বর্ষার আগমনের বার্তায় বাড়ছে পানি নৌকা তৈরিতে ব্যস্ত মিস্ত্রীরা

মনিরুল ইসলাম মনির : মতলব উত্তর ও মতলব দক্ষিণ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় মৌসুমি ডিঙ্গি নৌকা তৈরিতে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে মাঝি ও মিস্ত্রীরা। বর্ষার পানি বাড়ার সাথে সাথে এ এলাকাগুলোর আনাচে-কানাচে গ্রামগুলোসহ আশ-পাশের ইউনিয়নগুলোতে গৃহস্থালি কাজে এবং খেয়া পারাপারে ও গো-খাদ্যের জন্য কোষা ও ডিঙি নৌকার কদর বেড়ে যায় কয়েকগুণ। আর এ সুবাদে মতলব উত্তরের বাংলা বাজার, সটাকি বাজারে গড়ে উঠেছে ডিঙি ও কোষা নৌকা তৈরী ও বিক্রির বাজার। উপজেলার বিভিন্ন এলাকার দূর-দূরান্ত থেকে প্রতিদিন ক্রেতারা তাদের পছন্দসই নৌকা এখান থেকে কিনে থাকেন।

এদিকে মেঘনা-ধনাগোদা নদী ঘেরা মতলব দক্ষিণ উপজেলার প্রায় অর্ধেক অংশ বর্ষা শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে প্লাবিত হয়ে থাকে। বর্ষা মৌসুম এলেই এই এলাকার মানুষের চলাচলের প্রধান বাহন হিসেবে নৌকা ব্যবহার করে থাকে। উপজেলার নদীর তীরবর্তী গ্রামগুলিতে স্কুলগামী ছাত্র-ছাত্রীরা নৌকার মাধ্যমে স্কুলে যাতায়াত করে থাকে। বর্ষার শুরুতেই এলাকার মৌসুমি জেলেরা নৌকা দিয়ে রাত দিন মাছ শিকারে ব্যস্ত হয়ে পড়ে।

উপজেলার চরাঞ্চলের নিচু এলাকার বাসিন্দারা নৌকার মাধ্যমে খেয়া পার হয়ে এক গ্রাম থেকে অন্য গ্রাম ও স্কুল, কলেজ, হাট বাজারে পাড়াপাড় হয়ে থাকে। উপজেলার গ্রামে প্রায় বাড়িতেই বর্ষাকালে যাতায়াতের জন্য একটি করে নৌকা রয়েছে। এক সময় বর্ষা মৌসুমে এসব এলাকায় পালতোলা নৌকা চলতো। বিভিন্ন হাট বাজারে মালামাল আনা নেওয়ার জন্য গয়না, ডিঙ্গি নৌকার ব্যবহার হত।
উপজেলার ষাটনল ইউনিয়ন আওয়ামীলীগ সভাপতি ও চেয়ারম্যান একেএম শরীফ উল্লাহ সরকার বলেন, এ ইউনিয়নে ছোট বেলা থেকেই বাবার সাথে নৌকা তৈরির কাজ দেখার জন্য হাটে যাইতাম। দেখতাম বর্ষা এলেই নৌকা তৈরির কদর বেড়ে যায় সটাকি হাট জুড়েই যেন নৌকা তৈরীর এক মহোউৎসব সেখানে।

মিস্ত্রী মাসুম বলেন, নৌকা তৈরিতে বিশেষ কোন কাঠ নিদিষ্ট ভাবে ব্যবহার হয় না। আগে ভালো ভালো কাঠ দিয়ে নৌকা তৈরী করতাম এখন কড়াই, চাম্বল ও মেহগনি দিয়েই বেশী নৌকা তৈরি করি। নৌকা তৈরিতে কাঠ ছাড়াও মাটিয়া তৈল, আলকাতরা, তাড়কাটা, গজাল, পাতাম ইত্যাদি লাগে যা নৌকাকে দীর্ঘ দিন টিকসই রাখে। একজনে প্রতিদিন একটি ডিঙ্গি নৌকা তৈরি করতে পারি। বার হাতের একটি নৌকা তৈরিতে ৪২-৪৫ শত টাকা খরচ হয় আর বিক্রি হয় সাত থেকে সারে সাত হাজার টাকায়। একটু ছোট ডিঙ্গি তৈরিতে ২২শ টাকা খরচ হয় বিক্রি হয় তিন থেকে সারে তিন হাজার টাকায়। বর্ষা সামনে রেখে নৌকা তৈরিতে ব্যস্ত কারিগররা বর্ষা মৌসুম সামনে রেখে নৌকা তৈরিতে ব্যস্ত কারিগর। মতলব দক্ষিণ উপজেলার বরদিয়া আড়ং বাজারের স্টিল ব্রীজ সংলগ্ন মাষ্টার বাড়ির কাছে আ. হান্নান কারিগর দ্বারা নৌকা তৈরীতে ব্যস্ত থাকতে দেখা যায়।

নৌকা কারীগর শ্রী মাদব সূত্রধর জানান, একটি কোসা নৌকা তৈরী করতে আমাকে মজুরী দেওয়া হয় ১৪০০ টাকা। আমি নৌকাগুলি কন্টাকে তৈরী করি। একটি নৌকা তৈরী করতে আমার সময় লাগে একদিন। একটি নৌকা বিক্রি হয় ৫ থেকে ৬ হাজার টাকা। নৌকা তৈরীতে যেমন খাটুনী, বিক্রিতে মুনাফাও বেশী। এ নৌকাগুলির নাম দিগলা কোসা।

বর্ষা আসতে আর মাস খানেক সময়, এখন নৌকা তৈরিও হচ্ছে, বিক্রি ও কম নয়। একটি সময় চলে গেছে, ঐ সময় নৌকার খুব কদর ছিল। নৌকা না হলে ঘর থেকে বের হওয়া-ই যেতো না। আর ঐ সময় প্রত্যেক ঘরে ঘরে নৌকা ছিল। আর এখন নৌকার তেমন প্রয়োজন নেই বলেই চলে।

যেমন মতলব উত্তরে মেঘনা-ধনাগোদা সেচ প্রকল্পের ভিতর নৌকার কোন প্রয়োজন নেই। মতলব উত্তর এখন উপ-শহরের মত। নদী বেষ্টিত এলাকা। চারি দিকে বাঁধ। বাঁধের ভিতরে কমিউনিকেশন ব্যবস্থা কতই না সুন্দর, ঘুরাফেরা না করলে বুঝা যাবে না। আর রংবে রংঙ্গের দালান আর দালান। আর ঐতিহ্য বাহী মতলব। এখন মতলব দক্ষিণ উপজেলা হিসাবে পরিচিত। ঐ উপজেলায় বর্ষা মৌসুমে নৌকা প্রয়োজন হবে। আগের তুলনায় অনেক কম।

এর কারণ হচ্ছে বর্তমানে সারা দেশেই উন্নয়ন। রাস্তা ঘাট হওয়ায় এখন যোগাযোগ ব্যবস্থা খুবই উন্নত। প্রায় এলাকায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে রাস্তা ঘাট। বাড়ি ঘেসে রাস্তা নির্মাণ করা হয়েছে। সে জন্য এখন আর নৌকার তেমন কদর নাই। তার পরে ও নৌকার কদর কম নয়। নৌকায় চড়তে ভারি মজাও হয়। আসবে এমন একটি সময়, ঐ সময় নৌকা থাকবে না, সময়ের জন্য অপেক্ষা করতে হবে।

Leave A Reply

Your email address will not be published.

Title