নির্বাচনের পর পদত্যাগ করতে চান রাষ্ট্রপতি : রয়টার্স
- আপডেট সময় : ০৯:৪৩:২৭ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১১ ডিসেম্বর ২০২৫
- / 4
আগামী ফেব্রুয়ারির জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পরই মেয়াদের মাঝপথে পদ ছাড়ার পরিকল্পনা করছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। বৃহস্পতিবার ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে দেওয়া এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে এই তথ্য জানিয়েছেন তিনি।
রয়টার্সকে রাষ্ট্রপতি বলেছেন, নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারে থেকে নিজেকে ‘অপমানিত’ বোধ করছেন তিনি। রয়টার্স বলছে, মো. সাহাবুদ্দিন রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে দেশের সশস্ত্র বাহিনীর সর্বাধিনায়ক হলেও এই পদটি মূলত আনুষ্ঠানিক। ১৭ কোটি ৩০ লাখ মানুষের এই মুসলিমপ্রধান দেশের নির্বাহী ক্ষমতা প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রিসভার হাতে।
গত বছরের আগস্টে ছাত্রনেতৃত্বাধীন আন্দোলনের মুখে দীর্ঘদিনের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে পালিয়ে যেতে বাধ্য হন। শেখ হাসিনার বিদায়ের পর রাষ্ট্রপতির ভূমিকা আরও গুরুত্ব পায়। সংসদ ভেঙে যাওয়ার পর সংবিধান অনুযায়ী তিনি দেশের সর্বশেষ সাংবিধানিক কর্তৃপক্ষ হন।
২০২৩ সালে শেখ হাসিনার দল আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী হিসেবে ৭৫ বছর বয়সী মো. সাহাবুদ্দিন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় পাঁচ বছর মেয়াদে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হয়েছিলেন। দলটিকে আগামী ১২ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
ঢাকায় সরকারি বাসভবন থেকে হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে রয়টার্সকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন বলেছেন, ‘‘আমি চলে যেতে আগ্রহী। আমি চলে যেতে চাই।’’ দায়িত্ব নেওয়ার পর এটিই প্রথম কোনও গণমাধ্যম সাক্ষাৎকার দিলেন বলে রয়টার্সকে জানিয়েছেন তিনি।
‘‘নির্বাচন না হওয়া পর্যন্ত আমার দায়িত্ব পালন করতে হবে। সাংবিধানিকভাবে রাষ্ট্রপতি পদের কারণে আমি আমার অবস্থান অক্ষুণ্ণ রাখছি।’’
তিনি বলেন, প্রায় সাত মাস ধরে প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেননি। তার প্রেস বিভাগকে প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে এবং সেপ্টেম্বরে সারা বিশ্বের বাংলাদেশি দূতাবাসগুলো থেকে রাষ্ট্রপতির প্রতিকৃতি সরিয়ে ফেলা হয়েছে।
রয়টার্সকে সাহাবুদ্দিন বলেন, ‘‘সব কনস্যুলেট, দূতাবাস ও হাইকমিশনে রাষ্ট্রপতির প্রতিকৃতি থাকত। আর এগুলো এক রাতে হঠাৎ সরিয়ে ফেলা হয়েছে। এতে ভুল বার্তা যায় যে, হয়তো রাষ্ট্রপতিকে সরিয়ে দেওয়া হবে। আমি অত্যন্ত অপমানিত বোধ করেছি।’’
তিনি বলেন, প্রতিকৃতি অপসারণ নিয়ে তিনি ড. ইউনুসকে চিঠি লিখেছিলেন। কিন্তু কোনও পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনুসের প্রেস-উপদেষ্টারা এই বিষয়ে মন্তব্যের অনুরোধে তাৎক্ষণিকভাবে সাড়া দেননি বলে জানিয়েছে রয়টার্স।
• সেনাপ্রধানের সঙ্গে রাষ্ট্রপতির যোগাযোগ
রাষ্ট্রপতি বলেছেন, তিনি সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন। ২০২৪ সালের আগস্টে হাসিনাবিরোধী প্রাণঘাতী বিক্ষোভ চলাকালে সেনা সদস্যরা হস্তক্ষেপ না করায় প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতায় টিকে থাকা অসম্ভব হয়ে পড়ে। সাহাবুদ্দিন বলেন, জেনারেল জামান স্পষ্টভাবে জানিয়েছেন, তার ক্ষমতা দখলের কোনও ইচ্ছা নেই।
বাংলাদেশে সামরিক শাসনের ইতিহাস থাকলেও জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান জানিয়েছেন, তিনি গণতন্ত্রের পুনঃপ্রতিষ্ঠা চান। রয়টার্সকে রাষ্ট্রপতি বলেন, শুরুতে কিছু আন্দোলনকারী ছাত্র তার পদত্যাগ দাবি করলেও গত কয়েক মাসে কোনও রাজনৈতিক দল তার পদত্যাগ দাবি করেনি।
জনমত জরিপে দেখা যাচ্ছে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) ও জামায়াতে ইসলামী পরবর্তী সরকার গঠনে এগিয়ে রয়েছে।এই দুই দল ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকা জোটের অংশ ছিল।
২০ বছর ক্ষমতায় থাকা শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পর তিনি রাষ্ট্রপতির সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেছিলেন কি না—এমন প্রশ্নের জবাব দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন সাহাবুদ্দিন। তিনি বলেন, রাষ্ট্রপতি হওয়ার পর থেকেই তিনি স্বাধীনভাবে দায়িত্ব পালন করছেন, কোনও রাজনৈতিক দলের সঙ্গে তার সম্পৃক্ততা নেই।
সূত্র: রয়টার্স।






















