কিশোরগঞ্জ বাফার দুর্নীতি: ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ

- আপডেট সময় : ০৩:৪২:৫৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫
- / 0
কিশোরগঞ্জ ফার্টিলাইজার এসোসিয়েশনের (বাফার) ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার বিরুদ্ধে লাগামহীন অনিয়ম, দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ কর্পোরেশনের আপদকালীন ইউরিয়া সার সরবরাহের আঞ্চলিক গুদাম (বাফার) কিশোরগঞ্জ জেলা সদরের বিন্নাটি ইউনিয়নে অবস্থিত।
জেলা কৃষি অফিসের তথ্য মতে এই গুদাম থেকে জেলার হোসেনপর উপজেলার বিসিআইসির ১০ জন ডিলার, কিশোরগঞ্জ সদরে ১৭, পাকুন্দিয়ার ১৩, করিমগঞ্জের ১৬, তাড়াইলের ১০, নিকলীর ০৭ ও কুলিয়াচারের ১৩ জনসহ মোট ৮৬ জন ডিলার ইউরিয়া সার বরাদ্দ পেয়ে থাকে। এর মধ্যে হোসেনপুর উপজেলার ডিলারদের জন্য ৪০৯ মেঃ টন, কিশোরগঞ্জ সদরের ডিলারদের জন্য ৫৩৪ মেঃ টন, পাকুন্দিয়ার জন্য ৭৬১ মেঃ টন, করিমগঞ্জে জন্য ৫৫২ মেঃ টন, তাড়াইলের জন্য ২৫৮ মেঃ টন, নিকলীতে ৫৩ মেঃ টন কুলিয়ারচরে ৩৪২ মেঃ টনসহ মোট ২৮০৯ মেঃ টন সার চলতি সেপ্টেম্বর মাসে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। উক্ত বাফারে চলতি মাসে তিন প্রকার সার বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে ঘোড়াশাল সার কারখানা থেকে উৎপাদনের ভাল মানের ইউরিয়া সার বরাদ্দ দেয়া হয়। এছাড়া সিলেটের (ফেঞ্চুগঞ্জ) থেকে ইউরিয়া সার বরাদ্দ দেয়া হয়। তৃতীয়ত সরকার কর্তৃক আমদানীকৃত বিসিআইসির সার বাফারে বরাদ্দ দেয়া হয়। এই বিসিআইসির সার ডিলারদের কাছে বিসিআইসির “বল” সার নামে পরিচিত। সরকার যে সার আমদানী করে তা দেশে আসার পর সেই সারের প্যাকেটজাত করা হয় বিসিআইসি’র নামে।
বর্তমানে চিকন ইউরিয়া সার গত এপ্রিল মাস থেকে সরবরাহ বন্ধ থাকায় দুর্নীতিবাজ বাফার কর্মকর্তা ঘোড়াশাল সার ফ্যাক্টরী সার কেলেংকারীর নামে টুপাইস ইনকাম করে পকেট ভারী করছে। এক সময় তার অবৈধ আয়ের উৎস ছিল ডিলারদের মাখে চিকন সার বিভাজনের মাধ্যমে। এখন ডিলারদের মাঝে বিভাজনের নামে ঘোড়ামাল ফ্যাক্টরীর সারই এখন তার অবৈধ আয়ের প্রধান উৎস। দীর্ঘ অনুসন্ধানের জানা গেছে পাকুন্দিয়া উপজেলার সার ডিলার, সদর উপজেলার সার ডিলার ও তাড়াইল উপজেলার সার ডিলাররা তার অবৈধ আয়ের মূল যোগানদাতা। এই তিন উপজেলার তার পছন্দের ডিলারগণকে ঘোড়াশাল ফ্যাক্টরীর সার সরাসরি ডিলারদের গুদামে সরবরাহ করা হয়।
তালিকাভূক্ত উল্লেখিত উপজেলাগুলোর ৮৬ জন ডিলারের সবার সঙ্গে তার দহরম মহরম নেই। নজরুলের বিরুদ্ধে অভিযোগ তার আপনজন হিসেবে পরিচিত ডিলারদেরকে তিনি বাফার গুদাম থেকে নয় সরাসরি কারখানা থেকে সে সব সার ভর্তি ট্রাক গুদামের উদ্দেশ্যে আসে। সে সব ট্রাক গুদামের ভেতরে প্রবেশ না করেই সরাসরি ডিলারদের গুদামে চলে যায়। এর জন্য তিনি ডিলারদের কাছ থেকে প্রতি বস্তার জন্য ২০/- টাকা করে নিয়ে থাকেন। যেসব ডিলার তার সাথে এই গোপন চুক্তিতে রাজী থাকে তাদেরকেই মূলত ভাল মানের সার দেয়া হয়। যারা তার এই গোপন চুক্তিতে রাজী না হয় তাদেরকে গুদামে সংরক্ষিত বছরের পর বছর পড়ে থাকা জমাট বাধা বিসিআইসির আমদানীকৃত “বল” সার সরবরাহ করা হয়। একরম বহু অভিযোগ তার বিরুদ্ধে। শুধু ডিলারদেরই এই অভিযোগ নয়, কৃষকরাও এই অভিযোগ করেছেন। বিভিন্ন উপজেলার কৃষকদের কাছ থেকে জানা গেছে বাফারের লোড/আনলোড করার সময় ইউরিয়া সারের বস্তা থেকে যে ইউরিয়া গুদামে মেঝেতে পড়ে থাকে সে সব সারও ঝাড়– দিয়ে একত্র করে নতুন বস্তায় প্যাকিং করা হয়। এর জন্য গুদামেই গোপনীয়ভাবে রাখা হয়েছে একটি বস্তা প্যাকিংয়ের মেশিন। অভিযোগ রয়েছে বাফারের বিদ্যুৎ না থাকলে সার্বক্ষণিক বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য একটি শক্তিশালী জেনারেটর রয়েছে। কোন দিন বিদ্যুৎ চলে গেলেও এ জেনারেটরে চলতে দেখা যায়নি। তবুও মাসের পর মাস জেনারেটরটি চালু রাখার অজুহাতে ভূয়া বিল ভাউচারের মাধ্যমে জেনারেটরের জ্বালানী তেলের টাকা আত্মসাৎ করা হচ্ছে।
অপর দিকে বাফার গুদামে উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন যে সিসি ক্যামেরা সংযোজন রয়েছে প্রকৃতপক্ষে তা অচল। সিসি ক্যামেরার সংযোগ মনিটরে না দিয়ে তার ব্যক্তিগণ এনড্রয়েড মোবাইলে সংযোগ রয়েছে। তাই বিন্নাটি বাফারের গুদামে দুর্নীতিবাজ নজরুল গুদামে উপস্থিত না থাকলেও যে স্থানেই থাকেন গুদামে চালচিত্র, কার্যক্রম সবেই তার নখদর্পনে। গুদামে কে কোন সময়ে প্রবেশ কিংবা বাহির হচ্ছে তা তিনি এই অলৌকিক এনড্রয়েড মোবাইলে দেখে ক্ষমতাবলে বলে দিতে পারেন। এর জন্যে ডিলার ও সাংবাদিকরা তার মেধার প্রশংসা করেন। অথচ বাস্তবতা হলো দূর্নীতির মাধ্যমে সব জায়েজ করার জন্যই তার এ অপকৌশল। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তার সহকর্মীরা জানান বিন্নাটি বাফারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নজরুল বিগত সরকারের আমলে তার দাপটে কোনঠাসা ছিল ডিলারগণ। সময়ের পালা বদলের সঙ্গে সঙ্গে তার কর্মকান্ডও পাল্টে গেছে। অর্থাৎ যখন যে দল ক্ষমতায় থাকে সেই দলের লোক হয়ে যায় দুর্নীতিবাজ এই কর্মকর্তা। এ কারণেই তার পূর্বের কর্মস্থল শেরপুর জেলা বাফারের কর্মরত থাকাবস্থায় দুর্নীতির দায়ে তার বিরুদ্ধে একাধিক তদন্ত হয়েছে। তদন্তে তার দুর্নীতি ও অনিয়ম প্রমাণিত হয়েছে। তারপরও তিনি স্বপদে আজও বহাল তবিয়তে। অনুসন্ধানে আরও জানা যায়, এ বাফার গুদামে দৈনিক হাজিরায় তিন কর্মচারী নিয়মিত কাজ করেন। এদের মধ্যে দুজনকেই দুর্নীতিবাজ এ কর্মকর্তা নিজস্ব লোককে নিয়োগ দিয়েছেন।
এ ব্যাপারে এ কর্মকর্তা এ প্রতিবেদকের সাথে কথা বলতে কিংবা সাক্ষাৎ দিতেও রাজী নয়।