ঢাকা ১২:১৩ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৩ নভেম্বর ২০২৫, ২৯ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

‘জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়ন’ আদেশ: দুপুরে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেবেন প্রধান উপদেষ্টা

অনলাইন ডেস্ক
  • আপডেট সময় : ১০:৪০:২১ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৩ নভেম্বর ২০২৫
  • / 5

জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়ন’ আদেশ জারি হচ্ছে আজ। বৃহস্পতিবার (১৩ নভেম্বর) দুপুরে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস এই আদেশের ব্যাখ্যাসহ বিস্তারিত ঘোষণা দেবেন। 

এর আগে, বেলা ১১টায় উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে প্রস্তাবটি অনুমোদনের পর আনুষ্ঠানিকভাবে আদেশ জারি করা হবে।

সরকারি সূত্র জানিয়েছে, একই আদেশের ভিত্তিতে একদিনেই অনুষ্ঠিত হবে জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোট। রাজনৈতিক দলগুলোর পরস্পরবিরোধী অবস্থান দূর করতে প্রস্তাবিত আদেশে আনা হয়েছে একধরনের ভারসাম্য, যাতে বড় দুই রাজনৈতিক দল বিএনপি ও জামায়াতের উদ্বেগও বিবেচনায় রাখা হয়েছে।

রাজনৈতিক অঙ্গনে এখনো চলছে জুলাই সনদ বাস্তবায়ন ঘিরে টানাপোড়েন। বুধবারও বিএনপি ও জামায়াতের নেতারা নিজেদের অবস্থান থেকে সরেননি। জামায়াতসহ আটটি ইসলামি দল সরকারের প্রতি আলটিমেটাম দিয়ে বলেছে, আগামী রবিবারের মধ্যে আদেশ জারি না হলে তারা প্রধান উপদেষ্টার বাসভবনের সামনে অনির্দিষ্টকালের অবস্থান কর্মসূচি শুরু করবে। অপরদিকে বিএনপি ও জামায়াতের নেতাদের বক্তব্যে পালটা হুঁশিয়ারিও রয়েছে।

সরকারের ঘনিষ্ঠ সূত্রগুলো জানিয়েছে, সংকট সমাধানে কয়েকটি বিকল্প প্রস্তাব বিবেচনায় রয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম হলো জুলাই সনদ বাস্তবায়ন সংক্রান্ত গণভোট ও জাতীয় নির্বাচন একসঙ্গে আয়োজন করা। সংসদের উচ্চকক্ষ গঠন করা হবে আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব পদ্ধতিতে। গণভোটে ‘নোট অব ডিসেন্ট’ বা ভিন্নমত প্রকাশের সুযোগ রাখছে না সরকার। পাশাপাশি জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের দেওয়া ২৭০ দিনের বাধ্যবাধকতার সুপারিশও বাতিল করা হতে পারে।

তবে সরকার পরিকল্পনা করেছে, নতুন সংসদে ‘জুলাই জাতীয় সনদ (সংবিধান সংস্কার) বাস্তবায়ন আদেশ, ২০২৫’-এর ভিত্তিতে একটি বিল আকারে প্রস্তাব পেশ করা হবে। গণভোটের ব্যালটে একাধিক প্রশ্নও রাখা হতে পারে বলে ইঙ্গিত পাওয়া গেছে।

জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গত ২৮ অক্টোবর সরকারকে তাদের সুপারিশপত্র দেয়, যেখানে বলা হয়, জুলাই সনদ বাস্তবায়নে সরকারকে একটি নির্বাহী আদেশ জারি করতে হবে। তবে এর আগেই রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে তীব্র মতভেদ দেখা দেয়। ফলে ৩ নভেম্বর ড. ইউনূসের সভাপতিত্বে উপদেষ্টা পরিষদের জরুরি বৈঠক বসে। সেখানে দলগুলোকে আলোচনার মাধ্যমে এক সপ্তাহের মধ্যে চূড়ান্ত মত জানাতে বলা হলেও তাতে কোনো ঐকমত্য হয়নি। বরং দলগুলো মুখোমুখি অবস্থানে চলে যায়।

সূত্র আরও জানিয়েছে, প্রথম দিকে উপদেষ্টা পরিষদও এ বিষয়ে দ্বিধাবিভক্ত ছিল। পরবর্তীকালে  সিদ্ধান্তের দায়িত্ব প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের ওপর ন্যস্ত করা হয়। বিএনপি ও জামায়াতের সঙ্গে অনানুষ্ঠানিক যোগাযোগের দায়িত্ব দেওয়া হয় কয়েকজন উপদেষ্টাকে, যাদের মধ্যে আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল এবং জ্বালানি উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান অন্যতম।

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়, রাষ্ট্র সংস্কারে ৮৪টি প্রস্তাব বাস্তবায়ন করা হবে তিন ধাপে—৯টি নির্বাহী আদেশে, ২৭টি অধ্যাদেশের মাধ্যমে এবং সংবিধান সংশোধনের ৪৮টি প্রস্তাব গণভোটের মাধ্যমে। কমিশনের প্রস্তাব অনুসারে, আগামী সংসদ হবে দুই পর্যায়ের—সংবিধান সংস্কার পরিষদ ও নিয়মিত আইনসভা। সংসদ নির্বাচিত সদস্যদের প্রথম অধিবেশন শুরুর ২৭০ দিনের মধ্যেই সংবিধান সংশোধন সম্পন্ন করার কথা বলা হয়েছে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তা না হলে সনদের প্রস্তাবগুলো স্বয়ংক্রিয়ভাবে সংবিধানে যুক্ত হবে।

জুলাই সনদকে ভিত্তি করেই সরকার আজ ‘জুলাই জাতীয় সনদ (সংবিধান সংস্কার) বাস্তবায়ন আদেশ, ২০২৫’ নামে আদেশ জারি করতে যাচ্ছে। ১৭ অক্টোবর ২৫টি রাজনৈতিক দল এই সনদে স্বাক্ষর করে।

এটি হবে অন্তর্বর্তী সরকারপ্রধান ড. ইউনূসের ষষ্ঠ জাতির উদ্দেশে ভাষণ। দায়িত্ব নেওয়ার পর তিনি প্রথম ভাষণ দেন গত বছরের ২৫ আগস্ট, যেখানে নির্বাচনের সময় নির্ধারণকে রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত হিসেবে অভিহিত করেন। এরপর ১১ সেপ্টেম্বর দ্বিতীয় ভাষণে রাষ্ট্র সংস্কারে ছয়টি কমিশন গঠনের ঘোষণা দেন। চলতি বছরের ২৫ মার্চ তিনি জানান, ডিসেম্বর থেকে ২০২৬ সালের জুনের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। পরবর্তীকালে ৬ জুনের ভাষণে সময়সীমা নির্ধারণ করে বলেন, ডিসেম্বর থেকে এপ্রিলের মধ্যে ভোট হবে। সর্বশেষ ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তিতে দেওয়া ভাষণে তিনি ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে নির্বাচন অনুষ্ঠানের ইঙ্গিত দেন।

সবশেষে, আজকের ঘোষণার মধ্য দিয়েই রাষ্ট্র সংস্কারের নীলনকশা ‘জুলাই সনদ’-এর বাস্তবায়ন কার্যক্রম আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হতে যাচ্ছে।

নতুন প্রজন্মের অনলাইন টিভি

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

‘জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়ন’ আদেশ: দুপুরে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেবেন প্রধান উপদেষ্টা

আপডেট সময় : ১০:৪০:২১ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৩ নভেম্বর ২০২৫

জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়ন’ আদেশ জারি হচ্ছে আজ। বৃহস্পতিবার (১৩ নভেম্বর) দুপুরে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস এই আদেশের ব্যাখ্যাসহ বিস্তারিত ঘোষণা দেবেন। 

এর আগে, বেলা ১১টায় উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে প্রস্তাবটি অনুমোদনের পর আনুষ্ঠানিকভাবে আদেশ জারি করা হবে।

সরকারি সূত্র জানিয়েছে, একই আদেশের ভিত্তিতে একদিনেই অনুষ্ঠিত হবে জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোট। রাজনৈতিক দলগুলোর পরস্পরবিরোধী অবস্থান দূর করতে প্রস্তাবিত আদেশে আনা হয়েছে একধরনের ভারসাম্য, যাতে বড় দুই রাজনৈতিক দল বিএনপি ও জামায়াতের উদ্বেগও বিবেচনায় রাখা হয়েছে।

রাজনৈতিক অঙ্গনে এখনো চলছে জুলাই সনদ বাস্তবায়ন ঘিরে টানাপোড়েন। বুধবারও বিএনপি ও জামায়াতের নেতারা নিজেদের অবস্থান থেকে সরেননি। জামায়াতসহ আটটি ইসলামি দল সরকারের প্রতি আলটিমেটাম দিয়ে বলেছে, আগামী রবিবারের মধ্যে আদেশ জারি না হলে তারা প্রধান উপদেষ্টার বাসভবনের সামনে অনির্দিষ্টকালের অবস্থান কর্মসূচি শুরু করবে। অপরদিকে বিএনপি ও জামায়াতের নেতাদের বক্তব্যে পালটা হুঁশিয়ারিও রয়েছে।

সরকারের ঘনিষ্ঠ সূত্রগুলো জানিয়েছে, সংকট সমাধানে কয়েকটি বিকল্প প্রস্তাব বিবেচনায় রয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম হলো জুলাই সনদ বাস্তবায়ন সংক্রান্ত গণভোট ও জাতীয় নির্বাচন একসঙ্গে আয়োজন করা। সংসদের উচ্চকক্ষ গঠন করা হবে আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব পদ্ধতিতে। গণভোটে ‘নোট অব ডিসেন্ট’ বা ভিন্নমত প্রকাশের সুযোগ রাখছে না সরকার। পাশাপাশি জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের দেওয়া ২৭০ দিনের বাধ্যবাধকতার সুপারিশও বাতিল করা হতে পারে।

তবে সরকার পরিকল্পনা করেছে, নতুন সংসদে ‘জুলাই জাতীয় সনদ (সংবিধান সংস্কার) বাস্তবায়ন আদেশ, ২০২৫’-এর ভিত্তিতে একটি বিল আকারে প্রস্তাব পেশ করা হবে। গণভোটের ব্যালটে একাধিক প্রশ্নও রাখা হতে পারে বলে ইঙ্গিত পাওয়া গেছে।

জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গত ২৮ অক্টোবর সরকারকে তাদের সুপারিশপত্র দেয়, যেখানে বলা হয়, জুলাই সনদ বাস্তবায়নে সরকারকে একটি নির্বাহী আদেশ জারি করতে হবে। তবে এর আগেই রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে তীব্র মতভেদ দেখা দেয়। ফলে ৩ নভেম্বর ড. ইউনূসের সভাপতিত্বে উপদেষ্টা পরিষদের জরুরি বৈঠক বসে। সেখানে দলগুলোকে আলোচনার মাধ্যমে এক সপ্তাহের মধ্যে চূড়ান্ত মত জানাতে বলা হলেও তাতে কোনো ঐকমত্য হয়নি। বরং দলগুলো মুখোমুখি অবস্থানে চলে যায়।

সূত্র আরও জানিয়েছে, প্রথম দিকে উপদেষ্টা পরিষদও এ বিষয়ে দ্বিধাবিভক্ত ছিল। পরবর্তীকালে  সিদ্ধান্তের দায়িত্ব প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের ওপর ন্যস্ত করা হয়। বিএনপি ও জামায়াতের সঙ্গে অনানুষ্ঠানিক যোগাযোগের দায়িত্ব দেওয়া হয় কয়েকজন উপদেষ্টাকে, যাদের মধ্যে আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল এবং জ্বালানি উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান অন্যতম।

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়, রাষ্ট্র সংস্কারে ৮৪টি প্রস্তাব বাস্তবায়ন করা হবে তিন ধাপে—৯টি নির্বাহী আদেশে, ২৭টি অধ্যাদেশের মাধ্যমে এবং সংবিধান সংশোধনের ৪৮টি প্রস্তাব গণভোটের মাধ্যমে। কমিশনের প্রস্তাব অনুসারে, আগামী সংসদ হবে দুই পর্যায়ের—সংবিধান সংস্কার পরিষদ ও নিয়মিত আইনসভা। সংসদ নির্বাচিত সদস্যদের প্রথম অধিবেশন শুরুর ২৭০ দিনের মধ্যেই সংবিধান সংশোধন সম্পন্ন করার কথা বলা হয়েছে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তা না হলে সনদের প্রস্তাবগুলো স্বয়ংক্রিয়ভাবে সংবিধানে যুক্ত হবে।

জুলাই সনদকে ভিত্তি করেই সরকার আজ ‘জুলাই জাতীয় সনদ (সংবিধান সংস্কার) বাস্তবায়ন আদেশ, ২০২৫’ নামে আদেশ জারি করতে যাচ্ছে। ১৭ অক্টোবর ২৫টি রাজনৈতিক দল এই সনদে স্বাক্ষর করে।

এটি হবে অন্তর্বর্তী সরকারপ্রধান ড. ইউনূসের ষষ্ঠ জাতির উদ্দেশে ভাষণ। দায়িত্ব নেওয়ার পর তিনি প্রথম ভাষণ দেন গত বছরের ২৫ আগস্ট, যেখানে নির্বাচনের সময় নির্ধারণকে রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত হিসেবে অভিহিত করেন। এরপর ১১ সেপ্টেম্বর দ্বিতীয় ভাষণে রাষ্ট্র সংস্কারে ছয়টি কমিশন গঠনের ঘোষণা দেন। চলতি বছরের ২৫ মার্চ তিনি জানান, ডিসেম্বর থেকে ২০২৬ সালের জুনের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। পরবর্তীকালে ৬ জুনের ভাষণে সময়সীমা নির্ধারণ করে বলেন, ডিসেম্বর থেকে এপ্রিলের মধ্যে ভোট হবে। সর্বশেষ ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তিতে দেওয়া ভাষণে তিনি ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে নির্বাচন অনুষ্ঠানের ইঙ্গিত দেন।

সবশেষে, আজকের ঘোষণার মধ্য দিয়েই রাষ্ট্র সংস্কারের নীলনকশা ‘জুলাই সনদ’-এর বাস্তবায়ন কার্যক্রম আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হতে যাচ্ছে।