খেলাপি ঋণ আদায়ে অর্থঋণ আদালতে নিষ্পত্তির অপেক্ষায় ৭২ হাজার মামলা

নিজস্ব প্রতি‌বেদক: ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ আদায়ে অর্থঋণ আদালত গঠন করা হলেও কাঙ্খিত পরিমাণ মামলা নিষ্পত্তি এবং অর্থ আদায় করা সম্ভব হচ্ছে না। অর্থ মন্ত্রণালয়ের হিসাব মতে, ২০০৩ সালে অর্থঋণ আদালত গঠন হওয়ার পর গত ২০২২ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত এ আদালতে মামলা হয়েছে ২ লাখ ২২ হাজার ৩৪৮টি। এসব মামলার বিপরীতে দাবিকৃত অর্থের পরিমাণ ছিল ২ লাখ ৪৯ হাজার ১৮৪ কোটি টাকা। খেলাপি ঋণ আদায়ের মামলাগুলো দ্রæত নিষ্পত্তির জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক অর্থঋণ আদালত স্থাপনের তাগিদ দিয়ে গত নভেম্বরে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগে চিঠি পাঠিয়েছে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো।
সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী, ২০২২ সালের ডিসেম্বর শেষে অর্থঋণ আদালতে মামলার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৭২ হাজার ১৮৯টি। এসব মামলার বিপরীতে দাবিকৃত অর্থের পরিমাণ হচ্ছে ১ লাখ ৬৬ হাজার ৮৮৬ কোটি টাকা। খেলাপি ঋণ বাড়ার কারণে ২০২২ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৩ হাজার ৯১৮টি মামলা বেড়েছে; একইসঙ্গে এসব মামলার বিপরীতে দাবিকৃত টাকার পরিমাণ বেড়েছে ২৩ হাজার ১৯২ কোটি টাকা। অন্যদিকে গত ডিসেম্বর (২০২২) পর্যন্ত খেলাপি গ্রাহকদের বিরুদ্ধে অর্থঋণ আদালতে নিষ্পত্তি হওয়া মামলার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৫০ হাজার ১৫৯টি। এসব মামলায় বিপরীতে ব্যাংকগুলোর দাবিকৃত অর্থের পরিমাণ হচ্ছে ৮২ হাজার ২৯৭ কোটি টাকা। এর বিপরীতে গত বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত ব্যাংকগুলো আদায় করতে পেরেছে ২১ হাজার ৮২ কোটি টাকা। এটি মোট দাবিকৃত অর্থের মাত্র ২৫ দশমিক ৬ শতাংশ।

জানা যায়, নিষ্পত্তিকৃত মামলার বিপরীতে সবচেয়ে বেশি অনাদায়ী অর্থ রয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোতে, এর পরিমাণ ৫১ হাজার ৩০৫ হাজার কোটি টাকা। আর বেসরকারি ব্যাংকগুলোর অনাদায়ী অর্থের পরিমাণ হচ্ছে ২৭ হাজার ৯০২ কোটি টাকা।
একইভাবে বর্তমানে অর্থঋণ আদালতে বিচারাধীন মামলার বিপরীতেও সবচেয়ে বেশি টাকা আটকে রয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর, যার পরিমাণ ৭১,৭৬৪ কোটি টাকা। রাষ্ট্রায়ত্ত বিশেষায়িত ব্যাংকগুলোর আটকে আছে ২ হাজার ৪৬৮ কোটি টাকা, বেসরকারি ব্যাংকগুলোর রয়েছে ৮৮ হাজার ৮৫৮ কোটি টাকা এবং বিদেশি ব্যাংকগুলোর আটকে আছে ৩ হাজার ৭৯৫ কোটি টাকা।
ব্যাংক খাত সংশ্লিষ্টদের মতে, জামানতের অতি মূল্যায়ন (ওভার ভ্যালুয়েশন), ঋণ প্রক্রিয়াকরণ কাজ যথাযথ গুরুত্বসহকারে না করা এবং ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে অর্থ আদায় কাঙ্খিত পরিমাণে হচ্ছে না।
সংশ্লিষ্টরা জানান, অনেক সময় বাস্তবতার কারণে ঋণ নিষ্পত্তি করা হয়ে থাকে। গ্রাহকের মৃত্যু কিংবা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাওয়ার মতো বিষয় বিবেচনায় নিয়ে ঋণ নিষ্পত্তি করতে হয়। পাশাপাশি ঋণ দেয়ার ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলোরও অনেক অনিয়ম থাকে। ব্যাংকগুলো ঋণের বিপরীতে যে জামানত নেয়, দেখা যায় এর মূল্য ঋণের তুলনায় খুবই কম। এছাড়া একই জামানত বারবার ভ্যালু অ্যাডিশন করে অতিরিক্ত মূল্য দেখানো হয়। যখন ঋণ খেলাপি হয়ে যায়, তখন আদায় করতে গিয়ে ঋণের আসলও আদায় করা যায় না।

Leave A Reply

Your email address will not be published.

Title