বগুড়ায় শত বিঘার “শস্যচিত্রে বঙ্গবন্ধু” ক্ষেতের ধান কাঁটা হবে সোমবার

দীপক সরকার, বগুড়া প্রতিনিধি:জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে এ ব্যতিক্রমী আয়োজনের উদ্যোগ নেয়া ‘শস্যচিত্রে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে স্থান করে নেয়। শস্যচিত্রে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু জাতীয় পরিষদ ও ন্যাশনাল অ্যাগ্রিকেয়ারের তত্ত্বাবধানে বগুড়ার শেরপুর উপজেলার বালেন্দা গ্রামে ১০০ বিঘার পুরো ক্যানভাসে ‘শস্যচিত্রে বঙ্গবন্ধু’র সেই ক্ষেতের উজ্জীবিত ধান পরিপক্ক হওয়ায় তা কাঁটা হবে ২৬ এপ্রিল সোমবার।
এ ধান কাটা উৎসবের উদ্বোধন করবেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কৃষিবিদ আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম। প্রধান অতিথি হিসেবে থাকবেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবীর নানক। এ উৎসবে শস্যচিত্রে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু জাতীয় পরিষদের অন্য সদস্যরা উপস্থিত থাকবেন। ১০০ বিঘা ধানক্ষেতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতি গত ১৬ মার্চ গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে স্থান করে নেয়। সর্ববৃহৎ শস্যচিত্র (লার্জেস্ট ক্রপ ফিল্ড মোজাইক) ক্যাটাগরিতে গিনেস রেকর্ডসে জায়গা করে নিয়েছে এ প্রতিকৃতিটি।
স্থানীয়রা জানায়, শেরপুর উপজেলায় বালেন্দা গ্রামে ‘শস্যচিত্রে বঙ্গবন্ধু’ ক্ষেতের ১০০ বিঘা জমির গাঢ় বেগুনি ও সবুজ ধানগাছে শীষের ভারে নুয়ে পড়েছে। সম্পূর্ণ পরিপুষ্ট ধান আর গাছে দাঁড়িয়ে থাকতে পারছে না। বর্তমানে সবুজ আর বেগুনি গাছে ধানের শীষ বাতাসে দোল খাচ্ছে। সপ্তাহখানেক আগেই শস্যক্ষেত থেকে ধান কাঁটার উপযোগী হয়েছে।
তবে আগামীকাল ২৬ এপ্রিল আনুষ্ঠানিকভাবে শস্যচিত্রের ধান কাটা হবে বলে জানান ন্যাশনাল অ্যাগ্রিকেয়ারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কেএসএম মোস্তাফিজুর রহমান। তবে ধান কাটার পর এই ধান বগুড়ার কাহালু ন্যাশনাল অ্যাগ্রিকেয়ার প্রসেসিং সেন্টারে নিয়ে যাওয়া হবে। সেখানে ধানগুলো প্রসেসিং করা হবে তিনি আরো জানান।

এর আগে ২৯ জানুয়ারি আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক প্রধান অতিথি থেকে ও উচ্চ ফলনশীল দুই ধরনের ধানের চারা রোপণের মাধ্যমে এই কর্মযজ্ঞের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন ঘোষণা করেন। এতে সভাপতিত্ব করেন শস্যচিত্রে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু জাতীয় পরিষদের আহ্বায়ক ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক এবং স্বেচ্ছাসেবক লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি কৃষিবিদ আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম।

উল্লেখ্য, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে গঠিত জাতীয় পরিষদের উদ্যোগে এবং ন্যাশনাল অ্যাগ্রিকেয়ার নামে একটি কোম্পানির অর্থায়নে প্রতিকৃতিটি তৈরি করা হয়। পরিকল্পনা অনুযায়ী এই বগুড়ার শেরপুরের নিভৃত পল্লীর বালেন্দা গ্রামে ৪০ একর জমি লিজ নেয় । পরে ন্যাশনাল ক্যাডেট কোরের সদস্যদের নিয়ে লে-আউট তৈরি করে। ১০০জন রেজিমেন্ট বিএনসিসি সদস্যের দলের অংশ গ্রহনের মাধ্যমে চারা রোপণ করেন। একদল শুকনো জমিতে চীনের চু-চিং জং-ই সীড কোম্পানী থেকে আমদানীকৃত গাঢ় বেগুনী ও বাংলাদেশের ন্যাশনাল এগ্রিকেয়ার কোম্পানী জনক রাজ (সবুজ) ‘দুই জাতের(হাইব্রীড) ধানের চারায় জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিচ্ছবি ফুটে তোলেন। তবে চারা লাগানোর আগে খুঁটি স্থাপনসহ লে-আউটের (নকশা) কাজে কৃষি প্রকৌশলীদের সঙ্গে অংশ নেয় বগুড়ার আজিজুল হক সরকারি কলেজ, আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ান, সরকারি শাহ সুলতানসহ বিভিন্ন স্কুল-কলেজের ১০০ শিক্ষার্থী ও বাংলাদেশ ন্যাশনাল ক্যাডেট কোরের (বিএনসিসি) সদস্যরা। আড়াই ফিট দৈর্ঘ্যের প্রায় ১ হাজার ২’শ খুঁটি পুঁতে প্রতিকৃতির লে-আউট করা হয়। ফেব্রুয়ারি মাসের শুরু থেকে ১৫ তারিখ পর্যন্ত প্রতিদিন ১২০ থেকে ১৩০ জন নারী শ্রমিক কাজ করেছেন। তাদের সঙ্গে প্রতিদিন যুক্ত ছিলেন ১৫ থেকে ২০ জন পুরুষ শ্রমিক।

উদ্যোক্তারা জানান, পাখির চোখে (ড্রোন ব্যবহার করে) ম্যাপ করে স্কেচ তৈরির পর টানা দেড় মাস ধরে চলছিল বিশাল এই কর্মযজ্ঞে আটজন কৃষি প্রকৌশলী, কৃষি কর্মকর্তা ও কীটতত্ত¡-রোগতত্ত¡বিদ। নিরাপত্তা রক্ষায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং আয়োজক শত শত মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশ করেছিলেন। বর্তমানে ধানের চারাগুলো গাছে রূপান্তরিত হয়ে সবুজ ও বেগুনি বর্ণ ধারণ করেছে। এতেই ফুটে উঠেছে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি। করা হয়েছিল নিরানো-বালাই নাশক স্প্রে ও সার প্রয়োগের কাজ। ধান পাকা অবদি স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় পরিচর্যার কাজ চালিয়েছেন কৃষকরা।
শষ্যচিত্রে বঙ্গবন্ধু’র বিশাল ক্যানভাসটি ৯ মার্চ মঙ্গলবার দুপুরে শস্যচিত্রে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি দেখতে সরেজমিন পরিদর্শনে আসেন গিনেস বুক রেকর্ড প্রতিনিধি শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য (ভিসি)প্রফেসর ড. কামাল উদ্দিন আহম্মদ ও বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ড. এমদাদুল হক চৌধুরী।
তবে গিনেস রেকর্ড প্রতিনিধিদের সন্তুষ্টি ও মতামত প্রকাশের ভিত্তি এবং ‘শস্যচিত্রে বঙ্গবন্ধুর’ প্রতিকৃতি তৈরিতে গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস কর্তৃপক্ষের সব শর্তই পূরণ হওয়ায় গত ১৬ মার্চ গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে স্থান করে নেয়। সর্ববৃহৎ শস্যচিত্র (লার্জেস্ট ক্রপ ফিল্ড মোজাইক) ক্যাটাগরিতে গিনেস রেকর্ডসে জায়গা করে নিয়েছে।
এই শস্যচিত্রে বঙ্গবন্ধুর আয়তন হয়েছে ১২ লাখ ৯২ হাজার বর্গফুট। শস্যচিত্রের দৈর্ঘ্য ৪০০ মিটার এবং প্রস্থ ৩০০ মিটার, যা হবে বিশ্বের সর্ববৃহৎ শস্যচিত্র। কারণ সর্বশেষ ২০১৯ সালে চীনে তৈরি শস্যচিত্রটির আয়তন ছিল আট লাখ ৫৫ হাজার ৭৮৬ বর্গফুট।

Leave A Reply

Your email address will not be published.

Title