ঢাকা ১১:৫৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৪ নভেম্বর ২০২৫, ৩০ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

কিশোরগঞ্জ নরসুন্দার তীর প্রভাবশালীদের দখলে স্হায়ী ভবন নির্মানের মহোৎসব

অনলাইন ডেস্ক
  • আপডেট সময় : ১০:৩২:২৯ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৪ নভেম্বর ২০২৫
  • / 6

কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধিঃ কিশোরগঞ্জ শহরের ফুটপাত আর নদীর তীর এখন আর সাধারণ মানুষের হাঁটার পথ নয়। দখলে গেছে একটি প্রভাবশালী মহলের। দীর্ঘদিন ধরে অস্থায়ী দোকানপাট বসিয়ে ব্যবসা চালানোর পর সম্প্রতি স্থায়ীভাবে ভবন নির্মাণ শুরু করেছে দখলদাররা। গৌরাঙ্গ বাজার, পুরান থানা ও বড়বাজার ব্রীজ এলাকা থেকে শুরু করে নদীর তীর পর্যন্ত, সর্বত্রই চলছে অবৈধ দখল ও নির্মাণকাজ। গত ৫ আগস্টের পর থেকেই প্রশাসনের চোখের সামনেই এ নির্মাণ শুরু হলেও কার্যকর কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় সাধারণ মানুষের মধ্যে তৈরি হয়েছে ক্ষোভ ও হতাশা। স্থানীয়দের প্রশ্ন, প্রশাসন জানে, দেখেও কেন চুপ?

সরেজমিনে দেখা যায়, কিশোরগঞ্জ শহরের ভেতর দিয়ে বয়ে যাওয়া নরসুন্দা নদীটি ১১০ কোটি টাকা ব্যয়ে খনন করা হয়। সেসময় শহরের সৌন্দর্য্য বর্ধন ও মানুষের হাটার জন্য নদীর দুই পাশ দিয়ে নির্মাণ করা হয় ওয়াকওয়ে। সেই ওয়াকওয়ে দখল করে গড়ে তোলা হয়েছে ছোট-বড় বিভিন্ন দোকান। নরসুন্দা নদীর উপর স্থাপিত শহরের গৌরাঙ্গ বাজার ব্রীজ। এই ব্রীজের পাশে গত এক বছর আগেও কোন স্থায়ী স্থাপনা ছিলনা। তীর ঘেঁষে ফুটপাতে অস্থায়ী দোকান ছিল। সম্প্রতী সেই জায়গা দখলে নিয়ে নদীর তীর ঘেঁষে গড়ে তোলা হচ্ছে ইট-বালু-সিমেন্টের স্থায়ী ভবন। স্থানীয়দের অভিযোগ, এসব ভবন নির্মাণে জড়িত এক প্রভাবশালী মহল, যারা প্রশাসনের ছত্রচ্ছায়াতেই বহুদিন ধরে এসব এলাকা দখল করে রেখেছে। গৌরাঙ্গ বাজার ও বড়বাজার ব্রীজ এলাকায় এখন ফুটপাতের এক ইঞ্চি জায়গাও ফাঁকা নেই। এমনকি শিশুদের বিনোদনের জন্য নির্মাণ করা পৌর শিশু পার্কের প্রবেশের রাস্তাও দখল করে গড়ে তোলা হয়েছে দোকান। বড় বাজার, গৌরাঙ্গ বাজার ও গুরুদয়াল মুক্তমঞ্চ এলাকায় কাপড়, কসমেটিকস, জুতা, খেলনা, কাঁচামাল, মাছের বাজার, এমনকি খাবারের দোকান পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়েছে মানুষের হাঁটার জন্য নির্মাণ করা পুরো ওয়াকওয়েজুড়ে।

পথচারী নুরুল ইসলাম খান বলেন, নদীর পাড় দিয়ে আগে খোলা ছিল। মানুষ চলাচল করেছে। এখন সেখানে মার্কেট হচ্ছে। আমরা জানতাম এইগুলো সরকারি জায়গা। এখন নিজেদের দাবি করে রাস্তা বন্ধ করে মার্কেট নির্মাণ করা হচ্ছে। আমরা কিভাবে চলাফেরা করবো?

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ফুটপাতের ব্যবসায়ী বলেন, এইটা অবশ্যই মানুষের চলাচলের জায়গা এখানে ব্যবসা করার কারণে মানুষের ভোগান্তি হচ্ছে। কিন্তু কি আর করবো। কিশোরগঞ্জ তো কোন হকার মার্কেট নাই। আর এই গৌরাঙ্গ বাজার ব্রীজের পাশে নদীর পাড়ে গত এক বছর আগেও কোন স্থায়ী দোকান ছিল না। এখন বিল্ডিং করে স্থায়ী দোকান করা হচ্ছে।

আরেক ব্যবসায়ী বলেন, পার্কের সামনে (কিশোরগঞ্জ পৌর শিশু পার্ক) ৫ বছর যাবত ব্যবসা করে আসছি। প্রতিবছর ৪০-৫০ হজার টাকা অগ্রিম দিতে হয়। প্রতিদিন আবার ২৫০ টাকা দিয়ে থাকি। সরকারি জায়গায় ব্যবসা করি বাধ্যতা মূলক টাকা দিতেই হবে। এখানে ৭০টি দোকান আছে, সকলকেই দিতে হয়। পার্কের লোকজন আমাদের কাছ থেকে টাকা নেই। তারা বলে সরকার থেকে লিজ আনা হয়েছে। টাকা না দলে ব্যবসা করা যায় না।

মালিক পক্ষ মোঃ জাভেদ ইকবাল বলেন, নদীর পাশে আমাদের বিল্ডিং ছিল। নদীর অজুহাত দেখিয়ে বিল্ডিংটা ভেঙ্গে ফেলা হয়েছিল। কাগজপত্র দেখানোর সময়টুকু দেওয়া হয়নি। সিএস খতিয়ান অনুযায়ী এইটা নদীর জায়গা না, আমাদের পৈতৃক সম্পত্তি। নদীর পাড়ে অনেকেই আদালত থেকে মামলার রায় পেয়ে বিল্ডিং করছে।

কিশোরগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মোহাম্মদ নাহিদ হাসান খান বলেন, ফুটপাত, ওয়াকওয়ে ও নদীর জায়গা সরকারি সম্পত্তি। এগুলো কেউ দখল করতে পারে না। আমরা বিষয়টি অবগত হয়েছি। খুব দ্রুতই অভিযান চালানো হবে, প্রয়োজনে উচ্ছেদ কার্যক্রমও শুরু হবে।]

নতুন প্রজন্মের অনলাইন টিভি

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

কিশোরগঞ্জ নরসুন্দার তীর প্রভাবশালীদের দখলে স্হায়ী ভবন নির্মানের মহোৎসব

আপডেট সময় : ১০:৩২:২৯ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৪ নভেম্বর ২০২৫

কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধিঃ কিশোরগঞ্জ শহরের ফুটপাত আর নদীর তীর এখন আর সাধারণ মানুষের হাঁটার পথ নয়। দখলে গেছে একটি প্রভাবশালী মহলের। দীর্ঘদিন ধরে অস্থায়ী দোকানপাট বসিয়ে ব্যবসা চালানোর পর সম্প্রতি স্থায়ীভাবে ভবন নির্মাণ শুরু করেছে দখলদাররা। গৌরাঙ্গ বাজার, পুরান থানা ও বড়বাজার ব্রীজ এলাকা থেকে শুরু করে নদীর তীর পর্যন্ত, সর্বত্রই চলছে অবৈধ দখল ও নির্মাণকাজ। গত ৫ আগস্টের পর থেকেই প্রশাসনের চোখের সামনেই এ নির্মাণ শুরু হলেও কার্যকর কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় সাধারণ মানুষের মধ্যে তৈরি হয়েছে ক্ষোভ ও হতাশা। স্থানীয়দের প্রশ্ন, প্রশাসন জানে, দেখেও কেন চুপ?

সরেজমিনে দেখা যায়, কিশোরগঞ্জ শহরের ভেতর দিয়ে বয়ে যাওয়া নরসুন্দা নদীটি ১১০ কোটি টাকা ব্যয়ে খনন করা হয়। সেসময় শহরের সৌন্দর্য্য বর্ধন ও মানুষের হাটার জন্য নদীর দুই পাশ দিয়ে নির্মাণ করা হয় ওয়াকওয়ে। সেই ওয়াকওয়ে দখল করে গড়ে তোলা হয়েছে ছোট-বড় বিভিন্ন দোকান। নরসুন্দা নদীর উপর স্থাপিত শহরের গৌরাঙ্গ বাজার ব্রীজ। এই ব্রীজের পাশে গত এক বছর আগেও কোন স্থায়ী স্থাপনা ছিলনা। তীর ঘেঁষে ফুটপাতে অস্থায়ী দোকান ছিল। সম্প্রতী সেই জায়গা দখলে নিয়ে নদীর তীর ঘেঁষে গড়ে তোলা হচ্ছে ইট-বালু-সিমেন্টের স্থায়ী ভবন। স্থানীয়দের অভিযোগ, এসব ভবন নির্মাণে জড়িত এক প্রভাবশালী মহল, যারা প্রশাসনের ছত্রচ্ছায়াতেই বহুদিন ধরে এসব এলাকা দখল করে রেখেছে। গৌরাঙ্গ বাজার ও বড়বাজার ব্রীজ এলাকায় এখন ফুটপাতের এক ইঞ্চি জায়গাও ফাঁকা নেই। এমনকি শিশুদের বিনোদনের জন্য নির্মাণ করা পৌর শিশু পার্কের প্রবেশের রাস্তাও দখল করে গড়ে তোলা হয়েছে দোকান। বড় বাজার, গৌরাঙ্গ বাজার ও গুরুদয়াল মুক্তমঞ্চ এলাকায় কাপড়, কসমেটিকস, জুতা, খেলনা, কাঁচামাল, মাছের বাজার, এমনকি খাবারের দোকান পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়েছে মানুষের হাঁটার জন্য নির্মাণ করা পুরো ওয়াকওয়েজুড়ে।

পথচারী নুরুল ইসলাম খান বলেন, নদীর পাড় দিয়ে আগে খোলা ছিল। মানুষ চলাচল করেছে। এখন সেখানে মার্কেট হচ্ছে। আমরা জানতাম এইগুলো সরকারি জায়গা। এখন নিজেদের দাবি করে রাস্তা বন্ধ করে মার্কেট নির্মাণ করা হচ্ছে। আমরা কিভাবে চলাফেরা করবো?

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ফুটপাতের ব্যবসায়ী বলেন, এইটা অবশ্যই মানুষের চলাচলের জায়গা এখানে ব্যবসা করার কারণে মানুষের ভোগান্তি হচ্ছে। কিন্তু কি আর করবো। কিশোরগঞ্জ তো কোন হকার মার্কেট নাই। আর এই গৌরাঙ্গ বাজার ব্রীজের পাশে নদীর পাড়ে গত এক বছর আগেও কোন স্থায়ী দোকান ছিল না। এখন বিল্ডিং করে স্থায়ী দোকান করা হচ্ছে।

আরেক ব্যবসায়ী বলেন, পার্কের সামনে (কিশোরগঞ্জ পৌর শিশু পার্ক) ৫ বছর যাবত ব্যবসা করে আসছি। প্রতিবছর ৪০-৫০ হজার টাকা অগ্রিম দিতে হয়। প্রতিদিন আবার ২৫০ টাকা দিয়ে থাকি। সরকারি জায়গায় ব্যবসা করি বাধ্যতা মূলক টাকা দিতেই হবে। এখানে ৭০টি দোকান আছে, সকলকেই দিতে হয়। পার্কের লোকজন আমাদের কাছ থেকে টাকা নেই। তারা বলে সরকার থেকে লিজ আনা হয়েছে। টাকা না দলে ব্যবসা করা যায় না।

মালিক পক্ষ মোঃ জাভেদ ইকবাল বলেন, নদীর পাশে আমাদের বিল্ডিং ছিল। নদীর অজুহাত দেখিয়ে বিল্ডিংটা ভেঙ্গে ফেলা হয়েছিল। কাগজপত্র দেখানোর সময়টুকু দেওয়া হয়নি। সিএস খতিয়ান অনুযায়ী এইটা নদীর জায়গা না, আমাদের পৈতৃক সম্পত্তি। নদীর পাড়ে অনেকেই আদালত থেকে মামলার রায় পেয়ে বিল্ডিং করছে।

কিশোরগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মোহাম্মদ নাহিদ হাসান খান বলেন, ফুটপাত, ওয়াকওয়ে ও নদীর জায়গা সরকারি সম্পত্তি। এগুলো কেউ দখল করতে পারে না। আমরা বিষয়টি অবগত হয়েছি। খুব দ্রুতই অভিযান চালানো হবে, প্রয়োজনে উচ্ছেদ কার্যক্রমও শুরু হবে।]