ঢাকা ১২:০৬ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৭ জুন ২০২৫, ১২ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সরকারি জমিতে অবৈধ ভবন নির্মাণ! প্রশাসনের নিরবতা কেন?25

সরকারি জমিতে অবৈধ ভবন নির্মাণ! প্রশাসনের নিরবতা কেন?25

অনলাইন ডেস্ক
  • আপডেট সময় : ০৮:১৯:০৯ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৬ জুন ২০২৫ ৫ বার পড়া হয়েছে

জেলা প্রতিনিধিঃ কুষ্টিয়ার খোকসা পৌরসভার হাওয়া ভবন এলাকায় গড়াই নদীর তীর ঘেঁষে সরকারি খাস জমিতে অবৈধভাবে বহুতল ভবন নির্মাণ করছেন স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যবসায়ী মেসার্স আলম ট্রেডার্সের প্রোপ্রাইটর রুহুল আলম টুটুল। দুই মাস ধরে প্রকাশ্যে ভবন নির্মাণ কাজ চললেও প্রশাসনের ভূমিকা রহস্যজনকভাবে নীরব, যা স্থানীয়দের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে।

বৃহস্পতিবার দুপুরে সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, খোকসা শহর থেকে কমলাপুর সড়কে হাওয়া ভবন এলাকার গড়াই নদীর তীরে একটি নির্মাণাধীন ভবনের কাজ চলছে। ভবনটির সামনের অংশে রয়েছে মেসার্স আলম ট্রেডার্স নামের একটি হার্ডওয়ারের দোকান। পেছনের দিকে নদীর তীরবর্তী সরকারি জমিতে পাকা ভবন নির্মাণের কাজ চলছে।

ভবনের ভেতরে তখন কয়েকজন শ্রমিক নির্মাণকাজে ব্যস্ত ছিলেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শ্রমিক বলেন, “ঘরের ভিতরে কয়েক ফিট সরকারি জমি আছে, এই নিয়ে মালিকের সাথেই কথা বলেন।”

স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, দীর্ঘদিন ধরে টুটুল এলাকায় ক্ষমতাবান হিসেবে পরিচিত। ভয়ে কেউ মুখ খুলতে সাহস পায় না। একাধিক ব্যক্তি নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, প্রায় দুই মাস ধরে সরকারি জমি দখল করে বহুতল ভবন নির্মাণ করলেও প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো বাধা আসেনি।

স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, “সরকারি জমিতে পাকা স্থাপনা নির্মাণ হচ্ছে—এটা সবাই জানে। অথচ প্রশাসন যেন চোখ বন্ধ করে রেখেছে। এভাবে যদি কেউ নদীর পাড় দখল করে, তাহলে তো পরিবেশ বিপর্যয়ের আশঙ্কা থেকেই যায়।”

চাঞ্চল্যকর তথ্য হলো—এ ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে ভবনের মালিক রুহুল আলম টুটুল নিজেই স্বীকার করেন যে, ভবনের পেছনের দিকে কিছু সরকারি জমি রয়েছে। তিনি বলেন, “ব্যবসা বড় করার জন্য নতুন ভবন করছি। পেছনে অল্প কিছু সরকারি জমি আছে। প্রশাসন চাইলে ভেঙে দিলে উঠিয়ে দেব।”

অবশ্য, খাস জমির ব্যবস্থাপনা বিষয়ে কুষ্টিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রাশিদুর রহমান বলেন, “নির্মাণাধীন ভবনটি গড়াই নদীর তীরবর্তী হলেও এটি ১ নম্বর খাস খতিয়ানের জমি। এ বিষয়ে দায়িত্ব জেলা প্রশাসনের রাজস্ব শাখার।”

অবাক করার মতো তথ্য হলো, খোকসা উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) প্রদীপ্ত রায় দীপন সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে জানান, তিনি ঘটনাটি জানেন না। তিনি বলেন, “বিষয়টি আমার নলেজে ছিল না। খোঁজ নিয়ে দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

স্থানীয়রা বলছেন, প্রশাসনের এই ‘নলেজে নেই’ উত্তর আসলে দায় এড়ানোর চেষ্টা। কারণ এত বড় স্থাপনা নির্মাণ কাজ দুই মাস ধরে চলতে পারে না, যদি প্রশাসন সচেতন ও সক্রিয় থাকতো।

বিশ্লেষকদের মতে, নদী তীরবর্তী সরকারি জমি দখল করে পাকা স্থাপনা নির্মাণ শুধুমাত্র আইনের ব্যত্যয়ই নয়, বরং পরিবেশ ও নদী ব্যবস্থাপনার ওপর দীর্ঘমেয়াদি নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।

সরকারি খাস জমি রক্ষা এবং দখলদারদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য স্থানীয় সচেতন মহল ও পরিবেশবাদীরা দ্রুত প্রশাসনিক হস্তক্ষেপ দাবি করেছেন।

এই পরিস্থিতিতে প্রশ্ন উঠছে—যেখানে সাধারণ মানুষ সরকারি জমিতে একটি বাঁশের ঘর তুললে উচ্ছেদ করা হয়, সেখানে প্রভাবশালীরা কীভাবে বহুতল পাকা ভবন গড়ে তুলছে? প্রশাসনের নীরবতা কি শুধুই অবহেলা, না এর পেছনে রয়েছে অন্য কোনো অদৃশ্য চাপ?

এখন দেখার বিষয়, ইউএনও প্রদীপ্ত রায় দীপনের আশ্বাস অনুযায়ী আদৌ কি আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হয়, নাকি খোকসাবাসীকে আরও একবার নীরব দুর্নীতির চিত্র দেখতে হবে?

নতুন প্রজন্মের অনলাইন টিভি

নিউজটি শেয়ার করুন

সরকারি জমিতে অবৈধ ভবন নির্মাণ! প্রশাসনের নিরবতা কেন?25

সরকারি জমিতে অবৈধ ভবন নির্মাণ! প্রশাসনের নিরবতা কেন?25

আপডেট সময় : ০৮:১৯:০৯ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৬ জুন ২০২৫

জেলা প্রতিনিধিঃ কুষ্টিয়ার খোকসা পৌরসভার হাওয়া ভবন এলাকায় গড়াই নদীর তীর ঘেঁষে সরকারি খাস জমিতে অবৈধভাবে বহুতল ভবন নির্মাণ করছেন স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যবসায়ী মেসার্স আলম ট্রেডার্সের প্রোপ্রাইটর রুহুল আলম টুটুল। দুই মাস ধরে প্রকাশ্যে ভবন নির্মাণ কাজ চললেও প্রশাসনের ভূমিকা রহস্যজনকভাবে নীরব, যা স্থানীয়দের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে।

বৃহস্পতিবার দুপুরে সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, খোকসা শহর থেকে কমলাপুর সড়কে হাওয়া ভবন এলাকার গড়াই নদীর তীরে একটি নির্মাণাধীন ভবনের কাজ চলছে। ভবনটির সামনের অংশে রয়েছে মেসার্স আলম ট্রেডার্স নামের একটি হার্ডওয়ারের দোকান। পেছনের দিকে নদীর তীরবর্তী সরকারি জমিতে পাকা ভবন নির্মাণের কাজ চলছে।

ভবনের ভেতরে তখন কয়েকজন শ্রমিক নির্মাণকাজে ব্যস্ত ছিলেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শ্রমিক বলেন, “ঘরের ভিতরে কয়েক ফিট সরকারি জমি আছে, এই নিয়ে মালিকের সাথেই কথা বলেন।”

স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, দীর্ঘদিন ধরে টুটুল এলাকায় ক্ষমতাবান হিসেবে পরিচিত। ভয়ে কেউ মুখ খুলতে সাহস পায় না। একাধিক ব্যক্তি নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, প্রায় দুই মাস ধরে সরকারি জমি দখল করে বহুতল ভবন নির্মাণ করলেও প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো বাধা আসেনি।

স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, “সরকারি জমিতে পাকা স্থাপনা নির্মাণ হচ্ছে—এটা সবাই জানে। অথচ প্রশাসন যেন চোখ বন্ধ করে রেখেছে। এভাবে যদি কেউ নদীর পাড় দখল করে, তাহলে তো পরিবেশ বিপর্যয়ের আশঙ্কা থেকেই যায়।”

চাঞ্চল্যকর তথ্য হলো—এ ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে ভবনের মালিক রুহুল আলম টুটুল নিজেই স্বীকার করেন যে, ভবনের পেছনের দিকে কিছু সরকারি জমি রয়েছে। তিনি বলেন, “ব্যবসা বড় করার জন্য নতুন ভবন করছি। পেছনে অল্প কিছু সরকারি জমি আছে। প্রশাসন চাইলে ভেঙে দিলে উঠিয়ে দেব।”

অবশ্য, খাস জমির ব্যবস্থাপনা বিষয়ে কুষ্টিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রাশিদুর রহমান বলেন, “নির্মাণাধীন ভবনটি গড়াই নদীর তীরবর্তী হলেও এটি ১ নম্বর খাস খতিয়ানের জমি। এ বিষয়ে দায়িত্ব জেলা প্রশাসনের রাজস্ব শাখার।”

অবাক করার মতো তথ্য হলো, খোকসা উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) প্রদীপ্ত রায় দীপন সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে জানান, তিনি ঘটনাটি জানেন না। তিনি বলেন, “বিষয়টি আমার নলেজে ছিল না। খোঁজ নিয়ে দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

স্থানীয়রা বলছেন, প্রশাসনের এই ‘নলেজে নেই’ উত্তর আসলে দায় এড়ানোর চেষ্টা। কারণ এত বড় স্থাপনা নির্মাণ কাজ দুই মাস ধরে চলতে পারে না, যদি প্রশাসন সচেতন ও সক্রিয় থাকতো।

বিশ্লেষকদের মতে, নদী তীরবর্তী সরকারি জমি দখল করে পাকা স্থাপনা নির্মাণ শুধুমাত্র আইনের ব্যত্যয়ই নয়, বরং পরিবেশ ও নদী ব্যবস্থাপনার ওপর দীর্ঘমেয়াদি নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।

সরকারি খাস জমি রক্ষা এবং দখলদারদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য স্থানীয় সচেতন মহল ও পরিবেশবাদীরা দ্রুত প্রশাসনিক হস্তক্ষেপ দাবি করেছেন।

এই পরিস্থিতিতে প্রশ্ন উঠছে—যেখানে সাধারণ মানুষ সরকারি জমিতে একটি বাঁশের ঘর তুললে উচ্ছেদ করা হয়, সেখানে প্রভাবশালীরা কীভাবে বহুতল পাকা ভবন গড়ে তুলছে? প্রশাসনের নীরবতা কি শুধুই অবহেলা, না এর পেছনে রয়েছে অন্য কোনো অদৃশ্য চাপ?

এখন দেখার বিষয়, ইউএনও প্রদীপ্ত রায় দীপনের আশ্বাস অনুযায়ী আদৌ কি আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হয়, নাকি খোকসাবাসীকে আরও একবার নীরব দুর্নীতির চিত্র দেখতে হবে?