ঘুষ নেয়া লালমনিরহাট সদর থানার ওসি স্ট্যান্ড রিলিজ

লালমনিরহাট প্রতিনিধিঃ করোনা আক্রান্তের ভয়ে হাত স্যানিটাইজ করে ঘুষের টাকা গ্রহণের ভিডিও ফাসঁ হওয়ার ঘটনায় লালমনিরহাট সদর থানার অফিসার ইনচার্জ মাহফুজ আলমকে স্ট্যান্ড রিলিজ করে ঢাকায় ট্যুরিষ্ট পুলিশে বদলি করা হয়েছে। পুলিশ সদর দপ্তর সুত্র বদলির বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ওই ভিডিওতে দেখা গেছে, একটি মারামারির ঘটনায় তার থানায় দায়ের হওয়া একটি মামলার বাদী পক্ষকে ফাঁসাতে তিনি আসামি পক্ষকে পরামর্শ দিয়ে ১০ হাজার টাকা ঘুষ নিচ্ছেন। তবে সেই ঘুষের টাকা গ্রহণের পূর্বে ওসি ও ঘুষ প্রদাণকারী উভয়েই হাত স্যানিটাইজ করে নিচ্ছেন।
লালমনিরহাট জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে ঘটনাটি গুরুত্ব সহকারে খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে, পুলিশ সুপার আবিদা সুলতানা স্থানীয় সাংবাদিকদের জানিয়েছেন।

ভিডিওতে ওসি মাহফুজ আলমকে বলতে শোনা যায়, “তোমাদের বাদীর তো জামিন হয় নাই। জামিন না হতেই থানায় হাজির হয়ে এজাহার দেওয়া হলে তো বেআইনি হবে। জামিনের কাগজসহ এসো, অভিযোগটি মামলা হিসেবে নথিভুক্ত করা হবে। মামলা না হওয়া পর্যন্ত কোনো ঝামেলা করা যাবে না। ঝামেলা হলে তোমরা প্যাঁচে পড়ে যাবে”।

এরপর ঘুষ প্রদানকারী কাউন্টার মামলা করতে আসা ব্যাক্তি বলেন,‘আমরা ঝামেলা করি নাই, করব না।’এরপর ওসি বলেন, “মামলা এখানে একটা করে দেব, কোর্টেও একটা মামলা করবা এবং চেক ডিজঅনার করবে। এভাবে ঘুরবে (আঙ্গুল ঘুরিয়ে দেখিয়ে দেন), চড়কির মতো ঘুরবে। যারা বুদ্ধিদাতা তারা হেরে যাবে। তোমাকে ঠান্ডা মাথায় করতে হবে। গরম করা যাবে না”।

এরপর ঘুষ প্রদানকারী টাকা আজ না মামলা রেকর্ড এর দিন দিবে জানতে চাইলে ওসি বলেন, “সেটা তোমাদের ব্যপার”। তখন ঘুষ প্রদানকারী বলেন, ‘মামলা রেকর্ড এর দিনই যেন আসামী ধরা হয়’। এরপর টাকা প্রদানের আগে ওসির কাছে স্যানিটাইজার চাইলে ওসি নিজে তার হাত স্যানিটাইজার দিয়ে রাব করেন এবং ঘুষ প্রদানকারীকেও স্যানিটাইজার এগিয়ে দেন। এরপর ঘুষ প্রদানকারী টাকা প্রদান করলে ওসি টাকা দ্রæত পকেটে ঢুকান এবং বলেন “টাকা দিয়েই করোনা বেশি ছড়ায়”।

এদিকে ভিডিও টি ফাঁস হওয়ার পর জেলা জুড়ে সমালোচনার ঝড় উঠেছে, প্রতিবেদকের নিকট সেই ভিডিও এবং ভিডিও পরবর্তী সময়ে ভিডিও বিষয়ে আলাপনের একটি অডিও সংরক্ষণে রয়েছে। ওই অডিওতে শোনা যায়,‘ ওসি বলছেন করোনা শুরু হওয়ার পর থেকে তিনি সরাসরি পার্টির কাছে টাকা গ্রহণের ক্ষেত্রে খুব হিসেব করে পা ফেলেছেন। তবে মামলার ক্ষেত্রে দারোগারা (এসআই) ২ হাজার করে টাকা তাকে দেন সেটা স্বীকার করেন তিনি।’ এছাড়াও ওই অডিওতে ওসিকে আক্ষেপ করে বলতে শোনা যায়,‘ পরিস্থিতি স্বাভাবিক না থাকায় গেল ঈদে তাকে ব্যাংক থেকে টাকা তুলতে হয়েছিল!

এদিকে ওসির এমন ভিডিও ও ভিডিও পরবর্তী অডিও ফাসঁ হওয়ার পর ঘটনাটি দেশের কয়েকটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশ হলে, ‘ওসি তার চিহ্নিত কয়েকজন দালালকে দিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিজের বিভিন্ন সুনাম প্রচারের অপচেষ্টা চালান। এমনকি তার সোর্স হিসেবে পরিচিত বিভিন্ন অপকর্মের সাথে জড়িত আন্ডার গ্রাউন্ড ও নামসর্বস্ব অনলাইন পোর্টালের কথিত সাংবাদিকদের ব্যবহার করে ঘটনাটিকে ভিন্নখাতে প্রভাবিত করার ব্যর্থ চেষ্টা চালান।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ওসি মাহফুজ আলম জানান,‘আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে ওই ভিডিও গোপনে ধারণ করা হয়েছে। লালমনিরহাটের পুলিশ সুপার আবিদা সুলতানা জানান, ‘এ ব্যাপারে লালমনিরহাটের অতিরিক্ত পুলিশ সুপারকে তদন্ত করে দ্রæত প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।’

Leave A Reply

Your email address will not be published.

Title