রাজিবপুরে বিশ্ব জনসংখ্যা দিবস পালিত
রাজিবপুরে বিশ্ব জনসংখ্যা দিবস পালিত

- আপডেট সময় : ১২:৫০:০৫ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৪ জুলাই ২০২৫ ৮ বার পড়া হয়েছে
জেলা প্রতিনিধি: “ন্যায্য ও সম্ভাবনাময় বিশ্ব পছন্দের পরিবার গঠনে প্রয়োজন তারুণ্যের ক্ষমতায়ন”—এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে রাজিবপুর উপজেলায় পালিত হলো ২০২৫ সালের বিশ্ব জনসংখ্যা দিবস। ১৪ জুলাই (রবিবার) রাজিবপুর উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয়ের আয়োজনে এক আলোচনা সভার মাধ্যমে দিবসটি যথাযোগ্য মর্যাদায় উদযাপন করা হয়।
উক্ত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফজলে এলাহী। তিনি তাঁর বক্তব্যে বলেন,
“তরুণ সমাজই একটি দেশের চালিকাশক্তি। পরিবার পরিকল্পনার বিষয়ে তাদের সচেতন ও ক্ষমতাবান করে তুলতে পারলে একটি সুস্থ, শিক্ষিত এবং সুষ্ঠু সমাজ গড়ে তোলা সম্ভব। আমরা এখন এমন একটি সময় পার করছি, যখন জনসংখ্যা কেবল সংখ্যা নয়—বরং এটি একটি সম্পদ, যদি তা সঠিকভাবে ব্যবস্থাপনা করা যায়।”
আলোচনায় গুরুত্ব পেল তারুণ্যের ভূমিকা
বিশেষ অতিথি হিসেবে আলোচনা সভায় উপস্থিত ছিলেন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. সারোয়ার জাহান এবং রাজিবপুর সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মিরন মো. ইলিয়াস।
তারা উভয়েই বলেন, পরিবার পরিকল্পনার সফল বাস্তবায়ন কেবল সরকারের একক প্রচেষ্টায় সম্ভব নয়। এই কাজে দরকার সর্বস্তরের জনগণের সচেতনতা এবং বিশেষ করে তরুণদের অংশগ্রহণ। তারা আরও বলেন,
“বর্তমান তরুণ প্রজন্ম যদি স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা ইস্যুতে সচেতন হয়, তাহলে শুধু পরিবার নয়, গোটা জাতি উপকৃত হবে। শিক্ষা, পুষ্টি, কর্মসংস্থান ও অর্থনীতির প্রতিটি ক্ষেত্রে ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে।”
সভাপতিত্ব করেন শাহীনূর ইসলাম
আলোচনা সভার সভাপতিত্ব করেন উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শাহীনূর ইসলাম।
তিনি তার বক্তব্যে বলেন,
“বিশ্ব জনসংখ্যা দিবসের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে—মানুষকে সচেতন করা এবং পারিবারিক ও প্রজনন স্বাস্থ্য বিষয়ে আলোকপাত করা। আমরা রাজিবপুরে প্রতিনিয়ত পরিবার পরিকল্পনা, গর্ভনিরোধক ব্যবহারে উদ্বুদ্ধকরণ, সচেতনতামূলক প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছি।”
বিশ্ব জনসংখ্যা দিবসের পটভূমি
প্রসঙ্গত, বিশ্ব জনসংখ্যা দিবস প্রথম উদযাপিত হয় ১৯৮৯ সালে জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে, যখন বিশ্বের জনসংখ্যা ৫০০ কোটিতে পৌঁছায়। এই দিবসটি উদযাপনের মূল উদ্দেশ্য হলো—জনসংখ্যা বৃদ্ধি, স্বাস্থ্যসেবা, নারী-শিশু অধিকার এবং উন্নয়নসংক্রান্ত বিষয়গুলোকে সামনে আনা।
২০২৫ সালে দিবসটির প্রতিপাদ্য ছিল—”ন্যায্য ও সম্ভাবনাময় বিশ্ব পছন্দের পরিবার গঠনে প্রয়োজন তারুণ্যের ক্ষমতায়ন”, যা সরাসরি টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (SDG)-এর সঙ্গে সম্পৃক্ত।
স্থানীয় প্রেক্ষাপটে দিবসের তাৎপর্য
রাজিবপুরের মতো সীমান্তবর্তী, প্রত্যন্ত অঞ্চলে পরিবার পরিকল্পনার গুরুত্ব আরও বেশি। এখানকার আর্থ-সামাজিক বাস্তবতায় জন্মহার নিয়ন্ত্রণ, মা ও শিশু স্বাস্থ্য উন্নয়ন, বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ এবং নারীর ক্ষমতায়ন এখন সময়ের দাবি।
ইউএনও ফজলে এলাহী বলেন,
“আমাদের তরুণরা এখন অনেক সচেতন। শুধু প্রয়োজন তাদেরকে সঠিক তথ্য দেওয়া, সঠিক দিকনির্দেশনা দেওয়া। পরিবার পরিকল্পনা শুধু জন্মনিয়ন্ত্রণ নয়—এটি একটি পরিপূর্ণ জীবনব্যবস্থার অংশ।”
পরিকল্পনা ও ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনা
সভায় আগামী বছরগুলোতে রাজিবপুর উপজেলায় পরিবার পরিকল্পনা কার্যক্রম আরও বিস্তৃত করার ঘোষণা দেওয়া হয়। যেমন:
স্কুল ও কলেজ পর্যায়ে সচেতনতামূলক কর্মসূচি
ইউনিয়নভিত্তিক ক্যাম্পেইন
মা ও শিশু স্বাস্থ্য সুরক্ষায় বাড়ি বাড়ি সেবা
পরিবার পরিকল্পনার নতুন প্রযুক্তি ও পদ্ধতি নিয়ে প্রশিক্ষণ
শাহীনূর ইসলাম জানান, “আমরা চাই প্রতিটি দম্পতি যেন সচেতনভাবে তাদের পরিবার গঠন করতে পারে। এজন্য আমাদের মাঠ পর্যায়ের স্বাস্থ্যকর্মীরা নিরলসভাবে কাজ করছেন।”
উপসংহার
রাজিবপুরে বিশ্ব জনসংখ্যা দিবস উপলক্ষে আয়োজিত এই আলোচনা সভাটি ছিল একটি সময়োপযোগী উদ্যোগ। তরুণদের ক্ষমতায়ন এবং পরিবার পরিকল্পনায় তাদের সম্পৃক্ততার গুরুত্ব তুলে ধরে এই আয়োজন স্থানীয় জনগণকে উৎসাহিত করেছে। জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ নয়, বরং জনসংখ্যার উন্নয়নই হোক আগামী দিনের মূলমন্ত্র—এটাই ছিল দিবসটির বার্তা।