দৌলতপুরে ৩ কোটি ৫২ লাখ টাকার চায়না ও কারেন্ট জাল জব্দ
দৌলতপুরে ৩ কোটি ৫২ লাখ টাকার চায়না ও কারেন্ট জাল জব্দ

- আপডেট সময় : ১১:৫২:০৮ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২২ জুলাই ২০২৫ ৫ বার পড়া হয়েছে
নিজস্ব প্রতিবেদনঃ বাংলাদেশের নদ-নদীতে জীববৈচিত্র্য রক্ষা এবং মাছের প্রজনন ব্যবস্থাকে টিকিয়ে রাখতে সরকার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নানাবিধ অভিযান পরিচালনা করছে। এরই অংশ হিসেবে কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলায় যৌথ অভিযানে জব্দ করা হয়েছে বিপুল পরিমাণ অবৈধ চায়না দুয়ারি ও কারেন্ট জাল। উদ্ধার করা হয়েছে হাজার হাজার মাছের পোনাও, যা পরবর্তীতে নদীতে অবমুক্ত করা হয়।
কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার চল্লিশপাড়া এলাকায় ২১ জুলাই (রোববার) বিকেলে এক সফল যৌথ অভিযান পরিচালনা করে ৩ কোটি ৫২ লাখ ৫০ হাজার টাকা মূল্যের অবৈধ মৎস্য জাল জব্দ করেছে কুষ্টিয়া ৪৭ বিজিবি ব্যাটেলিয়ান। এ অভিযান পরিচালিত হয় বিজিবি, উপজেলা প্রশাসন এবং মৎস্য দপ্তরের সম্মিলিত প্রচেষ্টায়।
অভিযান পরিচালনায় নেতৃত্ব দেন দৌলতপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ আব্দুল হাই সিদ্দিকী। তত্ত্বাবধান করেন কুষ্টিয়া (৪৭ বিজিবি) ব্যাটেলিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোঃ মাহবুব মুর্শেদ রাহমান। অভিযানে আরও উপস্থিত ছিলেন উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা হোসেন আহমেদ স্বপন।
জব্দ হওয়া মালামাল
অভিযানে জব্দ করা হয় প্রায়: ২০,০০০ কেজি চায়না দুয়ারি জাল ৩,৫০০ কেজি কারেন্ট জাল
উল্লেখযোগ্যভাবে, এই জালগুলো মাছের পোনা এবং অন্যান্য জলজ প্রাণীর জন্য মারাত্মক হুমকি সৃষ্টি করে। অবৈধভাবে ব্যবহৃত এই জালগুলো পরিবেশগত ভারসাম্য নষ্ট করে এবং নদীর জীববৈচিত্র্যকে ধ্বংস করে দেয়।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বলেন –
“এই অবৈধ চায়না ও কারেন্ট জাল নিষিদ্ধ। এগুলো ব্যবহারে পোনা মাছসহ নানা প্রাণীর অস্তিত্ব হুমকির মুখে পড়ে। জনস্বার্থে আমাদের অভিযান অব্যাহত থাকবে।”
পোনা মাছ উদ্ধার ও নদীতে অবমুক্ত
অভিযানকালে পাওয়া যায় বিপুল পরিমাণ মাছের পোনা। প্রশাসন সেগুলো তাৎক্ষণিকভাবে নদীতে অবমুক্ত করে দেয়। এটি মাছের প্রজনন ও পরিবেশ সংরক্ষণের ক্ষেত্রে এক প্রশংসনীয় উদ্যোগ।
মৎস্য কর্মকর্তা হোসেন আহমেদ স্বপন জানান,
“যেসব পোনা পাওয়া গেছে, তা নদীতে অবমুক্ত করায় নদীর স্বাভাবিক বাস্তুতন্ত্র রক্ষায় এটি সহায়ক হবে।”
ধ্বংস করা হয় অবৈধ জাল
অভিযান শেষে স্থানীয় জনসমক্ষে আগুনে পুড়িয়ে ধ্বংস করা হয় জব্দকৃত অবৈধ জালগুলো। এতে এলাকাবাসীর মধ্যে ব্যাপক সচেতনতা তৈরি হয়েছে। কেউ কেউ বলেন, এই অভিযানের মাধ্যমে মৎস্যসম্পদের রক্ষায় সরকারের কঠোর অবস্থান আরও স্পষ্ট হয়েছে।
বিজিবি ও প্রশাসনের সাফল্য
এই অভিযান প্রমাণ করে, সরকার চায়না জাল এবং অন্যান্য অবৈধ উপকরণের বিরুদ্ধে শূন্য সহনশীলতা নীতি অনুসরণ করছে। বিজিবির সদস্যরা সুনির্দিষ্ট গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান চালায়। অভিযানস্থলে ছিল কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা এবং যৌথ টহল।
বিজিবির পক্ষ থেকে জানানো হয়,
“জনস্বার্থে এমন অভিযান ভবিষ্যতেও অব্যাহত থাকবে। অবৈধ চায়না ও কারেন্ট জাল নির্মূলে সবার সহযোগিতা প্রয়োজন।”
নদীর প্রাণ ফিরিয়ে আনতে অভিযান
চায়না দুয়ারি ও কারেন্ট জালের ব্যবহার মৎস্য চাষ, প্রাকৃতিক মাছের জন্ম ও নদীর পরিবেশে মারাত্মক প্রভাব ফেলে। বিশেষ করে, এই জাল পোনা মাছ ও অন্যান্য জলজ প্রাণীকে আটকে ফেলে, ফলে প্রজনন চক্রে বিঘ্ন ঘটে। এই কারণে সরকার ও মৎস্য বিভাগ এই জাল সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করেছে।
স্থানীয় জেলে রফিকুল ইসলাম জানান,
“এমন অভিযান আমাদের জন্য ভালো। কয়েকজন অসাধু জেলে নদীর সব পোনা ধরে ফেলে। এতে ভবিষ্যতে মাছ পাওয়া কঠিন হয়ে পড়ে।”
উপসংহার
এটা নিঃসন্দেহে একটি সময়োপযোগী ও সাহসী পদক্ষেপ। জনস্বার্থে চায়না ও কারেন্ট জালের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ শুধুমাত্র মাছের প্রজননই নয়, বরং প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষা এবং দেশের খাদ্য নিরাপত্তার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে বিজিবি ও প্রশাসনের এই যৌথ অভিযান আগামী দিনগুলোতে দেশের অন্যান্য অঞ্চলেও অনুপ্রেরণা জোগাবে।
এটাই ছিল আজকের অন্যতম প্রধান প্রতিবেদন। নদীর প্রাণ ও প্রাকৃতিক সম্পদ রক্ষায় প্রশাসনের এমন উদ্যোগ দেশব্যাপী আরও বিস্তৃত হোক, এটাই আমাদের কামনা।