ফরিদপুর : ফরিদপুর শহরের দুইটি যৌনপল্লীকে অনির্দিষ্টকালের জন্য লক-ডাউন ঘোষণা করেছে জেলা প্রশাসন। আজ শনিবার শহরের রথখোলা যৌনপল্লী এবং ডিক্রিরচর ইউনিয়নের সিএন্ডবি ঘাট এলাকায় অবস্থিত যৌনপল্লীতে গিয়ে এই ঘোষণা দেন সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. মাসুম রেজা। করোনা ভাইরাস সংক্রমণ রোধে এই দুটি যৌনপল্লী লকডাউন করা হয়েছে জানিয়েছে জেলা প্রশাসন।
জানা যায়, শহরের রথখোলা পল্লীতে রয়েছেন ২৭৬ জন ও সিঅ্যান্ডবি ঘাটের পল্লীতে ১২৫ জন যৌনকর্মী। পাশাপাশি বাড়িওয়ালি, সর্দারনি ও অনেকের ছেলে-মেয়ে রয়েছে। ঘিঞ্জি পরিবেশ, অল্প জায়গায় বেশি মানুষের উপস্থিতি। সেই সঙ্গে পল্লীর বাসিন্দাদের অসচেতনতায় প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস এখানে ভয়াবহ রূপ নেয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছিল। এছাড়া প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে এই দুটি যৌনপল্লীতে হাজারো মানুষ আসা-যাওয়া করে। এখানে আসা মানুষগুলো কে কোথা থেকে এসেছেন বা থাকছেন তার সঠিক তথ্য জানা কারও জানা নেই। সারাবিশ্বসহ বাংলাদেশেও করোনা পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করলেও যৌনপল্লী দুটিতে মানুষের আসা যাওয়া ছিল নির্বিঘ্ন।
এই বিষয়ে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. মাসুম রেজা সাংবাদিকদের জানান, শহরের এ দুটি যৌনপল্লীতে জায়গা কম, ঘিঞ্জি পরিবেশ এবং বিভিন্ন জেলা থেকে প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ যাতায়াত করে থাকে। এতে সংক্রমণ ঝুঁকি থাকায় জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের পরামর্শে এ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। মানবিক কারণে যৌনকর্মীদের খাদ্য সহায়তা হিসেবে প্রাথমিক পর্যায়ে এক-দুইদিনের মধ্যে প্রত্যেক পরিবারকে ৩০ কেজি করে চাল দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এছাড়া বন্ধকালীন সময়ে বাড়ীওয়ালাদেরকে যৌনকর্মীদের কাছ থেকে ঘরভাড়া না নেওয়ার নির্দেশও দেওয়া হয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক যৌনকর্মী জানান, পল্লীতে খদ্দের আসা প্রায় বন্ধ। এ পরিস্থিতিতে লক ডাউন তাদের জন্য হুমকি হলেও খাদ্য সহায়তা পেলে তাদের কষ্ট কিছুটা লাঘব হতে পারে! তবে সে বিষয়টি সবার নজরে থাকলেই হবে।
ফরিদপুর রথখোলা যৌনকর্মীদের সংগঠন ‘জয় নারী সংঘের’ সাধারণ সম্পাদক শিউলি পারভীন বলেন, যেভাবে সারাবিশ্বে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ছে তাতে করে যৌনপল্লী দুটি সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় ছিল। অবস্থার বিবেচনায় বন্ধের সিদ্ধান্ত ঠিক আছে। তবে কয়েকশ বাসিন্দা আছে, যারা দিনে রোজগার করে দিনে খায়। তাদের খাবারের ব্যবস্থা না করলে বেঁচে থাকা কঠিন হয়ে পড়বে। এ বিষয়ে জরুরি ভিত্তিতে ব্যবস্থা গ্রহণ করার প্রয়োজন বলে দাবী করেন।
ফরিদপুর কোতোয়ালী থানার ওসি মোরশেদ আলম জানান, করোনা ভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি এড়াতেই পল্লী দুইটির প্রবেশ পথের মধ্যে পুলিশ পাহারা জোরদার করা হয়েছে।