ভাঙ্গায় দুই মেম্বরের সমর্থকদের সংঘর্ষে বাড়িঘর ভাংচুর আহত ২৫

ফরিদপুর প্রতিনিধি :: ফরিদপুরের ভাঙ্গায় নির্বাচন পরবর্তী সহিংস ঘটনায় পরাজিত এক মেম্বর প্রার্থী ও বিজয়ী প্রার্থীর সমর্থকদের মাঝে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনায় ঘটেছে। সংঘাতকালে একজন মুক্তিযোদ্ধার বাড়িসহ বেশ কয়েকটি বাড়িতে হামলা ও ভাংচুরের ঘটনা ঘটেছে। এসময় নির্বাচিত মেম্বর ডিশ আলম মোল্লাসহ উভয় পক্ষের কমপক্ষে ২৫ জন আহত হয়েছে। আহতদের ভাঙ্গা উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ভর্তি করা হয়েছে। ঘটনাটি ঘটেছে আজ মঙ্গলবার (১৪ ডিসেম্বর) সকালে উপজেলার হামিরদী ইউনিয়নের মুন্সুরাবাদ গ্রামে।

পুলিশ ও গ্রামবাসী সূত্রে জানা গেছে, হামিরদী ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডে মুনসুরাবাদ গ্রামের মোহর আলীর পরিবারসহ গ্রামের বেশ কয়েকটি পরিবার ইউপি নির্বাচনে সাবেক মেম্বর বাবর আলীর পক্ষে নির্বাচন করে। একই ওয়ার্ডে থেকে বাবর আলীর বিপক্ষে নির্বাচন করেন মুনসুরাবাদ বাজারের ডিশ ব্যবসায়ী আলম মোল্লা। গত ২৮ নভেম্বর অনুষ্ঠিত ইউপি নির্বাচনে ডিশ ব্যবসায়ী আলম মোল্লা বিজয় লাভ করেন।

আলম মোল্লার বিজয়ের পর থেকে সাবেক ও বর্তমান দুই মেম্বর প্রার্থী ও তাদের সমর্থকদের মধ্যে একটি শীতল উত্তেজনা চলে আসছিল। নির্বাচন পরবর্তী পুঞ্জীভূত ক্ষোভের সূত্রয়ায় মঙ্গলবার দিন ফজর নামাজের পর পরই উত্তেজনার সৃস্তির একটি পর্যায়ে নিবাগত মেম্বর ডিশ আলম ব্যবসায়ী ও সাবেক মেম্বর বাবর আলী গ্রুপের লোকজন দেশীয় অস্ত্র রাম দা, লাঠি সোঠা নিয়ে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া শুরু করে। বিজয়ী মেম্বরের পক্ষে লোকজন বেশী হওয়ায় উত্তেজনার মুহূর্তে ক্ষোভেরবশবর্তী হয়ে প্রয়াত মুক্তিযোদ্ধা শুকুর আলীর বাড়িতে হামলা চালিয়ে তার ঘরের দরজা, জানালা, আসবাবপত্র ভাংচুর করে। এছাড়াও সংরক্ষিত নবাগত মহিলা ইউপি মেম্বরের বাড়ি ও তার চাচা শ্বশুর মোহর আলীর বাড়িতে ব্যাপক ভাঙচুর করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন মোহর আলীর স্ত্রী শাহেরন বেগম।

স্থানীয় সূত্র আরও জানায় দীর্ঘ প্রায় ২ ঘণ্টা পর্যন্ত চলতে থাকে উভয় পক্ষের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও খণ্ড খণ্ড সংঘাত। একটি পর্যায়ে সংঘাত ছড়িয়ে পরে এক বাড়ি থেকে অন্য বাড়িতে। খবর পেয়ে ইউনিয়নের নবাগত চেয়ারম্যান আলহাজ্ব খোকন মিয়া ও থানা পুলিশ সদস্যরা এসে উভয় পক্ষের লোকজনকে শান্ত করার চেষ্টা চালায়। অবশেষে পুলিশ লাঠি চার্জ করে উভয় পক্ষের লোকজনকে ছত্র ভঙ্গ করে দেয়।

সংঘর্ষে গুরুত্বর আহতরা হলন, লালন মাতুব্বর, ইকলাছ মাতুব্বর, ইব্রাহিম মাতুব্বর, ইয়াসিন মাতুব্বর, সোহেল কাজী, শেখ মওদুদ, সরাবউদ্দিন, বক্কার মিয়া, ফারম্নক মিয়া, আলম মেম্বার, ইদ্রিস মোলস্না, আল-আমিন মোলস্না, সাগর মোল্লা, রেদোয়ান মোল্লা, করিব মোল্লা, মাহবুব মোল্লা। আহতদের উদ্ধার করে ভাঙ্গা ও ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

হামিরদী ইউপি চেয়ারম্যান আলহাজ্ব খোকন মিয়া সাংবাদিকদের জানান, দুই মেম্বর প্রার্থীর কর্মীদের মাঝে সংঘাতের খবর পেয়ে আমি দ্রুত মুন্সুরাবাদ গ্রামে চলে আসি। এসময় তাদেরকে শান্ত রাখার জোর চেষ্টা চালিয়ে ব্যর্থ হওয়ায় পুলিশ প্রশাসনকে খর দিলে পুলিশ সদস্যরা দ্রুত ঘটনা স্থলে এসে পৌঁছে পরিস্থিতি তাদের নিয়ন্ত্রণে আনেন।

সাবেক মেম্বার বাবর আলী জানায়, সকালে কিছু বুঝে ওঠার আগেই বর্তমান মেম্বর আলম মেম্বার মোল্লা ও তাদের সমর্থিত লোক জন দেশীয় অস্ত্র নিয়ে আমার সমর্থিত বীর মুক্তিযোদ্ধা মরহুম শুকুর সেকের বাড়ীতে হামলা চালায়। শুকুর শেকের এক সন্তান পুলিশে ও অপর সন্তান সচিবালয়ে চাকুরি করেন। তারা কর্মস্থলে থাকায় বাড়ীতে শিশু ও মহিলা ছিল। তাদের আত্মচিৎকারে গ্রামবাসি এগিয়ে আসে। পরবর্তীতে নব নির্বাচিত চেয়ারম্যান খোকন মোল্লা ও থানা পুলিশ এসে পরিস্থিতি শান্ত হয়।

বর্তমান মেম্বর আলম মোল্লা সংঘর্ষে আহত হয়ে ভাঙ্গা হাসপাতালে ভর্তি থাকায় তার স্ত্রী সাংবাদিকদের জানায়, ভোরে কে বা আমার স্বামীকে উদ্দেশ্য করে বিভিন্ন ভাবে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করতে থাকে। এসময় আমার স্বামী বিষয়টি জানতে ঘর থেকে বের হলেই প্রতিপক্ষের লোকজন তার উপর হামলা চালাতে আসতেই উভয় পক্ষের সংঘর্ষ বাধে। তিনি বলেন, আমার ঘর ভাংচুর করতে প্রতিপক্ষের লোকজন এগিয়ে আসলে বর্তমান চেয়ারম্যান তা রক্ষা করে বলে তিনি জানান।

ভাঙ্গা থানার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ফাহিমা কাদের চৌধুরী জানান, সংঘাতের খর পেয়ে আমি পুলিশ সদস্যদের একটি টিম দ্রুত সেখানে পাঠালে পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। তিনি বলেন অভিযোগ পাওয়া গেলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে পুলিশ।

Leave A Reply

Your email address will not be published.

Title