ধর্ম অবমাননার ভুয়া অভিযোগে একের পর এক হামলা, নেই বিচার
অনলাইন ডেস্ক
- আপডেট সময় : ১০:৫৬:৫৩ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৫
- / 4
১. পাবনার সাথিয়া উপজেলার বনগ্রাম বাজারে ২০১৩ সালে ধর্মীয় অবমাননার ভুয়া অভিযোগে অর্ধশত হিন্দু বাড়িঘর ও মন্দিরে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। বনগ্রাম বাজারে স্থানীয় ব্যবসায়ী বাবলু সাহার ছেলে রাজীব সাহার বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে ফেসবুকে ইসলাম ধর্ম নিয়ে কটূক্তি করে পোস্ট দেয়ার। বনগ্রাম হাটের দিনে শত শত লিফলেট বিলিয়ে সাধারণ জনগণকে উত্তেজিত করা হয়। কিন্তু পরে পুলিশের তদন্তে দেখা যায় রাজীব এরকম কোনো পোস্টই দেননি।
২.রামু ট্র্যাজেডি, কক্সবাজার: ২০১২ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর উত্তম বড়ুয়া নামে এক বৌদ্ধ যুবকের ফেসবুকে পবিত্র কুরআন অবমাননার একটি ছবি ‘ট্যাগ’ হওয়ার অভিযোগ তুলে তাণ্ডব চালানো হয়। পরে দেখা যায় ছবিটি এডিট করা ছিল এবং উদ্দেশ্যমূলকভাবে তাকে ফাঁসানো হয়েছিল।
ফলাফল: ১২টি বৌদ্ধ বিহার এবং হিন্দু ও বৌদ্ধদের অর্ধশতাধিক বাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হয়। ১৯টি মামলা করা হলেও একটি মামলারও রায় হয়নি। অধিকাংশ আসামি জামিনে মুক্ত।
৩.নাসিরনগর হামলা: তারিখ: ৩০ অক্টোবর, ২০১৬। রসরাজ দাস নামে এক মৎস্যজীবীর ফেসবুক আইডি থেকে একটি বিতর্কিত ছবি পোস্ট করার অভিযোগ ওঠে। পিবিআই (PBI) পরে জানায়, রসরাজ সেদিন মাছ ধরছিলেন এবং তাঁর ফোন থেকে ওই ছবি পোস্ট করা সম্ভব ছিল না; কেউ তাঁর আইডি হ্যাক করে বা এডিট করে এটি করেছে।
ফলাফল: ১৫টি মন্দির এবং হিন্দুদের শতাধিক ঘরবাড়ি লুটতরাজ ও ভাঙচুর করা হয়। ৯ বছর পার হলেও বিচার কাজ শেষ হয়নি। মূল হামলাকারীরা এখনো অধরা বা জামিনে বাইরে।
৪.শাল্লা হামলা, সুনামগঞ্জ: তারিখ: ১৭ মার্চ, ২০২১। ঝুমন দাস নামে এক যুবক হেফাজতে ইসলামের তৎকালীন নেতা মামুনুল হকের সমালোচনা করে ফেসবুকে পোস্ট করেন। একে ‘ধর্ম অবমাননা’ হিসেবে প্রচার করে হাজার হাজার মানুষ লাঠিসোঁটা নিয়ে হামলা চালায়।
ফলাফল: নোয়াগাঁও গ্রামের হিন্দুদের প্রায় ৮০-৯০টি ঘরবাড়ি ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়।
বিচারের অবস্থা: ঝুমন দাসকে দীর্ঘ সময় কারাবন্দী থাকতে হলেও মূল উস্কানিদাতা ও হামলাকারীরা দ্রুত জামিন পেয়ে যায়। বর্তমানে মামলাটি স্থবির হয়ে আছে।
৫.কুমিল্লা ও পীরগঞ্জ তাণ্ডব: তারিখ: ১৩ অক্টোবর, ২০২১ কুমিল্লার নানুয়া দিঘির পাড়ের একটি পূজামণ্ডপে হনুমান মূর্তির কোলে কুরআন রাখা হয়। পরে সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায় জনৈক ইকবাল হোসেন নামক এক ব্যক্তি রাতে এটি রেখেছিলেন। এটি কোনো হিন্দু ধর্মাবলম্বীর কাজ ছিল না।
ফলাফল: এই গুজব ছড়িয়ে কুমিল্লা, নোয়াখালী, চাঁদপুর এবং রংপুরের পীরগঞ্জে হিন্দুদের বাড়িঘর ও মন্দিরে ব্যাপক হামলা হয়। পীরগঞ্জে জেলে পল্লীর অন্তত ২০টি বাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হয়।
বিচারের অবস্থা: রংপুরের ঘটনায় বেশ কিছু চার্জশিট দেওয়া হলেও মূল বিচার প্রক্রিয়া এখনো শেষ হয়নি। ক্ষতিগ্রস্তরা এখনো পূর্ণ ক্ষতিপূরণ ও নিরাপত্তা পাননি বলে অভিযোগ রয়েছে।
৬.সর্বশেষ ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলায় (ঢাকা–ময়মনসিংহ মহাসড়কের কাছে) গত ১৮ ডিসেম্বর রাত ৯টায় দীপু চন্দ্র দাস নামে এক হিন্দু যুবককে ধর্ম অবমাননার অভিযোগে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। পরে দেহ গাছের সাথে বেঁধে পুড়িয়ে দেওয়া হয় বলে পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানিয়েছে।
বিবিসি বাংলাসহ একাধিক গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তাকে ধর্ম অবমাননার অভিযোগে আক্রমণ করা হয়েছিল কিন্তু কেউ নিজে শুনেছে তার প্রমাণ নেই। দীপুর পরিবারের অভিযোগ, পাওনা টাকা চাওয়া নিয়ে দীপুকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে।






















