেবে।’’

রাশেদ খান বলেন, ‘‘জুলাই আন্দোলনে সম্পৃক্ত দলগুলোর মধ্যে মতপার্থক্য থাকলেও আওয়ামী লীগ প্রশ্নে প্রয়োজনে আবারও মাঠে নামবো।’’

বাসে আগুন-ককটেল আতঙ্ক, ধরপাকড়

আওয়ামী লীগের ‘লকডাউন’ কর্মসূচি ঘিরে রাজধানীবাসীর মধ্যে উদ্বেগ ও আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। কারণ, গত কয়েক দিন নগরীর বিভিন্ন স্থানে কার্যক্রম নিষিদ্ধ থাকা এ দলটির সহযোগী সংগঠনগুলোর ঝটিকা মিছিল হচ্ছে। অহরহ ঘটছে বাসে অগ্নিসংযোগ ও ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা। সন্দেহভাজনদের আটক করছে পুলিশ। চলছে ধরপাকড় ও তল্লাশি।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সূত্র জানিয়েছে, সোমবার (১০ নভেম্বর) রাত থেকে বুধবার  (১২ নভেম্বর) ভোর পর্যন্ত ৪টি বাস ও একটি প্রাইভেটকারে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। একইসঙ্গে ককটেল বিস্ফোরণের খবরও পাওয়া গেছে। যাত্রাবাড়ী, বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার গেট, উত্তরা ও মিরপুর ১ নম্বরে এসব ঘটনা ঘটে।

এরই মধ্যে বুধবার (১২ নভেম্বর) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে মিরপুর ১ নম্বরে সনি সিনেমা হলের সামনে ‘শতাব্দী’ পরিবহনের একটি বাসে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা।

এছাড়া গত দুই দিনে রাজধানীর ধানমন্ডি, মোহাম্মদপুর, আগারগাঁও, মিরপুর, বাংলামোটরসহ বিভিন্ন স্থানে ককটেল বিস্ফোরণ ঘটেছে। এসব ঘটনায় কেউ হতাহত না হলেও নগরবাসীর মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।

সর্বশেষ বুধবার (১২ নভেম্বর) দুপুরে ডিএমপির উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মুহাম্মদ তালেবুর রহমান সাংবাদিকদের জানান, রাজধানীতে ২৪ ঘণ্টায় কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের আরও ৪৪ নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করেছে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। তিনি জানান, এ নিয়ে বিভিন্ন স্থানে তল্লাশি অব্যাহত রয়েছে।

অবশ্য বাসে আগুন ও ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনায় সরকারের পক্ষ থেকে আওয়ামী লীগকে দায়ী করা হলেও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তা অস্বীকার করছেন আওয়ামী লীগ নেতারা।

দুই ধরনের ভাবনা দলগুলোর

আওয়ামী লীগের কর্মসূচি নিয়ে জুলাই আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী রাজনৈতিক দলগুলোতে দুই ধরনের মনোভাব রয়েছে। কিছু দলের নেতারা বিষয়টিকে তেমন গুরুত্ব দিতে চান না। তারা মনে করেন, এটি মোকাবিলার দায়িত্ব আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর। তবে তারা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন। আর কেউ কেউ বৃহস্পতিবার (১৩ নভেম্বর) সরাসরি মাঠে অবস্থান করবেন বলে জানিয়েছেন।

এ নিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘‘বিষয়টি আইনশৃঙ্খলার বাহিনীর কনসার্নে থাকার মতোই বিষয়। বাহিনীগুলো কঠোর অবস্থানে থাকবে এটাই প্রত্যাশা। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে আরও শক্ত অবস্থান নিতে হবে।’’

বুধবার (১২ নভেম্বর) সকালে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে ঢাকায় নিযুক্ত ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) রাষ্ট্রদূত মাইকেল মিলারের বৈঠকের পর সাংবাদিকদের এ ধরনের মনোভাবের কথা জানান খসরু।

তিনি আরও বলেন, ‘‘সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করে নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত করা যাবে—এমনটি ভাবার কোনও কারণ নেই। আর জাতীয় নির্বাচন নিয়ে উৎকণ্ঠাও নেই।’’ তার মতে, আওয়ামী লীগ ছাড়াও অন্য যে কেউ সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করতে পারে, এ বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি সরকারকেও শক্ত অবস্থান নিতে হবে।

ধর্মভিত্তিক দল জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, ‘‘ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন বানচালের জন্য ১৩ নভেম্বর শাটডাউনের নামে নাশকতার পরিকল্পনা করা হচ্ছে।’’

গত ১১ নভেম্বর পল্টনে আট দলের সমাবেশে তিনি বলেন, ‘‘ঢাকার হোটেলে হোটেলে অবস্থান নিয়েছে ফ্যাসিস্টের দোসররা। অবিলম্বে তাদের গ্রেফতার করতে হবে।’’

একই দলের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল অ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব জোবায়ের বলেন, ‘‘ফ্যাসিবাদী শক্তির কোনও তৎপরতা দেশের মানুষ মানবে না। এ বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সজাগ থাকতে হবে।’’ এদিন জামায়াত মাঠে থাকবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘‘বিষয়টি আমরা পর্যবেক্ষণ করছি। তবে দেশের প্রশ্নে প্রয়োজনে জুলাইয়ের মতো আমরা আবারও ঐক্যবদ্ধ হবো।’’

অবশ্য আওয়ামী লীগের কর্মসূচি ঘিরে মাঠে থাকার ঘোষণা দিয়েছে তরুণদের দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। দলটির যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন বলেন, ‘‘বাংলার মাটিতে আওয়ামী লীগ ও শেখ হাসিনার ঠাঁই হবে না। তাদের মাঠে নামার কোনও সুযোগ দেবে না জনগণ। কারণ তারা গণহত্যাকারী দল। লকডাউন-এর নামে তাদের তথাকথিত কর্মসূচির দিন রাজধানীর বিভিন্ন পয়েন্টে আমাদের নেতাকর্মীরা মাঠে থাকবেন।’’

এনসিপির আরেক যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষার বলেন, ‘‘এই সময়ে ফ্যাসিস্ট শক্তির এ ধরনের কর্মসূচি এক ধরনের আস্ফালন। আমরা রাজপথে থেকেই তাদের প্রতিহত করবো।’’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাধারণ সম্পাদক আবদুল্লাহ ক্বাফী রতন বলেন, ‘‘আওয়ামী লীগের এ ধরনের কর্মসূচির ঘোষণা ফেসবুকে দেখেছি। সত্য-মিথ্যা জানি না। তাদের কার্যক্রম নির্বাহী আদেশে নিষিদ্ধ আছে। তারা দেশের বাইরে থেকে কোনও ঘটনা ঘটালে তা কাম্য হতে পারে না।’’

তিনি বলেন, ‘‘দলটির রাজনীতি ধ্বংসাত্মক হলে আমরা এর বিপক্ষে অবস্থান নেবো।’’

নতুন প্রজন্মের অনলাইন টিভি

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

আ.লীগের কর্মসূচি ঘিরে দুই ধরনের অবস্থান দলগুলোর

আপডেট সময় : ০১:০৩:২১ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৩ নভেম্বর ২০২৫

নিজস্ব প্রতিবেদক: বৃহস্পতিবার (১৩ নভেম্বর) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে শেখ হাসিনার মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলার রায়কে ঘিরে আবারও রাজনীতির ময়দান উত্তপ্ত হচ্ছে। ক্রমেই বাড়ছে কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের মিছিলের পরিধি। বিভিন্ন স্থানে ককটেল বিস্ফোরণসহ বাসে আগুন দিচ্ছে দুর্বৃত্তরা। এরই মধ্যে বৃহস্পতিবার রাজধানীতে ‘লকডাউন’ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে দলটি।

তবে এ নিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি জুলাই আন্দোলনের পক্ষে থাকা দলগুলোও রয়েছে সতর্ক অবস্থানে। এসব দলের কোনও কোনও নেতা মনে করেন, বাংলাদেশের রাজনীতিতে প্রাসঙ্গিকতা হারিয়েছে আওয়ামী লীগ। তাই তাদের প্রতিহত করার বিকল্প নেই। তারা বলেন, নিজেদের মধ্যে ভিন্নমত থাকলেও ভারতীয় আধিপত্যবাদ ও ফ্যাসিস্টদের বিরুদ্ধে তারা প্রয়োজনে আবারও ঐক্যবদ্ধভাবে মাঠে নামবেন।

এরই মধ্যে সেদিন (১৩ নভেম্বর) রাজপথে আওয়ামী লীগের যেকোনও তৎপরতা রুখে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। আর বিএনপি ও জামায়াতসহ অন্য দলগুলোও বিষয়টি পর্যবেক্ষণে রেখেছে। তবে তারা রাজপথের কোনও কর্মসূচি ঘোষণা করেনি।

এ ব্যাপারে গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘‘পতিত ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ দেশের বাইরে পালিয়ে থেকে কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। পুলিশ কোনও পদক্ষেপ না নিলে এটি জনগণ ঠিকই প্রতিহত করবে।’’

তিনি বলেন, ‘‘আমরা মনে করি শেখ হাসিনার কোনোভাবেই ফিরে আসার সুযোগ নেই। আওয়ামী লীগের ডামি এমপিরা মাঠে নামলে পিঠে ছালা বেঁধে নামতে হবে। কারণ, জনগণ মাঠে নেমে তাদের গণধোলাই দেবে।’’

রাশেদ খান বলেন, ‘‘জুলাই আন্দোলনে সম্পৃক্ত দলগুলোর মধ্যে মতপার্থক্য থাকলেও আওয়ামী লীগ প্রশ্নে প্রয়োজনে আবারও মাঠে নামবো।’’

বাসে আগুন-ককটেল আতঙ্ক, ধরপাকড়

আওয়ামী লীগের ‘লকডাউন’ কর্মসূচি ঘিরে রাজধানীবাসীর মধ্যে উদ্বেগ ও আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। কারণ, গত কয়েক দিন নগরীর বিভিন্ন স্থানে কার্যক্রম নিষিদ্ধ থাকা এ দলটির সহযোগী সংগঠনগুলোর ঝটিকা মিছিল হচ্ছে। অহরহ ঘটছে বাসে অগ্নিসংযোগ ও ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা। সন্দেহভাজনদের আটক করছে পুলিশ। চলছে ধরপাকড় ও তল্লাশি।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সূত্র জানিয়েছে, সোমবার (১০ নভেম্বর) রাত থেকে বুধবার  (১২ নভেম্বর) ভোর পর্যন্ত ৪টি বাস ও একটি প্রাইভেটকারে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। একইসঙ্গে ককটেল বিস্ফোরণের খবরও পাওয়া গেছে। যাত্রাবাড়ী, বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার গেট, উত্তরা ও মিরপুর ১ নম্বরে এসব ঘটনা ঘটে।

এরই মধ্যে বুধবার (১২ নভেম্বর) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে মিরপুর ১ নম্বরে সনি সিনেমা হলের সামনে ‘শতাব্দী’ পরিবহনের একটি বাসে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা।

এছাড়া গত দুই দিনে রাজধানীর ধানমন্ডি, মোহাম্মদপুর, আগারগাঁও, মিরপুর, বাংলামোটরসহ বিভিন্ন স্থানে ককটেল বিস্ফোরণ ঘটেছে। এসব ঘটনায় কেউ হতাহত না হলেও নগরবাসীর মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।

সর্বশেষ বুধবার (১২ নভেম্বর) দুপুরে ডিএমপির উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মুহাম্মদ তালেবুর রহমান সাংবাদিকদের জানান, রাজধানীতে ২৪ ঘণ্টায় কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের আরও ৪৪ নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করেছে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। তিনি জানান, এ নিয়ে বিভিন্ন স্থানে তল্লাশি অব্যাহত রয়েছে।

অবশ্য বাসে আগুন ও ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনায় সরকারের পক্ষ থেকে আওয়ামী লীগকে দায়ী করা হলেও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তা অস্বীকার করছেন আওয়ামী লীগ নেতারা।

দুই ধরনের ভাবনা দলগুলোর

আওয়ামী লীগের কর্মসূচি নিয়ে জুলাই আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী রাজনৈতিক দলগুলোতে দুই ধরনের মনোভাব রয়েছে। কিছু দলের নেতারা বিষয়টিকে তেমন গুরুত্ব দিতে চান না। তারা মনে করেন, এটি মোকাবিলার দায়িত্ব আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর। তবে তারা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন। আর কেউ কেউ বৃহস্পতিবার (১৩ নভেম্বর) সরাসরি মাঠে অবস্থান করবেন বলে জানিয়েছেন।

এ নিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘‘বিষয়টি আইনশৃঙ্খলার বাহিনীর কনসার্নে থাকার মতোই বিষয়। বাহিনীগুলো কঠোর অবস্থানে থাকবে এটাই প্রত্যাশা। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে আরও শক্ত অবস্থান নিতে হবে।’’

বুধবার (১২ নভেম্বর) সকালে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে ঢাকায় নিযুক্ত ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) রাষ্ট্রদূত মাইকেল মিলারের বৈঠকের পর সাংবাদিকদের এ ধরনের মনোভাবের কথা জানান খসরু।

তিনি আরও বলেন, ‘‘সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করে নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত করা যাবে—এমনটি ভাবার কোনও কারণ নেই। আর জাতীয় নির্বাচন নিয়ে উৎকণ্ঠাও নেই।’’ তার মতে, আওয়ামী লীগ ছাড়াও অন্য যে কেউ সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করতে পারে, এ বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি সরকারকেও শক্ত অবস্থান নিতে হবে।

ধর্মভিত্তিক দল জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, ‘‘ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন বানচালের জন্য ১৩ নভেম্বর শাটডাউনের নামে নাশকতার পরিকল্পনা করা হচ্ছে।’’

গত ১১ নভেম্বর পল্টনে আট দলের সমাবেশে তিনি বলেন, ‘‘ঢাকার হোটেলে হোটেলে অবস্থান নিয়েছে ফ্যাসিস্টের দোসররা। অবিলম্বে তাদের গ্রেফতার করতে হবে।’’

একই দলের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল অ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব জোবায়ের বলেন, ‘‘ফ্যাসিবাদী শক্তির কোনও তৎপরতা দেশের মানুষ মানবে না। এ বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সজাগ থাকতে হবে।’’ এদিন জামায়াত মাঠে থাকবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘‘বিষয়টি আমরা পর্যবেক্ষণ করছি। তবে দেশের প্রশ্নে প্রয়োজনে জুলাইয়ের মতো আমরা আবারও ঐক্যবদ্ধ হবো।’’

অবশ্য আওয়ামী লীগের কর্মসূচি ঘিরে মাঠে থাকার ঘোষণা দিয়েছে তরুণদের দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। দলটির যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন বলেন, ‘‘বাংলার মাটিতে আওয়ামী লীগ ও শেখ হাসিনার ঠাঁই হবে না। তাদের মাঠে নামার কোনও সুযোগ দেবে না জনগণ। কারণ তারা গণহত্যাকারী দল। লকডাউন-এর নামে তাদের তথাকথিত কর্মসূচির দিন রাজধানীর বিভিন্ন পয়েন্টে আমাদের নেতাকর্মীরা মাঠে থাকবেন।’’

এনসিপির আরেক যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষার বলেন, ‘‘এই সময়ে ফ্যাসিস্ট শক্তির এ ধরনের কর্মসূচি এক ধরনের আস্ফালন। আমরা রাজপথে থেকেই তাদের প্রতিহত করবো।’’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাধারণ সম্পাদক আবদুল্লাহ ক্বাফী রতন বলেন, ‘‘আওয়ামী লীগের এ ধরনের কর্মসূচির ঘোষণা ফেসবুকে দেখেছি। সত্য-মিথ্যা জানি না। তাদের কার্যক্রম নির্বাহী আদেশে নিষিদ্ধ আছে। তারা দেশের বাইরে থেকে কোনও ঘটনা ঘটালে তা কাম্য হতে পারে না।’’

তিনি বলেন, ‘‘দলটির রাজনীতি ধ্বংসাত্মক হলে আমরা এর বিপক্ষে অবস্থান নেবো।’’