কক্সবাজারে গোপন বৈঠকের পর পিটার হাসের ঢাকা ত্যাগ, নতুন রাজনৈতিক সমীকরণের ইঙ্গিত?
কক্সবাজারে গোপন বৈঠকের পর পিটার হাসের ঢাকা ত্যাগ, নতুন রাজনৈতিক সমীকরণের ইঙ্গিত?

- আপডেট সময় : ০৯:৪২:৪৯ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৭ আগস্ট ২০২৫ ৬ বার পড়া হয়েছে
নিজস্ব প্রতিবেদনঃ কক্সবাজারে গোপন বৈঠকের পর পিটার হাসের ঢাকা ত্যাগ: নতুন রাজনৈতিক সমীকরণের ইঙ্গিত?,কক্সবাজারের ইনানীতে অনুষ্ঠিত এক গোপন বৈঠকের গুঞ্জনের মাঝেই বাংলাদেশে নিযুক্ত সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার ডি. হাস হঠাৎ করে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ঢাকা ত্যাগ করেছেন, এনসিপির (জাতীয় নাগরিক পার্টি) শীর্ষ পাঁচ নেতার সঙ্গে তার এই কথিত বৈঠক এবং একই দিনে তার দেশত্যাগ রাজনীতিক ও কূটনৈতিক মহলে চাঞ্চল্য ও নানা জল্পনার জন্ম দিয়েছে।
বিশেষ করে এই ঘটনা ঘটেছে ২০২৪ সালের জুলাই মাসে সংঘটিত গণঅভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তির দিনে। বিশ্লেষকদের মতে, এটি নিছক সময়ের সমাপতন হতে পারে না।
বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) প্রকাশিত ‘দোলনচাপা-ভিআইপি-২’ টার্মিনালের যাত্রী তালিকায় দেখা গেছে, পিটার হাস সন্ধ্যা ৭টা ১০ মিনিটে এমিরেটস এয়ারলাইন্সের EK 583 ফ্লাইটে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ত্যাগ করেন। তার পরিচয়স্থলে লেখা ছিল “Ambassador – Ex”, যা নিশ্চিত করে যে তিনি বর্তমানে কূটনৈতিক দায়িত্বে নেই, তবে তার অবস্থান এখনো সংবেদনশীল।
এর আগেই মঙ্গলবার সকালে বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে তীব্র আলোড়ন তোলে এক খবর—পাঁচজন শীর্ষ এনসিপি নেতা ঢাকা থেকে কক্সবাজার গেছেন। তারা হলেন—দলের মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলম, মুখ্য সংগঠক (দক্ষিণাঞ্চল) হাসনাত আবদুল্লাহ, মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী, সিনিয়র যুগ্ম সদস্যসচিব তাসনিম জারা এবং সদস্য খালেদ সাইফুল্লাহ।
তারা কক্সবাজারের ইনানী বিচে অবস্থিত বিলাসবহুল ‘সী পার্ল রিসোর্ট অ্যান্ড স্পা’ হোটেলে অবস্থান করছিলেন।
স্থানীয় সূত্র ও একাধিক প্রত্যক্ষদর্শীর বরাতে জানা যায়, দুপুরের পর থেকেই রিসোর্ট প্রাঙ্গণে তাদের বিচরণ লক্ষ্য করা গেছে এবং বিকেলের দিকে সেখানে পিটার হাসের উপস্থিতির কথাও শোনা যায়। যদিও এই বৈঠকের কোনো দৃশ্যমান প্রমাণ বা ছবি পাওয়া যায়নি, তবে সমসাময়িক ঘটনাপ্রবাহ এই গুঞ্জনের পক্ষে নানা ইঙ্গিত দিচ্ছে।
হোটেল কর্তৃপক্ষ বা এনসিপির পক্ষ থেকে এ বিষয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক মন্তব্য না আসায় জল্পনার মাত্রা আরও বেড়েছে।
এদিকে মার্কিন দূতাবাসের কেউ এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেননি।
এনসিপি বর্তমানে বাংলাদেশের উদীয়মান একটি রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে পরিচিত, যারা বিশেষ করে তরুণদের মধ্যে প্রভাব বিস্তার করছে। আগামী নির্বাচনে তাদের সক্রিয় অংশগ্রহণ এবং জোট গঠনের সম্ভাবনা নিয়ে ইতোমধ্যে নানা আলোচনা চলছিল। পিটার হাসের মতো একজন সাবেক কূটনীতিকের সঙ্গে তাদের গোপন বৈঠকের খবর সেই জল্পনাকে আরও ঘনীভূত করেছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক অধ্যাপক রেজাউর রহমান মনে করেন, “গণঅভ্যুত্থান দিবসের মতো একটি সময়সীমার সঙ্গে পিটার হাসের দেশত্যাগ ও এনসিপি নেতাদের গোপন বৈঠক যুক্ত হলে এটিকে নিছক কাকতালীয় ঘটনা বলা কঠিন। এটি হয়তো একটি রাজনৈতিক বার্তা—আন্তর্জাতিকভাবে।”
তিনি আরও বলেন, “পিটার হাস দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশের মানবাধিকার, নির্বাচন ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া নিয়ে প্রকাশ্যেই উদ্বেগ প্রকাশ করে এসেছেন। এমন একটি শক্তিশালী ও নতুন দলের সঙ্গে তার সংলাপ ভবিষ্যতের রাজনীতিতে নতুন মাত্রা যোগ করতে পারে।”
এদিকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক আলোচনা চলছে। অনেকে বলছেন, পিটার হাস হয়তো বাংলাদেশে একটি ‘নতুন রাজনৈতিক বাস্তবতা’র ইঙ্গিত দিয়ে গেলেন। তবে তার হঠাৎ দেশত্যাগের পেছনে ব্যক্তিগত কারণ, পেশাগত দায়িত্বের অবসান না কি রাজনৈতিক কোনো বার্তা—তা এখনো স্পষ্ট নয়।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই বৈঠক যদি সত্যি হয়ে থাকে, তাহলে এর প্রতিক্রিয়া শিগগিরই দেখা যেতে পারে—বিশেষ করে যদি এনসিপি আগামী নির্বাচনে বড় কোনো জোটে প্রবেশ বা ভিন্নধর্মী কূটনৈতিক সমর্থন লাভ করে।
ফলে, পিটার হাসের এই রহস্যময় সফর এবং তার সঙ্গে এনসিপির শীর্ষ নেতাদের সাক্ষাৎ নিয়ে যে ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে, তা কেবল একটি কূটনৈতিক ঘটনা নয়; এটি বাংলাদেশের রাজনীতিতে একটি সম্ভাব্য মোড় ঘোরানোর ইঙ্গিতও বহন করছে।