বাগমারায় প্রধানমন্ত্রীর গৃহায়ণ প্রকল্পের বাড়ি পাইয়ে দেয়ার নামে এক নেতার টাকা আত্মসাৎ

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষ পুর্তি উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর গৃহায়ণ প্রকল্পের বাড়ি পাইয়ে দেয়ার নামে রাজশাহীর বাগমারা উপজেলায় সদ্য বিএনপি থেকে আওয়ামীলীগে যোগদান করা এক নেতার টাকা নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। ঘটনাটি বাগমারা উপজেলার আউচপাড়া ইউনিয়নের ৯ নং ওয়ার্ডের মির্জাপুর গ্রামে ঘটেছে।
বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষ পুর্তি উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অসহায় গরীব মানুষকে বাড়ি দেওয়ার ঘোষনা দেন ১৯৯৬ সালে। এর ধারাবাহিকতায় ২০২০ সালে প্রথম ধাপেই ১৪৭ টি বাড়ি বরাদ্দ পাই বাগমারা উপজেলার অসহায় গরীব মানুষ। এরপর এই বাড়ি পাইয়ে দেয়ার নামে চলছে আর্থিক বানিজ্য। এরকমই তথ্য প্রমান মিলেছে বাগমারা উপজেলার আউচপাড়া ইউনিয়নের ৯ নং ওয়ার্ডের মির্জাপুর গ্রামে।

সূত্রমতে জানা যায়, প্রায় ১ বছর আগে মির্জাপুর গ্রামের অসহায় মৃত ময়েজ উদ্দিনের ছেলে মোঃ আলাল হোসেন (৩২) বাড়ি পাওয়ার জন্য দৌড়াদৌড়ি করতে থাকে। কিন্তু গরীব আলালের অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে একই এলাকার নব্য যোগদানকৃত আওয়ামী লীগের হাইব্রিড নেতা আঃ বারি, আলালকে বাড়ি পাইয়ে দিবে বলে আশ্বাস দিয়ে টাকার প্রস্তাব দেন। এবং চুয়ান্ন হাজার টাকা হাতিয়ে নেন সুকৌশলে। যার প্রমান স্বরুপ স্বীকারুক্তিমূলক মোবাইল কল রেকর্ড রয়েছে। ঘটনার সত্যতা যাচাই করতে এলাকাতে গেলে উঠে আসে এই হাইব্রিড নেতা আঃ বারির অবাক করা না জানা অনেক ঘটনা। প্রায় দুই বছর আগে একটি খাঁস পুকুর জবরদখল করে এই বারি। যার কারনে তার সহযোগী পাশের গ্রামের ( মুগাইপাড়া) আঃ কাশেমের ছেলে মাসুদ মাষ্টার জেল পর্যন্ত খেটেছে। ঘটনা সূত্রে জানা যায়, প্রতি বছর সরকারের খাঁস পুকুর টেন্ডার করে উপজেলা ভুমি অফিস।

টেন্ডারের সকল নিয়মনীতি মেনে সরকারকে ভ্যাট-ট্যাক্স ও খাঁজনা পরিশোধ করেই মির্জাপুর এলাকার পুকুরটি নেন বিনোদপুর ( মচমইল এর পাশে) গ্রামের রবিউল আলম সুইট। কিন্তু এই হাইব্রিড নেতা আঃ বারি দাপট দেখিয়ে উক্ত পুকুরটি জবরদখল কর নেন।

এরপর এই আঃ বারি মাদক নিয়ে হাতেনাতে ধরা পড়ে বিমানবন্দর থানার বিমানবন্দরের সামনে চেকপোষ্ট পুলিশের হাতে। সূত্রমতে জানাযায়, প্রায় দেড় বছর আগে রাজশাহী থেকে মাদক নিয়ে আসার পথে পথিমধ্যে একই এলাকার বুলবুল নামের এক শিক্ষককে দেখতে পাই এবং তাকে তার মোটরসাইকেলে উঠে বসতে বলে। বুলবুল না জেনেই গাড়িতে উঠে বসে এবং পুলিশের হাতে ধরা খাই। সেখানেও অলৌকিক ক্ষমতায় নিজেকে উদ্ধার করে বারি কিন্তু বুলবুলকে যেতে হয় জেলে। সর্বশেষ নিজ গ্রামের মসজিদের বরাদ্দকৃত জায়গা সুকৌশলে নিজের নামে করে নেয়। পুরো গ্রামবাসি বারির বিরোধিতা করে এবং শালিস বসে এখানেও তিনি নিজের দাপট ও দলীও প্রভাব ঘাটিয়ে নিজেকে জাহির করে রেখেছে। এমনকি এই হাইব্রিড নেতার দাপটে কোনঠাসা বঙ্গবন্ধুর আদর্শে গড়া আওয়ামীলীগের একনিষ্ঠ কর্মিরা। যারা আওয়ামীলীগের জন্য নিজের প্রাণ দিতে প্রস্তুত। অথচ এই রকম হাইব্রিড নেতার কারণে দলে জায়গা পাচ্ছে না। এলাকাবাসি অভিযোগ করে বলেন, এই বারি মাত্র ৫ বছর আগেও বিএনপির ঢোল বাঁজিয়ে বেড়াত। অথচ সে এখন আওয়ামী লীগের বড় নেতা। সে আবার ওয়ার্ড কমিটির পদেও রয়েছে। বর্তমানে সে আউচপাড়া ইউনিয়নের ৯ নং ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের ত্রাণ ও পুনর্বাসন সম্পাদকের পদে রয়েছে। আমরা যারা বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে বিশ্বাস করি, আওয়ামী লীগকে ভালবাসি এবং জন্ম থেকে আওয়ামী লীগ করে আসছি আমাদের সকলের দাবী এই ধরনের হাইব্রিড আওয়ামী কর্মিকে দল থেকে বহিষ্কার করে আইনগত ব্যবস্থা করতে হবে।
ঘটনার সত্যতা ও অনৈতিক কর্মকান্ডের বিষয়ে আঃ বারির সাথে মুঠোফোনে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ঘটনা সম্পুর্ণ মিথ্যা। আমি আলালের নিকট থেকে টাকা ধার নিয়েছি। যা সময় হলে ফেরত দিবো। দল পরিবর্তনের কথা জানতে চাইলে উত্তরে বলেন। হ্যা আমি আগে বিএনপি করতাম কিন্তু এখন মন থেকে আওয়ামী লীগ করি। অন্যান্য ঘটনা জানতে চাইলে তিনি কোন উত্তর দেননি।
বারির অলৌকিক ক্ষমতা ও অনৈতিক কর্মকান্ডের বিষয়ে বাগমারা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও বর্তমান সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার এনামুল হক এর সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, বর্তমান সরকার জনদরদী সরকার, সরকার প্রধান জননেত্রী শেখ হাসিনা অসহায় গরীব মানুষকে ভালবেসে বিনামূল্যে আবাসন দিচ্ছে আর এই বাড়ি নিয়ে কেউ ব্যবসা করবে, তা হতে পারেনা। বর্তমানে সরকার দলে অন্য দল থেকে নিজেকে বাঁচানোর অনেক হাইব্রিড ঢুকে পড়েছে। এদেরকে চিহ্নত করা হচ্ছে এবং খুব দ্রুত তাদের দল থেকে বহিষ্কার করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। জননেত্রী শেখ হাসিনা এই হাইব্রিডদের বিষয়ে খুব ততপর। কোন ধরনের ছাড় পাবেনা। এই বারির বিষয়ে খোঁজ খবর নিয়ে প্রমান পেলে অবশ্যই বহিষ্কার করাসহ আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বিষয়টি নিয়ে বাগমারা উপজেলা নির্বাহী অফিসার শরিফ আহমেদের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, আপনি যে বিষয়ে বললেন এ ঘটনা আমার জানা নাই কেউ অভিযোগও করেনি। তবে আপনি বললেন অবশ্যই তদন্তপূর্বক আইনগত ব্যবস্থা নিব।

মোঃ সাইফুল ইসলাম
বাগমারা রাজশাহী প্রতিনিধি

Leave A Reply

Your email address will not be published.

Title