ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থান এর পর নতুন খেলায় লেদা জমি জিপ গোপন তহবিল
ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থান এর পর নতুন খেলায় লেদা জমি জিপ গোপন তহবিল

- আপডেট সময় : ১২:৩৩:৫৭ অপরাহ্ন, শনিবার, ১২ জুলাই ২০২৫ ১ বার পড়া হয়েছে
জেলা প্রতিনিধিঃ ব্রুনাইয়ে বাংলাদেশ দূতাবাসে এক সময়ের আলোচিত কর্মকর্তা আমির হোসেন শুভ ওরফে ‘লেদা’ এখন রাজশাহীর বোয়ালিয়া থানার শিরোইল মোল্লামিল পাড়ায় আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। তাঁর অতীত ঘিরে যেমন রয়েছে বিদেশে প্রভাব খাটানোর অভিযোগ, তেমনি বর্তমান জড়িয়ে আছে জমি দখল, আদালতের আদেশ উপেক্ষা এবং প্রভাব বিস্তারের নানা গুঞ্জনে।
প্রবাসী মহলের অভিযোগ, ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক মহলের ছত্রছায়ায় ব্রুনাইয়ে অবস্থানকালীন লেদা গড়ে তুলেছিলেন একটি শক্তিশালী ভিসা বাণিজ্য নেটওয়ার্ক। প্রবাসী শাহিনুরসহ একাধিক ব্যক্তি জানান, ঘুষ বাণিজ্যের মাধ্যমে তিনি বিপুল অর্থ উপার্জন করেন। এই অর্থের কোন বৈধ উৎস নেই বলেই সন্দেহ স্থানীয়দের।
সরকার পতনের পর ৫ আগস্ট দেশে ফিরে নিজ এলাকায় ফেরত এলে শুরু হয় সম্পদ প্রদর্শনের পালা। পৈত্রিক জমিতে পাঁচতলা ভবন নির্মাণ শুরু করেন তিনি, যা ঘিরে বাধে পারিবারিক বিরোধ। তাঁর বড় ও ছোট বোন জমির ভাগ চেয়ে আদালতের আশ্রয় নিলে আদালত প্রথমে শান্তি-শৃঙ্খলার নির্দেশ দেয়, পরে স্থিতি-নিষেধও জারি করে।
তবে আদালতের আদেশকে উপেক্ষা করে নির্মাণকাজ চলতে থাকে অবাধে। স্থানীয় থানার প্রতিবেদনেও স্পষ্টভাবে নির্মাণ বন্ধের সুপারিশ করা হলেও তা মানা হয়নি। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, জমিতে প্রবেশ করলেই লেদা ও তাঁর সহযোগীরা মামলা ও দখলের হুমকি দিয়ে তাড়িয়ে দেন।
জমি দখলে সহযোগিতা করেন বলে অভিযোগ আছে লেদার ভাই হাবিবুল্লাহ খান নাটকার বিরুদ্ধেও। অন্যদিকে, লেদার বোন নাসরিন পারভীন পুচি স্থানীয় মহিলা আওয়ামী লীগের ওয়ার্ড সভাপতি হিসেবে রাজনৈতিক প্রভাব কাজে লাগিয়ে বিরোধীদের কোণঠাসা করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
এই প্রভাব খাটানোর প্রতিচ্ছবি দেখা যায় গত বছরের ২৭ আগস্টও। ভুক্তভোগী মেরাজুল ইসলাম বাবুকে একটি পুরনো রাজনৈতিক মামলায় গ্রেপ্তার করে ডিবি পুলিশ, যেখানে তাঁকে ‘অজ্ঞাতনামা আসামি’ দেখানো হয়। বাবুর স্ত্রী সাথীর ভাষ্য, “জাতীয় তরুণ সংঘের পুরোনো ছবি আর লেদার প্রভাব দিয়েই আমার স্বামীকে ফাঁসানো হয়েছে।”
প্রভাব খাটানোর অভিযোগ রয়েছে রাজশাহী আওয়ামী যুবলীগের সাবেক নেতা রমজান আলীর ব্যবহৃত একটি জিপ গাড়ি নামমাত্র দামে কেনা নিয়েও। আরও চাঞ্চল্যকর তথ্য হলো, লেদা প্রয়াত জামায়াত নেতার ছেলের সঙ্গে ব্যবসায়িক অংশীদার ছিলেন, যা স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের মধ্যে প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে।
একইসঙ্গে লেদা রমজান আলীর বড় ছেলে সোহেলের সঙ্গে সম্পদ হিসাব দেখা–শোনায় যুক্ত বলেও জানা যায়। দলের ভেতরে একাধিক নেতার অভিযোগ, আন্দোলন দমন ও গোয়েন্দা তৎপরতার জন্য গঠিত ‘অরফ–ডোনেশন’ ফান্ডের কয়েক কোটি টাকা গায়েব করে দিয়েছেন লেদা।
এতসব অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও তাঁর বিরুদ্ধে প্রশাসনিক কোনো কঠোর পদক্ষেপ দেখা যাচ্ছে না। জমি ভাগাভাগি ও খারিজ সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে ভুক্তভোগীরা সহকারী কমিশনার (ভূমি)–এর দপ্তরে আবেদন করেছেন এবং রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষকেও অনিয়মের বিষয়ে অবহিত করেছেন।
প্রশ্ন উঠছে, আদালতের স্থিতি–নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে নির্মাণ চলতে থাকলে সংশ্লিষ্ট থানা কি আইনগত ব্যবস্থা নেবে? নাকি রাজনৈতিক ছত্রছায়া তাঁকে অভয়ারণ্য তৈরি করে দেবে?
প্রতিবেদন প্রকাশের আগ পর্যন্ত আমির হোসেন শুভ ওরফে লেদার সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাঁকে পাওয়া যায়নি। ফলে তাঁর বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।
স্থানীয়দের প্রত্যাশা, দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) দ্রুত এই বিতর্কিত সম্পদের উৎস, বৈধতা, এবং আদালত–অমান্যের বিষয়গুলো তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
এদিকে, লেদার বিরুদ্ধে আরও অপ্রকাশিত তথ্য ও দলীয় গোপন ফান্ডের নেপথ্য কাহিনি প্রকাশ পাবে পরবর্তী পর্বে।