করোনায় বেকার বগুড়ার মৎস্য ভান্ডারের হাজারো পোনা মাছ চাষী

দীপক সরকার, বগুড়া প্রতিনিধি: বৈশ্বিক মহামারী কোভিড-১৯ এর ভয়াবহতা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। দেশজুড়ে করোনার নতুন রুপ ভারতীয় ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট ছড়িয়ে পড়ছে। এ মহামারীর ভয়াবহতা রোধে দেশে বিধি নিষেধ ও সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে পৃথক পৃথকভাবে লকডাউন চলে আসছে বেশ কয়েক সপ্তাহ ধরে। ১ জুলাই থেকে নতুন করে দেশে কঠোর লকডাউন ঘোষনার বাস্তবায়নকালে গণপরিবহন বন্ধ হয়ে গেছে।
গণপরিহনগুলো বন্ধ হওয়ায় বগুড়ার মৎস্য ভান্ডার বলে খ্যাত আদমদীঘি উপজেলার ৫শতাধিক মৎস্য ব্যবসায়ী এখন বেকার হয়ে পড়েছে। পারছেনা তাদের উৎপাদিত পোনা বা রেণু মাছগুলো দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পাঠাতে পারছেনা। এতে অনেক মৎস্য ব্যবসায়ী ব্যাংক ও এনজিওর ঋণ পরিশোধ করতে পারছেন না। এ কাজে নিয়োজিত মৎস্যচাষি, শ্রমিকসহ হাজারো পরিবার তাদের পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবন-যাপন করছেন।
জেলার আদমদীঘি থেকে রাজধানী ঢাকা, বন্দরনগরী চট্টগ্রাম, সিলেট, রংপুর, ময়মনসিংহ, দিনাজপুর, যশোর, বিভিন্ন স্থানের পাইকাররা রেণুপোনা ও বাজারজাতকরণের বড় মাছ কিনে ট্রাকে করে নিয়ে যান। আদমদীঘি ও আশপাশের উপজেলার হাজার হাজার বেকার যুবক রেণুপোনা, মাছ বেচাকেনা করে বেকারত্ব দূর করেছেন। প্রতিদিন এ এলাকা থেকে কোটি টাকার মাছ দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করতেন এ উপজেলার মৎস্য ব্যবসায়ী ও চাষিরা।
১৯৯০সালের দিকে জেলার আদমদীঘি উপজেলা সদরের পাবলিক লাইব্রেরী সংলগ্ন ৫৭শতক জায়গায় এই এলাকার কিছু শিক্ষিত বেকার যুবকরা ক্ষুদ্র মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতি গঠন করে । ওই জায়গাতেই পোনা বাজার প্রতিষ্ঠা করে এবং প্রতিদিন ভোর থেকে সকাল ১০টা পর্যন্ত বসে। এক পর্যায়ে বাজারটি বৃহৎ আকারে প্রতিষ্ঠা পায়। ওই পোনা বাজারে প্রায় ১৫ থেকে ১৬ লক্ষ টাকার পোনা বেচাকেনা হতো। উপজেলার সকল চাষীদের পুকুরে ব্যাপক পরিমাণ রেণু পোনা উৎপাদন হলেও করোনা মহামারীর থাবায় দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে ক্রেতারা না আসায় চাষী ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা বিপাকে পড়েছে এবং এসব চাষীরা মানবেতর জীবন যাপন করছে। এতে করে এই বাজারে পোনা মাছ আমদানী নেই বললেই চলে। তাছাড়া ক্ষুদ্র মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির প্রায় ৫ শতাধিক ব্যবসায়ী ও মৎস্য চাষীসহ উপজেলার হাজারো মৎস্যজীবি পরিবার বেকার হয়ে পড়েছে।

আদমদীঘি উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা সুজয় পাল জানান, উপজেলায় সরকারি ও ব্যক্তি মালিকানাধীন ছোট-বড় ৬ হাজার ৪৪২টি পুকুর ও জলাশয় রয়েছে। রেণুপোনা উৎপাদনে ৫৩টি নিবন্ধিত হ্যাচারি ও নার্সারি রয়েছে। এর মধ্যে ৩৫টি চালু ও অবশিষ্ট ১৮টি হ্যাচারি বন্ধ রয়েছে। এখানে ৪০ হাজার কেজি রেণুপোনা ও ১১ কোটি পিস পোনার চাহিদা রয়েছে। বাজারজাতের মাছের উৎপাদন হয় ১৭ হাজার ৭৪ টন। চাহিদা রয়েছে ৪ হাজার ৬৩০ টন। উদ্বৃত্ত ১২ হাজার ৪০০ টন মাছ দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করা হয়ে থাকে।
প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, এসব হ্যাচারী গুলোতে রুই, কাতলা, মৃগেল, সিলভারকার্প, গ্রাসকার্প, বিগহেড, থাইসরপুটি, সরপুটি, জাপানি, মিররকার্প, মনোসেক্স তেলাপিয়া, তারাবাইন, মাগুর, বিগহেড মাগুর, কৈ, দেশি বিদেশি শিং, পাঙ্গাস, চিতল, আঁইড়, গোলসা, ট্যাংরা, পাবদা ইত্যাদি দেশি ও বিদেশী মাছের রেণু পোনা উৎপাদন হয়। এসব উৎপাদিত রেনু পোনা মাছ এই বাজারেই বিক্রি হয়ে থাকে। এই পোনা মাছ বাজার থেকে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে পাইকাররা এসে পোনা মাছ ক্রয় করে নিয়ে যায়।

আদমদীঘি ক্ষুদ্র মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি রফিকুল ইসলাম জানান, গত বছরের মার্চ মাস থেকে দেশে করোনা ভাইরাসের মহামারীর প্রার্দুভাব দেখা দেয়ার পর থেকে রেণু পোনা উৎপাদনে মারাত্মক ক্ষতি হতে শুরু করেছে। ফলে বাহির থেকে পাইকাররা পোনা মাছ ক্রয় করতে আসছে না। ইতিপূর্বে এই বাজারে গড়ে প্রতিদিন ১৫ থেকে ১৬ লক্ষ টাকার পোনা মাছ কেনাবেচা হতো বর্তমানে ১ লাখ টাকার পোনা মাছও কেনাবেচা হচ্ছে না। এতে করে পোনা ব্যবসায়ীরা পরিবার পরিজন নিয়ে চরম দুরাবস্থায় দিন কাটাচ্ছে। তিনি আরোও জানান, সরকার করোনা মহামারীর কারণে মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে প্রণোদনা দিলেও ক্ষুদ্র মৎস্য চাষীরা বি ত হচ্ছেন। সরকারি ভাবে সহজশর্তে ক্ষুদ্র চাষীদের প্রণোদনা দিলে এ অ লের মৎস্য চাষীরা উপকৃত হবে।

এ বিষয়ে আদমদীঘি উপজেলার সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা সুজয় পাল জানান, দেশব্যাপী করোনার কারণে পোনা উৎপাদনে ঘাটতি দেখা দিয়েছে। তাছাড়া মাঝে মধ্যে লকডাউন ও গণপরিবহন বন্ধ থাকায় দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে পাইকাররা না আসায় পোনা বাজারের এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।

Leave A Reply

Your email address will not be published.

Title