ঢাকা ০৫:১১ অপরাহ্ন, বুধবার, ০২ জুলাই ২০২৫, ১৮ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

জাতীয় ঐক্যের ডাক বিএনপির25

জাতীয় ঐক্যের ডাক বিএনপির25

অনলাইন ডেস্ক
  • আপডেট সময় : ১০:২৭:০৩ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২ জুলাই ২০২৫ ৩ বার পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ ইনসার্টজুলাই গণ-অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি অনুষ্ঠানে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান জাতীয় স্বার্থে ‘ঐক্যের’ ডাক দিয়েছেন। নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণে সবাইকে এক হওয়ার আহবান জানান তাঁরা। তবে সংখ্যানুপাতিক নির্বাচনী ব্যবস্থার দাবি ঐক্যে বিভক্তি তৈরি করছে কি না—এ প্রশ্নও তোলেন তারেক রহমান।

গতকাল মঙ্গলবার বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে বিএনপি আয়োজিত ‘গণ-অভ্যুত্থান ২০২৪ : জাতীয় ঐক্য ও গণতান্ত্রিক অভিযাত্রা’ শীর্ষক আলোচনাসভা এবং শহীদ পরিবারের সম্মানে বিশেষ অনুষ্ঠানে দলের দুই শীর্ষ নেতা জাতীয় ঐক্যের এই আহবান জানান।

এর মাধ্যমে চব্বিশের জুলাই-আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানের প্রথম বর্ষপূর্তিতে ৩৬ দিনব্যাপী নানা কর্মসূচি শুরু করল বিএনপি। খালেদা জিয়া তাঁর গুলশানের বাসভবন থেকে এবং তারেক রহমান লন্ডন থেকে অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন।
অনুষ্ঠানের শুরুতে জুলাই-আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানের ওপর নির্মিত ‘জাতীয় ঐক্য ও গণতান্ত্রিক অভিযাত্রা’ শীর্ষক একটি প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়। অনুষ্ঠানে শহীদ পরিবার, আহত নেতাকর্মী ও সমর্থকদের পাশাপাশি ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে যুক্ত রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতা, বুদ্ধিজীবী, সিনিয়র সাংবাদিকসহ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ উপস্থিত ছিলেন।

শহীদ পরিবারকে অনুষ্ঠানে ক্রেস্ট ও সম্মাননা দেওয়া হয়। গুম-খুন ও জুলাই-আগস্টে শহীদ পরিবারের সদস্যদের কয়েকজন বক্তব্য দেন।

গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়ার কাজ দ্রুত শেষ করতে হবে : খালেদা জিয়া
প্রধান অতিথির বক্তব্যে খালেদা জিয়া গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে দ্রুত প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়ার আহবান জানান। তিনি বলেন, ‘আমাদের সামনে যে সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে নতুন করে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়ার, তা আমাদের দ্রুত সম্পন্ন করতে হবে।

কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে হবে। জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষা করতে হবে যেকোনো মূল্যে। বীরের এই রক্তস্রোত, মায়ের অশ্রুধারা যাতে বৃথা না যায়, তা নিশ্চিত করতে হবে। ঐক্য বজায় রাখতে হবে।

আসুন, আমরা সবাই মিলে শহীদ জিয়ার স্বপ্ন বাস্তবায়ন করি। বাস্তবায়ন করি কোটি মানুষের নতুন বাংলাদেশ নির্মাণের স্বপ্ন।’
পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলের সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘দীর্ঘ ১৬ বছর নির্মম অত্যাচার-নির্যাতন, গ্রেপ্তার, হত্যা ও খুনের মাধ্যমে গণতন্ত্রকে ধ্বংস করে একদলীয় শাসনব্যবস্থা চিরস্থায়ী করতে চেয়েছিল আওয়ামী শাসকগোষ্ঠী। ছাত্র-জনতার সম্মিলিত অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে ফ্যাসিবাদের পতন ঘটেছে, সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে নতুন করে বাংলাদেশকে গড়ার। এই আন্দোলনে যাঁরা শহীদ হয়েছেন, তাঁদের জানাচ্ছি আন্তরিক শ্রদ্ধা এবং আহতদের সমবেদনা। তাঁদের এই আত্মত্যাগ জাতি চিরকাল মনে রাখবে। গুম, খুন ও বিচারবহির্ভূত হত্যার শিকার যাঁরা হয়েছেন, তাঁদের তালিকা প্রস্তুত করতে হবে। দ্রুত বিচারের ব্যবস্থা এবং রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি নিশ্চিত করতে হবে। প্রতিটি পরিবারের সম্মানজনক পুনর্বাসন ও নিরাপদ ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে হবে।’

এই মুহূর্তে ঐক্য বেশি প্রয়োজন : তারেক রহমান
জাতীয় স্বার্থে ঐকমত্য জরুরি মন্তব্য করে তারেক রহমান বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার কার্যক্রমে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল চিন্তা-ভাবনা করে প্রস্তাব দিয়েছে। আমি বিশ্বাস করি, দেশ ও জনগণের কল্যাণে প্রতিটি রাজনৈতিক দলই উত্তম প্রস্তাব উপস্থাপন করেছে। প্রস্তাব ভালো হলেও সব প্রস্তাব বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ও বর্তমান প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের জন্য উপযোগী কি না, সেটি বিবেচনা করার জন্য আপনাদের বিনীত আহবান জানাব।’

ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ‘কোনো কোনো রাজনৈতিক দল সংখ্যানুপাতিক নির্বাচনব্যবস্থার দাবি তুলেছে। বিশ্বের কোনো কোনো দেশে এই পদ্ধতির নির্বাচনের বিধান রয়েছে। তবে বাংলাদেশের বিদ্যমান বাস্তবতায় এবং ভৌগোলিক ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে এই মুহূর্তে এই ব্যবস্থা কতটুকু উপযোগী কিংবা উপযোগী কি না, তা গুরুত্বের সঙ্গে ভেবে দেখার জন্য সবার কাছে অনুরোধ করছি। বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক বিধি-ব্যবস্থাকে শক্ত ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত রাখতে হলে, বাংলাদেশকে তাঁবেদারমুক্ত রাখতে হলে এই মুহূর্তে জনগণের ঐক্য সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন। কিন্তু পিআর পদ্ধতির নির্বাচনী ব্যবস্থা ঐক্যের বদলে বিভক্তিমূলক সমাজ ও অস্থিতিশীল সরকার সৃষ্টির কারণ হয়ে উঠতে পারে কি না—এ বিষয়গুলো গুরুত্বের সঙ্গে ভেবে দেখার জন্য আমি সব রাজনৈতিক নেতাদের বিনীত আহবান ও অনুরোধ করব।’

তিনি এও বলেন, ‘সংখ্যানুপাতিক নির্বাচনী ব্যবস্থার আড়ালে পুনরায় দেশের রাজনীতিতে নিজেদের অজান্তে পতিত পরাজিত ও পলাতক অপশক্তির পুনর্বাসনের পথ তৈরির সুযোগ করে দেওয়া হচ্ছে কি না—এই বিষয়টিও আমাদের প্রত্যেকের গুরুত্বের সঙ্গে ভাবা দরকার। আমি মনে করি নিত্যনতুন বিষয় যদি আমরা সামনে নিয়ে আসতে থাকি, এর সুযোগে ষড়যন্ত্রকারীরা মাথাচাড়া দেওয়ার সুযোগ পাবে।’

তারেক রহমান বলেন, ‘একটি দুর্নীতিমুক্ত, নিরাপদ ও মানবিক গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার সুমাহান লক্ষ্যে দেশের গণতন্ত্রকামী প্রতিটি ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান, প্রতিটি রাজনৈতিক দল ঐক্যবদ্ধ। প্রতিটি রাজনৈতিক দলের নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি এবং কর্মসূচিগত পার্থক্যের কারণে কোনো কোনো ইস্যুতে ফ্যাসিবাদবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে অনৈক্য মনে হলেও আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, জাতীয় স্বার্থে আমরা সবাই এক। হাজারো শহীদের রক্তস্নাত রাজপথে ফ্যাসিবাদবিরোধী এই ঐক্য গড়ে উঠেছে। ৫ আগস্ট এর জ্বলন্ত উদাহরণ। প্রতিটি ইস্যুতে প্রতিটি রাজনৈতিক দলের ঐকমত্য হওয়া জরুরি নয়। তবে অবশ্যই জাতীয় ইস্যুতে ও জাতীয় স্বার্থে ঐকমত্য থাকাটাই সবচেয়ে বেশি জরুরি। এটি গণতন্ত্রের সৌন্দর্য।’

তিনি বলেন, ‘আগামী দিনে আর কোনো অপশক্তি যেন তাঁবেদার রাষ্ট্রে পরিণত করার দুঃসাহস না দেখায়, সংবিধান লঙ্ঘনকারী পতিত, পরাজিত পলাতক তাঁবেদার অপশক্তি আর মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে না পারে, দেশ ও জনগণের স্বার্থের বিরুদ্ধে কেউ যাতে অপতৎপরতা চালাতে না পারে, আমি ও আমাদের দল বিএনপি বিশ্বাস করে, এসব বিষয়ে ফ্যাসিবাদবিরোধী জাতীয় ঐক্য অটুট রয়েছে, ভবিষ্যতেও তা অটুট থাকবে।’

তারেক রহমান বলেন, ‘বিএনপি দেশে গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক বিধি-ব্যবস্থাকে এমন একটি চিরস্থায়ী ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠা করতে চায়, যেখানে রাজনৈতিক দল ও সরকারের সব রাজনৈতিক ক্ষমতার নিয়ন্ত্রক থাকবে জনগণ। জনগণই তাদের রাজনৈতিক ক্ষমতা প্রয়োগ করে স্থানীয় সরকার থেকে কেন্দ্রীয় সরকার—প্রতিটি পর্যায়ে প্রতিনিধি নির্বাচন করবে। জনগণের নির্বাচিত সরকার জনপ্রত্যাশা পূরণে ব্যর্থ হলে নির্ধারিত মেয়াদের পর সেই সরকার পরিবর্তনের ক্ষমতাও জনগণের হাতে থাকবে। জনগণের রাজনৈতিক ক্ষমতা নিশ্চিত করে এভাবে জনপ্রতিনিধিদের জনগণের মুখাপেক্ষী করে দেওয়া গেলে রাষ্ট্র ও রাজনীতিতে দুর্নীতি ও দুর্বৃত্তায়নের প্রবণতা কমে আসবে বলে আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি।’

তিনি বলেন, ‘ফ্যাসিবাদের পতনের পর রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার জনগণের সরাসরি ভোটে জনগণের কাছে জবাবদিহিমূলক সরকার প্রতিষ্ঠায় জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে সক্রিয় রয়েছে। একই সঙ্গে রাষ্ট্র ও রাজনীতি সংস্কারের পাশাপাশি বিতাড়িত ফ্যাসিস্টদের বিচার কার্যক্রমও শুরু করেছে। রাষ্ট্র ও রাজনীতিতে সংস্কার ও বিচার কার্যক্রম চলমান প্রক্রিয়া। রাষ্ট্র ও সমাজে গণতন্ত্র ও আইনের শাসন নিশ্চিত রাখার স্বার্থে ভবিষ্যৎ গণতান্ত্রিক সরকারও অন্তর্বর্তী সরকারের কার্যক্রম অব্যাহত রাখবে বলে আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি। সুতরাং একটি ইস্যুকে আরেকটি ইস্যুর সঙ্গে শর্তের বেড়াজালে আবদ্ধ না করা যৌক্তিক বলে জনগণ মনে করে।’

বক্তব্যের শুরুতে তারেক রহমান শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেন, ‘১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের যুদ্ধে শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের যেমন বাংলাদেশ ভোলেনি, ২০২৪ সালে দেশ ও জনগণের স্বাধীনতা রক্ষার যুদ্ধে বীর শহীদদেরও বাংলাদেশ কখনো ভুলবে না।’

বিএনপি ক্ষমতায় এলে শহীদদের স্মরণে বিভিন্ন স্থাপনা-সড়কের নামকরণ করবে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘জনগণের রায়ে বিএনপি রাষ্ট্রক্ষমতায় এলে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থাপনা, সড়ক কিংবা গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানের নামকরণের ইচ্ছা আমাদের আছে।’

বিএনপি ক্ষমতায় গেলে জাতীয় সরকার গঠন করে জনগণের সব দাবি বাস্তবায়ন করা হবে—এ কথা উল্লেখ করে তারেক রহমান বলেন, ‘আমাদের প্রধানতম কর্তব্য হচ্ছে, তরুণ জনগোষ্ঠীকে দক্ষ করে জনশক্তি হিসেবে উপযুক্ত করে গড়ে তোলা। একই সঙ্গে রাষ্ট্র ও সমাজে গণতন্ত্র ও আইনের শাসন নিশ্চিত রাখা।’ তিনি বলেন, আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে বিএনপি রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পেলে জাতীয় সরকার গঠন করে দেশ এবং জনগণের উন্নয়নের প্রতিটি কর্মসূচি বাস্তবায়নের সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা গ্রহণ করবে। একটি দুর্নীতিমুক্ত নিরাপদ মানবিক গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার সুমহান লক্ষ্যে দেশের গণতন্ত্রকামী প্রতিটি ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান, প্রতিটি রাজনৈতিক দল ঐক্যবদ্ধ।

তারেক রহমান বলেন, দেড় দশকের আন্দোলনে গুম-খুনের শিকার হয়েছে বহু মানুষ। অপহরণের তালিকা অনেক দীর্ঘ। শুধু জুলাই আন্দোলনে বিএনপির ৪২২ জনসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার অন্তত দেড় হাজার মানুষ শহীদ হয়েছে। ৩০ হাজারের বেশি মানুষ আহত হয়েছে। এক হাজারের বেশি পঙ্গু হয়েছে। শিশুরাও শহীদ হওয়া থেকে বাদ যায়নি। বাংলাদেশের ইতিহাসের প্রতিটি অধ্যায়ে এভাবে শহীদ আবু সাঈদ, ওয়াসিম ও মুগ্ধর মতো অনেকেই জীবন দিয়েছেন। মানুষের প্রশ্ন, এভাবেই কি মানুষ জীবন দিতে থাকবে? তারা তো কানাডায় বেগমপাড়া করার দাবিতে আন্দোলন করেনি, জীবন দেয়নি।

বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব ‍ও ‘জুলাই-আগস্ট গণ-অভ্যুত্থান, শোক ও বিজয়ের বর্ষপূর্তি পালন কমিটি’র আহবায়ক রুহুল কবীর রিজভীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন এই কমিটির সদস্যসচিব ও বিএনপির গণশিক্ষাবিষয়ক সম্পাদক অধ্যাপক ড. মোর্শেদ হাসান খান। আরো বক্তব্য দেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, সালাহউদ্দিন আহমদ, নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, জাতীয় পার্টির (জাফর) চেয়ারম্যান ও ১২ দলীয় জোটের প্রধান মোস্তফা জামাল হায়দার, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা আব্দুল হালিম, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির (বিজেপি) ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থ, গণসংহতি আন্দোলনের জুনায়েদ সাকী, এনপিপির চেয়ারম্যান ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, লেবার পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, এলডিপির মহাসচিব ড. রেদোয়ান আহমেদ, জাতীয় গণফ্রন্টের সমন্বয়ক টিপু বিশ্বাস, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু, এনসিপির যুগ্ম সদস্যসচিব আরিফুল ইসলাম আদিব, এনডিএমের চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজ, হেফাজতে ইসলাম ঢাকা মহানগরীর সভাপতি মাওলানা জোনায়েদ আল হাবিব, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের মহাসচিব মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দি, বাংলাদেশ জাসদের সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হক প্রধান, খেলাফত মজলিসের নায়েবে আমির আহমদ আলী কাসেমি ও গণ অধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ রাশেদ খান।

অনুষ্ঠানে বিএনপির জোটের নেতারা দুজন ‘আওয়ামী দোসর’কে অনুষ্ঠানে উপস্থিত দেখে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তবে ওই দুজন কে, তা তাঁরা বলেননি।

কাঁদলেন তারেক রহমান
অনুষ্ঠানে গুমের শিকার ছাত্রদল নেতা পারভেজের কন্যা নিধির বক্তব্য শুনে কেঁদেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।

নিধির রয়েছে ছোট্ট একটি ভাই। বাবাকে অনেক দিন দেখে না সে-ও। অনুষ্ঠানে নিধি বলে, ‘আমি আর আমার ভাই বাবাকে কি কোনো দিন জড়িয়ে ধরতে পারব না?’ এ সময় তারেক রহমান কয়েকবার আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। চোখের চশমা সরিয়ে তাঁকে অশ্রু মুছতে দেখা যায়।

গুম ব্যক্তিদের নিয়ে কাজ করা সংগঠন ‘মায়ের ডাক’-এর সমন্বয়ক সানজিদা ইসলাম তুলি বলেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা থেকে শুরু করে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর যারা গুমের সঙ্গে জড়িত ছিল, তাদের সবার বিচার নিশ্চিত করতে হবে

নতুন প্রজন্মের অনলাইন টিভি

নিউজটি শেয়ার করুন

জাতীয় ঐক্যের ডাক বিএনপির25

জাতীয় ঐক্যের ডাক বিএনপির25

আপডেট সময় : ১০:২৭:০৩ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২ জুলাই ২০২৫

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ ইনসার্টজুলাই গণ-অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি অনুষ্ঠানে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান জাতীয় স্বার্থে ‘ঐক্যের’ ডাক দিয়েছেন। নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণে সবাইকে এক হওয়ার আহবান জানান তাঁরা। তবে সংখ্যানুপাতিক নির্বাচনী ব্যবস্থার দাবি ঐক্যে বিভক্তি তৈরি করছে কি না—এ প্রশ্নও তোলেন তারেক রহমান।

গতকাল মঙ্গলবার বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে বিএনপি আয়োজিত ‘গণ-অভ্যুত্থান ২০২৪ : জাতীয় ঐক্য ও গণতান্ত্রিক অভিযাত্রা’ শীর্ষক আলোচনাসভা এবং শহীদ পরিবারের সম্মানে বিশেষ অনুষ্ঠানে দলের দুই শীর্ষ নেতা জাতীয় ঐক্যের এই আহবান জানান।

এর মাধ্যমে চব্বিশের জুলাই-আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানের প্রথম বর্ষপূর্তিতে ৩৬ দিনব্যাপী নানা কর্মসূচি শুরু করল বিএনপি। খালেদা জিয়া তাঁর গুলশানের বাসভবন থেকে এবং তারেক রহমান লন্ডন থেকে অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন।
অনুষ্ঠানের শুরুতে জুলাই-আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানের ওপর নির্মিত ‘জাতীয় ঐক্য ও গণতান্ত্রিক অভিযাত্রা’ শীর্ষক একটি প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়। অনুষ্ঠানে শহীদ পরিবার, আহত নেতাকর্মী ও সমর্থকদের পাশাপাশি ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে যুক্ত রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতা, বুদ্ধিজীবী, সিনিয়র সাংবাদিকসহ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ উপস্থিত ছিলেন।

শহীদ পরিবারকে অনুষ্ঠানে ক্রেস্ট ও সম্মাননা দেওয়া হয়। গুম-খুন ও জুলাই-আগস্টে শহীদ পরিবারের সদস্যদের কয়েকজন বক্তব্য দেন।

গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়ার কাজ দ্রুত শেষ করতে হবে : খালেদা জিয়া
প্রধান অতিথির বক্তব্যে খালেদা জিয়া গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে দ্রুত প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়ার আহবান জানান। তিনি বলেন, ‘আমাদের সামনে যে সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে নতুন করে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়ার, তা আমাদের দ্রুত সম্পন্ন করতে হবে।

কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে হবে। জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষা করতে হবে যেকোনো মূল্যে। বীরের এই রক্তস্রোত, মায়ের অশ্রুধারা যাতে বৃথা না যায়, তা নিশ্চিত করতে হবে। ঐক্য বজায় রাখতে হবে।

আসুন, আমরা সবাই মিলে শহীদ জিয়ার স্বপ্ন বাস্তবায়ন করি। বাস্তবায়ন করি কোটি মানুষের নতুন বাংলাদেশ নির্মাণের স্বপ্ন।’
পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলের সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘দীর্ঘ ১৬ বছর নির্মম অত্যাচার-নির্যাতন, গ্রেপ্তার, হত্যা ও খুনের মাধ্যমে গণতন্ত্রকে ধ্বংস করে একদলীয় শাসনব্যবস্থা চিরস্থায়ী করতে চেয়েছিল আওয়ামী শাসকগোষ্ঠী। ছাত্র-জনতার সম্মিলিত অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে ফ্যাসিবাদের পতন ঘটেছে, সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে নতুন করে বাংলাদেশকে গড়ার। এই আন্দোলনে যাঁরা শহীদ হয়েছেন, তাঁদের জানাচ্ছি আন্তরিক শ্রদ্ধা এবং আহতদের সমবেদনা। তাঁদের এই আত্মত্যাগ জাতি চিরকাল মনে রাখবে। গুম, খুন ও বিচারবহির্ভূত হত্যার শিকার যাঁরা হয়েছেন, তাঁদের তালিকা প্রস্তুত করতে হবে। দ্রুত বিচারের ব্যবস্থা এবং রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি নিশ্চিত করতে হবে। প্রতিটি পরিবারের সম্মানজনক পুনর্বাসন ও নিরাপদ ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে হবে।’

এই মুহূর্তে ঐক্য বেশি প্রয়োজন : তারেক রহমান
জাতীয় স্বার্থে ঐকমত্য জরুরি মন্তব্য করে তারেক রহমান বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার কার্যক্রমে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল চিন্তা-ভাবনা করে প্রস্তাব দিয়েছে। আমি বিশ্বাস করি, দেশ ও জনগণের কল্যাণে প্রতিটি রাজনৈতিক দলই উত্তম প্রস্তাব উপস্থাপন করেছে। প্রস্তাব ভালো হলেও সব প্রস্তাব বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ও বর্তমান প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের জন্য উপযোগী কি না, সেটি বিবেচনা করার জন্য আপনাদের বিনীত আহবান জানাব।’

ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ‘কোনো কোনো রাজনৈতিক দল সংখ্যানুপাতিক নির্বাচনব্যবস্থার দাবি তুলেছে। বিশ্বের কোনো কোনো দেশে এই পদ্ধতির নির্বাচনের বিধান রয়েছে। তবে বাংলাদেশের বিদ্যমান বাস্তবতায় এবং ভৌগোলিক ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে এই মুহূর্তে এই ব্যবস্থা কতটুকু উপযোগী কিংবা উপযোগী কি না, তা গুরুত্বের সঙ্গে ভেবে দেখার জন্য সবার কাছে অনুরোধ করছি। বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক বিধি-ব্যবস্থাকে শক্ত ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত রাখতে হলে, বাংলাদেশকে তাঁবেদারমুক্ত রাখতে হলে এই মুহূর্তে জনগণের ঐক্য সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন। কিন্তু পিআর পদ্ধতির নির্বাচনী ব্যবস্থা ঐক্যের বদলে বিভক্তিমূলক সমাজ ও অস্থিতিশীল সরকার সৃষ্টির কারণ হয়ে উঠতে পারে কি না—এ বিষয়গুলো গুরুত্বের সঙ্গে ভেবে দেখার জন্য আমি সব রাজনৈতিক নেতাদের বিনীত আহবান ও অনুরোধ করব।’

তিনি এও বলেন, ‘সংখ্যানুপাতিক নির্বাচনী ব্যবস্থার আড়ালে পুনরায় দেশের রাজনীতিতে নিজেদের অজান্তে পতিত পরাজিত ও পলাতক অপশক্তির পুনর্বাসনের পথ তৈরির সুযোগ করে দেওয়া হচ্ছে কি না—এই বিষয়টিও আমাদের প্রত্যেকের গুরুত্বের সঙ্গে ভাবা দরকার। আমি মনে করি নিত্যনতুন বিষয় যদি আমরা সামনে নিয়ে আসতে থাকি, এর সুযোগে ষড়যন্ত্রকারীরা মাথাচাড়া দেওয়ার সুযোগ পাবে।’

তারেক রহমান বলেন, ‘একটি দুর্নীতিমুক্ত, নিরাপদ ও মানবিক গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার সুমাহান লক্ষ্যে দেশের গণতন্ত্রকামী প্রতিটি ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান, প্রতিটি রাজনৈতিক দল ঐক্যবদ্ধ। প্রতিটি রাজনৈতিক দলের নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি এবং কর্মসূচিগত পার্থক্যের কারণে কোনো কোনো ইস্যুতে ফ্যাসিবাদবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে অনৈক্য মনে হলেও আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, জাতীয় স্বার্থে আমরা সবাই এক। হাজারো শহীদের রক্তস্নাত রাজপথে ফ্যাসিবাদবিরোধী এই ঐক্য গড়ে উঠেছে। ৫ আগস্ট এর জ্বলন্ত উদাহরণ। প্রতিটি ইস্যুতে প্রতিটি রাজনৈতিক দলের ঐকমত্য হওয়া জরুরি নয়। তবে অবশ্যই জাতীয় ইস্যুতে ও জাতীয় স্বার্থে ঐকমত্য থাকাটাই সবচেয়ে বেশি জরুরি। এটি গণতন্ত্রের সৌন্দর্য।’

তিনি বলেন, ‘আগামী দিনে আর কোনো অপশক্তি যেন তাঁবেদার রাষ্ট্রে পরিণত করার দুঃসাহস না দেখায়, সংবিধান লঙ্ঘনকারী পতিত, পরাজিত পলাতক তাঁবেদার অপশক্তি আর মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে না পারে, দেশ ও জনগণের স্বার্থের বিরুদ্ধে কেউ যাতে অপতৎপরতা চালাতে না পারে, আমি ও আমাদের দল বিএনপি বিশ্বাস করে, এসব বিষয়ে ফ্যাসিবাদবিরোধী জাতীয় ঐক্য অটুট রয়েছে, ভবিষ্যতেও তা অটুট থাকবে।’

তারেক রহমান বলেন, ‘বিএনপি দেশে গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক বিধি-ব্যবস্থাকে এমন একটি চিরস্থায়ী ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠা করতে চায়, যেখানে রাজনৈতিক দল ও সরকারের সব রাজনৈতিক ক্ষমতার নিয়ন্ত্রক থাকবে জনগণ। জনগণই তাদের রাজনৈতিক ক্ষমতা প্রয়োগ করে স্থানীয় সরকার থেকে কেন্দ্রীয় সরকার—প্রতিটি পর্যায়ে প্রতিনিধি নির্বাচন করবে। জনগণের নির্বাচিত সরকার জনপ্রত্যাশা পূরণে ব্যর্থ হলে নির্ধারিত মেয়াদের পর সেই সরকার পরিবর্তনের ক্ষমতাও জনগণের হাতে থাকবে। জনগণের রাজনৈতিক ক্ষমতা নিশ্চিত করে এভাবে জনপ্রতিনিধিদের জনগণের মুখাপেক্ষী করে দেওয়া গেলে রাষ্ট্র ও রাজনীতিতে দুর্নীতি ও দুর্বৃত্তায়নের প্রবণতা কমে আসবে বলে আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি।’

তিনি বলেন, ‘ফ্যাসিবাদের পতনের পর রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার জনগণের সরাসরি ভোটে জনগণের কাছে জবাবদিহিমূলক সরকার প্রতিষ্ঠায় জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে সক্রিয় রয়েছে। একই সঙ্গে রাষ্ট্র ও রাজনীতি সংস্কারের পাশাপাশি বিতাড়িত ফ্যাসিস্টদের বিচার কার্যক্রমও শুরু করেছে। রাষ্ট্র ও রাজনীতিতে সংস্কার ও বিচার কার্যক্রম চলমান প্রক্রিয়া। রাষ্ট্র ও সমাজে গণতন্ত্র ও আইনের শাসন নিশ্চিত রাখার স্বার্থে ভবিষ্যৎ গণতান্ত্রিক সরকারও অন্তর্বর্তী সরকারের কার্যক্রম অব্যাহত রাখবে বলে আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি। সুতরাং একটি ইস্যুকে আরেকটি ইস্যুর সঙ্গে শর্তের বেড়াজালে আবদ্ধ না করা যৌক্তিক বলে জনগণ মনে করে।’

বক্তব্যের শুরুতে তারেক রহমান শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেন, ‘১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের যুদ্ধে শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের যেমন বাংলাদেশ ভোলেনি, ২০২৪ সালে দেশ ও জনগণের স্বাধীনতা রক্ষার যুদ্ধে বীর শহীদদেরও বাংলাদেশ কখনো ভুলবে না।’

বিএনপি ক্ষমতায় এলে শহীদদের স্মরণে বিভিন্ন স্থাপনা-সড়কের নামকরণ করবে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘জনগণের রায়ে বিএনপি রাষ্ট্রক্ষমতায় এলে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থাপনা, সড়ক কিংবা গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানের নামকরণের ইচ্ছা আমাদের আছে।’

বিএনপি ক্ষমতায় গেলে জাতীয় সরকার গঠন করে জনগণের সব দাবি বাস্তবায়ন করা হবে—এ কথা উল্লেখ করে তারেক রহমান বলেন, ‘আমাদের প্রধানতম কর্তব্য হচ্ছে, তরুণ জনগোষ্ঠীকে দক্ষ করে জনশক্তি হিসেবে উপযুক্ত করে গড়ে তোলা। একই সঙ্গে রাষ্ট্র ও সমাজে গণতন্ত্র ও আইনের শাসন নিশ্চিত রাখা।’ তিনি বলেন, আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে বিএনপি রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পেলে জাতীয় সরকার গঠন করে দেশ এবং জনগণের উন্নয়নের প্রতিটি কর্মসূচি বাস্তবায়নের সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা গ্রহণ করবে। একটি দুর্নীতিমুক্ত নিরাপদ মানবিক গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার সুমহান লক্ষ্যে দেশের গণতন্ত্রকামী প্রতিটি ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান, প্রতিটি রাজনৈতিক দল ঐক্যবদ্ধ।

তারেক রহমান বলেন, দেড় দশকের আন্দোলনে গুম-খুনের শিকার হয়েছে বহু মানুষ। অপহরণের তালিকা অনেক দীর্ঘ। শুধু জুলাই আন্দোলনে বিএনপির ৪২২ জনসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার অন্তত দেড় হাজার মানুষ শহীদ হয়েছে। ৩০ হাজারের বেশি মানুষ আহত হয়েছে। এক হাজারের বেশি পঙ্গু হয়েছে। শিশুরাও শহীদ হওয়া থেকে বাদ যায়নি। বাংলাদেশের ইতিহাসের প্রতিটি অধ্যায়ে এভাবে শহীদ আবু সাঈদ, ওয়াসিম ও মুগ্ধর মতো অনেকেই জীবন দিয়েছেন। মানুষের প্রশ্ন, এভাবেই কি মানুষ জীবন দিতে থাকবে? তারা তো কানাডায় বেগমপাড়া করার দাবিতে আন্দোলন করেনি, জীবন দেয়নি।

বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব ‍ও ‘জুলাই-আগস্ট গণ-অভ্যুত্থান, শোক ও বিজয়ের বর্ষপূর্তি পালন কমিটি’র আহবায়ক রুহুল কবীর রিজভীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন এই কমিটির সদস্যসচিব ও বিএনপির গণশিক্ষাবিষয়ক সম্পাদক অধ্যাপক ড. মোর্শেদ হাসান খান। আরো বক্তব্য দেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, সালাহউদ্দিন আহমদ, নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, জাতীয় পার্টির (জাফর) চেয়ারম্যান ও ১২ দলীয় জোটের প্রধান মোস্তফা জামাল হায়দার, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা আব্দুল হালিম, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির (বিজেপি) ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থ, গণসংহতি আন্দোলনের জুনায়েদ সাকী, এনপিপির চেয়ারম্যান ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, লেবার পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, এলডিপির মহাসচিব ড. রেদোয়ান আহমেদ, জাতীয় গণফ্রন্টের সমন্বয়ক টিপু বিশ্বাস, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু, এনসিপির যুগ্ম সদস্যসচিব আরিফুল ইসলাম আদিব, এনডিএমের চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজ, হেফাজতে ইসলাম ঢাকা মহানগরীর সভাপতি মাওলানা জোনায়েদ আল হাবিব, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের মহাসচিব মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দি, বাংলাদেশ জাসদের সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হক প্রধান, খেলাফত মজলিসের নায়েবে আমির আহমদ আলী কাসেমি ও গণ অধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ রাশেদ খান।

অনুষ্ঠানে বিএনপির জোটের নেতারা দুজন ‘আওয়ামী দোসর’কে অনুষ্ঠানে উপস্থিত দেখে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তবে ওই দুজন কে, তা তাঁরা বলেননি।

কাঁদলেন তারেক রহমান
অনুষ্ঠানে গুমের শিকার ছাত্রদল নেতা পারভেজের কন্যা নিধির বক্তব্য শুনে কেঁদেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।

নিধির রয়েছে ছোট্ট একটি ভাই। বাবাকে অনেক দিন দেখে না সে-ও। অনুষ্ঠানে নিধি বলে, ‘আমি আর আমার ভাই বাবাকে কি কোনো দিন জড়িয়ে ধরতে পারব না?’ এ সময় তারেক রহমান কয়েকবার আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। চোখের চশমা সরিয়ে তাঁকে অশ্রু মুছতে দেখা যায়।

গুম ব্যক্তিদের নিয়ে কাজ করা সংগঠন ‘মায়ের ডাক’-এর সমন্বয়ক সানজিদা ইসলাম তুলি বলেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা থেকে শুরু করে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর যারা গুমের সঙ্গে জড়িত ছিল, তাদের সবার বিচার নিশ্চিত করতে হবে