‘অল দ্য প্রাইম মিনিস্টারস মেন’ তথ্যচিত্রটি অনলাইন প্ল্যাটফর্ম থেকে সরানোর নির্দেশ

নিজস্ব প্রতিবেদক: কাতারভিত্তিক টেলিভিশন চ্যানেল আল-জাজিরায় প্রচারিত ‘অল দ্য প্রাইম মিনিস্টারস মেন’ তথ্যচিত্রটি অনলাইন প্ল্যাটফর্ম থেকে সরিয়ে ফেলার নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। বিটিআরসিকে এ নির্দেশ বাস্তবায়ন করতে বলেছেন আদালত। তবে বাংলাদেশে আল জাজিরার সম্প্রচার বন্ধের বিষয়ে কোনও আদেশ দেননি হাইকোর্ট।

বুধবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি মো. কামরুল হোসেন মোল্লার সমন্বয়ে গঠিত ভার্চুয়াল হাইকোর্ট বেঞ্চ উভয়পক্ষের শুনানি শেষে রিট আবেদনটির চূড়ান্ত নিষ্পত্তি করে এ আদেশ দেন।

আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল এএম আমিন উদ্দিন। অন্যদিকে রিটের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন রিটকারী ব্যারিস্টার এনামুল কবীর ইমন। বিটিআরসির পক্ষে শুনানিতে ছিলেন খন্দকার রেজা-ই রাকিব।

এর আগে, গত ১৫ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্টের নির্দেশে নিয়োগপ্রাপ্ত ছয় অ্যামিক্যাস কিউরি (আদালতের বন্ধু) এ বিষয়ে তাদের মতামত হাইকোর্টের কাছে তুলে ধরেন।

এসময় জ্যেষ্ঠ আইনজীবী কামাল উল আলম তার মতামত তুলে ধরে জানান, আল–জাজিরার প্রচারিত তথ্যচিত্র ‘অল দ্য প্রাইম মিনিস্টারস মেন’-এ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নাম বলা হচ্ছে। অভিযোগ করা হচ্ছে। কিন্তু প্রতিবেদনটিতে তার (প্রধানমন্ত্রী) সঙ্গে কোনও যোগসূত্র দেখানো হয়নি।

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে জড়িয়ে আল–জাজিরার প্রচারিত তথ্যচিত্র ‘অল দ্য প্রাইম মিনিস্টারস মেন’ প্রসঙ্গে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী কামাল উল আলম হাইকোর্টকে বলেন, ঘণ্টাব্যাপী একটি প্রতিবেদন সম্প্রচার করা হলো। সেখানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নাম বলা হচ্ছে। অভিযোগ করা হচ্ছে। কিন্তু প্রতিবেদনটিতে তার (প্রধানমন্ত্রী) সঙ্গে কোনও যোগসূত্র দেখানো হয়নি। গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত রাষ্ট্রের প্রধান ব্যক্তিকে বিতর্কিত করা হলে রাষ্ট্রকেই বিতর্কিত করা হয়।

তিনি আরও বলেন, এখানে রিট আবেদনকারীর সংক্ষুব্ধ হওয়ার যৌক্তিকতা নেই। রিটটি গ্রহণযোগ্য নয়। তার পাশাপাশি অ্যামিকাস কিউরি হিসেবে দায়িত্ব পাওয়া জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এজে মোহাম্মদ আলী ও ফিদা এম কামালও রিট গ্রহণযোগ্য নয় বলে মত দেন। তবে অ্যামিকাস কিউরি হিসেবে আইনজীবী আবদুল মতিন খসরু রিট আবেদনটির গ্রহণযোগ্যতার বিষয়ে মতামত দেন।

অন্যদিকে আইনজীবী প্রবীর নিয়োগী ক্ষেত্র বিশেষে রিটটি গ্রহণযোগ্য নয় বলে মত দেন। আর আইনজীবী ড. শাহদীন মালিক রিট আবেদনটির গ্রহণযোগ্যতার বিষয় আদালতের ওপর ছেড়ে দিয়ে বলেন, আদালত চাইলে রিটটি শুনানির জন্য গ্রহণ করতে পারেন।

অ্যামিকাস কিউরি হলেন আদালতের আইনি সহায়তাকারী। রিট আবেদনকারীর সংক্ষুব্ধ হওয়ার দিক, রিটের প্রার্থনা অনুসারে এই আদালত থেকে কোনও আদেশ দেওয়া হলে বিদেশি কোনও টিভি চ্যানেলের ক্ষেত্রে তা কার্যকর করা যাবে কিনা, কোনও আইনি নোটিশ ছাড়া রিট (ম্যান্ডামাস) চলে কিনা, রিটের প্রার্থনা অনুসারে এই আদালত থেকে আল-জাজিরার তথ্যচিত্রটি সব অনলাইন মাধ্যম থেকে বন্ধ করার কোনও নির্দেশনা দেওয়ার প্রয়োজন আছে কিনা, ১ ফেব্রুয়ারি তথ্যচিত্রটি প্রকাশের পর এত দেরিতে রিট করার প্রেক্ষাপটে কোনও নির্দেশ দেওয়ার প্রয়োজন আছে কি না—এসব বিষয়ে অ্যামিকাস কিউরিদের মতামত দিতে বলা হয়। এরপর ওই নিয়োগ কার্যক্রমের ধারাবাহিকতায় সুপ্রিম কোর্টের ছয় আইনজীবী তাদের মতামত আদালতের সামনে তুলে ধরেন।

বাংলাদেশ থেকে কাতারভিত্তিক টেলিভিশন চ্যানেল আল জাজিরার সম্প্রচার বন্ধের নির্দেশনা চেয়ে গত ৮ ফেব্রুায়রি হাইকোর্টে রিটটি দায়ের করা হয়। একইসঙ্গে রিটে সংবাদমাধ্যমটির প্রচারিত ‘অল দ্য প্রাইম মিনিস্টার্স মেন’ প্রতিবেদনটি ইউটিউব, টুইটার, ফেসবুকসহ সব অনলাইন প্ল্যাটফর্ম থেকে অপসারণ করার নির্দেশনা চাওয়া হয়। ব্যারিস্টার এনামুল কবীর ইমন এ রিট দায়ের করেন। রিট আবেদনে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় সচিব, তথ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ক মন্ত্রণালয় সচিব, বিটিআরসির চেয়ারম্যান, পুলিশের আইজিসহ সংশ্লিষ্টদের বিবাদী করা হয়।

ওই রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে বাংলাদেশে কাতারভিত্তিক টেলিভিশন চ্যানেল আল-জাজিরা টেলিভিশন নেটওয়ার্কের সম্প্রচার বন্ধে ও ভিডিও সরাতে হাইকোর্ট কোনও আদেশ দিতে পারে কিনা, সে বিষয়ে মতামত জানাতে ছয় অ্যামিক্যাস কিউরি (আদালতের বন্ধু) নিয়োগ দেন হাইকোর্ট।

প্রসঙ্গত, গত ১ ফেব্রুয়ারি ‘অল দ্য প্রাইম মিনিস্টার্স মেন’ শিরোনামে আল-জাজিরায় একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রচারিত হয়। ওই প্রতিবেদনে বাংলাদেশ সরকার ও সেনাবাহিনীসহ বিভিন্ন আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলা হয়েছে।

Leave A Reply

Your email address will not be published.

Title