বগুড়ার ১২ উপজেলার ৬৪৫ মন্ডপে অনুষ্ঠিত হচ্ছে দুুর্গাপূজা

দীপক সরকার, বগুড়া প্রতিনিধি: পৃথিবীতে দেবী দুর্গা আগমন করেছিল, পাপশক্তি অসুর বধ করে, দেবতা ও জীবকুলদের শান্তি ফিরিয়ে দিতে। পাপাচ্ছন্ন পৃথিবীতে প্রতি বছরই দেবী আসেন, পাপ, তাপ, মোহ, দূরীভূত করে শান্তির সুবাতাস প্রতিষ্ঠা করতে। তাইতো এ বছর বৈশ্বিক মহামারী করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ মুক্ত হতে ভক্তের আহবানে দেবী দূর্গা আসছে সুখ-সমৃদ্ধি ও শান্তির বারতা নিয়ে। ২২ অক্টোবর মহাষষ্ঠীর মাধ্যমে এবছর সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বৃহৎ উৎসব শারদীয় দুর্গার আরাধনা হবে ২৬টি শর্ত বা নিয়মের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। দেশের বিভিন্ন জেলার মত বগুড়ায়ও উৎসবমুখর পরিবেশে দুর্গোৎসব উদযাপন করবে সনাতন ধর্মাবলম্বীরা। এদিকে পূজাকে সামনে রেখে বগুড়ায় শেষ মুহূর্তে প্রতিমা শিল্পীরা রাত-দিন খেটে ইতোমধ্যেই রং তুলির ছোঁয়ার কাজ শেষ করেছে। ২২ অক্টোবর মধ্যরাতে প্রতিটি পূজামÐপের আসনে বসানো হবে দেবী দূর্গার প্রতিমা। শুরু হবে দুর্গাপূজার মহাষষ্টী, মহাসপ্তমী, মহাঅষ্টমী, মহানবমী ও বিজয়া দশমীর পর্ব।

এ বছর বগুড়া জেলার ১২টি উপজেলায় ৬৩১টি মন্ডপে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। তবে গত বছরের তুলনায় ৩০টি মন্ডপ কমে গেছে বলে জানিয়েছেন জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি দিলীপ কুমার দেব।

জানা গেছে, জেলার ১২টি উপজেলার মধ্যে বগুড়া সদরে ১১৫টি, শাজাহানপুরে ৫৪টি, শিবগঞ্জে ৫৪টি, সোনাতলায় ৩৬টি, সারিয়াকান্দিতে ২০টি, ধুনটে ৩২টি, গাবতলীতে ৬০টি, শেরপুরে ৮০টি, নন্দীগ্রামে ৪৩টি, কাহালুতে ৩৮টি, আদমদীঘিতে ৬০টি এবং দুপচাঁচিয়ায় ৩৯টি, মন্ডপে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে।

শেরপুর উপজেলার পৌর শহরের সকাল বাজার এলাকার প্রতিমার কারিগর প্রকাশ ঘোষ জানান, প্রতিবছর তার কারখানায় ৭-৮টির মত প্রতিমা বানানো হয়। কিন্তু করোনা ভাইরাসের কারণে এ বছর তার কারখানায় ৫টি প্রতিমার কাজ করতে পেরেছেন। শেষ সময়ে এখন প্রতিমা রংয়ের কাজে ব্যস্ত সময় কাটছে তাদের।

প্রতিমার তৈরীর দাম নিয়ে শাহজাহানপুর উপজেলার আড়িয়া পাল পাড়ার প্রতিমা কারিগর গোবিন্দ পাল বলেন, দিন দিন প্রতিমা তৈরির সামগ্রীর দাম বাড়ায় অনেকটাই বিপাকে পরতে হচ্ছে তাদের। তবুও বিগত বছরের মত এ বছর তার তৈরি প্রতিমার মধ্যে ২০-৫৫ হাজার টাকা পর্যন্ত দাম রয়েছে। এ বছর তিনি ছয়টি প্রতিমার কাজ করেছেন। রঙের কিছু কাজ শেষে সেগুলো বুধবার (২১অক্টোবর) সন্ধ্যার মধ্যেই ডেলিভারি দেয়া হবে। প্রতিমা তৈরিতে সরঞ্জাম খড়, সুতা, বাঁশ ছাড়াও রং এবং অন্যান্য উপকরণের দাম বেড়েছে মন্তব্য তার। এতে প্রতিমা তৈরিতে তাদের খরচ আগের তুলনায় অনেক বেশি হচ্ছে। গত বছর বাঁশ প্রতি পিস কিনেছেন ১৫০ থেকে ১৮০ টাকায়। সেই বাঁশ এবছর কিনেছেন ২০০ থেকে ২৫০ টাকায়, খড় প্রতি আঁটি ৫ টাকার বিপরীতে ১০ টাকা, মাটি প্রতি ভ্যানের বিপরীতে ২০০ টাকা বেশি দিয়ে কিনতে হয়েছে তার।

বগুড়া জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি দীলিপ কুমার দেব জানান, বগুড়া পুলিশ সুপার কার্যালয়ে জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের কমিটির সঙ্গে প্রশাসনের আলোচনা সভায় অনুষ্ঠিত হয়েছে। তবে এবছর পূজা উদযাপন পরিষদের কেন্দ্রীয় ২৬ শর্ত পালনপূর্বক নির্বিঘেœ পূজা করতে জেলা প্রতিটি পূজা মন্ডপ পরিচালনা কমিটিকে অনুরোধ জানানো হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. গাজিউর রহমান বলেন, এবছর বিজয়া দশমীর দিনে গোধূলি লগ্নের মধ্যেই প্রতিমা বিসর্জন দিতে পুজা কমিটির নেতৃবৃন্দদের অনুরোধ জানানো হয়েছে। তবে পূজায় বিঘœতা যাতে না ঘটে সেজন্য এবং শহরকে যানজটমুক্ত রাখাসহ আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে নিরাপত্তা জোরদার করা হবে। তবে শারদীয় দুর্গা উৎসব এবার সচেতন থেকে হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা পালন করবে এটাই হোক সকলের কাম্য।

Leave A Reply

Your email address will not be published.

Title