মার্কিন শুল্কঝড়
প্রতিযোগীরা সংকটে, সুবিধায় বাংলাদেশ

- আপডেট সময় : ১১:৩৮:২৯ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১১ আগস্ট ২০২৫ ১ বার পড়া হয়েছে
নিজস্ব প্রতিবেদনঃ প্রতিযোগীরা সংকটে, সুবিধায় বাংলাদেশ,মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কঝড়ে টালমাটাল বাংলাদেশের প্রতিযোগী দেশ চীন, ভারত ও ভিয়েতনাম। এসব দেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কহার তুলনামূলকভাবে বেশি হওয়ায় সুবিধাজনক অবস্থায় রয়েছে বাংলাদেশ, এতে দেশগুলো প্রতিযোগিতা সক্ষমতায় পিছিয়ে পড়ার ঝুঁকিতে রয়েছে, আর এর সুফল পাওয়ায় সুযোগ তৈরি হয়েছে বাংলাদেশের।
এমনকি ওই সব দেশের বিনিয়োগকারীরাও বাংলাদেশে তাঁদের কারখানা স্থাপন করতে পারেন। বাংলাদেশের দরকার সক্ষমতা বাড়ানো।
খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের মতে, ‘বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের অগ্রাধিকার বাজার সুবিধা (জিএসপি) হারালেও আমাদের পোশাক খাতের জন্য শুল্কহার আগে থেকেই স্থিতিশীল। যদি আমরা দ্রুত উৎপাদন সক্ষমতা ও মান উন্নত করতে পারি, মার্কিন ক্রেতারা চীন, ভারত ও ভিয়েতনামের পরিবর্তে বাংলাদেশকে বেছে নিতে পারেন।
উদ্যোক্তারা আরো বলেন, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতের সবচেয়ে বড় বাজার। এ ছাড়া চাহিদা রয়েছে হোম টেক্সটাইল। তবে এই সুযোগ কাজে লাগাতে হলে কাঁচামালের উৎস, পণ্যে বৈচিত্র্যকরণ, উৎপাদন মান নিয়ন্ত্রণ এবং লজিস্টিক খরচ কমানো জরুরি। এ ছাড়া দ্রুত সরবরাহ ক্ষমতা বাড়ানোর মাধ্যমে ক্রেতাদের আস্থা বাড়াতে হবে।
এদিকে বিশ্ব গণমাধ্যমে এখন চুলচেরা বিশ্লেষণ চলছে এতে ভারতের কী ক্ষতি হবে। তাতে দেখা যাচ্ছে, ভারতের পণ্যের ওপর ৫০ শতাংশ শুল্কের ফলে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে ভারতীয় পোশাকের দাম বাড়বে। ফলে ওই দেশের পণ্য রপ্তানি কমে যাবে। এরই মধ্যে দেশটির পোশাকের কিছু অর্ডার স্থগিত ও বাতিলও করেছে মার্কিন ক্রেতাপ্রতিষ্ঠান। অন্যদিকে বাংলাদেশের শুল্কহার ভারতের চেয়ে উল্লেখযোগ্য হারে কম হওয়ায় মার্কিন ক্রেতারা বাংলাদেশ থেকে আরো বেশি পোশাক আমদানির দিকে ঝুঁকতে পারেন।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএমএ) সাবেক পরিচালক রাশেদুল হাসান রিন্টু কালের কণ্ঠকে বলেন, এইচ অ্যান্ড অ্যাম, ওয়ালমার্টের মতো অনেক মার্কিন ব্র্যান্ডের বাংলাদেশের ওপর নির্ভরতা নতুন কার্যাদেশ পাওয়ার সম্ভাবনা বাড়াবে। তাই এখনই কৌশলগত পরিকল্পনার মাধ্যমে মার্কিন বাজারে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি বৃদ্ধির পদক্ষেপ নেওয়া দরকার। তিনি বলেন, বাংলাদেশ বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম পোশাক রপ্তানিকারক দেশ। দক্ষ শ্রমশক্তি ও প্রস্তুত অবকাঠামো এ ক্ষেত্রে বড় সুবিধা। মান ও সময়মতো ডেলিভারি নিশ্চিত করতে পারলে মার্কিন বাজারে বাংলাদেশের স্থায়ী অবস্থান তৈরি হতে পারে।
মার্কিন বর্তমান শুল্কনীতি বাংলাদেশের জন্য সোনালি সময় উল্লেখ করে বিজিএমইএর পরিচালক শাহ মোহাম্মদ রাঈদ কালের কণ্ঠকে বলেন, সস্তা থেকে উচ্চমূল্যের পোশাকের রপ্তানি বাড়ার সুযোগ তৈরি হয়েছে। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ উচ্চমূল্যের পোশাকের কেন্দ্রবিন্দু (হাব) হতে পারে। ক্রেতাদের কাছ থেকে বেশ সারা পাওয়া যাচ্ছে। বাড়ছে উচ্চমূল্যের পোশাকের কদর।
বাংলাদেশের সামনে বড় সুযোগ : ভারতের চামড়াজাত পণ্যের রপ্তানি মার্কিন বাজারে শুল্কের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হলে বাংলাদেশ এই শূন্যস্থান পূরণ করতে পারে। বাংলাদেশ এরই মধ্যে জার্মানি, জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার মতো দেশে চামড়াজাত পণ্য রপ্তানি করে। যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে প্রবেশের জন্য সরকারি ও বেসরকারি খাতের সমন্বিত প্রচেষ্টা এই খাতের রপ্তানি বাড়াতে পারে।
এ ছাড়া বাংলাদেশের কৃষিপণ্য, যেমন হিমায়িত মাছ, চিংড়ি, শাক-সবজি, ফলমূল, মধ্যপ্রাচ্য এবং ইউরোপে রপ্তানি হচ্ছে। ভারতের কৃষিপণ্যের ওপর উচ্চ শুল্কের ফলে যুক্তরাষ্ট্রে এই পণ্যের চাহিদা পূরণে বাংলাদেশ সুযোগ পেতে পারে। তবে এই খাতে রপ্তানি বাড়াতে গুণগত মান এবং আন্তর্জাতিক মানের সার্টিফিকেশন নিশ্চিত করতে হবে।
ভারতের আইটি সেবা রপ্তানির ওপর উচ্চ শুল্কের প্রভাব পড়লে বাংলাদেশ এই খাতে যুক্তরাষ্ট্রের কম্পানিগুলোর কাছে আকর্ষণীয় বিকল্প হতে পারে। বাংলাদেশের তরুণ জনশক্তি এবং তুলনামূলক কম শ্রমমূল্য এই খাতে প্রতিযোগিতামূলক সুবিধা দেবে। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কনীতির কারণে বিদেশি কম্পানিগুলো যদি ভারত থেকে উৎপাদন সরিয়ে নিতে চায়, তবে দক্ষিণ এশিয়ায় বিকল্প হিসেবে বাংলাদেশকেই গুরুত্ব দেওয়া হতে পারে। আবার চীন থেকেও ধীরে ধীরে উৎপাদন সরিয়ে আনছে অনেক কম্পানি। ফলে ভারত-চীন উভয়ের বাইরে তৃতীয় দেশ হিসেবে বাংলাদেশ এগিয়ে আসতে পারে।
সম্ভাবনার সঙ্গে সঙ্গে চ্যালেঞ্জও আছে উল্লেখ করে বাণিজ্য বিশ্লেষকরা বলেন, শ্রমিক অধিকার নিশ্চিত করা, এলডিসি সুবিধা শেষ হওয়ার পর কর সুবিধার সম্ভাব্য ক্ষতি থেকে উত্তোরণে উপায় খুঁজে বের করা; বন্দরের অবকাঠামো উন্নয়ন, কাঁচামালের দাম কাঁচামালনির্ভরতা ও মূল্য ওঠানামা বড় ধরনের বাধা হতে পারে। এ জন্য তারা মার্কিন বাজারে প্রচার-প্রচারণা বাড়ানো, লিড টাইম কমিয়ে আনতে অবকাঠামোর উন্নয়ন এবং কারখানায় কর্ম পরিবেশের উন্নয়নে গুরুত্ব দিতে হবে বলে পরামর্শ দেন তাঁরা।
তৈরি পোশাক খাতের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএ সহসভাপতি মো. শিহাব-উদ-দোজা চৌধুরী কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘চায়না ও ভারতের কার্যাদেশের বড় অংশ স্থানান্তরিত হবে বাংলাদেশে। এ জন্য ক্রেতার বিনামূল্যে কাঁচামাল (এফওসি) আমদানিতে তিন বাধা তুলে দিতে হবে।
তিনি বলেন, বর্তমানে ৭০ শতাংশ মৌলিক পোশাক রপ্তানি করে বাংলাদেশ। এফওসি করা গেলে এমএমএফ পোশাকের রপ্তানি বাড়বে। বর্তমানে এই কাপড়ের তৈরি পোশাকের (উচ্চমূল্যের পোশাক) বৈশ্বিক বাজার ৭০ শতাংশ। বাংলাদেশের হিস্যা এখানে মাত্র ২৫ শতাংশ।