ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সহকারি পুলিশ সুপারসহ তিন পুলিশ কর্মকর্তা প্রত্যাহার, তদন্ত কমিটি গঠন

৮ গ্রামের মানুষকে ১৪দিন ঘরে থাকার নির্দেশ

নাসিরনগর (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) সংবাদদাতা: করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি সত্তে¡ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কৃতি সন্তান, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিশের নায়েবে আমীর, প্রখ্যাত আলেমে দ্বীন ও তাফসিরকারক, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জামিয়া রাহমানিয়া বেড়তলা মাদরাসার প্রতিষ্ঠাতা আল্লামা হাফেজ জুবায়ের আহমদ আনসারীর নামাজে জানাজায় লাখো মানুষ সমাগমের বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে না পারায় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সহকারী পুলিশ সুপার (সরাইল সার্কেল) মোঃ মাসুদ রানা, সরাইল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাহাদাত হোসেন টিটু, ও সরাইল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) নূরুল হককে প্রত্যাহার করা হয়েছে।

গত শনিবার রাতে সরাইল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাহাদাত হোসেন টিটুকে এবং গতকাল রোববার সকালে সহকারি পুলিশ সুপার (সরাইল সার্কেল) মোঃ মাসুদ রানা ও সরাইল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মোঃ নুরুল হককে প্রত্যাহার করা হয়।
এ ঘটনার তদন্তে চট্টগ্রাম রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি (প্রশাসন ও অর্থ) মোঃ ইকবাল হোসেনকে প্রধান করে তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (পুলিশ সুপার পদে পদোন্নতিপ্রাপ্ত) মোঃ আলমগীর হোসেন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
কমিটির অপর দুই সদস্য হলেন, চট্টগ্রাম জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম) পঙ্কজ কুমার দে এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ( প্রশাসন) আলমগীর হোসেন।

কমিটিকে আগামী ২২ এপ্রিলের মধ্যে তাদের তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।

এদিকে করোনাভাইরাস প্রার্দুভাবরোধে সরাইল উপজেলার বেড়তলা, সীতাহরণ ও আশুগঞ্জ উপজেলা বগুইর, খড়িয়ালা গ্রামসহ আশপাশের ৮টি গ্রামের মানুষকে ১৪ দিন ঘর থেকে বের না হওয়ার নির্দেশনা দিয়েছে উপজেলা প্রশাসন। গত শনিবার সন্ধ্যায় সরাইল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এ.এস.এম মোসা মোবাইল ফোনে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
শনিবার সকাল ১০টায় বেড়তলা এলাকায় ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক সংলগ্ন জামিয়া রাহমানিয়া মাদরাসা মাঠে মাওলানা জুবায়ের আহমেদ আনসারীর নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। মাঠে জায়গা না হওয়ায় ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের দুই কিলোমিটার অংশে মানুষ জানাজা পড়েন। এতে করে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি দেখা দিয়েছে।
এ ব্যাপারে সরাইল উপজেলা নির্বাহী অফিসার এ.এস.এম মোসা বলেন, বেড়তলা এবং আশপাশের গ্রামগুলোতে আমরা মাইকিং করে বলে দিয়েছি কেউ যেন ঘর থেকে বের না হয়। আগামী ১৪-১৫ দিন তারা যেন এই কোয়ারেন্টাইন মেনে চলে। স্থানীয় মেম্বারের নেতৃত্বে যুবসমাজের ব্যক্তিদের দিয়ে আমরা কমিটি গঠন করে দিচ্ছি- তারা যেন নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যগুলো বাড়ি বাড়ি পৌঁছে দেন। তাদের সুরক্ষার জন্য একান্তই হাসপাতালে যাওয়ার প্রয়োজন ছাড়া কেউ যেন বের না হয়। আমরা হ্যান্ডমাইক ব্যবহার করে সবাইকে বলে দিয়েছি।

এদিকে লকডাউন উপেক্ষা করে আল্লামা হাফেজ জুবায়ের আহমদ আনসারীর নামাজে জানাজায় লাখো মানুষ সমাগমের বিষয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে সমালোচনার ঝড় বইছে। এতে করে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায় করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি অনেক বেশি বেশে গেছে বলে তারা মনে করেন।

পুলিশের সামনে ট্রাক, পিকআপ ও ভ্যানে করে ঢাকাসহ আশপাশের জেলা থেকে কিভাবে এতো লোক জানাযায় অংশ গ্রহণ করেছেন এই প্রশ্নই সবার।

এ ব্যাপারে সরাইল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (সদ্য প্রত্যাহারকৃত) সাহাদাত হোসেন টিটু বলেন, নামাজে জানাযায় অনেক মানুষের সমাগম হয়েছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়া ছাড়াও ঢাকা এবং আশপাশ জেলা থেকে লোকজন এসে জানাযায় অংশ নিয়েছে। মানুষকে ঠেকানোর অনেক চেষ্টা করেছি। কিন্তু মানুষকে কোনোভাবেই আটকে রাখা যায়নি। আর আমরা চিন্তাও করতে পারি নি যে এত লোক হবে।

সরাইলের খাঁটিহাতা হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মঈনুল হোসেন সাংবাদিকদের জানান, জানাজায় লক্ষাধিক লোকের সমাগম ঘটে। এজন্য আমরা আইনী কোনো ব্যবস্থা নিতে পরিনি।

এ ব্যাপারে সরাইল উপজেলা নির্বাহী অফিসার এএসএম মোসা বলেন, এতো বড় জনসমাগম হবে তা আমার জানা ছিলোনা। এ সমাগম নিয়ন্ত্রন করা পুলিশের দায়িত্ব।

এ ব্যাপারে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক আল-মামুন সরকার বলেন, এটা থেকে বুঝা যায় যে আমাদের মাঝে সচেতনতার যে অভাব রয়েছে। তাৎক্ষনিকভাবে পুলিশ দিয়ে এমন পরিস্থিতি সামাল দেয়া মোটেও সম্ভব না।

উল্লেখ্য গত শুক্রবার বিকাল পৌনে ৬টায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌর এলাকার মার্কাসপাড়ার নিজ বাসভবনে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন মাওলানা জুবায়ের আহমেদ আনসারী (ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৫৬ বছর। তিনি স্ত্রী, তিন ছেলে, চার মেয়েসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে যান।

Leave A Reply

Your email address will not be published.

Title