যুবলীগ নেতার উপর নৃশংস হামলা: ভাঙ্গা থানা ওসিকে দায়ী করে আ’লীগের সংবাদ সম্মেলন

মামুনুর রশিদ:: ফরিদপুরের ভাঙ্গার আইনশৃঙ্খলা বেশ নাজুক। নারী ও শিশু নির্যাতন, গুপ্ত হত্যা, সন্ত্রাসী হামলা, দাঙ্গা ফ্যাসাদসহ চলমান সময়ে রাজনৈতিক অস্তিরতা ছেয়ে গেছে ভাঙ্গার সামাজিক প্রেক্ষাপট। অপরাধ বৃদ্ধি পাওয়ার পাশাপাশি অপরাধীরা সক্রিয় হয়ে উঠায় সাধারণ মানুষের মাঝে উদ্বেগ উৎকণ্ঠা এবং বিভিন্নভাবে আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন সাধারণ মানুষ। বিশেষ করে ভাঙ্গা পৌরসভা থেকে শুরু হয়ে উপজেলার ১২টি ইউনিয়ন এলাকায় চুরি, ডাকাতি, রাহাজানি, মাদক ব্যবসা থেকে সকল অপরাধ প্রবণতা আশংকাজনক হারে বেড়ে গেছে বলে অভিমত সচেতন নাগরিক সমাজের।

বিশেষত করোনায় সেবাদানকারী মানবিক ভাঙ্গা পুলিশের ভূমিকা নিয়ে বড় ধরনের  অভিযোগ তুলেছেন খোদ সরকার দলের নেতা কর্মীরা। তাদের অভিযোগ পুলিশের একজন প্রভাবশালী অফিসার হিসাবে পরিচয়ে দাপটের মুখে চলছে ভাঙ্গা থানা পুলিশ। অসহায় হয়ে পড়েছে আইন!থানা পুলিশের সাহায্যে চাইলেও অবহেলিত হচ্ছে বঞ্চিত সাধারণ মানুষ।

এসব মিলিয়ে গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় ফরিদপুর প্রেসক্লাব মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে ভাঙ্গা থানার ওসির বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে দাবি জানিয়েছে স্থানীয় আওয়ামী লীগ এবং মাদক ব্যবসায়ীদের হামলায় গুরুত্বর আহত ভাঙ্গা যুবলীগ নেতা রিজুর পরিবার।

উল্লেখ্য ফেনসিডিল ও হেরোইন ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করায়  রিজু নামের যুবলীগের ওই নেতাকে ধারালা অস্ত্র দিয়ে নির্মমভাবে কুপিয়েছে দুর্বৃত্তরা। গুরুত্বর আহত অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করার পর তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা পঙ্গু হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পর আইসিইউতে জীবন মরণের সন্ধিক্ষণে চলছে তার জীবন।

আহত যুবলীগ নেতা ভাঙ্গা পৌরসভার কমিশনার ও ভাঙ্গা পৌর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি বাচ্চু মিয়ার ছেলে। মংলবার সন্ধ্যায় মাগরিব নামাজের পর পৌরসভার গজারিয়া গ্রামের একটি দোকানের সামনে থেকে যুবলীগের ওই নেতাকে কুপিয়ে আহত করা হয়। ঘটনার পর থেকে গোটা এলাকায় চরম উত্তেজনা বিরাজ করায় গজারিয়া গ্রামে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

রিজুর ঘটনার সূত্র ধরে সংবাদ সম্মেলনে ভাঙ্গা পৌর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি এমদাদুল হকের লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ভাঙ্গা উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আকরামুজ্জামান রাজা।

লিখিত বক্তব্যে অভিযোগ করা হয়, ভাঙ্গা থানার ওসির বিভিন্ন অপকর্মের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিয়ে নিরীহ জনগণকে রক্ষা করার জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে আহ্বান জানানো হয়।

এ সময় বলা হয়, বর্তমান ওসি শফিকুর রহমানের যোগদানের পর ভাঙ্গা উপজেলা আওয়ামী লীগসহ সব অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের বিভিন্ন অজুহাতে থানায় এনে শারীরিক নির্যাতন করা হচ্ছে। বিভিন্ন সময়ে টাকা দাবি করে তা না দিলে করেন মাদক, চাঁদাবাজি অথবা পেইন্ডিং মামলার আসামি হিসেবে চালান দেওয়া হবে বলে ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে বলে অভিযোগ তুলে ধরেন।

এছাড়া লিখিত বক্তব্যে আরও বলা হয়, গত ২৫ জুন ওসির বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ এনে ফরিদপুরের পুলিশ সুপারের কাছে একটি লিখিত অভিযোগ করেন ভাঙ্গা পৌর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি এমদাদুল হক। ওসি বারবার চাপ দেওয়ার পরও এমদাদুল হক ওই অভিযোগ প্রত্যাহার না করায় ওসির প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ মদদে গত মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে তার ছেলে মো. রীজু মিয়াকে (৩৫) কুপিয়ে জখম করা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, আওয়ামী লীগের সাবেক কেন্দ্রীয় নেতা বিপুল ঘোষ, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ মাসুদ হোসেন, যুগ্ম সম্পাদক ঝর্ণা হাসান, মহিলা বিষয়ক সম্পাদক আইভী মাসুদ, দীপক মজুমদার, ভাঙ্গা উপজেলা আওয়ামীলীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগের নেতৃবৃন্দ।

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে সৈয়দ মাসুদ জানান, ভাঙ্গা উপজেলা আওয়ামী লীগের এ অভিযোগের সঙ্গে জেলা আওয়ামী লীগ একমত পোষণ করেন বলেই সশরীরে এ সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত হয়েছেন। আমরা ফরিদপুর পুলিশ সুপারের কাছে বিষয়টি ইতমধ্যে জানিয়েছি।

এদিকে অভিযোগ প্রসঙ্গে ভাঙ্গা থানার ওসি শফিকুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, আমার (তার) বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আনা হয়েছে তা সঠিক নয়। এ ধরনের অভিযোগ আগেও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও আইজিপির কাছেও দেওয়া হয়েছে। সে অভিযোগ পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) ও পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) তদন্ত করে কোনো সত্যতা পায়নি।

পাল্টা অভিযোগ করে তিনি বলেন, যারা অভিযোগ করছেন তাদের মধ্যে অনেক নেতা আগে থানার দালালি করতেন। আমি আসার পর তা বন্ধ করে দেওয়ায় আমার ওপর ক্ষুব্ধ হয়েছেন।

যুবলীগ নেতা রিজুর ওপর এ হামলা প্রসঙ্গে ওসি বলেন, স্থানীয় বিরোধকে কেন্দ্র করে মাদকসহ এক ব্যাক্তিকে ডিবি পুলিশ গ্রেপ্তার করায় রিজুর ওপর এ হামলার ঘটনা ঘটেছে। এ ব্যাপারে বুধবার সন্ধ্যা পর্যন্ত থানায় কোনো লিখিত অভিযোগ না দেওয়া হলেও পুলিশ হামলার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে সাতজনকে আটক করেছে।

ফরিদপুরের পুলিশ সুপার মো. আলিমুজ্জামান সাংবাদিকদের বলেন, ভাঙ্গা থানার ওসির বিরুদ্ধে তার ও ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে যে সব অভিযোগ আমলযোগ্য তা নিয়ে স্থানীয় পর্যায়ে ও পুলিশ হেডকোয়ার্টারের উদ্যোগে তদন্ত চলছে। অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Leave A Reply

Your email address will not be published.

Title