বগুড়ায় ৪র্থ দফায় বন্যার পানিতে ১১০৬ হেক্টর জমির ফসল নিমজ্জিত

দীপক সরকার, বগুড়া প্রতিনিধি: গত এক সপ্তাহজুড়ে ভারি বৃষ্টিপাত ও পাহাড়ি ঢলের কারণে বগুড়ায় সকল নদ নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে এলাকায় ৪র্থ দফা বন্যায় প্লাবিত হয়েছে জেলার কয়েক উপজেলার নি¤œাঞ্চল। আকস্মিকভাবে বৃষ্টির পানি বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে নদী এলাকার ১ হাজার ১০৬ হেক্টর জমির আবাদী ফসল পানিতে নিমজ্জিত হয়ে গেছে।

বগুড়া পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানানো হয়, কয়েক দিন ধরে অবিরাম বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের পানিতে নতুন করে যমুনা ও বাঙ্গালি নদীর পানি বৃদ্ধি পায়। পানি বৃদ্ধি পেয়ে নদী এলাকার আউশ, আমন, সবজির ক্ষেত তলিয়ে গেছে।

বগুড়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সুত্রে জানা যায়, জেলার ১২টি উপজেলার মধ্যে সারিয়াকান্দি, সোনাতলা, গাবতলী, ধুনট, শেরপুর, শাজাহানপুর ও নন্দীগ্রাম উপজেলার কিছু কিছু ক্ষেত পানিতে নিমজ্জিত হয়ে আছে। পানি বেড়ে জেলায় রোপা আমন ১০২৫ হেক্টর, মাশকালাই ৪৫, সবজি ৩২, মরিচ ৪ হেক্টর। সব মিলিয়ে ১১০৬ হেক্টর জমির ধান ও অন্যান্য ফসল পানিতে নিমজ্জিত হয়ে আছে।

বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলার ক্ষতিগ্রস্থ চাষিরা জানান, বৃষ্টি ও নদীর পানিতে তাদের চাষকৃত আমন ধান শাকসবজি ও চরাঞ্চলের কৃষকের আউশ, মরিচ রোপা আমন, বীজতলা, শাকসবজি ও গাইনজা ধানের আবাদ তলিয়ে গেছে। উপজেলার সারিয়াকান্দি পৌরসভার দক্ষিণ হিন্দুকান্দি, ছাগলধরা, ডোমকান্দি, নারচি নিজ বরুরবাড়ী, হাটশেরপুর ইউপির হাসনাপাড়া, শাহানবান্দা। এছাড়া চর এলাকার বোহাইল, কর্নিবাড়ী, কাজলা, চালুয়াবাড়ী, হাট শেরপুর ও সদর ইউনিয়নের নিচু এলাকার ফসল পানিতে তলিয়ে গেছে।

সোনাতলা উপজেলার বগুড়ার সোনাতলায় যমুনা ও বাঙালী নদীতে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় প্রায় ১৬৫ হেক্টর জমির ফসল বন্যার পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। রবিবার যমুনা নদীতে বিপদ সীমার ১১ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হয়েছে। ফলে ওই উপজেলার প্রায় ১৬৫ হেক্টর জমির ফসল বন্যার পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। সোমবার সকালে যমুনা নদীর পানি কমে বিপদসীমার ৮.৬ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

বগুড়ার সোনাতলা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মাসুদ আহমেদ জানান, চলতি বছরের ৪ দফা বন্যায় কৃষকের সীমাহীন ক্ষতিসাধন হয়েছে। বন্যার পর সরকার কৃষকদের পুর্নবাসনের ব্যবস্থা করার প্রস্তাব প্রেরন করা হবে। এখন ক্ষয়ক্ষতির তথ্য সংগ্রহ চলছে।

এদিকে গত কয়েকদিন অবিরাম বর্ষণে আকস্মিকভাবে বাঙালী ও করতোয়া নদীতে বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে করে শেরপুর উপজেলার খানপুর, সুঘাট, খামারকান্দি ও গাড়িদহ ইউনিয়নের নি¤œাঞ্চলে পানি ঢুকে পড়ে ২২০ হেক্টর আবাদীকৃত জমি ডুবে গেছে, তবে কি পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে এখনো জানা যায়নি বলে জানিয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবীদ সারমিন আক্তার।

অপরদিকে বগুড়া নন্দীগ্রাম উপজেলার থালতা মাজগ্রাম ইউনিয়নের নাগর নদে টানা বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পানি বৃদ্ধি হওয়ায় গুলিয়া, পারশন, পারঘাটা, সারাদিঘর এলাকায় মাঠের আমন ধান ডুবে যাচ্ছে। দিন দিন পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় ও গুলিয়া দূর্নার খালে বাঁধ ধসে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। এতে করে কৃষকদের দিন কাটছে হতাশায়। পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে জানানো হয়েছে, নাগর নদে পানি বৃদ্ধি পেয়ে তা বিপদসীমার কিছুটা নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

নন্দীগ্রাম উপজেলার পারঘাটা গ্রামের কৃষক হযরত আলী, মাফু মিয়া বলেন, শুধু আমরা নই, এই এলাকার অনেক কৃষকের স্বপ্ন আর আশা ডুবিয়ে দিয়েছে বন্যা। পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় জমির রোপা আমন ধান নিয়ে কৃষকরা এখন দিশাহারা।

এ ব্যাপারে বগুড়ার নন্দীগ্রাম উপজেলার কৃষি অফিসার মো. আদনান বাবু বলেন, নন্দীগ্রাম উপজেলায় এবার ১৯ হাজার ৩৭৫ হেক্টর জমিতে রোপা আমন ধান চাষ করা হয়েছে। এরমধ্যে ৮০ হেক্টর জমির ধান প্লাবিত হয়েছে। তবে নাগর নদে আর পানি বৃদ্ধি না পেলে রোপা আমন ধানের ক্ষতি হবে না।

এ প্রসঙ্গে বগুড়া কৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপ পরিচালক শাহাদুজ্জামান জানান, পানি বেড়ে জেলায় রোপা আমন ১০২৫ হেক্টর, মাশকালাই ৪৫, সবজি ৩২, মরিচ ৪ হেক্টর। সব মিলিয়ে ১১০৬ হেক্টর জমির ধান ও অন্যান্য ফসল পানিতে নিমজ্জিত হয়ে আছে। পানি নেমে গেলে ক্ষতির পরিমান জানা যাবে।

Leave A Reply

Your email address will not be published.

Title