ঢাকা ০৯:০৮ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৭ জুন ২০২৫, ৩ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
পদ্মার ভাঙন আতংকে দিন কাটাচ্ছেন তীরবর্তী মানুষ, বাড়ছে নদীর পানি মোবাইল চুরির দায়ে খুনের ঘটনায় পাবনায় দুটি বাড়িতে অগ্নিসংযোগ, ভাঙচুর ও লুটপাট ৩১ দফা বাস্তবায়নে মাঠে আবুল কাউছার আশা, চলছে মাস্ক ও লিফলেট বিতরণ25 সিএসএস ফ্রি মেডিক্যাল ক্যাম্প কুমারখালীতে অনুষ্ঠিত: শতাধিক নারী-শিশু পেল সেবা কুড়িগ্রামের বহুদিনের স্বপ্ন বাস্তবায়নে প্রশাসনের সক্রিয়তা25 ড্রিমলাইনার নিয়ে সতর্ক বিমান, ফ্লাইটের আগে করা হচ্ছে সর্বোচ্চ ইন্সপেকশন ‘ভয় দেখিয়ে জুলাই গণহত্যার বিচার থেকে দূরে সরানো যাবে না’25 ঢাকায় হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টির আভাস, কমবে তাপমাত্রা25 ঈদযাত্রায় সড়ক দুর্ঘটনায় ৩৯০ জন নিহত25 অভিষেকেই খরুচে বোলিংয়ের বিশ্ব রেকর্ড আইরিশ বোলারের

১২ দিনে পদ্মার গর্ভে শতাধিক ঘর, গ্রাম ছাড়ছে মানুষ

অনলাইন ডেস্ক
  • আপডেট সময় : ১১:০১:৫১ অপরাহ্ন, শনিবার, ৮ জুলাই ২০২৩ ১৭ বার পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক: পদ্মা নদীর পানি বৃদ্ধির সাথে সাথে ফরিদপুর সদরের নর্থ চ্যানেল ইউনিয়নে তীব্র ভাঙন দেখা দিয়েছে। গত ২৬ জুন থেকে এ ভাঙন শুরু হয় ইউনিয়নের ইউসুফ মাতুব্বরের ডাঙ্গী গ্রামে। ভাঙনের কবলে পড়ে গত ১২ দিনে শতাধিক পরিবার গৃহহারা হয়েছেন। নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে অন্তত ১০ একর ফসলি জমি।

ভাঙনের পাশাপা‌শি ঝুঁকিতে রয়েছে আরো দেড় শতাধিক পরিবারের বসতবাড়ি, একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কমিউনিটি ক্লিনিক ও মসজিদ।

এলাকাবাসী জানায়, গত ১২ দিন ধরে নদী ভাঙন চলছে। মানুষ বসত ভিটা ফসলি জমি হারাচ্ছে। ত‌বে এখনও সং‌শ্লিষ্ট কো‌নো সরকা‌রি বা বেসরকারি পর্যায়ে তাদের কোনো সাহায্য করা হয়নি।

কেউ ঘটনাস্থল পরিদর্শনেও আসেননি বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর। এদিকে ভাঙনরোধে বুধবার (৫ জুলাই) থেকে বালু ভর্তি জিও ব্যাগ ফেলা শুরু করেছে ফরিদপুর পানি উন্নয়ন বোর্ড।

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, নদীর পাড়ে দুই কিলোমিটার এলাকাজুড়ে এ ভাঙন চলছে। ইতিমধ্যে নদীর পাড় ভাঙতে ভাঙ‌তে ৩০০ থেকে ৪০০ মিটার ভেতরে ঢুকে গেছে।

এর ফ‌লে বিলীন হয়ে যাচ্ছে বিভিন্ন ফসলি জমি। ওই জমিতে আউশ ধান, তিল, ইরি ধান ও ভুট্টার চাষ হয়েছিল। ভাঙনের মুখে ফসল কেটে নিতে বাধ‌্য হ‌চ্ছেন ক্ষ‌তিগ্রস্তরা। জ্যোৎস্না বেগম বলেন, ‘পদ্মা নদী আমার ভিটা মাটি সব কাইড়া নেছে। জমিও গে‌ছে। এ অবস্থায় যতটুকু পারি দুই ছেলেকে নিয়ে তিল কাইটা নিচ্ছি।’ ওই এলাকার বাসিন্দা কৃষক লালন শেখ (৪৫) বলেন, আমার দুই একর ফসলি জমি ও বসত বা‌ড়ি পদ্মা নদী‌তে বিলীন হয়ে গেছে।

একই গ্রা‌মের আনসারউদ্দিন মোল্লা (৬৫) বলেন, ‘এবার আমাদের ঈদ ছিল না। ছেলে মেয়ের মুখে একটু সেমাই তুইলা দিতে পারি নাই। কী যে হুড়িঝুড়ির মধ্যে ঈদের দিন পার করেছি তা আমরাই জানি। আমাদের কষ্ট দেখার কেউ নেই।’

এ ছাড়া ভাঙ‌নের ঝুঁকি‌তে আছে আরো দেড় শতাধিক ঘর। ভাঙন কবলিত স্থান থেকে ১২০ মিটার দূরে রয়েছে চর টেপুরাকা‌ন্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ইউনিয়ন কমিউনিটি ক্লিনিক ও ইউসুফ আলী মাতুব্বরের ডাঙ্গী জামে মসজিদ। এ প্রতিষ্ঠানগুলোও ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে।

চর টেপুরাকা‌ন্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সুকান্ত ঘোষ বলেন, ঈদের আগে ভাঙনের পরিস্থিতি জানিয়ে জেলা প্রশাসক ও সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে লিখিত চিঠি দেওয়া হয়েছে। আগামী ১০ জুলাই উপজেলা মাসিক সমন্বয় সভায় এ বিষয়টি তোলা হবে। ওই সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পরবর্তী করণীয় ঠিক করা হবে।

নর্থ চ্যানেল ইউনিয়ন পরিষদের ইউপি চেয়ারম্যান মোফাজ্জেল হোসেন বলেন, ভাঙনে ক্ষ‌তিগ্রস্ত কো‌নো ব্যক্তিকে এখনও সাহায্য করা হয়নি। ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা করা হয়েছে। ভাঙনরোধে কাজ চলছে সীমিত জায়গায়। কিন্তু ভাঙনের ব্যাপকতা ও বিস্তৃতি অনেক বেশি। এক‌দি‌কে কাজ করা হলে অন্যদিকে ভেঙে যাচ্ছে।

ফরিদপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) লিটন ঢালী বলেন, ভাঙনের ব্যাপারে ফরিদপুর জেলা প্রশাসক (ডিসি) স্যারের মাধ্যমে ফরিদপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। তারা ইতোমধ্যে ভাঙনরোধে কাজ শুরু করেছে।

ফরিদপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী পার্থ প্রতীম সাহা বলেন, ভাঙনরোধে বালু ভর্তি জিও ব্যাগ ফেলা শুরু হয়েছে। দুটি প্যাকেজে ভাঙন কবলিত এলাকার ১৫৩ মিটার অংশে এ কাজ চলছে। আর দুটি প্যাকেজে ২৫০ কেজি বালুসহ ১১ হাজার ৩৪টি জিও ব্যাগ এবং ১৭৫ কেজি বালুসহ দুই হাজার ৩৭৭টি জিওব্যাগ স্থাপনের কাজ চলছে।

নতুন প্রজন্মের অনলাইন টিভি

নিউজটি শেয়ার করুন

আপলোডকারীর তথ্য
ট্যাগস :

১২ দিনে পদ্মার গর্ভে শতাধিক ঘর, গ্রাম ছাড়ছে মানুষ

আপডেট সময় : ১১:০১:৫১ অপরাহ্ন, শনিবার, ৮ জুলাই ২০২৩

নিজস্ব প্রতিবেদক: পদ্মা নদীর পানি বৃদ্ধির সাথে সাথে ফরিদপুর সদরের নর্থ চ্যানেল ইউনিয়নে তীব্র ভাঙন দেখা দিয়েছে। গত ২৬ জুন থেকে এ ভাঙন শুরু হয় ইউনিয়নের ইউসুফ মাতুব্বরের ডাঙ্গী গ্রামে। ভাঙনের কবলে পড়ে গত ১২ দিনে শতাধিক পরিবার গৃহহারা হয়েছেন। নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে অন্তত ১০ একর ফসলি জমি।

ভাঙনের পাশাপা‌শি ঝুঁকিতে রয়েছে আরো দেড় শতাধিক পরিবারের বসতবাড়ি, একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কমিউনিটি ক্লিনিক ও মসজিদ।

এলাকাবাসী জানায়, গত ১২ দিন ধরে নদী ভাঙন চলছে। মানুষ বসত ভিটা ফসলি জমি হারাচ্ছে। ত‌বে এখনও সং‌শ্লিষ্ট কো‌নো সরকা‌রি বা বেসরকারি পর্যায়ে তাদের কোনো সাহায্য করা হয়নি।

কেউ ঘটনাস্থল পরিদর্শনেও আসেননি বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর। এদিকে ভাঙনরোধে বুধবার (৫ জুলাই) থেকে বালু ভর্তি জিও ব্যাগ ফেলা শুরু করেছে ফরিদপুর পানি উন্নয়ন বোর্ড।

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, নদীর পাড়ে দুই কিলোমিটার এলাকাজুড়ে এ ভাঙন চলছে। ইতিমধ্যে নদীর পাড় ভাঙতে ভাঙ‌তে ৩০০ থেকে ৪০০ মিটার ভেতরে ঢুকে গেছে।

এর ফ‌লে বিলীন হয়ে যাচ্ছে বিভিন্ন ফসলি জমি। ওই জমিতে আউশ ধান, তিল, ইরি ধান ও ভুট্টার চাষ হয়েছিল। ভাঙনের মুখে ফসল কেটে নিতে বাধ‌্য হ‌চ্ছেন ক্ষ‌তিগ্রস্তরা। জ্যোৎস্না বেগম বলেন, ‘পদ্মা নদী আমার ভিটা মাটি সব কাইড়া নেছে। জমিও গে‌ছে। এ অবস্থায় যতটুকু পারি দুই ছেলেকে নিয়ে তিল কাইটা নিচ্ছি।’ ওই এলাকার বাসিন্দা কৃষক লালন শেখ (৪৫) বলেন, আমার দুই একর ফসলি জমি ও বসত বা‌ড়ি পদ্মা নদী‌তে বিলীন হয়ে গেছে।

একই গ্রা‌মের আনসারউদ্দিন মোল্লা (৬৫) বলেন, ‘এবার আমাদের ঈদ ছিল না। ছেলে মেয়ের মুখে একটু সেমাই তুইলা দিতে পারি নাই। কী যে হুড়িঝুড়ির মধ্যে ঈদের দিন পার করেছি তা আমরাই জানি। আমাদের কষ্ট দেখার কেউ নেই।’

এ ছাড়া ভাঙ‌নের ঝুঁকি‌তে আছে আরো দেড় শতাধিক ঘর। ভাঙন কবলিত স্থান থেকে ১২০ মিটার দূরে রয়েছে চর টেপুরাকা‌ন্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ইউনিয়ন কমিউনিটি ক্লিনিক ও ইউসুফ আলী মাতুব্বরের ডাঙ্গী জামে মসজিদ। এ প্রতিষ্ঠানগুলোও ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে।

চর টেপুরাকা‌ন্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সুকান্ত ঘোষ বলেন, ঈদের আগে ভাঙনের পরিস্থিতি জানিয়ে জেলা প্রশাসক ও সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে লিখিত চিঠি দেওয়া হয়েছে। আগামী ১০ জুলাই উপজেলা মাসিক সমন্বয় সভায় এ বিষয়টি তোলা হবে। ওই সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পরবর্তী করণীয় ঠিক করা হবে।

নর্থ চ্যানেল ইউনিয়ন পরিষদের ইউপি চেয়ারম্যান মোফাজ্জেল হোসেন বলেন, ভাঙনে ক্ষ‌তিগ্রস্ত কো‌নো ব্যক্তিকে এখনও সাহায্য করা হয়নি। ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা করা হয়েছে। ভাঙনরোধে কাজ চলছে সীমিত জায়গায়। কিন্তু ভাঙনের ব্যাপকতা ও বিস্তৃতি অনেক বেশি। এক‌দি‌কে কাজ করা হলে অন্যদিকে ভেঙে যাচ্ছে।

ফরিদপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) লিটন ঢালী বলেন, ভাঙনের ব্যাপারে ফরিদপুর জেলা প্রশাসক (ডিসি) স্যারের মাধ্যমে ফরিদপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। তারা ইতোমধ্যে ভাঙনরোধে কাজ শুরু করেছে।

ফরিদপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী পার্থ প্রতীম সাহা বলেন, ভাঙনরোধে বালু ভর্তি জিও ব্যাগ ফেলা শুরু হয়েছে। দুটি প্যাকেজে ভাঙন কবলিত এলাকার ১৫৩ মিটার অংশে এ কাজ চলছে। আর দুটি প্যাকেজে ২৫০ কেজি বালুসহ ১১ হাজার ৩৪টি জিও ব্যাগ এবং ১৭৫ কেজি বালুসহ দুই হাজার ৩৭৭টি জিওব্যাগ স্থাপনের কাজ চলছে।