ঢাকা ০৯:২২ অপরাহ্ন, রবিবার, ০৬ জুলাই ২০২৫, ২২ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
ডেঙ্গু আপডেট বাংলাদেশ: একদিনে ৩১৭ জন আক্রান্ত, নেই নতুন মৃত্যু যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ সম্পর্ক: বাণিজ্য ও ভূরাজনীতি, গণতন্ত্র নয় চাঁপাইনবাবগঞ্জে জাতীয় নাগরিক পার্টির পথসভা: সীমান্ত আগ্রাসন মেনে নেওয়া হবে না বাংলাদেশ বনাম শ্রীলঙ্কা: দ্বিতীয় ওয়ানডেতে জয়, শান্ত’র চোটে দুশ্চিন্তা ইলন মাস্কের নতুন রাজনৈতিক দল ‘আমেরিকা পার্টি’ যুক্তরাষ্ট্রে ঘোষণা বাংলাদেশে জঙ্গিবাদ নির্মূল হয়েছে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম আজকের আবহাওয়ার খবর: ঢাকায় মেঘলা আকাশ ও বৃষ্টি সম্ভাবনা | ৫ জুলাই ২০২৫ গাজায় ইসরায়েলি হামলায় ১৩৮ নিহত, আহত ৬২৫ চুয়াডাঙ্গা ট্রেন লাইনচ্যুত: জীবননগরে মালবাহী ট্রেন দুর্ঘটনায় খুলনার রেল যোগাযোগ বন্ধ হিমাচল প্রদেশ বন্যা: ভারী বর্ষণ ও ভূমিধসে ৬৩ জনের মৃত্যু

যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ সম্পর্ক: বাণিজ্য ও ভূরাজনীতি, গণতন্ত্র নয়

অনলাইন ডেস্ক
  • আপডেট সময় : ০৯:১৪:৪২ অপরাহ্ন, রবিবার, ৬ জুলাই ২০২৫ ৩ বার পড়া হয়েছে

যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ সম্পর্ক নিয়ে নতুন পর্যায়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। ট্রাম্প প্রশাসনের কাছে বাংলাদেশের গণতন্ত্রের চেয়ে বাণিজ্য ও ভূরাজনৈতিক প্রতিযোগিতা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে বলে জানিয়েছেন ওয়াশিংটনভিত্তিক উইলসন সেন্টারের সাউথ এশিয়া ইনস্টিটিউটের পরিচালক মাইকেল কুগেলম্যান।

যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান ও ৩৭% শুল্ক চ্যালেঞ্জ

বাংলাদেশ বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের ৩৭% শুল্কের চাপে রয়েছে। ট্রাম্প প্রশাসন এই শুল্ক নীতি চালু করে এবং এখন পর্যন্ত তা বহাল রয়েছে। কুগেলম্যান বলেন, “যদি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য চুক্তি না হয়, তবে এই শুল্কের মুখে পড়তে হবে।”

বাংলাদেশ সরকার এই সংকট মোকাবিলায় নীতিগত বৈঠক করেছে। গত এপ্রিল মাসে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস জরুরি বৈঠকে নির্দেশনা দেন, যার ভিত্তিতে অর্থ উপদেষ্টা নতুন শুল্ক ও সম্পূরক শুল্ক কাঠামো ঘোষণা করেছেন। এর মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কাঙ্ক্ষিত বাণিজ্য চুক্তি সহজ করার প্রচেষ্টা চলছে।

যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সম্পর্ক ও ইন্দো-প্যাসিফিক নিরাপত্তা

৩০ জুন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস এবং যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিওর মধ্যে ফোনালাপে যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সম্পর্ক জোরদার ও ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে নিরাপত্তা সহযোগিতা নিয়ে আলোচনা হয়। এটি ট্রাম্প প্রশাসনের দ্বিতীয় মেয়াদে যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ সম্পর্কের সর্বোচ্চ পর্যায়ের আলাপের একটি।

মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ট্যামি ব্রুস বলেন, “উভয় নেতা অর্থনৈতিক সম্পর্ক জোরদার ও ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা বৃদ্ধিতে একমত হয়েছেন।”

কুগেলম্যান জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্রের কাছে ইন্দো-প্যাসিফিক নিরাপত্তার অর্থ হলো চীনের প্রভাব মোকাবিলা। তবে বাংলাদেশের জন্য এই দুই লক্ষ্য (বাণিজ্য চুক্তি ও নিরাপত্তা অংশীদারিত্ব) চ্যালেঞ্জ তৈরি করবে। কারণ বাংলাদেশ ঐতিহ্যগতভাবে জোট নিরপেক্ষ পররাষ্ট্রনীতি অনুসরণ করে, কোনো শক্তির পক্ষে বা বিপক্ষে অবস্থান না নেওয়ার নীতি মেনে চলে।

গণতন্ত্র নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রহ কমছে

মাইকেল কুগেলম্যান বলেন, “ট্রাম্প প্রশাসন গণতন্ত্র ও রাষ্ট্রগঠনে অর্থ ব্যয় নিয়ে আগ্রহ হারিয়েছে। তাদের প্রধান লক্ষ্য বাণিজ্য ও আঞ্চলিক ক্ষমতার ভারসাম্য রক্ষা।” বাইডেন প্রশাসনের শেষ সময়ে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারকে গণতন্ত্র পুনর্গঠন ও উন্নয়ন সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিলেও ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে সেই ফোকাস সরে গেছে।

ভবিষ্যত আলোচনা ও সরকারের প্রত্যাশা

যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ সম্পর্ক নিয়ে চলমান আলোচনা থেকে শুল্ক সংকট সমাধানের আশায় রয়েছে বাংলাদেশ। আগামী ৮ জুলাই যুক্তরাষ্ট্রে দ্বিতীয় দফার বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। সরকারের লক্ষ্য যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি করে শুল্ক সমস্যার সমাধান এবং রপ্তানি প্রবাহ স্বাভাবিক রাখা।

বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হবে কৌশলগত ভারসাম্য বজায় রেখে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে অর্থনৈতিক সম্পর্ক জোরদার করা এবং ভূরাজনৈতিক চাপে না পড়া। এর মধ্যে ৩৭% শুল্ক কমানো ও ইন্দো-প্যাসিফিক ইস্যুতে অংশীদারিত্বের শর্তাবলী বাংলাদেশের বাণিজ্য ও কূটনীতির জন্য পরীক্ষার ক্ষেত্র তৈরি করবে।

নতুন প্রজন্মের অনলাইন টিভি

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ সম্পর্ক: বাণিজ্য ও ভূরাজনীতি, গণতন্ত্র নয়

আপডেট সময় : ০৯:১৪:৪২ অপরাহ্ন, রবিবার, ৬ জুলাই ২০২৫

যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ সম্পর্ক নিয়ে নতুন পর্যায়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। ট্রাম্প প্রশাসনের কাছে বাংলাদেশের গণতন্ত্রের চেয়ে বাণিজ্য ও ভূরাজনৈতিক প্রতিযোগিতা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে বলে জানিয়েছেন ওয়াশিংটনভিত্তিক উইলসন সেন্টারের সাউথ এশিয়া ইনস্টিটিউটের পরিচালক মাইকেল কুগেলম্যান।

যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান ও ৩৭% শুল্ক চ্যালেঞ্জ

বাংলাদেশ বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের ৩৭% শুল্কের চাপে রয়েছে। ট্রাম্প প্রশাসন এই শুল্ক নীতি চালু করে এবং এখন পর্যন্ত তা বহাল রয়েছে। কুগেলম্যান বলেন, “যদি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য চুক্তি না হয়, তবে এই শুল্কের মুখে পড়তে হবে।”

বাংলাদেশ সরকার এই সংকট মোকাবিলায় নীতিগত বৈঠক করেছে। গত এপ্রিল মাসে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস জরুরি বৈঠকে নির্দেশনা দেন, যার ভিত্তিতে অর্থ উপদেষ্টা নতুন শুল্ক ও সম্পূরক শুল্ক কাঠামো ঘোষণা করেছেন। এর মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কাঙ্ক্ষিত বাণিজ্য চুক্তি সহজ করার প্রচেষ্টা চলছে।

যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সম্পর্ক ও ইন্দো-প্যাসিফিক নিরাপত্তা

৩০ জুন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস এবং যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিওর মধ্যে ফোনালাপে যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সম্পর্ক জোরদার ও ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে নিরাপত্তা সহযোগিতা নিয়ে আলোচনা হয়। এটি ট্রাম্প প্রশাসনের দ্বিতীয় মেয়াদে যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ সম্পর্কের সর্বোচ্চ পর্যায়ের আলাপের একটি।

মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ট্যামি ব্রুস বলেন, “উভয় নেতা অর্থনৈতিক সম্পর্ক জোরদার ও ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা বৃদ্ধিতে একমত হয়েছেন।”

কুগেলম্যান জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্রের কাছে ইন্দো-প্যাসিফিক নিরাপত্তার অর্থ হলো চীনের প্রভাব মোকাবিলা। তবে বাংলাদেশের জন্য এই দুই লক্ষ্য (বাণিজ্য চুক্তি ও নিরাপত্তা অংশীদারিত্ব) চ্যালেঞ্জ তৈরি করবে। কারণ বাংলাদেশ ঐতিহ্যগতভাবে জোট নিরপেক্ষ পররাষ্ট্রনীতি অনুসরণ করে, কোনো শক্তির পক্ষে বা বিপক্ষে অবস্থান না নেওয়ার নীতি মেনে চলে।

গণতন্ত্র নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রহ কমছে

মাইকেল কুগেলম্যান বলেন, “ট্রাম্প প্রশাসন গণতন্ত্র ও রাষ্ট্রগঠনে অর্থ ব্যয় নিয়ে আগ্রহ হারিয়েছে। তাদের প্রধান লক্ষ্য বাণিজ্য ও আঞ্চলিক ক্ষমতার ভারসাম্য রক্ষা।” বাইডেন প্রশাসনের শেষ সময়ে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারকে গণতন্ত্র পুনর্গঠন ও উন্নয়ন সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিলেও ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে সেই ফোকাস সরে গেছে।

ভবিষ্যত আলোচনা ও সরকারের প্রত্যাশা

যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ সম্পর্ক নিয়ে চলমান আলোচনা থেকে শুল্ক সংকট সমাধানের আশায় রয়েছে বাংলাদেশ। আগামী ৮ জুলাই যুক্তরাষ্ট্রে দ্বিতীয় দফার বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। সরকারের লক্ষ্য যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি করে শুল্ক সমস্যার সমাধান এবং রপ্তানি প্রবাহ স্বাভাবিক রাখা।

বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হবে কৌশলগত ভারসাম্য বজায় রেখে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে অর্থনৈতিক সম্পর্ক জোরদার করা এবং ভূরাজনৈতিক চাপে না পড়া। এর মধ্যে ৩৭% শুল্ক কমানো ও ইন্দো-প্যাসিফিক ইস্যুতে অংশীদারিত্বের শর্তাবলী বাংলাদেশের বাণিজ্য ও কূটনীতির জন্য পরীক্ষার ক্ষেত্র তৈরি করবে।